সাম্রাজ্যবাদ প্রসারের কারণ

সাম্রাজ্যবাদ প্রসারের কারণ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক কারণ হিসেবে উগ্র জাতীয়তাবাদ, ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা, অর্থনৈতিক কারণ হিসেবে পণ্য বিক্রির বাজার, কাঁচামাল সংগ্রহ, পুঁজি বিনিয়োগ, শ্রমিক সংগ্রহ, সামরিক কারণ হিসেবে নিরাপত্তা বৃদ্ধির চেষ্টা, সামরিক মর্যাদা বৃদ্ধি, সামাজিক কারণ হিসেবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, সভ্যতার প্রসার, ধর্মীয় কারণ হিসেবে ধর্ম প্রচার, মানব কল্যাণ এবং প্রযুক্তিগত কারণ সম্পর্কে জানবো।

সাম্রাজ্যবাদ প্রসারের কারণ

ঐতিহাসিক ঘটনাসাম্রাজ্যবাদ প্রসারের কারণ
উগ্ৰ জাতীয়তাবাদ১৮৭০ খ্রি
উপনিবেশ স্থাপনএশিয়া ও আফ্রিকায়
ফরাসি লেখকজুলে ফেরি
ইংরেজ কবিরুডইয়ার্ড কিপলিং
সাম্রাজ্যবাদ প্রসারের কারণ

ভূমিকা :- ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি কর্তৃক ঔপনিবেশিক সম্প্রসারণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের রাজনৈতিক আধিপত্যের প্রসার ঘটানো। তবে অধ্যাপক জেমস জোল বলেন যে, সম্ভবত কোনো একটি অভিমত সাম্রাজ্যবাদী সম্প্রসারণের কারণ ব্যাখ্যার জন্য যথেষ্ট নয়। এর জন্য বিভিন্ন কারণকেই দায়ী করা যায়।

সাম্রাজ্যবাদ প্রসারের কারণ

বিভিন্ন পণ্ডিত ও ঐতিহাসিক আধুনিক সাম্রাজ্যবাদের প্রসারের বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করেন। নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হলো।

সাম্রাজ্যবাদ প্রসারের রাজনৈতিক কারণ

সাম্রাজ্যবাদের প্রসারে বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণগুলিও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যেমন –

(ক) উগ্র জাতীয়তাবাদ

  • (১) ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের পর ইউরোপ-এর বিভিন্ন দেশে উগ্র জাতীয়তাবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। প্রতিটি জাতিই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে। এর ফলে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের জন্য শুরু হয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা। প্রতিটি জাতির মধ্যে পারস্পরিক সন্দেহ ও বিরোধ বৃদ্ধি পায়।
  • (২) এর ফলে ইউরোপে যুদ্ধের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতিতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এশিয়া ও আফ্রিকার অনুন্নত দেশগুলিতে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের শক্তিবৃদ্ধির চেষ্টা চালায়।

(খ) ক্ষমতার আকাঙ্খা

  • (১) জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিজেদের সম্মান, প্রতিপত্তি ও ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশ উপনিবেশ প্রতিষ্ঠায় অগ্রসর হয়। ইতালি, জার্মানি সহ বিভিন্ন দেশ শুধু রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যেই উপনিবেশ স্থাপনে অগ্রসর হয়।
  • (২) ইতালি ও রাশিয়ার কোনো উদবৃত্ত উৎপাদন না থাকায় তাদের পণ্য বিক্রির জন্য বিদেশের বাজার দখলেরও কোনো প্রয়োজন ছিল না। তা সত্ত্বেও শুধু রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যেই তারা উপনিবেশ স্থাপনে আগ্রহী হয়।
  • (৩) শিল্পের ক্ষেত্রে জার্মানির চেয়ে ফ্রান্স ও বেলজিয়াম অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও শুধু রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার আগ্রহেই তারা আগে উপনিবেশ স্থাপনে এগিয়ে আসে।

সাম্রাজ্যবাদ প্রসারের অর্থনৈতিক কারণ

বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও অর্থনীতিবিদ আধুনিক সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের প্রসারে অর্থনৈতিক কারণগুলিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। যেমন –

