আল বেরুণী

ভারতে আগত পর্যটক আল বেরুণী প্রসঙ্গে তার জন্ম, আসল নাম, বাল্যকাল, দুর্দশা, জন্মস্থান ত্যাগ, সুলতান মামুদের সাথে ভারত আগমন, ভারতে অবস্থান, বিচিত্র প্রতিভার অধিকারী, জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা, গ্ৰন্থ রচনা, চিকিৎসা বিজ্ঞানে অবদান, বিভিন্ন গ্ৰন্থ ও তার মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।

ভারতে আগত পর্যটক আল বেরুণী

ঐতিহাসিক মনীষীআল বেরুণী
জন্ম৩ সেপ্টেম্বর, ৯৭৩ খ্রি:
জন্মস্থানখাওয়ারিজম
পরিচিতিবিজ্ঞানী, লেখক
বিখ্যাত রচনাতহকিক-ই-হিন্দ
মৃত্যু১২ ডিসেম্বর, ১০৪৮ খ্রি:
ভারতে আগত পর্যটক আল বেরুণী

ভূমিকা :- দশম শতাব্দীর শেষ এবং একদশ শতাব্দীর যে সকল মনীষীর অবদানে পৃথিবীর জ্ঞান বিজ্ঞান ও সভ্যতা কয়েক ধাপ এগিয়ে গিয়েছিল, আল বেরুনী তাদের অন্যতম।

আল বেরুনীর আত্মপরিচয় অনুপস্থিত

তিনি পৃথিবীর ইতিহাস জগৎবাসীর সামনে রেখে গেছেন; কিন্তু ইতিহাসের পাতায় আত্মপরিচয় অনুপস্থিত। তাঁর বাল্য জীবন, শিক্ষা জীবন, দাম্পত্য জীবন ও সন্তান-সন্ততি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায় না। সম্ভবত ঐতিহাসিকগণ ও মহাজ্ঞানী ব্যক্তির বিস্তারিত পরিচয় দেয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি।

আল বেরুনীর জন্ম

ইতিহাসের পাতা থেকে যতদূর জানা যায়, ৩৬২ হিজরীর ৩ জিলহজ্জ মোতাবেক ৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের ৩ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার খাওয়ারিজমের শহরতলীতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

আল বেরুনীর আসল নাম

তাঁর আসল নাম ছিল আবু রৈহান মহম্মদ ইবনে আহমদ আল বেরুনী। তিনি নিজের নাম আবু রৈহান লিখতেন। কিন্তু ইতিহাসে তিনি আল বেরুনী নামে অধিক পরিচয় হন।

আল বেরুনীর বাল্যকাল

তাঁর বাল্যকাল অতিবাহিত হয়েছিল আল ইরাক বংশীয় রাজপতি বিশেষ করে আবু মনসুর বিন আলী বিন ইরাকের তত্ত্বাবধানে। এখানে তিনি সুদীর্ঘ ২২ বছর রাজকীয় অনুগ্রহে কাটিয়েছিলেন। এখানে অবস্থানকালেই আস্তে আস্তে তাঁর বিচিত্র প্রতিভা ছড়িয়ে পড়ে। আব্বাসীয় বংশের খলিফাদের অযোগ্যতা ও দুর্বলতার সুযোগে সাম্রাজ্য-এর বিভিন্ন স্থানে বহু স্বাধীন রাজবংশের উদ্ভব ঘটে।

আল বেরুনীর জন্মস্থানে দু’টি রাজশক্তি প্রতিষ্ঠা

এই সময় খাওয়ারিজম প্রদেশে দু’টি রাজশক্তি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রদেশের দক্ষিণাংশে রাজত্ব করতেন আল বেরুনীর প্রতিপালক আল ইরাক বংশীয় আবু আবদুল্লাহ এবং উত্তরাংশে রাজত্ব করতেন মামুন বিন মাহমুদ বা মামুদ

আল বেরুনীর জীবনে দুর্দশা

৯৯৪-৯৫ খ্রিস্টাব্দে মামুন বিন মাহমুদ আবু আকদুল্লাহকে হত্যা করে রাজ্য দখল করে নিলে আল বেরুনীর জীবনে নেমে আসে দুঃখ দুর্দশা। যাদের তত্ত্বাবধানে তিনি সুদীর্ঘ ২২টি বছর কাটিয়েছেন তাঁদেরকে হারিয়ে তিনি বিমূঢ় হয়ে পড়েন।

