সমুদ্রগুপ্ত

গুপ্ত সম্রাট সমুদ্রগুপ্ত প্রসঙ্গে জন্ম, সিংহাসনে আরোহণ, অভিষেক ঘটিত দ্বন্দ্ব, ঐতিহাসিক উপাদান, ভারতের নেপোলিয়ন, রাজ্য জয়, সংস্কৃতিমনস্কতা, পরধর্মসহিষ্ণুতা সম্পর্কে জানবো।

সমুদ্রগুপ্ত প্রসঙ্গে সমুদ্রগুপ্তের জন্ম, সমুদ্রগুপ্তের সিংহাসনে আরোহণ, সমুদ্রগুপ্তের অভিষেক ঘটিত দ্বন্দ্ব, সমুদ্রগুপ্ত সম্পর্কে ঐতিহাসিক উপাদান, ভারতের নেপোলিয়ন সমুদ্রগুপ্ত, সমুদ্রগুপ্তের দিগ্বিজয়, সমুদ্রগুপ্তের রাজ্য জয়, সমুদ্রগুপ্তের সংস্কৃতিমনস্কতা, পরধর্মসহিষ্ণু সমুদ্রগুপ্ত ও লিচ্ছবি দৌহিত্র সমুদ্রগুপ্ত।

গুপ্ত সম্রাট সমুদ্রগুপ্ত

ঐতিহাসিক চরিত্রসমুদ্রগুপ্ত
সাম্রাজ্যগুপ্ত সাম্রাজ্য
পূর্বসূরিপ্রথম চন্দ্রগুপ্ত
উত্তরসূরিদ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত
উপাধিভারত -এর নেপোলিয়ন
সমুদ্রগুপ্ত

ভূমিকা :- গুপ্তসম্রাট প্রথম চন্দ্রগুপ্তের পুত্র, উত্তরাধিকারী এবং গুপ্ত সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন সমুদ্রগুপ্ত। শুধু গুপ্ত বংশেরই নন, তিনি ছিলেন ভারতীয় ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সামরিক শাসক।

সমুদ্রগুপ্তের জন্ম

প্রথম চন্দ্রগুপ্তের পাটরানী কুমারদেবীর গর্ভে সমুদ্রগুপ্তের জন্ম হয়।

সমুদ্রগুপ্তের সিংহাসনে আরোহণ

৩৪০ থেকে ৩৫০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে কোনও এক সময়ে সমুদ্রগুপ্ত সিংহাসনে আরোহণ করেন। অধিকাংশ ঐতিহাসিক এই মতেরই অনুসারী। ডক্টর আর কে মুখোপাধ্যায়ের মতে, সমুদ্রগুপ্ত ৩২৫ খ্রিষ্টাব্দে সিংহাসনে বসেন। বর্তমান কালের ঐতিহাসিকগণ ৩৩৫ খ্রিষ্টাব্দকেই সমুদ্রগুপ্তের সিংহাসনারোহণের বছর রূপে চিহ্নিত করে থাকেন।

সমুদ্রগুপ্তের অভিষেক ঘটিত দ্বন্দ্ব

  • (১) সমুদ্রগুপ্তের এলাহাবাদ প্রশস্তির চতুর্থ স্তবক হতে জানা যায় যে, “রাজসভায় যখন চন্দ্রগুপ্ত তাকে যোগ্য বিবেচনা করে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেন তখন তাঁর রক্তসম্পর্কিত নিজ বংশের লোকেদের (তুল্য কুলজ) মুখ হতাশায় পাংশুবর্ণ হয়ে গিয়েছিল।”
  • (২) এই বিবরণ থেকে মনে করা হয় যে, সমুদ্রগুপ্তের অন্য ভ্রাতারা সম্ভবত জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা এতে ঈর্ষাবোধ করেন। এজন্য “তুল্য কুলজ” শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। এর থেকে সঙ্গতভাবে অনুমান করা হয় যে, সমুদ্রগুপ্ত ছাড়া তাঁর অন্যান্য ভ্রাতাদের মধ্যে সিংহাসনের দাবীদার ছিল।
  • (৩) সম্ভবত সমুদ্রগুপ্তের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ছিলেন। তবে তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের নাম কি ছিল তা সঠিক জানা যায়নি। স্মিথের মতে, এই ভ্রাতার নাম ছিল ‘কচ’ এবং ‘কচ’ নামাঙ্কিত গুপ্ত যুগের মুদ্রা এর অস্তিত্ব প্রমাণ করে। এই মুদ্রার এক পিঠে আছে কচের নাম, অপর পিঠে ব্রাহ্মী লিপিতে “সর্বরাজোচ্ছেত্তা” উপাধি।
  • (৪) সম্ভবত দরবারের এক শ্রেণীর অভিজাত কচের পক্ষ নেন। এর ফলে সিংহাসন নিয়ে গৃহযুদ্ধ হয় এবং এতে সমুদ্রগুপ্ত জয়লাভ করেন। দরবারের অমাত্যদের একাংশ সমুদ্রগুপ্তের বিরোধিতা করেন। তার কারণ হল যে, সমুদ্রগুপ্তের মাতা ছিলেন লিচ্ছবি বংশীয়া। সমুদ্রগুপ্ত নিজেকে “লিচ্ছবি দৌহিত্র” বলতেন।
  • (৫) এক শ্রেণীর গোঁড়া ব্রাহ্মণ্য ধর্মের অনুরাগীদের চোখে লিচ্ছবিরা ছিলেন “ব্রাত্য”। সমুদ্রগুপ্ত যেহেতু লিচ্ছবি রক্ত দেহে বহন করতেন সেহেতু তিনিও ছিলেন “ব্রাত্য”। ডঃ গয়ালের মতে, কচ ও সমুদ্রগুপ্তের সংঘাত ছিল মূলত দুই ভিন্ন আদর্শের সংঘাত।
  • (৬) কচের মুদ্রাগুলি প্রধানত উত্তরপ্রদেশের পূর্বভাগে পাওয়া গেছে যে অঞ্চল ছিল ব্রাহ্মণ্য ধর্মের হৃৎপিণ্ড। সুতরাং কচের পশ্চাতে গোঁড়া ব্রাহ্মণ্য সম্প্রদায়ের সমর্থন ছিল। দরবারের গোঁড়া অমাত্যরাও এর মধ্যে ছিলেন। ব্রাত্য লিচ্ছবি মাতার তনয় সমুদ্রগুপ্ত ছিলেন তাদের কাছে অদ্ভুত।
  • (৭) যাই হোক, সমুদ্রগুপ্ত এই বিদ্রোহ দমন করে নিজ ক্ষমতাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। কচের সঙ্গে সমুদ্রগুপ্তের সিংহাসন নিয়ে বিরোধকে এ্যালান ভিত্তিহীন মনে করেন। তিনি বলেন যে, “কচ” হল সমুদ্রগুপ্তের অপর নাম। মুদ্রাতে “কচ” নামটি সমুদ্রগুপ্তেরই। এর উত্তরে বলা হয় যে, সমুদ্রগুপ্ত নিজ নাম ছেড়ে তাঁর অপরিচিত নাম অথবা ডাক নামে মুদ্রা ছাপাবেন এটা আশা করা যায় না।

