দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত

গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত প্রসঙ্গে সিংহাসনে অভিষেক, লিপির সাক্ষ্য, গুপ্ত অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বৈবাহিক নীতি ও তার গুরুত্ব, রাজ্য জয় ও তার কৃতিত্ব সম্পর্কে জানবো।

গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত প্রসঙ্গে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের সিংহাসনে অভিষেক, দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত সম্পর্কে লিপির সাক্ষ্য, দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত কর্তৃক গুপ্ত অধিকার পুনরুদ্ধার, দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের বৈবাহিক নীতি, দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের বৈবাহিক নীতির গুরুত্ব, দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজ্য জয়, দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের শকারি উপাধি গ্ৰহণ, বিশাখদত্তের দেবী চন্দ্রগুপ্তম নাটকের বর্ণনা ও দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের কৃতিত্ব।

সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত

ঐতিহাসিক চরিত্রদ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত
উপাধিশকারি
সাম্রাজ্যগুপ্ত সাম্রাজ্য
পূর্বসূরিরামগুপ্ত
উত্তরসূরিকুমারগুপ্ত
দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত

ভূমিকা :- এরাণ শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, সমুদ্রগুপ্ত -এর মৃত্যুর পর দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত পিতার সিংহাসনে বসেন। তাঁর মাতা ছিলেন দত্তাদেবী। অবশ্য তার পূর্বে রামগুপ্ত কিছু দিন রাজত্ব করেন বলে মনে করা হয়।

দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের সিংহাসনে অভিষেক

বিশাখদত্তের দেবীচন্দ্রগুপ্তম নাটক থেকে জানা যায় যে, সমূদ্রগুপ্তের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা রামগুপ্ত তাঁর আগে সিংহাসনে বসেন। তিনি এক শক রাজার হাতে পরাজিত হয়ে কলঙ্কজনক শর্তে সন্ধি করলে, চন্দ্রগুপ্ত এই শক শাসক ও রামগুপ্তকে হত্যা করে সিংহাসনে বসেন। তিনি মৃত জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার পত্নী ধ্রুবাদেবীকে বিবাহ করেন। অধুনা পণ্ডিতেরা বিদিশা শিলালিপির প্রমাণ থেকে রামগুপ্তের কাহিনীর সত্যতা আছে বলে মনে করেন।

দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত সম্পর্কে লিপির সাক্ষ্য

সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত মথুরা ও সাঁচী লিপির সাক্ষ্য অনুসারে ৩৭৫ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে বসেন এবং প্রায় ৪০ বছর রাজত্ব করে ৪১৫ খ্রিস্টাব্দে দেহত্যাগ করেন।

দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত কর্তৃক গুপ্ত অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা

সমুদ্রগুপ্তের বিস্তীর্ণ সাম্রাজ্যের যোগ্য উত্তরাধিকারী ছিলেন দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত। যদি দেবীচন্দ্রগুপ্তম নাটকের কাহিনী সত্য হয় তবে সাময়িকভাবে শক শক্তির হাতে গুপ্ত শক্তি পরাস্ত হলেও দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত শীঘ্রই গুপ্ত সাম্রাজ্যের পূর্ণ অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর পিতার মত তিনি কোনো ব্যাপক রাজ্য জয় করেন বলে জানা যায় না। তবে তিনি তার পৈতৃক রাজ্যকে কিছুটা সম্প্রসারিত করেন।

দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত বৈবাহিক নীতি ও তার গুরুত্ব

