মথুরা

উত্তরপ্রদেশের বিখ্যাত ধর্মীয় স্থান ও শহর হল মথুরা -র শ্রীকৃষ্ণের জন্মক্ষেত্র, শূরসেন রাজ্যের রাজধানী, দ্বারকাধীশ মন্দির, কংসের দুর্গ, জামা মসজিদ সম্পর্কে জানবো ।

মথুরা শহর

পরিচিতি মহানগরী
অবস্থান ভারত -এর উত্তরপ্রদেশ রাজ্য
বিখ্যাত কৃষ্ণলীলা ক্ষেত্র
আয়তন ৩৭০৯ বর্গকিমি (১,৪৩২ বর্গমাইল)
রাজা কংস
মথুরা

ভূমিকা :- উত্তর ভারতের একটি রাজ্য ও উত্তরপ্রদেশের বিখ্যাত শহর হল মথুরা। উত্তরপ্রদেশের মথুরা জেলার প্রশাসনিক কেন্দ্র এই মথুরা। প্রাচীন কালে এই শহর ছিল অন্যতম অর্থনৈতিক কেন্দ্র। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী মথুরার জনসংখ্যা ছিল ৪৪১,৮৯৪।

মথুরা শহরের অবস্থান

মথুরা শহর আগ্রা থেকে কমবেশি ৫০ কিমি উত্তরে এবং দিল্লী থেকে ১৪৫ কিমি দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত।

শ্রীকৃষ্ণের জন্মক্ষেত্র মথুরা

হিন্দুধর্মের মতানুসারে মথুরাকে কৃষ্ণের জন্মস্থান হিসেবে মনে করা হয়, যা শ্রী কৃষ্ণ জন্মভুমির কেন্দ্রে অবস্থিত। হিন্দুরা যে সাতটি শহর কে পবিত্র মনে করে তার মধ্যে অন্যতম এই মথুরা শহর।

মহাকাব্যে মথুরা শহরের প্রসিদ্ধি লাভ

বেদ -এ মথুরার কথা না থাকলেও রামায়ণ, মহাভারত ও পৌরাণিক যুগে মথুরা শহর যথেষ্ট প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।

মথুরা শহরের বিভিন্ন নাম

মউজপুর, মধুপুরী, মধুবন, মধুরা, মদুরা যুগে যুগে নাম বদলে হয়ে মথুরা নাম বিশেষ ভাবে বিখ্যাত হয়েছে।

বৌদ্ধ ধর্মে মথুরা

বৌদ্ধদের কাছেও মথুরা একটি বিশিষ্ট জনপদ। এখনেই রাজকুমার উপগুপ্ত গৌতম বুদ্ধ প্রবর্তিত বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীকালে সম্রাট অশোক মথুরাতেই বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা নেন।

ভারতের ঐতিহ্য মথুরা শহর

বর্তমানে ভারত সরকারের ঐতিহ্য শহর উন্নয়ন এবং অগমেন্টেশন যোজনার অন্তর্গত করা হয়েছে এই মথুরা শহরকে।

শূরসেন রাজ্যের রাজধানী মথুরা শহর

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যে মথুরা শূরসেন রাজ্যের রাজধানী হয়ে ওঠে। শহরটি পরবর্তীতে মৌর্য সাম্রাজ্য দ্বারা শাসিত হয় (খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ থেকে দ্বিতীয় শতাব্দী)।

মেগাস্থিনিসের বর্ণনায় মথুরা শহর

মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য -এর রাজসভায় আগত গ্রিক দূত মেগাস্থিনিস রচিত ইন্ডিকা গ্ৰন্থে একটি দুর্দান্ত শহর হিসেবে মথুরার উল্লেখ আছে।

