কনৌজের যুদ্ধ প্রসঙ্গে যুদ্ধের প্রেক্ষাপট হিসেবে হুমায়ুনের দিল্লি ফেরার পথে বাধা, শেরশাহের শক্তি বৃদ্ধি, হুমায়ুনের সৈন সংগঠন, যুদ্ধের প্রস্তুতি, যুদ্ধ, যুদ্ধের ফলাফল ও তাৎপর্য সম্পর্কে জানবো।
বিলগ্ৰাম বা কনৌজের যুদ্ধ
ঐতিহাসিক যুদ্ধ | বিলগ্ৰাম বা কনৌজের যুদ্ধ |
দেশ | ভারত |
স্থান | কনৌজের নিকটবর্তী বিলগ্রামে |
সময়কাল | ১৫৪০ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই মে |
বিবাদমান পক্ষ | হুমায়ুন ও শেরশাহ |
ফলাফল | হুমায়ুনের পরাজয় |
ভূমিকা :- বাবর-এর মৃত্যুর পর দিল্লির সিংহাসনে বসেন তাঁর পুত্র হুমায়ুন। আফগানরা নতুন উদ্যমে মোগলদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হয়। এই কাজে বিশেষ উদ্যোগী ছিলেন মামুদ লোদী, বাংলার আফগান শাসক গিয়াসউদ্দিন মামুদ শাহ এবং বিহারের উদীয়মান আফগান যুবক শের খাঁ।
কনৌজের যুদ্ধের প্রেক্ষাপট
১৫৪০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ মে হুমায়ুন ও শেরশাহের মধ্যে সংঘটিত কনৌজের যুদ্ধের প্রেক্ষাপট ছিল নিম্নরূপ –
(১) হুমায়ুনের দিল্লি ফেরার পথে বাধা
হুমায়ুনের বাংলা জয়ের সময় শের খান বিহার ও জৈনপুরের মোগল অঞ্চলগুলো জয় করে কনৌজ পর্যন্ত অগ্রসর হয়। এতে হুমায়ুনের বাংলা জয়ের পর দিল্লী ফেরার পথ একরকম বন্ধ হয়ে যায়।
(২) চৌসার যুদ্ধ
হুমায়ুন যেকোনো উপায়ে দ্রুত দিল্লী ও আগ্রায় ফিরতে চাইলে ফেরার পথে চৌসা নামক স্থানে শের খানের বাহিনীর হাতে বাধাপ্রাপ্ত হন ও উভয় পক্ষে চৌসার যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
(৩) চৌসার যুদ্ধে হুমায়ুনের পরাজয়
১৫৩৯ সালের ২৬ জুন এই চৌসার যুদ্ধে হুমায়ুন পরাজিত হয়ে পলায়ন করেন। পলায়নের সময় এক ভিস্তিওয়ালা তার মশকের সাহায্যে সম্রাট হুমায়ুনকে গঙ্গা নদী পার করে হতভাগ্য সম্রাটের জীবন রক্ষা করেছিলেন।
(৪) শেরশাহের শক্তি বৃদ্ধি
চৌসার যুদ্ধের পর শের খান ‘শাহ’ উপাধি ধারণ করেন। শের শাহ তাঁর বিজিত অঞ্চল সুসংগঠিত করে তাঁর শক্তি আরো বৃদ্ধি করেন। চৌসার যুদ্ধে পরাজয় হুমায়ুনকে ভীত করে তুললেও তিনি সাহস হারান নি।
(৫) হুমায়ুনের সৈন সংগঠন
হুমায়ুন আবারো তার সৈন্য সংগ্রহে লিপ্ত হন। তার ভাই হিন্দাল মির্জা ও কামরান মির্জার কাছে সহায়তা কামনা করলেও তার ভাতৃদ্বয় তাকে সহায়তা করতে চায়নি। হুমায়ুনকে একাই লড়তে হয় শের শাহের বিরুদ্ধে।
(৬) যুদ্ধের প্রস্তুতি
হুমায়ুন তার হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য পুনরায় শক্তি সংগ্রহ করে এক বছরের মধ্যেই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হন।
কনৌজের যুদ্ধ
১৫৪০ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই মে কনৌজের নিকটবর্তী বিলগ্রাম নামক স্থানে সৈন্যে সহকারে শেরশাহে মুখোমুখি হন হুমায়ুন। শুরু হয় কনৌজ বা বিলগ্ৰামের যুদ্ধ।
কনৌজের যুদ্ধের ফলাফল
বিলগ্রাম বা কনৌজের যুদ্ধে হুমায়ুন আবার পরাজিত হন। আগ্রা ও দিল্লি শেরশাহের হস্তগত হয়। হুমায়ুন পারস্যে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
কনৌজের যুদ্ধের তাৎপর্য
বিলগ্ৰাম বা কনৌজের যুদ্ধে হুমায়ুনের পরাজয় এবং শেরশাহের জয় লাভের ফলে ভারতে সাময়িক ভাবে মোগল সাম্রাজ্যের পতন ঘটে এবং আফগান শাসনের সূচনা হয়।
উপসংহার :- এইভাবে মোগল-আফগান দ্বন্দ্বের পরিণতিতে দিল্লির সিংহাসনে আফগান-বীর শেরশাহের অধিষ্ঠান ঘটে। তিনি পাঁচ বছর রাজত্ব করেন।
(FAQ) কনৌজের যুদ্ধ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে।
শেরশাহ ও হুমায়ুন।
কনৌজের নিকটবর্তী বিলগ্রাম নামক স্থানে।
শেরশাহ।
বিলগ্ৰাম বা কনৌজের যুদ্ধে হুমায়ুনের পরাজয় এবং শেরশাহের জয় লাভের ফলে ভারতে সাময়িক ভাবে মুঘল সাম্রাজ্যের পতন ঘটে এবং আফগান শাসনের সূচনা হয়।