(ক) পণ্য বিক্রির বাজার

  • (১) অষ্টাদশ শতকের শেষদিকে ইংল্যান্ড-এ এবং পরে ইউরোপের অন্যান্য দেশে শিল্প বিপ্লব ঘটলে ইউরোপের অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। শিল্পোন্নত দেশগুলির কলকারখানায় বিপুল পরিমাণ পণ্যসামগ্রী উৎপাদিত হতে থাকে। নিজ দেশের চাহিদা মেটানোর পর উদবৃত্ত পণ্য বিক্রির সুযোগ ইউরোপে ছিল না।
  • (২) কারণ, ইউরোপের প্রায় সব দেশই শিল্পোন্নত ছিল এবং প্রতিটি দেশেই চাহিদার অতিরিক্ত পণ্য উদবৃত্ত হত। এসব উদবৃত্ত পণ্যসামগ্রী বিক্রির জন্য ইউরোপের শিল্পোন্নত দেশগুলি এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন অনুন্নত দেশের বাজার দখলের চেষ্টা চালায়। এই উদ্দেশ্যে তারা সেই সব দেশে উপনিবেশের প্রসার ঘটায়।

(খ) কাঁচামাল সংগ্রহ

  • (১) শিল্পবিপ্লবের ফলে ইউরোপের শিল্পোন্নত দেশগুলির কলকারখানায় অল্প সময়ে প্রচুর পরিমাণ শিল্পজাত পণ্য উৎপাদন শুরু হলে সেই সব কারখানায় নিয়মিত প্রচুর পরিমাণ কাঁচামালের প্রয়োজন হয়। কারখানাগুলিতে এই বিপুল পরিমাণ কাঁচামালের জোগান নিজ দেশ থেকে সম্ভব হত না।
  • (২) ফলে স্বাভাবিকভাবেই বাইরে থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে ইউরোপের শিল্পকারখানাগুলিতে উৎপাদনের কাজ সচল রাখতে হয়। কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য ইউরোপের শিল্পোন্নত দেশগুলি সুকৌশলে এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে সেখানে নিজেদের ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা করে।

(গ) পুঁজি বিনিয়োগ

  • (১) বিশিষ্ট ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ হবসন এবং রুশ কমিউনিস্ট নেতা লেনিন সাম্রাজ্যবাদের প্রসারে পণ্য বিক্রির বাজার দখল এবং কাঁচামাল সংগ্রহের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। তারা মনে করেন যে, বিপুল পরিমাণ পুঁজি বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে শিল্পোন্নত দেশগুলির উপনিবেশের অত্যন্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল।
  • (২) হবসনের মতে, পুঁজিপতিরা তাদের হাতে সঞ্চিত বিপুল পরিমাণ মূলধন উপনিবেশগুলিতে বিনিয়োগ করে আরও মুনাফা অর্জনের চেষ্টা চালায়। লেনিন বলেন যে, পুঁজিপতিরা বাজার দখলের চেয়ে উপনিবেশে পুঁজি বিনিয়োগেই বেশি আগ্রহী ছিল।

(ঘ) শ্রমিক সংগ্রহ

শিল্পোৎপাদনের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহ এবং ইউরোপের কলকারখানাগুলিতে কায়িক শ্রমদানের জন্য সস্তায় প্রচুর সংখ্যক শ্রমিকের প্রয়োজন ছিল। ইউরোপের শিল্পোন্নত দেশগুলি ইউরোপের বাইরে বিভিন্ন অনগ্রসর দেশে ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সেখান থেকে সস্তায় প্রচুর শ্রমিকের জোগান অব্যাহত রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করে।

সাম্রাজ্যবাদ প্রসারের সামরিক কারণ

আধুনিক সাম্রাজ্যবাদ প্রসারের সামরিক কারণগুলি হল –

(ক) নিরাপত্তা বৃদ্ধির চেষ্টা

  • (১) সাম্রাজ্যবাদের যুগে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে পারস্পরিক সন্দেহ ও বিদ্বেষ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ইউরোপে যুদ্ধের বাতাবরণ তৈরি হয় এবং বিভিন্ন দেশ নিরাপত্তার অভাব বোধ করতে থাকে।
  • (২) নিজ দেশের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ইউরোপীয় রাষ্ট্র পৃথিবীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সামরিক ও নৌঘাঁটি স্থাপন করতে থাকে। এই স্থানগুলি আবার বাণিজ্যকেন্দ্র এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবেও কাজে লাগানো হয়। সাইপ্রাস ও কেপের মতো নৌঘাটি ইংল্যান্ড দখল করেছিল শুধু নিরাপত্তার উদ্দেশ্যেই।