আল বেরুনীর জন্মস্থান ত্যাগ

এরপর দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে তিনি ত্যাগ করেন খাওয়াজরিজম এবং চলতে থাকেন আশ্রয়হীন ও লক্ষহীন পথ ধরে। দিনের পর দিন রাতের পর রাত তিনি কাটিয়েছেন অনাহারে অর্ধাহারে।

রাজা কাবুসের রাজ্যে আল বেরুনী

এই সময় জুরজানের রাজা কাবুসের সুনজের পড়েন তিনি। রাজা কাবুস ছিলেন বিদ্যোৎসাহী। জ্ঞানী ব্যক্তিদের তিনি খুব ভালবাসতেন। তিনি ইতিপূর্বে আল বেরুনীর সুনাম শুনেছিলেন। রাজা আল বেরুনীর উন্নত আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিলেন। এখানের দিনগুলো আল বেরুনী সুখেই কাটিয়ে ছিলেন কিন্তু যাদের আদর স্নেহ তিনি ২২টি বছর কাটিয়েছিলেন সেই আল ইরাক বংশীয় অভিভাবকদের কথা ক্ষণিকের জন্যেও ভুলতে পারেননি।

আল বেরুনীর রাজা কাবুসের নামে গ্রন্থ উৎসর্গ

রাজা কাবুসের রাজ্যে অবস্থানকালে ১০০১-১০০২ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘আসারুল বাকিয়া’ এবং ‘তাজরী দুশ শুয়াত’ নামক দু’টি গ্রন্থ রচনা করেন। রাজার প্রতি কৃতজ্ঞতার নিদর্শন স্বরূপ তিনি ‘আসারুল বাকিয়া’ গ্রন্থটি রাজা কাবুসের নামে উৎসর্গ করেন।

আল বেরুনীকে দেশে ফিরে আসার অনুরোধ

খাওয়ারিজমের রাজা সুলতান মামুন বিন মাহমুদ ছিলেন বিদ্যোৎসাহী এবং তিনি আল বেরুনীর জ্ঞানে ও গুণে মুগ্ধ ছিলেন। সুলতান মামুন এক পত্রে আল বেরুনীকে দেশে ফিরে আসার অনুরোধ জানান। তিনিও সুলতানের অনুরোধে ১০১১ খ্রিস্টাব্দে মাতৃভূমি খাওয়ারিজমে ফিরে আসেন।

আল বেরুনীর রাষ্ট্রীয় কাজ ও গবেষণা

সুলতানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রাষ্ট্রীয় কার্য পরিচালনার সাথে সাথে তিনি জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণার কাজও চালিয়ে যেতেন। মানমন্দির নির্মাণ করে তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানে পর্যবেক্ষণ কার্য চালান। এখানে তিনি ৫/৬ বছর অবস্থান করেছিলেন এবং বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন।

আল বেরুনীকে সুলতান মামুদের সম্মানজনক পত্রের

গজনীর দিগ্বিজয়ী সুলতান মাহমুদ জ্ঞানী ও গুণী ব্যক্তিদের খুব সম্মান করতেন এবং তাঁর শাহী দরবারে প্রায় প্রতিদিন দেশ বিদেশের জ্ঞানী ও গুণী ব্যক্তিদের মধ্যে জ্ঞান বিজ্ঞান ও সাহিত্য চর্চা নিয়ে আলোচনা হত। সুলতান মামুনের শাহী দরবারের জ্ঞানী ব্যক্তিদেরকে গজনীতে পাঠানোর জন্য সুলতান মাহমুদ একটি সম্মানজনক পত্রে পরোক্ষ নির্দেশ দিয়ে পাঠান।

আল বেরুনীর গজনীতে আগমন

পত্র পাবার পর আল বেরুনী কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে ১০১৬ খ্রিস্টাব্দে গজনীতে সুলতান মাহমুদের শাহী দরবারে উপস্থিত হন। মামুনের দরবারের অন্যতম বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী ও দার্শনিক ইবনে সিনা এ প্রস্তাবকে অপমান ও আত্মমর্যাদাকে বিকিয়ে দেয়ার সামিল আখ্যায়িত করে প্রত্যাখ্যান করেন এবং কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে খাওয়ারিজম ত্যাগ করেন।

