মহম্মদ বিন তুঘলক প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক উপাদান, রাজধানী স্থানান্তর, রাজধানী স্থানান্তরের ব্যর্থতা, প্রতীক মুদ্রা প্রবর্তন, দোয়াবে রাজস্ব সংস্কার, আমির-ই-কোহি, কল্যাণের মন্দির পুনর্নির্মাণ, মোঙ্গল আক্রমণ, পাগলা রাজা, চরিত্র ও তার মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।
মহম্মদ বিন তুঘলক
সুলতান | মহম্মদ বিন তুঘলক |
রাজত্ব | ১৩২৫-১৩৫১ খ্রি |
বংশ | তুঘলক বংশ |
প্রকৃত নাম | ফকরউদ্দিন মহম্মদ জুনা খান |
বিশেষ পরিচিতি | পাগলা রাজা |
ভূমিকা :- গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র জুনা খান মহম্মদ বিন তুঘলক নাম ধারণ করে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম হল ফকরউদ্দিন মহম্মদ জুনা খান। ভারত ইতিহাসে তাঁকে ‘পাগলা রাজা’ বা উন্মাদ রোগগ্রস্ত বলা হত।
ঐতিহাসিক উপাদান
তাঁর সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক উপাদান হল জিয়াউদ্দিন বরনির তারিখ-ই-ফিরোজশাহি এবং আমির খসরুর তুঘলকনামা।
রাজধানী স্থানান্তরণ
মহম্মদ ১৩২৬-২৭ খ্রিস্টাব্দে রাজধানী পরিবর্তন করেন। কারণ দেবগিরি সাম্রাজ্যের মধ্যস্থলে হওয়ায় পুরো সাম্রাজ্য ভালোভাবে শাসন করা যাবে এবং বারবার মোঙ্গল আক্রমণে বিপর্যস্ত দিল্লীর চেয়ে দেবগিরি অনেক বেশি নিরাপদ হবে।
রাজধানী স্থানান্তরের ব্যর্থতা
মহম্মদ-বিন-তুঘলকের রাজধানী পরিবর্তন শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। কারণ দেবগিরি যাবার পথে বহু মানুষের প্রাণহানি হওয়ায় পরিকল্পনাটি জনগণের কাছে অভিশপ্ত বলে বিবেচিত হয়। দেবগিরি থেকে উত্তর ভারত শাসন করা ও মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধ করা ছিল অসুবিধাজনক। তাই তাঁর এই পরিকল্পনাটি ব্যর্থ হয়।
প্রতীক মুদ্রা বা তামার নোট প্রচলন
- (১) মহম্মদ-বিন তুঘলক ১৩২৯-৩০ খ্রিস্টাব্দে প্রতীক মুদ্রা প্রবর্তন করেন। সমকালীন ঐতিহাসিকদের মতে, সুলতানের দান খয়রাত ও খোরাসান জয়ের পরিকল্পনার জন্য যে অর্থসংকট দেখা দেয় তা কাটানো এবং বিশেষত রূপার সংকট থেকে মুক্তি পেতে তিনি ব্রোঞ্জ বা তামার নোটের প্রচলন করেন।
- (২) মহম্মদ-বিন-তুঘলকের প্রতীক মুদ্রা ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়। কারণ, জনসাধারণ এই মুদ্রা গ্রহণ করতে অস্বীকার করে, এমনকি বিদেশি বণিকরা এই মুদ্রা গ্রহণ করতে চায় নি। ধাতু হিসাবে তামা সহজলভ্য হওয়ায় খুব সহজেই এটি জাল হয়। এছাড়া মুদ্রা প্রবর্তনে রাষ্ট্রের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ছিল না।
দোয়াবে রাজস্ব সংস্কার
১৩২৬-২৭ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ দোয়াবে রাজস্ব বৃদ্ধি করে সরকারের আয় বৃদ্ধির চেষ্টা করেন, যার মোকাবিলা করতে তিনি পতিত জমিকে চাষযোগ্য করতে ‘আমির-ই-কোহি’ নামে কৃষি বিভাগ খোলেন।
