কামরূপ রাজ্য

কামরূপ রাজ্য প্রসঙ্গে সময়সীমা, প্রাগজ্যোতিষ, এলাহাবাদ প্রশস্তি, রঘুবংশের কাহিনী, হিউয়েন সাঙের বিবরণ, ভূতিবর্মন, সুস্থিতবর্মন, ভাস্করবর্মন, ব্রহ্মপাল ও এর পতন সম্পর্কে জানবো।

কামরূপ রাজ্য

বিষয়কামরূপ রাজ্য
প্রথম রাজাভূতিবর্মন
শ্রেষ্ঠ রাজাভাস্করবর্মন
রঘুবংশকালিদাস
কামরূপ রাজ্য

ভূমিকা :- ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা এবং তৎসংলগ্ন এলাকার সমন্বয়ে গঠিত ছিল কামরূপ রাজ্য। প্রাচীনকালে এর নাম ছিল প্রাগজ্যোতিষ। বর্তমানে ভারত -এর আসাম রাজ্য এবং বাংলাদেশ -এর সিলেট বিভাগ এর অন্তর্ভুক্ত ছিল।

কামরূপ রাজ্যের সময়সীমা

এই ঐতিহাসিক রাজ্যের সময়কাল চতুর্থ থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে ছিল। কিন্তু বহুপরবর্তী পর্যন্ত এর উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রাচীন এবং মধ্যযুগে ঐতিহাসিকগণ কামরূপ নামেই এর উল্লেখ করেছেন।

কামরূপ রাজ্যের নাম প্রাগজ্যোতিষ

মহাভারত এবং রামায়ণ -এ এই অঞ্চলকে প্রাগজ্যোতিষ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। পেরিপ্লাস (প্রথম শতাব্দী) এবং টলেমির জিওগ্রাফিয়াতে (দ্বিতীয় শতাব্দী) এই অঞ্চলকে কিরহাদিয়া নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

এলাহাবাদ প্রশস্তিতে কামরূপ রাজ্যের উল্লেখ

সমুদ্রগুপ্ত -এর দিগ্বিজয়ের কাহিনী সম্বলিত এলাহাবাদ প্রশস্তিতে বলা হয়েছে যে, কামরূপ রাজ্য তার বশ্যতা স্বীকার করেছিল।

রঘুবংশমের বর্ণনায় কামরূপ রাজ্য

কালিদাস রঘুবংশম কাব্যের চতুর্থ সর্গে বলেছেন যে, “রঘু যখন লোহিত্য বা ব্ৰহ্মপুত্র নদ অতিক্রম করেন, তখন প্রাগজ্যোতিষ বা কামরূপের অধীশ্বর তার ভয়ে কাঁপতে থাকেন, যেমনভাবে কাল অগুরু বা শালগাছগুলিতে বাঁধা হাতির চাপে গাছগুলি কাঁপছিল।” অনেকে মনে করেন যে, কালিদাস রঘুর নামে সমুদ্রগুপ্তের দিগ্বিজয়ের বর্ণনাই দিয়েছেন।

হিউয়েন সাঙের বিবরণ

হিউয়েন সাঙ -এর মতে এই রাজ্যের পশ্চিম সীমানায় করোতয়া নদী এবং পূর্বে সাদিয়ার নিকটবর্তী দিক্কারবাসিনী মন্দির ছিল। বর্মণ রাজবংশ, ম্লেচ্ছ রাজবংশ এবং পাল রাজবংশ রাজ্যটি দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত শাসন করে।

রাজা ভূতিবর্মন

গুপ্ত সাম্রাজ্য -এর দুর্বলতার সুযোগে কামরূপের সামন্ত রাজা ভূতিবর্মন মহারাজাধিরাজ উপাধি নেন। তিনি প্রতিবেশী দাবক বা ঢাকা এবং সুর্মা উপত্যকা বা সিলেট অধিকার করেন।

সুস্থিতবর্মন

ভূতিবর্মনের পৌত্র সুস্থিতবর্মনকে পরবর্তী গুপ্ত রাজা মহাসেন গুপ্ত পরাস্ত করেন বলে জানা যায়। তবে সুস্থিতবর্মন নিজ সিংহাসন রক্ষা করতে সক্ষম হন। এর পর থেকে কামরূপের সঙ্গে পরবর্তী গুপ্ত রাজবংশ -এর একটা স্থায়ী শত্রুতা আরম্ভ হয়।

ভাস্করবর্মন

ভাস্করবর্মন, মহাসেন গুপ্তকে পরাস্ত করেন বলে জানা যায়। পরবর্তীকালে ভাস্করবর্মন হর্ষবর্ধন -এর সঙ্গে গৌড়াধিপ শশাঙ্ক ও মালবের দেবগুপ্তের বিরুদ্ধে জোট বেঁধে ছিলেন। হর্ষবর্ধনের মিত্র হিসেবে শশাঙ্কের মৃত্যুর পর তিনি বাংলার কিছু অংশ অধিকার করেন।

কামরূপ রাজ্যের ম্লেচ্ছ বংশ

কোনো উত্তরাধিকারী ছাড়াই ভাস্করবর্মণের মৃত্যুর পর রাজ্যের শাসন দীর্ঘসময়ের অভ্যন্তরীণ কলহ এবং রাজনৈতিক বিবাদের পর আদিবাসী গোষ্ঠীর ম্লেচ্ছ সলস্থম্ভের (৬৫৫-৬৭০ খ্রিস্টাব্দ) অধীনে চলে যায়। এই বংশের রাজধানী ছিল হডপেশ্বর, যা বর্তমান তেজপুরের নিকটবর্তী। এই বংশ সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় না। এই ধারার সর্বশেষ শাসক ছিলেন ত্যাগ সিংহ (৮৯০-৯০০)।

ব্রহ্মপাল

কোনো উত্তরাধিকারী ছাড়াই ত্যাগসিংহের মৃত্যুবরণের পর বঙ্গের পাল সাম্রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পাল বংশের সদস্য ব্রহ্মপাল (৯০০-৯২০ খ্রিস্টাব্দ) শাসনকারী দলপতিদের মাধ্যমে কামরূপের রাজা হিসেবে মনোনীত হন। রাজ্যের প্রকৃত রাজধানী হডপেশ্বর থেকে সরিয়ে বর্তমান গোহাটির নিকটবর্তী রতনপাল নির্মিত দুর্জয়ে নিয়ে যায়।

কামরূপ রাজ্যের পতন

১২০৫ সালে তুর্কী বখতিয়ার খলজি কামরূপ পার হয়ে তিব্বত আক্রমণ করেন যা বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়। ১২২৮ সালে চুকাফা কামরূপের এক অজানা শাসককে পরাজিত করে কামরূপ দখল করে।

উপসংহার :- কামরূপ রাজ্য বর্তমানে ভারতের অঙ্গরাজ্য আসাম। কামরূপ রাজ্যের নাম আজও আসামের কামরূপ জেলার মধ্য দিয়ে বেঁচে আছে।

(FAQ) কামরূপ রাজ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. কামরূপ রাজ্যের শ্রেষ্ঠ রাজা কে?

ভাস্করবর্মন।

২. কামরূপ রাজ্য বর্তমানে কোন এলাকা?

ভারতের আসাম রাজ্য।

৩. প্রাচীনকালে কামরূপ রাজ্যের নাম কি ছিল?

প্রাগজ্যোতিষ।

Leave a Comment