আল বেরুনীর গজনীতে অবস্থান

সুলতান মাহমুদ ইবনে সিনাকে না পেয়ে এবং ইবনে সিনার বিদ্রোহের অজুহাতে খাওয়ারিজম রাজ্য দখল করে নেন। আল বেরুনী সুলতান মাহমুদের একান্ত সঙ্গী হিসেবে ১০১৬ হতে ১০১৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত গজনীতে অবস্থান করেন।

সুলতান মামুদের সাথে আল বেরুনীর ভারত আগমন

উল্লেখ্য যে, সুলতান মাহমুদ ১৭ বার ভারত আক্রমণ করেছিলেন এবং আল বেরুনী সুলতানের সাথে ভারত এসেছিলেন। তিনি তৎকালীন ভারতীয় শিল্প, সাহিত্য, দর্শন ও বিজ্ঞানের সমৃদ্ধি দেখে বিস্মিত হন।

আল বেরুনীর ভারতে অবস্থান

পরবর্তীতে রাজসমন নিয়ে ১০১৯-১০২৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ভারতে অবস্থান করে সেখানকার জ্ঞানী ব্যক্তিদের সাথে মিলিত হয়ে তাঁদের সঙ্গে ভূগোল, গণিত ও ধর্মতত্ত্ব সম্পর্কে মতের আদান প্রদান করেন এবং সেখানকার জ্ঞান বিজ্ঞানের গ্রন্থ অধ্যয়ন করেন।

বিচিত্র প্রতিভার অধিকারী আল বেরুনী

তিনি ছিলেন বিচিত্র প্রতিভার অধিকারী। জ্যোতির্বিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান, রসায়ন, জীবতত্ত্ব, ভূতত্ত্ব, উদ্ভিদতত্ত্ব, গণিত, দর্শন, ন্যায়শাস্ত্র, দিনপঞ্জির তালিকা ও ইতিহাস, সভ্যতার ইতিহাস, ধর্মতত্ত্ব প্রভৃতি বিষয়ে তিনি ছিলেন অগাধ পান্ডিত্বের অধিকারী।

আল বেরুনীর প্রাচ্যের জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা

তিনিই সর্ব প্রথম প্রাচ্যের জ্ঞান বিজ্ঞান বিশেষ করে ভারতের জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতি মুসলিম মনীষীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন।

আল বেরুনী সম্পর্কে মাপার অভিমত

অধ্যাপক মাপা বলেন, “আল বেরুনী শুধু মুসলিম বিশ্বেরই নয় বরং তিনি ছিলেন সমগ্র বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী ব্যক্তি।”

আল বেরুনীর গ্ৰন্থ রচনা

ভারত থেকে প্রত্যাবর্তন করেই তিনি রচনা করেন তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘কিতাব উল হিন্দ’। তৎকালীন সময়ের ভারতীয় জ্ঞান বিজ্ঞান, শিল্প, সাহিত্য ও ধর্মীয় অনুশাসন জানার জন্য এটি একটি নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ।

আল বেরুনী সম্পর্কে হামারনেহের মন্তব্য

অধ্যাপক হামারনেহের লিখেছেন, “As a result of his profound and intimate knowledge of the country and its people, the author left us in his writing the wealth of information of undying interest on civilization in the sub-continent during the first half at the eleventh century.”

সুলতান মাসুদের রাজ্যে আল বেরুনী

ভারত থেকে গজনীতে আল বেরুনীর প্রত্যাবর্তন করার কিছুদিন পরেই সুলতান মাহমুদ মৃত্যু বরণ করেন এবং তাঁর পুত্র সুলতান মাসুদ ১০৩১ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসন আরোহণ করেন। সুলতান মাসুদও আল বেরুনীকে খুব সম্মান করতেন।

আল বেরুনীর সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ

  • (১) এই সময়ে আল বেরুনী রচনা করেন তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ‘কানুনে মাসউদী’। এই সুবিশাল গ্রন্থখানা সর্বমোট ১১ খণ্ডে সমাপ্ত। বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গ্রন্থটিতে আলোচনা করা হয়।
  • (২) ১ম ও ২য় খণ্ডে আলোচনা করা হয়েছে জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কে; ৩য় খণ্ডে ত্রিকোণমিতি; ৪র্থ খণ্ডে Spherical Astronomy; ৫ম খণ্ডে-গ্রহ, দ্রাঘিমা, চন্দ্ৰ সূর্যের মাপ; ৬ষ্ঠ খণ্ডে-সূর্যের গতি; ৭ম খণ্ডে চন্দ্রের গতি; ৮ম খণ্ডে চন্দ্রের দৃশ্যমান ও গ্রহণ; ৯ম খণ্ডে স্থির নক্ষত্র; ১০ম খণ্ডে-৫টি গ্রহ নিয়ে এবং একাদশ খণ্ডে আলোচনা করা হয়েছে জ্যোতিষ বিজ্ঞান সম্পর্কে।
  • (৩) এই অমূল্য গ্রন্থটি সুলতানের নামে নামকরণ করায় সুলতান মাসুদ অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়ে আল বেরুনীকে বহু মূল্যবান রৌপ্য সামগ্রী উপহার দেন। কিন্তু আল বেরুনী অর্থের লোভী ছিলেন না। তাই তিনি এই মূল্যবান উপহার সামগ্রী রাজকোষে জমা দিয়ে দেন।

