জোহানেস কেপলার

বিজ্ঞানী জোহানেস কেপলার প্রসঙ্গে তার জন্ম, শিক্ষা জীবন, কর্মজীবন, জ্যোতির্বিজ্ঞানে গবেষণা, কোপারনিকাসের মতকে সমর্থন, উপবৃত্তাকার কক্ষপথে গ্ৰহদের পরিভ্রমণের সঠিক তথ্য প্রদান, দূরবীন আবিষ্কার ও তার মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।

বিজ্ঞানী জোহানেস কেপলার

ঐতিহাসিক চরিত্রজোহানেস কেপলার
জন্ম২৭ ডিসেম্বর, ১৫৭১ খ্রি:
দেশজার্মানি
পরিচিতিজ্যোতির্বিজ্ঞানী
আবিষ্কারগ্রহীয় গতিসূত্র
মৃত্যু১৬৩০ খ্রি:
বিজ্ঞানী জোহানেস কেপলার

ভূমিকা :- কোপারনিকাস-এর ভূ-ভ্রমণবাদে যে সমস্ত জ্যোতির্বিজ্ঞানী আকৃষ্ট হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে জোহানেস কেপলার অন্যতম। শোনা যায়, কোপারনিকাসের লেখা পুস্তকখানি পাঠ করার পর পৃথিবী, গ্রহ ও নক্ষত্র প্রভৃতির সম্বন্ধে তাঁর অনুসন্ধিৎসা জাগরিত হয়। তারপরেই তিনি আরম্ভ করেন জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত গবেষণা।

জোহানেস কেপলারের জন্ম

১৫৭১ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির ওয়েল নামক একটি শহরে জোহানেস কেপলার জন্মগ্রহণ করেন।

কেপলারের শিক্ষাজীবন

  • (১) তাঁর পিতা ছিলেন অত্যন্ত দরিদ্র। তার উপর ছেলেবেলায় তিনি ছিলেন বড় রোগা। তাই পিতা সাহস করে ছেলেকে স্কুলে পাঠাতে পারেননি। নিজেই দান করেছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা। কিন্তু বালকের পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ ছিল ভয়ানক।
  • (২) বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সেই আগ্রহ এবং অজানাকে জানার কৌতূহল আরও বৃদ্ধি পায়। সে কৌতূহলকে চরিতার্থ করার ক্ষমতা পিতার ছিল না। তাই বাধ্য হয়েই একটু বেশি বয়সে পুত্রকে প্রেরণ করলেন স্থানীয় এক অবৈতনিক বিদ্যালয়ে।
  • (৩) কারও কারও মতে কেপলারের পিতার আর্থিক অবস্থা এত খারাপ ছিল যে, বাল্যকালে কেপলারকে একটি সরাইখানায় কাজ নিতে হয়েছিল। অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী কেপলার অতি অল্পদিনেই স্কুলের পাঠ সমাপ্ত করে ভর্তি হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে।
  • (৪) মাত্র কুড়ি বছর বয়সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বি. এ. ডিগ্রি গ্রহণ করে যোগদান করলেন গণিতের অধ্যাপক হিসাবে। সেই সময় তিনি টাইকো ব্রাহের সংস্পর্শে আসেন এবং টাইকোব্রাহের সহকারীরূপে কিছুদিন কাজ করেন।

কেপলারের কর্মজীবন

কর্মজীবনে কেপলার ছিলেন অস্ট্রিয়ার গ্রাৎস শহরে অবস্থিত একটি সেমিনারি স্কুলের গণিতের শিক্ষক। এখানে তিনি প্রিন্স হান্স উলরিখ ফন এগেনবের্গের একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগীতে পরিণত হন। এরপরে তিনি বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী টাইকো ব্রাহের সহকারী হন।

জ্যোতির্বিদ্যা সম্বন্ধে কেপলারের গবেষণা

কেপলারের প্রিয় বিষয়গুলি ছিল গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যা । অধ্যাপনার অবসরে তিনি মেতে উঠলেন গবেষণায়। প্রথমত তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল গণিত। কিন্তু কোপারনিকাসের লেখা পুস্তকখানি হস্তগত হলে তাঁর মত পরিবর্তিত হয় এবং জ্যোতির্বিদ্যা সম্বন্ধেই গবেষণা আরম্ভ করেন।

