পুষ্যভূতি বংশ

থানেশ্বরের পুষ্যভূতি বংশ প্রসঙ্গে প্রভাকর বর্ধন, দেবগুপ্তের সাথে বিরোধ, মৌখরীদের সাথে মিত্রতা, দুই শক্তিজোট, হূণ আক্রমণ, রাজ্যবর্ধন, রাজ্যবর্ধনের মৃত্যু ও হর্ষবর্ধন সম্পর্কে জানবো।

থানেশ্বরের পুষ্যভূতি বংশ

বিষয়পুষ্যভূতি বংশ
প্রতিষ্ঠাতাপ্রভাকরবর্ধন
শ্রেষ্ঠ রাজাহর্ষবর্ধন
রাজধানীথানেশ্বর
পুষ্যভূতি বংশ

ভূমিকা :- বর্তমান ভারত -এর পাঞ্জাবের থানেশ্বর অঞ্চলে পুষ্যভৃতি নামে এক ব্যক্তি একটি রাজ্য স্থাপন করে। এই বংশের রাজাদের নামের শেষে বর্ধন শব্দটি যুক্ত করে একটি বৈশিষ্ট্য স্থাপন করা হয়।

পুষ্যভূতি বংশের প্রথম রাজা প্রভাকর বর্ধন

থাণেশ্বরের পুষ্যভূতি বংশের প্রভাকরবর্ধন ছিলেন খুবই প্রতাপশালী রাজা। হূণ আক্রমণের বিরুদ্ধে তিনি বীরত্বের সঙ্গে পাঞ্জাব রাজ্য রক্ষা করে খুব খ্যাতি ও ক্ষমতা লাভ করেন। প্রভাকরবর্ধনের পুত্র ছিলেন রাজ্যবর্ধন ও হর্ষবর্ধন এবং কন্যা রাজ্যশ্রী।

দেবগুপ্তের সাথে প্রভাকরবর্ধনের বিরোধ

এই যুগে রাজনৈতিক কারণে রাজবংশে বিবাহের প্রথার খুব চল ছিল। প্রভাকরবর্ধন মালব বা রাজপুতানা জয় করার চেষ্টা করলে মালবের পরবর্তী গুপ্তবংশীয় রাজা দেবগুপ্তের সঙ্গে তার বিবাদ বাধে।

মৌখরীদের সাথে প্রভাকরবর্ধনের মিত্রতা

পরবর্তী গুপ্ত বংশের মহাশত্রু ছিল কনৌজ -এর মৌখরী বংশ। তারা মগধ থেকে পরবর্তী গুপ্তদের উচ্ছেদ করেছিল। সুতরাং প্রভাকরবর্ধন মৌখরীদের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি তার কন্যা রাজ্যশ্রীর সঙ্গে মৌখরী রাজা গ্রহবর্মনের বিবাহ দেন। এভাবে পুষ্যভুতি-মৌখরী মৈত্রী গঠিত হয়।

দুই শক্তিজোট

এই মিত্রতার বিরুদ্ধে মালবের দেবগুপ্ত, গৌড় দেশ বা বাংলার রাজা শশাঙ্কের সঙ্গে পাল্টা মিত্রতা গঠন করেন। মগধ-এর ওপর অধিকার নিয়ে গ্রহবর্মা মৌখরীর সঙ্গে শশাঙ্কের শত্রুতা ঘটেছিল। শশাঙ্ক মগধ দখল করে নেন। এভাবে উত্তর ভারতে দুই শক্তি জোট গড়ে ওঠে, যথা থানেশ্বর-কনৌজ জোট বনাম মালব-গৌড় জোট।

প্রভাকরবর্ধনের সময় হূণ আক্রমণ

যতদিন প্রভাকববর্ধন বেঁচে ছিলেন ততদিন পরস্পরকে আক্রমণ না করে প্রতিদ্বন্দ্বী জোট দুই পক্ষ প্রস্তুতি চালাতে থাকে। ৬০০ খ্রিস্টাব্দে হূণ আক্রমণ প্রতিহত করতে গিয়ে প্রভাকরবর্ধনের অকস্মাৎ মৃত্যু হয়। প্রভাকর যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন তারা প্রকৃত হূণ ছিল কিনা এই বিষয়ে পণ্ডিতেরা সন্দেহ প্রকাশ করেন।

পুষ্যভূতি বংশের রাজা রাজ্যবর্ধন

  • (১) প্রভাকরবর্ধনের মৃত্যুর ফলে থানেশ্বরের সিংহাসনে তার জ্যেষ্ঠ পুত্র রাজ্যবর্ধন বসেন (৬০৫-৬০৬ খ্রিস্টাব্দ)। মালব-গৌড় শক্তি জোট থানেশ্বরে রাজনৈতিক পরিবর্তনের সুযোগ নেয়।
  • (২) তারা বুঝতে পারে যে, নতুন রাজা রাজ্যবর্ধন মিত্র কনৌজের গ্রহবর্মনকে খুব তৎপরতার সঙ্গে সাহায্য করতে সক্ষম হবেন না। এই সুযোগে দেবগুপ্ত ও শশাঙ্ক কনৌজ আক্রমণ করে গ্রহবর্মনকে নিহত করেন এবং রাজ্যশ্রীকে বন্দিনী করে ফেলেন।
  • (৩) রাজ্যবর্ধন কনৌজে শত্রুপক্ষের আক্রমণ ও জয়লাভের সংবাদ পেয়ে সেনাদল নিয়ে কনৌজের দিকে ছুটে যান। পথে তিনি মালব রাজ দেবগুপ্তকে পরাস্ত করেন।

রাজ্যবর্ধনের মৃত্যু

গৌড়রাজ শশাঙ্ক রাজ্যবর্ধনকে নিহত করেন। শশাঙ্ক রাজ্যবর্ধনকে ন্যায্য যুদ্ধে অথবা চক্রান্ত করে নিহত করেন, তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে।

পুষ্যভূতি বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা হর্ষবর্ধন

অগ্ৰজ রাজ্যবর্ধনের মৃত্যুর পর হর্ষবর্ধন ৬০৬ খ্রিস্টাব্দে পৈত্রিক রাজ্য থানেশ্বরের সিংহাসনে বসেন। এর পর তিনি ভগিনী রাজ্যশ্রীর পক্ষে তাঁর মৃত স্বামীর রাজ্য কনৌজ অধিকার করেন। কনৌজকে নিজ রাজ্যের সঙ্গে সংযুক্ত করে হর্ষ তাঁর রাজ্য বিস্তার নীতির সূত্রপাত করেন।

উপসংহার :- হর্ষবর্ধন ৬৪৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। তার সময়কালে সাম্রাজ্য ব্যাপক বিস্তার লাভ করে। কিন্তু তার মৃত্যুর পর সাম্রাজ্য ভেঙে যায়।

(FAQ) পুষ্যভূতি বংশ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. পুষ্যভূতি বংশ কোথায় শাসন করত?

পাঞ্জাবের থানেশ্বর।

২. পুষ্যভূতি বংশের প্রথম রাজা কে ছিলেন?

প্রভাকরবর্ধন।

৩. পুষ্যভূতি বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা কে ছিলেন?

হর্ষবর্ধন।

৪. শিলাদিত্য কে ছিলেন?

হর্ষবর্ধন।

৫. বাণভট্ট কার সভাকবি ছিলেন?

হর্ষবর্ধন।

Leave a Comment