বেরুনী নিজেই বিশ্বকোষ

আল বেরুনী বহু জ্ঞান বিজ্ঞান সভ্যতার ইতিহাস, মৃত্তিকা তত্ত্ব, সাগর তত্ত্ব এবং আকাশ তত্ত্ব মানবজাতির জন্যে অবদান হিসেবে রেখে গেছেন। ইউরোপীয় পণ্ডিতগণের মতে বেরুনী নিজেই বিশ্বকোষ।

ভাষাবিদ আল বেরুনী

একজন ভাষাবিদ হিসেবেও তিনি ছিলেন বিখ্যাত। আরবী, ফারসী, সিরিয়া, গ্রীক, সংস্কৃত, হিব্রু প্রভৃতি ভাষার উপর ছিল তাঁর পাণ্ডিত্য।

বিজ্ঞানী আল বেরুনী

  • (১) ত্রিকোণমিতিতে তিনি বহু তথ্য আবিষ্কার করেছেন। কোপারনিকাস বলেছিলেন, পৃথিবী সহ গ্রহগুলো সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে অথচ কোপানিকাসের জন্মের ৪২৫ বছর পূর্বেই আল বেরুনী বলেছেন, “বৃত্তিক গতিতে পৃথিবী ঘুরে। তিনি টলেমি ও ইয়াকুবের দশমিক অংকের গণনায় ভুল ধরে দিয়ে তাঁর সঠিক ধারণা দেন।
  • (২) তিনিই সর্ব প্রথম প্রাকৃতিক ঝর্ণা এবং আর্টেজীয় কূপ এর রহস্য উদ্ঘাটন করেছিলেন। জ্যোতিষ হিসেবেও তার প্রসিদ্ধি ছিল অত্যাধিক। তিনি যে সব ভবিষ্যৎ বাণী করতেন সেগুলো সঠিক হত।
  • (৩) তিনি শব্দের গতির সাথে আলোর গতির পার্থক্য নির্ণয় করেছিলেন। তিনি এরিস্টটল-এর ‘হেভেন’ গ্রন্থের ১০টি ভুল আবিষ্কার করেছিলেন। ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের সম্পর্কও তিনি আবিষ্কার করেন।

আল বেরুনীর বিস্ময়কর পন্থা আবিষ্কার

সূক্ষ্ম ও শুদ্ধ গণনায় আল বেরুনী একটি বিস্ময়কর পন্থা আবিষ্কার করেন যার বর্তমান নাম The Formula of Interpolation. পাশ্চাত্য পণ্ডিতগণ এটিকে নিউটন-এর আবিষ্কার বলে প্রচার করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। অথচ নিউটনের জন্মের ৫৯২ বছর পূর্বেই আল বেরুনী এটি আবিষ্কার করেন এবং একে ব্যবহার করে বিশুদ্ধ সাইন তালিকা প্রস্তুত করেন। এরপর এই ফর্মূলার পূর্ণতা দান করে তিনি একটি ট্যানজেন্ট তালিকাও তৈরি করেন।

ফুলের পাপড়ি সংখ্যা নির্ণয়ে আল বেরুনীর ভূমিকা

তিনিই বিভিন্ন প্রকার ফুলের পাপড়ি সংখ্যা হয়, ৩, ৪, ৫, ৬ এবং ১৮ হবে কিন্তু কখনো ৭ বা ৯ হবে না; এই সত্য আবিষ্কার করেন।

আল বেরুনীর চিকিৎসা বিজ্ঞানে অবদান

চিকিৎসা বিজ্ঞানেও তাঁর অবদান ছিল সর্বাধিক। চিকিৎসা বিজ্ঞানে তিনি একটি অমূল্য গ্রন্থ রচনা করেন। গ্রন্থে তিনি বহু রোগের ঔষধ তৈরির কলাকৌশল বর্ণনা করেছেন।