আমির-ই-কোহি
মহম্মদ-বিন-তুঘলক দোয়াবে রাজস্ব সংস্কার করতে গিয়ে ‘আমির-ই-কোহি’ নামে কৃষিবিভাগ স্থাপন করেন। কৃষির উন্নতি ও পতিত জমি পুনরুদ্ধার করে তাকে আবাদযোগ্য করে তোলাই ছিল ‘আমির-ই-কোহি’-র প্রধান উদ্দেশ্য। এই ব্যবস্থার ফলে অর্থের প্রচুর অপচয় হয়।
কল্যাণের মন্দির পুনর্নির্মাণ
দাক্ষিণাত্যের সাগর অঞ্চলের বিদ্রোহী শাসককে দমন করার সময় মহম্মদ বিন তুঘলকের সেনাবাহিনী কল্যাণের হিন্দু মন্দিরটির ক্ষতিসাধন করেছিল। পরে সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলকের নির্দেশে কল্যাণের হিন্দুমন্দির (মধুমন্দির) পুনর্নির্মিত হয় এবং শিবলিঙ্গটি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।
মোঙ্গল আক্রমণ
১৩২৮-২৯ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ-বিন তুঘলকের আমলে মোঙ্গল নেতা তরমাশিরিন খান ভারত আক্রমণ করেন। তিনি মিরাটের যুদ্ধে সুলতানি বাহিনীর হাতে পরাজিত হন।
পাগলা রাজা
মহম্মদের পরিকল্পনাগুলি ব্যর্থ হওয়ায় অনেক ঐতিহাসিক তাকে ‘পাগলা রাজা’ বলেছেন। কিন্তু তা ঠিক নয়। কারণ, তাঁর পরিকল্পনাগুলি ছিল যুক্তিসম্মত, বিজ্ঞানসম্মত, আধুনিক ও শুভ উদ্দেশ্য প্রণীত। শুধুমাত্র ধৈর্যহীনতা, অনভিজ্ঞতা ও কর্মচারীদের অসহযোগিতার ফলে তা ব্যর্থ হয়।
চরিত্র
মহম্মদের চরিত্রে একদিকে নিষ্ঠুরতা ও উদার দানশীলতা, নৃশংসতা ও দয়া, যুক্তিমনস্কতা, ধৈর্যহীনতা, গুণগ্রাহিতা প্রভৃতি নানা প্রকার দোষগুণের অদ্ভুত সমন্বয় দেখা দিয়েছিল। তাই অনেক ঐতিহাসিক তাঁকে ‘বৈপরীত্যের সংমিশ্রণ’ বলে অভিহিত। করেছেন।
ইবন বতুতা
তাঁর আমলে বিখ্যাত বিদেশি পর্যটক ইবন বতুতা ভারতে আসেন এবং প্রায় ১৪ বছর অতিবাহিত করেন। তাঁর রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ হল ‘কিতাব-উল-রেহলা’।
মৃত্যু
গুজরাটের পলাতক শাসক মালিক তার্ঘিকে দমন করার জন্য মহম্মদ বিন তুঘলক সিন্ধুদেশ অভিযান করেন। অসুস্থ অবস্থায় থাট্টায় ১৩৫১ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদের মৃত্যু হয়।
উপসংহার :- মহম্মদ বিন তুঘলক সুলতানি প্রশাসনে উলেমারদের হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করেন নি। প্রথমদিকে খলিফার অনুমোদন আনতে উদ্যোগী হন নি। ব্যক্তিজীবনে নিষ্ঠাবান মুসলমান হলেও রাজনীতিকে কখনও প্রভাবিত করেন নি। ধর্মের ভিত্তিতে তিনি প্রজাদের মধ্যে কোনো বৈষম্য করেন নি। এই সব দিক বিবেচনা করলে মহম্মদ-বিন-তুঘলককে ধর্মনিরপেক্ষ শাসক বলা যায়।
(FAQ) মহম্মদ বিন তুঘলক সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
মহম্মদ বিন তুঘলক।
ফকরউদ্দিন মহম্মদ জুনা খান।
মহম্মদ বিন তুঘলক।
মহম্মদ বিন তুঘলক।