কনৌজের মৌখরী বংশ প্রসঙ্গে মৌখরীদের পরিচয়, হরিবর্মন, অদ্বৈতবর্মন, ঈশ্বরবর্মন, ঈশানবর্মন, অবন্তীবর্মন ও গ্ৰহবর্মন সম্পর্কে জানবো।
মৌখরী বংশ
বিষয় | মৌখরী বংশ |
রাজ্য | কনৌজ |
প্রতিষ্ঠাতা | হরিবর্মন |
প্রতাপশালী রাজা | ঈশানবর্মন |
দখলকারী | হর্ষবর্ধন |
ভূমিকা :- গুপ্ত সাম্রাজ্য -এর ধ্বংসস্তূপের উপর যে রাজ্যগুলি গড়ে উঠে তার মধ্যে কনৌজের মৌখরী শক্তি বিশেষ ক্ষমতাশালী ছিল। মৌখরী বংশ ছিল খুবই প্রাচীন বংশ। পাণিনির গ্ৰন্থে এই বংশের উল্লেখ দেখা যায়। মৌর্যযুগেও এরা পরিচিত ছিল।
মৌখরীদের পরিচয়
জেনারেল কানিংহাম একটি মৃতফলক গয়ায় আবিষ্কার করেন। তার ফলে জানা যায় যে, এঁরা এক সময় অঙ্গরাজ্য বা দক্ষিণ বিহারে বসবাস করতেন। তারপর তারা উত্তর প্রদেশের কনৌজ অঞ্চলে চলে যান। মৌখরীদের দুটি শাখা ছিল। এঁরা গুপ্ত সম্রাটদের সামন্ত হিসাবে ছিলেন।
হরিবর্মন
খ্রিস্ট পূর্ব ষষ্ঠ শতকে হরিবর্মন মৌখরী মহারাজা উপাধি নেন। তাকেই প্রকৃত পক্ষে মৌখরী রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বলা যায়। তাঁর পূর্ববর্তী মৌখরীরা ছিলেন সামন্ত শাসক মাত্র।
অদ্বৈতবর্মন
হরিবর্মনের পর অদ্বৈতবর্মনও মহারাজা উপাধি রক্ষা করেন। তিনি পরবর্তী গুপ্ত রাজবংশ -এর এক রাজকন্যাকে বিবাহ করে নিজ বংশের মর্যাদা বাড়ান।
ঈশ্বরবর্মন
তাঁর পুত্র ঈশ্বরবর্মন মালবের রাজা যশোধর্মন -এর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হন। তিনি উত্তর ভারত -এ অন্ধ্র আক্রমণ প্রতিহত করেন।
ঈশানবর্মন
ঈশ্বরবর্মনের পুত্র ঈশানবর্মন মৌখরী ছিলেন মহাপ্রতাপশালী রাজা। তিনি ৫৫৪ খ্রিস্টাব্দে মহারাজাধিরাজ উপাধি নেন। তার রাজত্বকালের বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(১) রাজ্য জয়
তিনি উত্তর প্রদেশ, মগধ -এর কিছু অংশ, গৌড় এবং উড়িষ্যা ও অন্ধ্রের কিছু অংশ অধিকার করেন বলে তাঁর শিলালিপি থেকে জানা যায়।
(২) গুপ্ত-মৌখরী প্রতিদ্বন্দ্বিতা
তিনি গুপ্ত সাম্রাজ্যের অবশিষ্ট অংশের উপর আধিপত্য লাভের জন্য পরবর্তী গুপ্ত বংশের সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হন। এর ফলেই শেষ পর্যন্ত গুপ্ত-মৌখরী প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরম্ভ হয়, যাতে থানেশ্বরের পুষ্যভূতি বংশ ও বাংলার গৌড়রাজ শশাঙ্ক জড়িয়ে পড়েন। ঈশানবর্মনই এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার সূত্রপাত করেন।
(৩) হূণদের পরাজয়
ঈশানবর্মনের অপর কৃতিত্ব ছিল হূণ যুদ্ধে জয়লাভ। বাণভট্ট তাকে “হূণ-হরিণ-কেশরী” অর্থাৎ হরিণ রূপ হূণদের সিংহ বলে বর্ণনা করেছেন। ঈশানবর্মন যাদের পরাস্ত করেন তারা হূণ অথবা গুর্জর উপজাতি ছিলেন তা সঠিক জানা যায় নি।
(৪) তিনি ‘শূলিক’দের বিধ্বস্ত করেন বলে হর্ষচরিতে বলা হয়েছে। ‘শূলিক’ বলতে অনেকে দক্ষিণ ভারতের চোলদের বলেন। কারণ, এদের সেনারা শুল বা বল্লম নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে যেত।
সর্ববর্মন ও অবন্তীবর্মন
ঈশানবর্মনের পর সর্ববর্মন ও অবন্তীবর্মন ৫৮০-৬০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। তারা পরবর্তী গুপ্তদের হাত হতে মগধ জয় করেন বলে ডঃ মজুমদার মনে করেন।
গ্ৰহবর্মন
- (১) অবন্তীবর্মনের পর কনৌজের সিংহাসনে বসেন গ্রহবর্মন মৌখরী। থানেশ্বর রাজ পুষ্যভূতি বংশীয় প্রভাকরবর্ধনের কন্যা রাজশ্রীকে তিনি বিবাহ করেন। এর ফলে পরবর্তী গুপ্ত বংশের বিরুদ্ধে মৌখরী বংশের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- (২) থানেশ্বর ও কনৌজ একজোট হয়ে মালবের গুপ্ত বংশকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করে। এর বিরুদ্ধে মালবের দেবগুপ্ত বাংলার বা গৌড়ের রাজা শশাঙ্কের সঙ্গে পাল্টা মিত্রতা করেন। শশাঙ্ক ও দেবগুপ্তের অকস্মাৎ আক্রমণে গ্রহবর্মন নিহত হন। রাজশ্রী বন্দিনী হন।
- (৩) কনৌজের সিংহাসনে শশাঙ্ক তাঁর নিজের পছন্দের লোককে বসাবার চেষ্টা করেন। ভগিনীপতির মৃত্যু ও ভগিনীর বন্দিনী হওয়ার খবর পেয়ে থানেশ্বরের নতুন রাজা প্রভাকর বর্ধনের পুত্র রাজ্যবর্ধন দ্রুত কনৌজের দিকে ছুটে আসেন।
উপসংহার :- গৌড় রাজ শশাঙ্ক রাজ্যবর্ধনকে নিহত করেন। এর পর রাজ্যবর্ধনের ভাই হর্ষবর্ধন যুদ্ধ যাত্রা করলে শশাঙ্ক গৌড়ে ফিরে যান। কনৌজ হর্ষের রাজ্যভুক্ত হয়।
(FAQ) মৌখরী বংশ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
হরিবর্মন।
ঈশানবর্মন।
বাণভট্ট মৌখরী রাজ ঈশানবর্মনকে।
গ্ৰহবর্মা।