নিকোলাস কোপার্নিকাস প্রসঙ্গে তার জন্ম, বংশ পরিচয়, ছেলেবেলা, শিক্ষা, ভাষা দক্ষতা, বিনয়, গ্ৰহ পর্যবএক্ষণ, হেলিওসেন্ট্রিক তত্ত্ব, গ্ৰন্থ রচনা, গ্ৰন্থের ভিত্তি ও তার মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।
নিকোলাস কোপার্নিকাস
ঐতিহাসিক মনীষী | নিকোলাস কোপার্নিকাস |
জন্ম | ১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৪৭৩ খ্রি: |
দেশ | পোল্যান্ড |
পরিচিতি | জ্যোতির্বিজ্ঞানী |
মৃত্যু | ২১ মে, ১৫৪৩ খ্রি: |
ভূমিকা :- প্রথম আধুনিক সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের মতবাদ প্রদান করেন জ্যোতির্বিজ্ঞানী নিকোলাস কোপার্নিকাস। তিনি পৃথিবী নয় বরং সূর্যকে সৌরজগতের কেন্দ্র হিসাবে উল্লেখ করেন। তিনি আঠারো শতকের আগে এমন একটি মডেল প্রণয়ন করেন যখন চারিদিকে টলেমী এবং এরিস্টটল-এর মতবাদ চলছিল।
কোপার্নিকাসের জন্ম
১৪৭৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি পোল্যান্ডের রয়েল প্রাশিয়া প্রদেশের থর্ন শহরে কোপার্নিকাসের জন্ম। থর্ন বাল্টিক সাগরের কাছে ডিসটুল নদীর তীরে ছোট বন্দর শহর।
জ্যোতির্বিজ্ঞানী কোপার্নিকাসের বংশ পরিচয়
তার বাবা কারাকোর ছিলেন একজন সাধারণ ব্যবসায়ী এবং তার মা ছিলেন তোরনের একজন ধনী বণিকের কন্যা। কোপার্নিকাসের পারিবারিক নাম ছিল নিকোলাস কোপার্নিকাস।
কোপার্নিকাসের ছেলেবেলা থেকেই কৌতুহল
ছেলেবেলা থেকেই কোপার্নিকাসের আকাশ গ্রহ নক্ষত্র সূর্য চন্দ্র তারা সম্বন্ধে ছিল গভীর কৌতূহল। এই সব বিষয়ে বাবা মাকে নানা প্রশ্ন করতেন। কিন্তু অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তরই জানা ছিল না ব্যবসাদার বাবার।
জ্যোতির্বিজ্ঞানী কোপার্নিকাসের ছেলেবেলার সঙ্গী বই
কোপার্নিকাসের কাকা ছিলেন ধর্মযাজক পণ্ডিত মানুষ। ভাইপোর জ্যোতির্বিজ্ঞানে আগ্রহ দেখে একটি বই পাঠিয়ে দিলেন। এই বইটি ছেলেবেলায় কোপার্নিকাসের সব সময়ের সঙ্গী ছিল।
কোপার্নিকাসের শিক্ষা
- (১) বিজ্ঞানী কোপার্নিকাসের শৈশবের পড়ালেখার কোন প্রমাণাদি পাওয়া যায়নি। তবে কোপার্নিকাসের জীবনী লেখক মনে করেন যে, ওয়াটজেনরোদে তোরনে তাকে প্রথমে সেন্ট জন বিদ্যালয়ে পাঠিয়েছিলেন।
- (২) আর্মিটাজের মতে তিনি পরে ক্যাথোড্রল বিদ্যালয়ে ভর্তি হন যা পরবর্তিতে কারাকাও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে সাহায্য করে।
- (৩) তিনি দর্শন এবং এরিস্টটল ও আহমদ ইবনে রুশদীর লিখিত প্রাকৃতিক বিজ্ঞান সম্পর্কে খুব ভালো জ্ঞান লাভ করেন, যা তাকে তার ভবিষ্যত এর কোপার্নিকাস তত্ত্ব তৈরীতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানী কোপার্নিকাসের ভাষা দক্ষতা
কোপার্নিকাস ল্যাটিন ও জার্মান ভাষায় সমান দক্ষ ছিলেন। তিনি পোলিশ, গ্রীক এবং ইটালিয়ান ভাষাতেও কথা বলতে পারতেন। তবে তিনি কাজ করেছেন বেশিরভাগ ল্যাটিন ভাষায়। কারণ, তখন ইউরোপ-এর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে ল্যাটিন ভাষা ব্যবহৃত হত। এছাড়াও রোমান ক্যাথলিক চার্চে ও পোল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় আদালতের প্রধান ভাষা ছিল ল্যাটিন।
বিনয়ী কোপার্নিকাস
জ্যোতির্বিজ্ঞানী কোপার্নিকাস শব্দের অর্থ বিনয়ী। শুধু নামে নয়, আচার ব্যবহারে স্বভাবেও কোপার্নিকাস ছিলেন যথার্থই বিনয়ী। শুধু নামে নয়, আচার ব্যবহারে স্বভাবেও কোপার্নিকাস ছিলেন যথার্থই বিনয়ী।
কোপার্নিকাসের গ্রহ পর্যবেক্ষণ
জ্যোতির্বিজ্ঞানী কোপারনিকাস বুধের তিনটি পর্যবেক্ষণ করেন যার মধ্যে ত্রুটি ছিল ৩,-১৫,১ মিনিট চাপ। তিনি ভেনাসের পর্যবেক্ষণ করেন যার ত্রুটি ছিল -২৪ মিনিট চাপ। মঙ্গলের চারটি পর্যবেক্ষণ করেন করেন যার ত্রুটির মান ছিল ২,২০,৭৭,১৩৭ মিনিট চাপ। জুপিটার পর্যবেক্ষণে ৪ টি ত্রুটি পাওয়া যায় সেগুলো হল ৩২,৫১,-১১ এবং ২৫ মিনিট চাপ। শনির সাথেও ৪ টি পর্যবেক্ষণ ত্রুটি ছিল ৩১, ২০,২৩ এবং -৪ মিনিট চাপ।