আল বেরুনীর সম্পর্কে অধ্যাপক হামারনেহর মন্তব্য

অধ্যাপক হামারনেহ বলেছেন, “শুধু মুসলিম জগতেই নয় পৃথিবীর সমস্ত সভ্য জগতের মধ্যে আল বেরুনীই সর্ব প্রথম ব্যক্তি, যিনি খ্রিস্টপূর্বকাল থেকে তাঁর সময়কাল পর্যন্ত ঔষধ তৈরি করার পদ্ধতি ও তার ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করেছেন।

আল বেরুনীর বিভিন্ন গ্ৰন্থ

  • (১) বিজ্ঞানী আল বেরুনী বিজ্ঞান, দর্শন, যুক্তিবিদ্যা, ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়ে বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন। মৃত্যুর ১৩ বছর পূর্বে তিনি তাঁর রচিত গ্রন্থের যে তালিকা দিয়েছেন সে অনুযায়ী তাঁর গ্রন্থের সংখ্যা ১১৪টি। পরবর্তী ১৩ বছরে তিনি আরো বহু গ্রন্থ রচনা করেন।
  • (২) উপরে উল্লেখিত গ্রন্থগুলো ছাড়া উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল কিতাবুত তাফহিম’। এটি ৫৩০ অধ্যায়ে বিভক্ত। এতে অংক, জ্যামিতি ও বিশ্বের গঠন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। ইফরাদুল ফাল ফিল আমরিল ‘আযলাল’ গ্ৰন্থে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ছায়াপথ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
  • (৩) ‘আল আহারুল বাকিয়া আলাল কুবানিল কালিয়া’ গ্ৰন্থে পৃথিবীর প্রাচীন কালের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। ‘যিজে আবকন্দ (নভোমণ্ডল ও জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কিত)। আলাল ফি যিজে খাওয়ারিজমি (যুক্তিবিদ্যা সম্পর্কে) তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।
  • (৪) বিশাল আকৃতির শতাধিক গ্রন্থ এক ব্যক্তির পক্ষে রচনা করা কত যে দুঃসাধ্য ব্যাপার তা ভাবতেও অবাক লাগে। আল বেরুনী ছিলেন সর্বকালের জ্ঞানী শ্রেষ্ঠদের শীর্ষ স্থানীয় এক মহাপুরুষ। তাঁর ও অন্যান্য মুসলিম বিজ্ঞানীদের মৌলিক আবিষ্কারের উপরেই গড়ে উঠেছে আধুনিক বিজ্ঞান।

আল বেরুনীর মৃত্যু

এই মনীষী ৬৩ বছর বয়সে গুরুতর রোগে আক্রান্ত হন। আস্তে আস্তে তিনি দুর্বল হয়ে পড়েন। কোনো চিকিৎসাতেই তাঁকে আর সুস্থ করে তোলা যায় নি। অবশেষে ৪৪০ হিজরীর ২ রজব মোতাবেক ১০৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১২ ডিসেম্বর শুক্রবার ৭৫ বছর বয়সে আবু রৈহান মহম্মদ ইবনে আহমদ আল বেরুনী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

উপসংহার :- আল বেরুনী আজ বেঁচে নেই; কিন্তু তাঁর নাম জেগে থাকবে উজ্জ্বল তারকার ন্যায়। দশম শতাব্দীর শেষ এবং একাদশ শতাব্দীতে যার একান্ত সাধনায় জ্ঞান বিজ্ঞানের দিগন্ত এক নব সূর্যের আলোতে উদ্ভাসিত হয়েছিল তিনি হলেন আল বেরুনী। তিনি ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক। তিনি বিশ্বাস করতেন আল্লাহই সকল জ্ঞানের অধিকারী।

(FAQ) আল বেরুণী সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. আল বেরুনীর প্রকৃত নাম কি ছিল?

আবু রৈহান।

২. আল বেরুনী কার সাথে ভারতে আসেন?

সুলতান মামুদ।

৩. ভারত সম্পর্কে লেখা আল বেরুনীর গ্ৰন্থের নাম কি?

তহকিক-ই-হিন্দ।

৪. আল বেরুনী কার কোন গ্ৰন্থের দশটি ভুল আবিষ্কার করেন?

আ্যারিস্টটলের ‘হেভেন’।

Leave a Comment