বৈদিক সভ্যতা কাকে বলে, বৈদিক সভ্যতার স্রষ্টা আর্য কারা, আর্য সমস্যা, আর্যদের আদি বাসভূমি, ভারতে আগমন ও প্রথম বসতি অঞ্চল এবং বৈদিক সাহিত্য সম্পর্কে জানবো।
প্রাচীন ইতিহাসের বৈদিক সভ্যতা প্রসঙ্গে বৈদিক সভ্যতায় আর্য কারা, বৈদিক সভ্যতায় আর্য সমস্যা, ঐতিহাসিক মতামত, বৈদিক সভ্যতায় আর্যদের বাসভূমি, আর্যদের আদি বাসস্থান ভারত, বৈদিক সভ্যতার আর্যদের আদি বাসস্থান ইউরোপ, বৈদিক সভ্যতা সম্পর্কে সর্বগ্ৰাহ্য মত, বৈদিক সভ্যতার আর্যদের ভারতে আগমন, সপ্তসিন্ধু অঞ্চল, বৈদিক সভ্যতার আর্যদের ভারতে প্রথম বসতি স্থাপন, বৈদিক সাহিত্য, বৈদিক সভ্যতার গ্ৰন্থ বেদ, ঋকবেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ, অথর্ববেদ, ব্রাহ্মণ, সংহিতা, আরণ্যক, উপনিষদ, সূত্রসাহিত্য, বৈদিক সভ্যতার সাহিত্য ও ষড়দর্শন।
বৈদিক সভ্যতা
বিষয় | বৈদিক সভ্যতা |
ভিত্তি | বেদ |
জীবিকা | পশুপালন |
সময়কাল | আনুমানিক ১৫০০-৬০০ খ্রিস্টপূর্ব |
ভূমিকা :- সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতার ধ্বংসের পর ভারত -এ যে সভ্যতার উদ্ভব হয় তার নাম বৈদিক সভ্যতা। বেদকে ভিত্তি করে এই সভ্যতা গড়ে ওঠে বলে এর নাম হয় বৈদিক সভ্যতা।
বৈদিক সভ্যতায় আর্য কারা
সাধারণত বৈদিক সভ্যতার স্রষ্টাদের ‘আর্য’ বলা হয়। খাঁটি সংস্কৃত শব্দে ‘আর্য’ কথার অর্থ হল ‘সৎ বংশজাত’ বা ‘অভিজাত মানুষ’। কিন্তু ‘আর্য’ কোনো জাতির নাম নয়, ভাষার নাম।
বৈদিক সভ্যতায় আর্য সমস্যা
আর্য সমস্যার সঙ্গে দুটি বিষয় সংযুক্ত। যথা-
- (১) ‘আর্য’ শব্দটি ভাষা না জাতির পরিচায়ক এবং
- (২) আর্যদের আদি বাসভূমি কোথায় ছিল? উক্ত দুটি বিষয় নিয়ে পণ্ডিত মহলে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, তা আর্য সমস্যা বলে চিহ্নিত হয়েছে।
ঐতিহাসিকদের মতামত
ম্যাক্সমুলার, উইলিয়াম জোন্স প্রমুখের মতে, আর্য হল ইন্দো-ইউরোপীয় সাতটি ভাষা, অর্থাৎ গ্রিক, গথিক, কেল্টিক, পারসিক, সংস্কৃত, লাতিন, জার্মান প্রভৃতি ভাষায় যারা কথা বলে।
বৈদিক সভ্যতার আর্যদের আদি বাসভূমি
আর্যদের আদি বাসভূমি কোথায় ছিল। সে ব্যাপারে পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্ক আছে। এই বিতর্ক আজও বিদ্যমান।
বৈদিক সভ্যতার আদি বাসস্থান ভারত
গঙ্গানাথ ঝা, ডি. এস. ত্রিবেদী, শ্রীকণ্ঠ শাস্ত্রী, সর্বোপরি স্বামী বিবেকানন্দ প্রমুখ ঐতিহাসিক ভারতবর্ষকেই আর্যদের আদি বাসভূমি বলে মনে করেন। তাঁরা এই বক্তব্যের সপক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন যে,
- (১) ঋগ্বেদ -এ উল্লিখিত পশু-পাখি ও উদ্ভিদের বিবরণের সঙ্গে পাঞ্জাব ও সন্নিহিত অঞ্চলের প্রাণীকুল ও উদ্ভিদকুলের যথেষ্ট মিল আছে।
- (২) ভারত আর্যদের আদি বাসভূমি বলেই বৈদিক আর্যদের সংস্কৃত ভাষার অনুপ্রবেশ ঘটেছে বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায়। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাসমূহে তা হয়নি।
বৈদিক সভ্যতার আদি বাসস্থান ইউরোপ
ব্রান্ডেনস্টাইন, এ. এল. ব্যাসাম, ডি. ডি. কোসাম্বী প্রমুখ ঐতিহাসিক ইউরোপকে আর্যদের আদি বাসভূমি বলে যুক্তি দেখিয়েছেন যে,
- (১) ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর সাতটি ভাষার মধ্যে পারসিক ও সংস্কৃত ছাড়া বাকি পাঁচটি আজও ইউরোপের ভাষা। এ থেকে বোঝা যায়, আর্যদের আদি বাসভূমি ইউরোপের বাইরে ছিল না।
