মৈত্রক বংশ

বলভীর মৈত্রক বংশ প্রসঙ্গে সম্মিলিত ইতিহাস, বলভীর অবস্থান, প্রথম শিলাদিত্য, দ্বিতীয় ধ্রুবসেন, চতুর্থ ধ্রুবসেন, সাম্রাজ্যের দুর্বলতা ও পতন, সংস্কৃতি ও ধর্ম সম্পর্কে জানবো।

মৈত্রক বংশ

বিষয়বলভীর মৈত্রক বংশ
প্রতিষ্ঠাতাভতার্ক
শ্রেষ্ঠ রাজাদ্বিতীয় ধ্রুবসেন
শেষ রাজাসপ্তম শিলাদিত্য
মৈত্রক বংশ

ভূমিকা :- প্রাচীন গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতন-এর পর উত্তর ভারত -এ রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা প্রবলভাবে দেখা দেয়। ধ্বংসপ্রাপ্ত গুপ্ত সাম্রাজ্য-এর ওপর কয়েকটি আঞ্চলিক রাজ্য গড়ে ওঠে। এই আঞ্চলিক রাজ্যগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল বলভীর মৈত্রক বংশ।

সম্মিলিত ইতিহাস

হর্ষবর্ধন -এর মৃত্যুর পর পুনরায় রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়। গুপ্ত যুগের পর হতে হর্ষবর্ধনের উদ্ভব পর্যন্ত কোন একটি রাজবংশের ইতিহাস সমগ্র উত্তর ভারতের ইতিহাস নয়। আঞ্চলিক রাজবংশগুলির সম্মিলিত ইতিহাসকেই এই যুগের ইতিহাস বলে ধরা হয়।

বলভীর অবস্থান

গুপ্ত সাম্রাজ্যের পশ্চিম অংশে, পশ্চিম ভারতের সৌরাষ্ট্রে বলভী প্রদেশ অবস্থিত ছিল।

মৈত্রক বংশের প্রতিষ্ঠাতা

গুপ্ত সম্রাটের অধীনে মৈত্রক বংশীয় ভতার্ক সামন্ত রাজ্য হিসাবে বলভী রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর বংশধর দ্রোণসিংহ মহারাজা উপাধি নিয়ে নিজ ক্ষমতা জাহির করেন।

মৈত্রক বংশের রাজা প্রথম শিলাদিত্য

এই বংশের প্রথম শিলাদিত্য সমগ্র সৌরাষ্ট্র ও মালবের কিছু অংশ নিজ শাসনভুক্ত করেন। তিনি ৬০৬-৬১২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন।

মৈত্রক বংশের রাজা দ্বিতীয় ধ্রুবসেন

শিলাদিত্যের পর দ্বিতীয় ধ্রুবসেন বলভীর সিংহাসনে বসেন। কনৌজ -এর অধিপতি হর্ষবর্ধন তাকে আক্রমন করে পরাস্ত করলে তিনি হর্ষের বিরোধিতা ত্যাগ করেন এবং নিজ কন্যাকে হর্ষের সঙ্গে বিবাহ দেন। তিনি হর্ষের আহূত প্রয়োগের ধর্মসভায় যোগ দেন।

মৈত্রক বংশের রাজা চতুর্থ ধ্রুবসেন

এর পর চতুর্থ ধ্রুবসেন তাঁর ক্ষমতার প্রতীক হিসাবে মহারাজাধিরাজ উপাধি নেন। এর পর একাদিক্রমে তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শিলাদিত্য বলভীতে রাজত্ব করেন।

মৈত্রক বংশের দুর্বলতা ও পতন

শেষের দিকর অযোগ্য শাসকদের আমলে বলভী রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে। কারণ, রাষ্ট্রকুট ও প্রতিহার শক্তির চাপে বলভী দুর্বল হয়ে যায়। ইতিমধ্যে সপ্তম শিলাদিত্যের আমলে আবববা বলভী আক্রমণ করলে বলভীর পতন ঘটে।

মৈত্রক বংশের সংস্কৃতি ও ধর্ম

বলভী রাজ্য শিক্ষা ও সংস্কৃতির জন্য বিশেষ বিখ্যাত ছিল। বলভীর বন্দর হতে পশ্চিম এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চলত। ডঃ আলতেকারের মতে, বলভীর রাজারা ছিলেন শৈব। কিন্তু তারা ছিলেন ধর্মসহিষ্ণু। বৌদ্ধ ধর্ম অবলম্বীরা তাদের রাজ্যে নির্ভয়ে থাকত।

ইৎ সিং-এর বর্ণনা বলভী

চীনা পর্যটক ই-সিং বলভী দেখে উচ্চ প্রশংসা করেন৷ বলভীর বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব খ্যাতি ছিল। গাঙ্গেয় উপত্যকা থেকে বহু ছাত্র এখানে পড়তে আসত। বলভীর পণ্ডিত স্থিরমতি ও গুণমতির খুব খ্যাতি ছিল।

উপসংহার :- এই রাজ্যগুলি পরস্পরের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফলে দুর্বল হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত সপ্তম শতকে পুষ্যভুতি বংশ -এর হর্ষবর্ধন উত্তর ভারতের বৃহৎ অংশে তার আধিপত্য স্থাপন করলে উত্তর ভারতে কিছুদিনের মত রাজনৈতিক স্থিতি ফিরে আসে।

(FAQ) মৈত্রক বংশ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. বলভীর মৈত্রক বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে?

ভতার্ক।

২. বলভীর মৈত্রক বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা কে?

দ্বিতীয় ধ্রুবসেন।

৩. দ্বিতীয় ধ্রুবসেনকে কে পরাজিত করেন?

হর্ষবর্ধন।

Leave a Comment