(খ) সামরিক মর্যাদা বৃদ্ধি

  • (১) ইউরোপের বিভিন্ন দেশ নিজেদের সামরিক শক্তি ও মর্যাদা তুলে ধরার জন্য উপনিবেশ স্থাপনের পথকে বেছে নেয়। ফরাসিরা অতিরিক্ত জনশক্তি ব্যবহার করে নিজেদের শক্তিবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে আফ্রিকায় অভিযান চালায়।
  • (২) ইতালি নিজেদের জাতীয় মর্যাদা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে লিবিয়া দখল করে। আবার, কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রয়োজন না থাকলেও ভবিষ্যতে শত্রুর হাতে চলে যাওয়ার আশঙ্কায় ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্র এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন স্থান দখল করতে থাকে।
  • (৩) অধ্যাপক ডেভিড টমসনের মতে, সাম্রাজ্যবাদের ফলে যুদ্ধ শুরু হয়, এ কথা অর্ধসত্য। আবার এ কথাও সত্য যে, যুদ্ধের ভীতি থেকেই সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভব ঘটে।

সাম্রাজ্যবাদ প্রসারের সামাজিক কারণ

উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কয়েকটি সামাজিক কারণ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যেমন –

(ক) জনসংখ্যা বৃদ্ধি

  • (১) ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশেই জনসংখ্যা বিপুলভাবে বৃদ্ধি পায়। এই বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য বাসস্থান এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা মুশকিল হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে সেখানে তাদের বাড়তি লোকজনের বাসস্থান ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেয়।
  • (২) উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, ‘বাঁচার মতো স্থান’-এর তত্ত্ব প্রচার করে জার্মান রাষ্ট্রপ্রধান হিটলার উপনিবেশ স্থাপনের নীতিকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

(খ) সভ্যতার প্রসার

  • (১) ইউরোপের কোনো কোনো সাম্রাজ্যবাদী চিন্তাবিদ মনে করতেন যে, এশিয়া ও আফ্রিকার অনুন্নত মানুষদের প্রতি ইউরোপের সাদা চামড়ার মানুষদের কিছু ‘দায়বদ্ধতা’ আছে। তথাকথিত এই দায়বদ্ধতা সাদা চামড়ার দায়বদ্ধতা’ নামে পরিচিত। প্রখ্যাত ফরাসি লেখক জুলি ফেরি বলেন যে, অনুন্নত জাতিগুলিকে সভ্য করে তোলা উন্নত জাতিগুলির দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
  • (২) প্রখ্যাত ইংরেজ কবি রুডইয়ার্ড কিপলিং সাদা চামড়ার মানুষকে অনুন্নত জাতিগুলির উন্নতির দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানান। এমন উদ্যমী প্রশাসক হিসেবে মিশর-এ লর্ড ক্রোমার, নাইজেরিয়ায় লর্ড লুগার্ড, উত্তমাশা অন্তরীপে লর্ড মিলনার, জার্মান-পূর্ব আফ্রিকায় কার্ল-পিটার্স, মরক্কোয় মার্শাল লিয়াউতে কৃতিত্বের সাক্ষর রাখেন।

সাম্রাজ্যবাদ প্রসারের ধর্মীয় কারণ

আধুনিক সাম্রাজ্যবাদের প্রসারে খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারকদের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে ডেভিড টমসন উল্লেখ করেছেন। সাম্রাজ্যবাদের প্রসারে ধর্মের নিম্নরূপ ভূমিকা ছিল। –

(ক) ধর্মপ্রচার

  • (১) ইউরোপের খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারকরা এশিয়া ও আফ্রিকার অনুন্নত দেশগুলিতে খ্রিস্টধর্ম প্রচার করে অন্ধকারাচ্ছন্ন জাতিগুলিকে আলোর জগতে আনার উদ্যোগ নেয়। ধর্মপ্রচারের বিষয়ে ইংরেজ মিশনারিদের চেয়ে ফরাসি মিশনারিদের সক্রিয়তা বেশি ছিল। এবিষয়ে ফরাসি মিশনারি স্ট্যানলি এবং কার্ডিনাল লেভিজেরি-র নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
  • (২) ফরাসি মিশনারীরা আফ্রিকার বিভিন্ন স্থানে এবং বেলজিয়ামের মিশনারীরা কঙ্গো অঞ্চলে খুবই সক্রিয় ছিলেন। এসব ধর্মপ্রচারকদের অনুসরণ করে ইউরোপের স্বার্থান্বেষী বণিক ও রাজনীতিকরা এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রবেশ করে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়।