কোপার্নিকাসের হেলিওসেন্ট্রিক তত্ত্ব
বিজ্ঞানী কোপার্নিকাসের প্রধান কাজ হেলিওসেন্ট্রিক তত্ত্ব যা তার বই “দি রিভিউলশনিবাস ওরিবিয়াম কোলেস্টিয়াম” এ তার মৃত্যুর আগে প্রকাশ করেন ১৫৪৩ সালে। যদিও তিনি ১৫১০ সালে গাণিতিকভাবে তত্ত্বটি তৈরী করেন।
জ্যোতির্বিজ্ঞানী কোপার্নিকাসের হেলিওসেন্ট্রিক তত্ত্বের সারাংশ
- (১) মহাবিশ্বের কেন্দ্র বলে কিছু নেই।
- (২) পৃথিবীর কেন্দ্র মহাবিশ্বের কেন্দ্র নয়।
- (৩) প্রতিটি গ্রহ উপগ্রহের মধ্যবিন্দু সূর্য, তাই সূর্যই মহাবিশ্বের কেন্দ্র।
- (৪) সূর্য থেকে মহাকাশের উচ্চতা পর্যন্ত পৃথিবীর দূরত্ব অনুপস্থিত(মহাবিশ্বের বাইরের সর্বোচ্চ মহাজাগতিক তল) সূর্য থেকে পৃথিবীর ব্যাসার্ধের দুরত্বের তুলনায় এতো ছোট যে পৃথিবী থেকে সূর্য পর্যন্ত দুরত্ব স্থল উচতার তুলনায় অপ্রত্যাশিত।
- (৫) মহাবিশ্বের গতির কোন নতুন আবির্ভাব হয় না। পৃথিবী তার উপাদানগুলোর সাথে একটি নির্দিষ্ট গতিতে ঘুরতে থাকে।
- (৬) আমরা যা দেখতে পাই তা আসলে সূর্যের গতি নয়, আমরা পৃথিবীর ও এর উপগ্রহের গতিপথ লক্ষ্য করতে পারি।
- (৭) গ্রহ উপগ্রহের গতি পৃথিবী থেকেই উৎপন্ন। তাই পৃথিবীর গতি বর্ণনা স্থলে কোন বিন্দুর গণনা করার প্রয়োজন হয় না।
কোপার্নিকাসের বই প্রকাশ
১৫৪৩ সালে বইটি প্রকাশিত হয়। তখন তিনি মৃত্যুশয্যায়। শোনা যায় যখন এই বইটি ছাপা অবস্থায় তাঁর কাছে এসে পৌঁছল তখন তাঁর পড়ে দেখবার মত অবস্থা ছিল না। তিনি শুধু দুহাতে বইটি কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করলেন, তার কয়েক ঘণ্টা পরেই তাঁর মৃত্যু হল।
জ্যোতির্বিজ্ঞানী কোপার্নিকাসের ‘দি রিভিউলশনিবাস’ গ্রন্থ
তার এই গ্ৰন্থটি ৬ টি ভাগে বিভক্ত। যথা –
(১) প্রথম পর্ব
এতে ছিলো হেলিওসেন্ট্রিক তত্ত্ব ও মহাবিশ্বের সারমর্ম।
(২) দ্বিতীয় পর্ব
জ্যোতির্বিদ্যা নীতি এবং তারার তালিকা প্রকাশ করা হয়।
(৩) তৃতীয় পর্ব
এখানে বিষুবরেখা এবং সূর্যের গতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
(৪) চতুর্থ পর্ব
এখানে চাঁদ ও উপগ্রহের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
(৫) পঞ্চম পর্ব
কীভাবে তারার অবস্থান এবং অন্যান্য ৫ টি গ্রহের অবস্থান নির্ণয় করা যায়।
(৬) ষষ্ঠ পর্ব
এখানে গ্রহের অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমাংশ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
কোপার্নিকাসের মৃত্যু
১৫৪২ সালের শেষের দিকে কোপার্নিকাস হঠাত প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হন এবং ২৪ শে মে, ১৫৪৩ সালে ৭০ বছর বয়সে মারা যান।
বিজ্ঞানী কোপার্নিকাসের বইয়ের ভিত্তি
কোপার্নিকাস এই বইয়ের মধ্যে দিয়ে যে সত্যের প্রতিষ্ঠা করলেন তার উপর ভিত্তি করে গ্যালিলিও, কেপলার, নিউটন, আইনস্টাইন জ্যোতির্বিজ্ঞানের নতুন নতুন দিগন্তকে উন্মোচন করলেন।
উপসংহার :- তিনি যে শুধু একটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার করেছিলেন তাই নয়, তিনি ইউরোপের প্রথম বিজ্ঞানী মধ্যযুগীয় কুসংস্কার, অন্ধকার বিশ্বাসের মূলে তীব্র আঘাত হেনেছিলেন। তাই বিংশ শতকের মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছিলেন বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কোপার্নিকাসই হলেন আধুনিক যুগের পথিকৃৎ।
(FAQ) নিকোলাস কোপার্নিকাস সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
একজন বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী।
কোপার্নিকাস।
‘দি রিভিউলশনিবাস ওরিবিয়াম কোলেস্তিয়াম’।