  • (১) স্মিথ ও ডঃ রায়চৌধুরী প্রমুখ ঐতিহাসিক বলেছেন যে, দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত তার বিবাহ নীতিকে সম্প্রসারণ ও ক্ষমতা বৃদ্ধির স্বার্থে ব্যবহার করেন। ডঃ রায়চৌধুরীর মতে, “গুপ্তবংশের বৈদেশিক নীতিতে বিবাহ সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল।”
  • (২) তিনি নাগবংশীয় রাজকন্যা কুবের নাগকে বিবাহ করেন। কুবের নাগের গর্ভজাত কন্যা প্রভাবতী গুপ্তকে তিনি বাকাটক রাজা দ্বিতীয় রুদ্রসেনের সঙ্গে বিবাহ দেন। কুম্ভল বা কর্ণাটক দেশের কদম্ববংশের কাকুৎস বর্মনের কন্যাকে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত তাঁর পুত্রের সঙ্গে বিবাহ দেন বলে কদম্বলিপি থেকে জানা যায়।
  • (৩) এই বিবাহ নীতির ফল সম্পর্কে স্মিথ বলেছেন যে, নাগ ও বাকাটক বংশের মিত্রতা চন্দ্রগুপ্তের শক যুদ্ধের জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয় ছিল। পশ্চিম ভারত -এ শক শক্তির বিরুদ্ধে অভিযান করতে হলে মধ্যপ্রদেশের নাগশক্তি ও দাক্ষিণাত্যের বাকাটক শক্তির সমর্থন ছাড়া সফলতা লাভ করা সম্ভব ছিল না।
  • (৪) গুপ্ত সম্রাটের বিরুদ্ধে বাকাটকরা কোনরূপ বাধা না দেওয়ায় চন্দ্রগুপ্ত শকদের সহজে পরাস্ত করেন। বাকাটক মৈত্রী থাকার ফলে ভবিষ্যতে শক শক্তির পক্ষে বিদ্রোহ করা সম্ভব হয়নি। প্রভাবতীগুপ্তের স্বামী দ্বিতীয় রুদ্রসেন বাকাটক স্বল্পকালের মধ্যে দেহত্যাগ করলে প্রভাবতীই তার নাবালক পুত্রদের পক্ষে বাকাটক রাজ্যের শাসিকায় পরিণত হন।
  • (৫) তাঁর মাধ্যমে বাকাটক রাজ্যে গুপ্তদের প্রভাব বেড়েছিল। ডঃ গয়াল বাকাটক বিবাহের এরূপ গুরুত্ব স্বীকার করেন না। তাঁর মতে, দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত যখন শক যুদ্ধে ব্যাপৃত হন তখন বাকাটকদের ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা। বাকাটক বিবাহের বহু পরে চন্দ্রগুপ্ত শক অভিযান করেন।
  • (৬) সকল দিক বিচার করে বলা যায় যে, বাকাটক বিবাহের ফলে গুপ্ত সাম্রাজ্যের লাভ হয়েছিল। বাকাটক শক্তি যত ক্ষুদ্রই হোক তাদের বিরোধিতা গুপ্তদের ক্ষতি করতে পারত। স্মিথ বলেন যে শক যুদ্ধের জন্য কুন্তল রাজ্যের সঙ্গে মিত্রতাও গুপ্তদের শক্তি বৃদ্ধি করে।

সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজ্য জয়

  • (১) দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত তাঁর পিতার রাজ্যসীমা মোটামুটি অক্ষুণ্ণভাবে লাভ করেন। সমতট বা পূর্ব বাংলা ছিল সমুদ্রগুপ্তের সাম্রাজ্যের পূর্ব সীমা। কামরূপ রাজ্য -এর রাজারা দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের সার্বভৌমত্ব সম্ভবত মেনে নেন। মথুরা সমুদ্রগুপ্তের অধীন ছিল।
  • (২) মথুরায় দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের শিলালিপি পাওয়া গেছে। সুতরাং এই অঞ্চল দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের অধীন ছিল সন্দেহ নেই। পূর্ব পাঞ্জাবের উপজাতি রাজারা সমুদ্রগুপ্তের আমলের মতই দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আধিপত্য মেনে নেন বলা যায়। পাঞ্জাবের অপর অংশে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আধিপত্য ছিল কিনা সন্দেহ।

দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের কৃতিত্ব

সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত খুব পরাক্রান্ত রাজা ছিলেন বলা চলে না। তিনি তার পিতার মত সাম্রাজ্য গঠন করেননি। কয়েকজন হীনবল শাসককে তিনি পরাস্ত করেন মাত্র। মেহরৌলী লিপিতে যাকে পৃথিবী বিজেতা বলা হয়েছে তিনি সম্ভবত দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত নন, তিনি সমুদ্রগুপ্ত। যাই হোক, এ সম্পর্কে স্থির কিছু জানা যায়নি।

উপসংহার :- দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের কৃতিত্ব তার রাজ্যজয়ের দ্বারা স্থাপিত না হলেও, শিল্প, সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকরূপে তিনি খ্যাতি পেয়েছেন। তাঁর কীর্তি অনেকাংশে তাঁর পিতার অপেক্ষা জনমানসে বেশী স্থান পেয়েছে। কিংবদন্তি তাকে শকারি বিক্রমাদিত্য আখ্যা দিয়ে অমরত্ব দিয়েছে।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. শকারি কাকে বলা হত?

দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত।

২. কোন গুপ্ত সম্রাটকে বিক্রমাদিত্য বলে মনে করা হয়?

দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত।

৩. দেবী চন্দ্রগুপ্তম কার লেখা নাটক?

বিশাখদত্ত।

৪. কোন গুপ্ত রাজা শকদের পরাজিত করেন?

দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত।

অন্যান্য ঐতিহাসিক চরিত্রগুলি

Leave a Comment