মথুরা শহরে দ্বারকাধীশ মন্দির

মথুরা শহরের মাঝে প্রধান মন্দিরটি শেঠ গোকুল দাস ১৮১৪ সালে নির্মাণ করেন।

  • (১) এই মন্দিরে প্রতি বছর জাঁকজমক সহকারে হোলি ও জন্মাষ্টমী উৎসব পালিত হয়।
  • (২) মন্দিরের কাছেই কিংবদন্তি ঘেরা বিশ্রামঘাট। কংসকে বধ করার পর শ্রীকৃষ্ণ ও বলরাম এই ঘাটে বিশ্রাম নিয়ে ছিলেন।
  • (৩) অনুপম স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত ঘাটগুলোর মধ্যে স্বামীঘাট ও অসিকুণ্ড ঘাট উল্লেখযোগ্য।

মথুরা শহরের কেশবদেও মন্দির

ভক্তদের বিশ্বাস কাটরা কেশবদেবের এই মন্দিরটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থানে নির্মিত। বীর সিংহের হাতে এই আদি মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল।

ঔরঙ্গজেবের আক্রমণে মথুরা শহর

আদি কেশবদেও মন্দিরটি ঔরঙ্গজেব ধ্বংস করে নির্মাণ করেন ঈদগা। সাম্প্রতিক কালে এই মন্দির ও মসজিদকে ঘিরে বির্তকের সৃষ্টি হয়েছে।

মথুরা শহরের কনস্‌কিলা বা কংসের দুর্গ

যমুনার উত্তরতীরে অত্যাচারী রাজা কংস এই দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন বলে জনশ্রুতি আছে। দুর্গের অধিকাংশই আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলেও অম্বরের রাজা মানসিংহ কংসের কারাগারটি সংস্কার করান।

মথুরা শহরে গীতা মন্দির

সাম্প্রতিক কালে নির্মিত এই মন্দিরটি মথুরার সবচেয়ে আকর্ষনীয় মন্দির। মন্দিরের বিভিন্ন থামে খোদিত রয়েছে গীতার ৭০০ শ্লোক। আর ভালো লাগে দেওয়ালগাত্রের পৌরাণিক চিত্রাগুলি।

মথুরা শহরের জামা মসজিদ

আবু-উন-নবি খান ১৬৬১ সালে মথুরা শহরে চারটি বড় মাপের মিনার সহ জামা মসজিদ নির্মাণ করেন। কারও কারও মতে এই স্থানটিই শ্রীকৃষ্ণের প্রকৃত জন্মভূমি।

মথুরা শহরে গভর্নমেন্ট মিউজিয়াম

মথুরার এই জাদুঘরে মৌর্য, শুঙ্গ, কুষাণ ও গুপ্তযুগের অসংখ্য পুরাকীর্তির সংগ্রহ এককথায় বিস্ময়কর। এই অমুল্য পুরাকীর্তিগুলির বয়স ৮০০ খ্রিঃ পুর্ব থেকে ১২ খ্রিস্টব্দের মধ্যে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কুষাণ যুগের শিল্পকর্মগুলি।

মথুরা শহরের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান

এছাড়াও মথুরা শহরে বলভদ্র কুণ্ড, সরস্বতী কুণ্ড, পোট্রা কুণ্ড, শিবতাল বৃন্দাবনের পথে পাগলা বাবা মন্দির, ভুতেশ্বর মন্দির, গোকর্নেশ্বর মন্দির, রঙ্গেশ্বর মন্দির, পিপ্লেশ্বর মন্দির, যমুনা বাগ, গুরুগোবিন্দ সিং -এর স্মৃতি বিজড়িত গুরুদোয়ার, জৈন সিদ্ধক্ষেত্র চৌরাশিয়া প্রভৃতি দর্শনীয় স্থান আছে।

উপসংহার :- ইতিহাসবিদ আল-বিরুনীর লেখাতেও মথুরা হিন্দুদের অন্যতম প্রধান তীর্থস্থান হিসাবেই বর্ণিত হয়েছে।

(FAQ) মথুরা শহর হতে জিজ্ঞাস্য?

১. মথুরা কোন রাজ্যে অবস্থিত?

উত্তরপ্রদেশ।

২. মথুরা কোন নদীর তীরে অবস্থিত?

যমুনা।

৩. ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থান কোথায়?

মথুরা।

Leave a Comment