কোপারনিকাসের মতকে কেপলারের সমর্থন

  • (১) কোপারনিকাসের নতুন চিন্তাধারার প্রতি দৃষ্টিপাত না করলেও কেপলারের মনে কেমন যেন একটা সন্দেহ ঘনীভূত হল। চিন্তান্বিত হয়ে উঠলেন তিনি। ভাবতে শুরু করলেন, সূর্য ও গ্রহ-নক্ষত্রাদির পৃথিবীকে পরিভ্রমণ করা সম্ভব অথবা পৃথিবীর পক্ষে নিজ মেরুদণ্ডের উপর আবর্তন করা সহজ।
  • (২) অনেক চিন্তা করে শেষে কোপারনিকাসের মতকেই সমর্থন করলেন। এই উদ্দেশ্যে রচনা করলেন একখানি পুস্তক। পুস্তকটির নাম “ব্রহ্মান্ডের রহস্য।” কথিত আছে পুস্তকখানি রচনার পর সমর্থনের জন্য কেপলার প্রেরণ করেছিলেন তাঁরই সমসাময়িক বিজ্ঞানীশ্রেষ্ঠ গ্যালিলিওর কাছে।
  • (৩) গ্যালিলিও কী মতামত দিয়েছিলেন জানা যায় না। তবে পুস্তকটি পরবর্তীকালে গবেষকদের পথকে অনেকটা প্রশস্ত করে দিয়েছিল। আজও পুস্তকটির পান্ডুলিপি অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে রক্ষা করছে জার্মানি।

কেপলার কর্তৃক উপবৃত্তাকার পথে গ্রহদের পরিভ্রমণের সঠিক তথ্য প্রদান

কেপলারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পুস্তকটির নাম ‘নিউ অ্যাসট্রোনমি’। এই গ্ৰন্থ প্রকাশের পর বিজ্ঞানীরা জানতে পারলেন, সূর্যের চারদিকে গ্রহরা একটি উপবৃত্তাকার পথে পরিভ্রমণ করছে। তাই ওরা ঘুরতে ঘুরতে কখনও সূর্যের সন্নিকটবর্তী হয় আবার কখনও দূরে সরে যায়। কেপলারই প্রথম বিজ্ঞানী যিনি গ্রহদের পরিভ্রমণ পথের অনেকটা সঠিক তথ্য প্রদান করেছিলেন। তিনি অত্যন্ত জোরের সঙ্গে বলেছিলেন, কোন গ্রহের কক্ষপথ ঠিক বৃত্তাকার নয়।

কেপলার কর্তৃক দূরবীন আবিষ্কার

অনেকের মতে কেপলার একটি শক্তিশালী দূরবীনও তৈরি করেছিলেন এবং সেই দূরবীনের সাহায্যে তিনি গ্রহ, নক্ষত্র এবং চন্দ্রের গতিবিধি লক্ষ্য করতেন। কিন্তু তাঁর দূরবীনটি কেমন ছিল আজ আর জানার কোন উপায় নেই। বহু পূর্বেই যন্ত্রটি হারিয়ে গেছে পৃথিবী থেকে।

বিশ্বের বিদ্বৎসমাজে কেপলারের প্রতিষ্ঠা লাভ

তাঁর প্রথম গবেষণামূলক প্রবন্ধগুলি প্রকাশিত হয়েছিল ১৫৯৬ খ্রিস্টাব্দে। সেই থেকেই কেপলার বিশ্বের বিদ্বৎসমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন বিজ্ঞানী হিসাবে।

চিররুগ্ন কেপলার

কেপলার ছিলেন চিররুগ্ন। তার উপর রাতদিন এত কাজে ব্যস্ত থাকতেন যে শরীরের দিকে একটি বারও দৃষ্টি দিতে পারতেন না। তাই অল্প বয়সেই ভেঙ্গে পড়ল স্বাস্থ্য

কেপলারের মৃত্যু

মাত্র সাতান্ন কিংবা আটান্ন বছর বয়সেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পণ্ডিতেরা হিসেব করে দেখেছেন, তাঁর মৃত্যুকাল ১৫ নভেম্বর ১৬৩০ খ্রিস্টাব্দ।

উপসংহার :- কেপলারের গ্রহীয় সূত্রগুলো আইজাক নিউটন-এর বিশ্বজনীন মহাকর্ষ তত্ত্বের ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছিল। তিনি দীর্ঘজীবী হলে জ্যোতির্বিজ্ঞান হয়ত আরও মূল্যবান তথ্য লাভ করতে পারতো।

(FAQ) বিজ্ঞানী জোহানেস কেপলার সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. কেপলার কে ছিলেন?

একজন জার্মান গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও জ্যোতিষী। তিনি সপ্তদশ শতকের জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব। তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন তার গ্রহীয় গতিসূত্রের কারণে।

২. কেপলার কোন দেশের নাগরিক ছিলেন?

জার্মানি।

৩. কেপলার বিখ্যাত কেন?

গ্ৰহীয় গতিসূত্রের কারণে।

৪. কেপলারের বিখ্যাত গ্ৰন্থের নাম কি?

‘নিউ অ্যাসট্রোনমি’।

Leave a Comment