পরবর্তী গুপ্ত রাজবংশ প্রসঙ্গে উৎপত্তি, হর্ষবর্ধনের শিলালিপি, প্রথম রাজা, কুমার গুপ্ত, দামোদর গুপ্ত, মহাসেন গুপ্ত, ডঃ বসাকের অভিমত ও মালবে তাদের শাসন সম্পর্কে জানবো।
পরবর্তী গুপ্ত রাজবংশ
বিষয় | পরবর্তী গুপ্ত রাজবংশ |
রাজ্য | মগধ |
প্রথম রাজা | কৃষ্ণগুপ্ত |
পতন | খ্রিস্টিয় অষ্টম শতক |
ভূমিকা :- গুপ্ত সাম্রাজ্য স্থাপনকারী গুপ্ত বংশের পতনের পর মগধে অপর একটি গুপ্তবংশ কিছুকাল শাসন করে। ইতিহাসে এঁদের পরবর্তী গুপ্তবংশ বলে পরিচয় দেওয়া হয়।
উৎপত্তি
- (১) পরবর্তী গুপ্তবংশের উৎপত্তি সম্পর্কে সঠিক কিছু জানা যায়নি। ডঃ আর সি মজুমদারের মতে, এই রাজবংশ ছিল স্বতন্ত্র এবং প্রধান গুপ্তবংশের সঙ্গে এঁদের কোনো রক্তসম্পর্ক ছিল না। কিন্তু এই মত অনেক পণ্ডিত স্বীকার করেন না। পরবর্তী গুপ্তবংশ সাম্রাজ্যবাদী গুপ্তবংশের সম্পর্কিত ছিল বলে তারা মনে করেন।
- (২) পুরুগুপ্তের বংশধররাই পরবর্তী গুপ্তবংশ নামে পরিচিত হয়। সাম্রাজ্যবাদী গুপ্তবংশ শেষ দিকে মগধ অঞ্চলে রাজত্ব করত এবং পরবর্তী গুপ্তবংশও গোড়ার দিকে মগধ অঞ্চলে রাজত্ব করত। সুতরাং পরবর্তী গুপ্তবংশ হয় প্রধান গুপ্তবংশের সামন্ত অথবা প্রধান গুপ্তবংশের রক্ত-সম্পর্কিত ছিল বলে মনে করা হয়।
হর্ষের শিলালিপি
হর্ষবর্ধন -এর শিলালিপি থেকে ১১ জন পরবর্তী গুপ্ত রাজার নাম পাওয়া যায়। চালুক্য শিলালিপি থেকে আরও তিনজন গুপ্ত রাজার নাম পাওয়া যায়। মধুবন লিপি থেকে দেবগুপ্তের নাম জানা যায়।
প্রথম রাজা
পরবর্তী গুপ্তবংশের প্রথম স্বাধীন রাজার নাম ছিল কৃষ্ণগুপ্ত। তারপর হর্ষগুপ্ত ও জীবিতগুপ্ত রাজত্ব করেন।
কুমারগুপ্ত
চতুর্থ রাজা কুমারগুপ্তের সঙ্গে মৌখরী বংশ -এর প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরম্ভ হয়। তিনি ঈশানবর্মন মৌখরীকে যুদ্ধে পরাস্ত করেন বলে অপসন লিপি থেকে জানা যায়। কুমারগুপ্ত প্রয়াগ জয় করেন।
দামোদর গুপ্ত
পরবর্তী রাজা দামোদর গুপ্ত মালব বা রাজপুতানার কিছু অংশ জয় করেন।
মহাসেন গুপ্ত
- (১) তাঁর পুত্র মহাসেন গুপ্ত পূর্বদিকে কামরূপ অঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা জয় করেন। বাংলাদেশ -এর কিছু অংশও তিনি অধিকার করেন। মালব থেকে কামরূপ পর্যন্ত বিরাট অঞ্চল তার অধিকারে আসে।
- (২) কিন্তু দক্ষিণ ভারত থেকে কীর্তিবর্মন চালুক্য ও হিমালয় অঞ্চল হতে তিব্বতীয়নের আক্রমণে মহাসেনগুপ্তের সাম্রাজ্য খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই সুযোগে বলভির মৈত্রক বংশ ও কলচুরিয়গন মালব অধিকার করে।
- (৩) মালব হারাবার ফলে মহাসেনগুপ্ত কেবলমাত্র মগধ ও গৌড় অঞ্চলের ওপর তার অধিকার রাখতে পারেন। কিন্তু গৌড়াধিপ শশাঙ্ক গৌড় ও মগধ অধিকার করলে মহাসেন গুপ্তের পায়ের তলার শেষ জমিটিও চলে যায়।
থানেশ্বরে আশ্রয়
- (১) বাণভট্টের হর্ষচরিত থেকে জানা যায় যে, মহাসেনগুপ্তের দুই নাবালক সন্তান প্রভাকরবর্ধনের দরবারে আশ্রয় নেয়। এর একজনের নাম ছিল মাধবগুপ্ত।
- (২) ডঃ আর জি বসাক তাঁর হিস্ট্রি অফ নর্থ ইষ্ট ইণ্ডিয়া গ্ৰন্থে বলেছেন যে, মহাসেনগুপ্তের ভগ্নী ছিলেন প্রভাকববর্ধনের পত্নী। এই সূত্রে মহাসেনের পুত্ররা থানেশ্বরে আশ্রয় নেয়।
ডঃ বসাকের অভিমত
ডঃ বসাকের মতে, মাধবগুপ্তের পুত্র ছিলেন আদিত্য সেনগুপ্ত। তিনি তাঁর পিতৃরাজ্যে সগৌরবে শাসন করতেন। আদিত্য সেনগুপ্তের অন্যতম পুত্র মগধে রাজত্ব করতেন।
মালবে শাসন
- (১) পরবর্তী গুপ্তবংশের একটি শাখা মালবে শাসন করত। তার রাজা দেবগুপ্তের সঙ্গে থানেশ্বরের রাজা পুষ্যভূতি বংশ -এর দারুণ শত্রুতা ছিল। কারণ প্রভাকরবর্ধন মহাসেনগুপ্তের পুত্রদের আশ্রয় দেন।
- (২) মহাসেনগুপ্তের শত্রু শশাঙ্কের সঙ্গে দেবগুপ্ত মিত্রতাবদ্ধ হন। তারপর তারা এক যোগে প্রভাকরবর্ধনের জামাতা কনৌজরাজ গ্রহবর্মন মৌখরীকে আক্রমণ ও নিহত করেন।
উপসংহার :- অষ্টম খ্রিস্টাব্দে বাংলার রাজারা মগধ জয় করলে পরবর্তী গুপ্ত রাজবংশের পতন হয়।
(FAQ) পরবর্তী গুপ্ত রাজবংশ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
মগধ।
কৃষ্ণগুপ্ত।
দেবগুপ্ত।
অষ্টম শতকে।