সমুদ্রগুপ্ত সম্পর্কে ঐতিহাসিক উপাদান

সমুদ্রগুপ্ত সম্পর্কে ঐতিহাসিক উপাদান হল তাঁর সভাকবি হরিষেণ বিরচিত এলাহাবাদ প্রশস্তি ও মধ্যপ্রদেশের এরাণ লিপি। এছাড়া গয়া ও নালন্দা লিপি থেকে কিছু তথ্য পাওয়া যায়।

ভারতের নেপোলিয়ন সমুদ্রগুপ্ত

ঐতিহাসিক স্মিথ তাকে “ভারতীয় নেপোলিয়ন” আখ্যা দিয়েছেন। এই অভিধা সর্বাংশে সমর্থনযোগ্য না হলেও অনেকটা যুক্তিযুক্ত। বস্তুত চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য -এর পর এবং কুষাণ সম্রাট কণিষ্ক -এর পর এত বড় বিজয়ী ভারতের ইতিহাসে আসেননি।

সমুদ্রগুপ্তের দিগ্বিজয়

“শক্তিমান মাত্রেই যুদ্ধ করবে ও শত্রু নিপাত করবে” – কৌটিল্য -এর এই নীতির প্রভাবে সিংহাসনে বসেই মহাপদ্মনন্দ ও চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের মতো দিগ্বিজয়ের পরিকল্পনা করেন সমুদ্রগুপ্ত।

সমুদ্রগুপ্তের রাজ্য জয়

সমগ্র উত্তর ভারতকে নিজের প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে আনেন ও দক্ষিণ ভারতের মাদ্রাজ অঞ্চল অবধি রাজ্যসমূহকে গুপ্ত সাম্রাজ্যের করদ রাজ্যে পরিণত করেছিলেন সমুদ্রগুপ্ত। সিংহলের রাজাও তার সার্বভৌমত্ব স্বীকার করেছিলেন।

সমুদ্রগুপ্তের সংস্কৃতিমনস্কতা

সমুদ্রগুপ্তের সমসাময়িক মুদ্রাগুলিতে তার শিকাররত ও বীণাবাদনরত মূর্তি দেখে অনুমিত হয় যে তিনি ছিলেন একাধারে মৃগয়াপ্রিয় ও সংগীতরসিক। পাটলিপুত্র ছিল তার রাজধানী।

পরধর্ম সহিষ্ণু সমুদ্রগুপ্ত

ব্রাহ্মণ্য ধর্মের পৃষ্ঠপোষক হলেও সমুদ্রগুপ্ত ছিলেন পরমতসহিষ্ণু। সেই যুগের বিশিষ্ট বৌদ্ধ পণ্ডিত বসুবন্ধু ছিলেন তার মন্ত্রী ও সুহৃদ।

উপসংহার :- রাজ্য জয় সম্পূর্ণ করার পর তিনি অশ্বমেধ যজ্ঞ করেছিলেন। আর তারই স্মৃতি রক্ষার্থে তিনি স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন করেছিলেন। ৩৮০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এরপর রামগুপ্ত গুপ্তসাম্রাজ্যের রাজা হন।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “সমুদ্রগুপ্ত” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) সমুদ্রগুপ্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. গুপ্ত বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা কে ছিলেন?

সমুদ্রগুপ্ত।

২. লিচ্ছবি দৌহিত্র কাকে বলা হয়?

সমুদ্রগুপ্ত।

৩. ভারতের নেপোলিয়ন কাকে বলা হয়?

সমুদ্রগুপ্ত।

৪. এলাহাবাদ প্রশস্তি থেকে কার কথা জানা যায়?

সমুদ্রগুপ্ত।

অন্যান্য ঐতিহাসিক চরিত্রগুলি

Leave a Comment