(খ) মানব কল্যাণ

ইউরোপের খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারকরা মানব কল্যাণ এবং নিপীড়িত জনগণের মঙ্গলসাধনের উদ্দেশ্যে এশিয়া ও আফ্রিকার অনুন্নত দেশগুলিতে যাত্রা করে। লন্ডন মিশনারি সোসাইটির একজন সমাজসেবী চিকিৎসক হিসেবে বিখ্যাত স্কট মিশনারি ড. ডেভিড লিভিংস্টোন আফ্রিকায় প্রবেশ করেন। ফরাসি মিশনারিগণ ধর্মপ্রচারের সঙ্গে সঙ্গে আফ্রিকার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যালয় ও চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করে যথার্থ মানব কল্যাণে ব্রতী হন।

সাম্রাজ্যবাদ প্রসারের প্রযুক্তিগত কারণ

  • (ক) আধুনিক কয়েকজন লেখক সাম্রাজ্যবাদের উপাদান হিসেবে প্রযুক্তিবিদ্যার ভূমিকার ওপর জোর দিয়েছেন। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন ফিলিপ কার্টিন, লিওনার্ড থম্পসন, ড্যানিয়েল হেনরিক প্রমুখ।
  • (খ) লিওনার্ড থম্পসনের মতে, উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা, যন্ত্রচালিত যান ইউরোপীয় অভিযাত্রীদের অভিযান স্পৃহা নিঃসন্দেহে বৃদ্ধি করেছিল। প্রসঙ্গত, উন্নত প্রযুক্তিতে গড়ে ওঠা ব্রিটিশ নেভী লিগ, জার্মান নেভী লীগ প্রভৃতি নৌসংগঠনগুলি উপনিবেশ দখলের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করত।

সাম্রাজ্যবাদী শোষণ ও লুণ্ঠন

ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদী বিভিন্ন রাষ্ট্র এশিয়া ও আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে সেই স্থানে দীর্ঘকাল ধরে নির্বিচারে অর্থনৈতিক শোষণ ও লুণ্ঠন চালায়। বিদেশি ঔপনিবেশিক শোষণে উপনিবেশগুলির জনগন সীমাহীন দুর্দশা, অত্যাচার ও বঞ্চনার শিকার হয়।

উপনিবেশ হাতছাড়া

অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতকে আমেরিকার অধিকাংশ ইউরোপীয় উপনিবেশ তাদের ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনতা ছিন্ন করে স্বাধীনতা লাভ করে। নতুন বিশ্বের উপনিবেশে কর্তৃত্ব হারিয়ে স্পেন যথেষ্ট দুর্বল হয়ে পড়ে।

উপনিবেশ ধরে রাখতে সক্ষমতা

ব্রিটেন, পোর্তুগাল, নেদারল্যান্ডস বা হল্যান্ড প্রভৃতি দেশগুলি পুরোনো বিশ্বে, বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তাদের উপনিবেশগুলি ধরে রাখতে সক্ষম হয়।

আফ্রিকার ব্যবচ্ছেদ ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধ

ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে আফ্রিকার ব্যবচ্ছেদকে কেন্দ্র করে ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছোয়। বিংশ শতকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-এ পরাজিত রাষ্ট্রগুলির উপনিবেশ যুদ্ধে বিজয়ী শক্তিগুলি উপনিবেশের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দখল করে নেয়।

উপনিবেশ গুলির মুক্তি আন্দোলন

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-এর পরবর্তীকালে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের উপনিবেশগুলিতে মুক্তি আন্দোলন জোরদার হতে থাকে। আন্দোলনের তীব্রতার ফলে উপনিবেশগুলি একে একে স্বাধীনতা লাভ করতে থাকে।

উপসংহার :- পোর্তুগাল ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে এশিয়া মহাদেশের ম্যাকাও চিনকে ছেড়ে দিলে ইউরোপের সর্বশেষ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটে। এভাবে দীর্ঘ পাঁচ শতকব্যাপী চলা ঔপনিবেশিক যুগের অবসান ঘটে।

(FAQ) সাম্রাজ্যবাদ প্রসারের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. কোন সময় থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে উগ্র জাতীয়তাবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে?

১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের পর।

২. ইউরোপের দেশগুলি কোন কোন মহাদেশে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে?

এশিয়া ও আফ্রিকা।

৩. অষ্টাদশ শতকে ইউরোপের কোন দেশে প্রথম শিল্প বিপ্লব ঘটে?

ইংল্যান্ড।

৪. সাদা চামড়ার দায়বদ্ধতার কথা উল্লেখ করেছেন কারা?

ফরাসি লেখক জুলে ফেরি এবং ইংরেজ কবি রুডইয়ার্ড কিপলিং।

Leave a Comment