- (২) ইউরোপে প্রচলিত ভাষাগুলির মধ্যে একমাত্র লিথুয়ানিয়ান ভাষাই ইন্দো ইউরোপীয় ভাষার মূল বাগ্বৈশিষ্ট্যের নিকটতম থেকে গেছে। আর লিথুয়ানিয়ার ভৌগোলিক অবস্থান ইউরোপে হওয়ায় আর্যদের আদি বাসভূমি ইউরোপে বলেই মনে করা হয়।
বৈদিক সভ্যতা সম্পর্কে সর্বজন গ্রাহ্য মত
আর্যদের আদি বাসভূমি সম্পর্কে সর্বজনগ্রাহ্য মতটি হল অধ্যাপক ব্র্যান্ডেনস্টাইনের। তিনি প্রাচীন আর্য ভাষাতত্ত্বের বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, ইউরোপের উরাল পর্বতের দক্ষিণে বর্তমান রাশিয়ার অন্তর্গত কিরঘিজের স্তেপী বা তৃণভূমি অঞ্চল ছিল আর্যদের আদি বাসভূমি।
বৈদিক সভ্যতার আর্যদের ভারতে আগমন
কিরঘিজের তৃণভূমি অঞ্চল থেকে আর্যদের একটি দল এশিয়া মাইনর হয়ে ইউরোপে, অপর একটি দল ইরানে চলে আসে। এদেরই একটি শাখা পরে আফগানিস্তান হয়ে ভারতে প্রবেশ করে।
সপ্তসিন্ধু অঞ্চল
প্রাচীন ভারতে পূর্ব আফগানিস্তান থেকে পূর্ব পাঞ্জাব পর্যন্ত অঞ্চলের নাম ছিল সপ্তসিন্ধু। ঋগবেদে উল্লিখিত সিন্ধু ও তার পাঁচটি উপনদী শতদ্রু, বিপাশা, ইরাবতী, চন্দ্রভাগা ও বিতস্তা এবং সরস্বতী – এই সাতটি নদীবেষ্টিত অঞ্চল অর্থাৎ বর্তমান পাঞ্জাব ও নিম্ন-সিন্ধু অঞ্চল ‘সপ্তসিন্ধু’ নামে পরিচিত।
বৈদিক সভ্যতার আর্যদের ভারতে প্রথম বসতি
আর্যরা প্রথমে ‘সপ্তসিন্ধু’ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে ক্রমশ পূর্বদিকে অভিপ্রয়াণ করে।
আর্যাবর্ত
পরবর্তী বৈদিক যুগ -এর মধ্যে উত্তরে হিমালয় থেকে দক্ষিণে বিন্ধ্য পর্বত পর্যন্ত বিশাল ভূভাগে আর্য সভ্যতা বিস্তৃত হয়। এই ভূভাগই আর্যাবর্ত নামে পরিচিত।
বৈদিক সভ্যতার বৈদিক সাহিত্য
আর্যদের সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞানের মূল উৎস হল বৈদিক সাহিত্য। বৈদিক সাহিত্য দুই ভাগে বিভক্ত। – বেদ ও সূত্র সাহিত্য।
বৈদিক সভ্যতার গ্রন্থ বেদ
বেদ শব্দের অর্থ হল জ্ঞান। বেদ শুনে শুনে মুখস্থ রাখা হত বলে এর অপর নাম শ্রুতি। বেদ কোনো একজনের রচনা নয়। প্রাচীনকালের বহু ঋষি দীর্ঘদিন ধরে বেদ রচনা করেন।
বৈদিক সভ্যতার গ্রন্থ বেদের ভাগ
সনাতন হিন্দু ধর্মের প্রাচীন গ্ৰন্থ বেদ চারটি ভাগে বিভক্ত। যেমন – ঋগ্বেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ, অথর্ববেদ।
বৈদিক সভ্যতার গ্রন্থ ঋগ্বেদ
সবথেকে প্রাচীনতম গ্রন্থ হল ঋগ্বেদ। এই গ্ৰন্থে প্রধানত প্রার্থনার মন্ত্র সন্নিবেশিত হয়েছে।
বৈদিক সভ্যতার গ্রন্থ সামবেদ
যাগযজ্ঞের উপযোগী স্তোত্র নিয়ে সামবেদ রচিত হয়েছে। এই বেদের অনেক স্তোত্র ঋগ্বেদ থেকে গ্ৰহণ করা হয়েছে।
বৈদিক সভ্যতার গ্রন্থ যজুর্বেদ
যাজযজ্ঞের বিভিন্ন নিয়মকানুন ও অনুষ্ঠানের বর্ণনা আছে যজুর্বেদে। প্রথম তিন বেদ ‘ত্রয়ীবিদ্যা’ নামে পরিচিত।
বৈদিক সভ্যতার গ্রন্থ অথর্ববেদ
রোগভোগ এবং অপদেবতার কোপ থেকে মুক্তিলাভের উদ্দেশ্যে রচিত মন্ত্রাদি নিয়ে অথর্ববেদ গঠিত।
সংহিতা
প্রত্যেকটি বেদের সংহিতা অংশে দেবদেবীর স্তব ও স্তুতি বর্ণনা করা হয়েছে।
ব্রাহ্মণ
চারটি বেদের ব্রাহ্মণ অংশে বিভিন্ন যজ্ঞের অনুষ্ঠান সম্পর্কে বিধিনিষেধ আলোচিত হয়েছে।
আরণ্যক
প্রতিটি বেদের আরণ্যক অংশে সংসার ত্যাগী তপোবনবাসীদের উদ্দেশ্যে উপদেশাবলী বর্ণনা করা হয়েছে।
উপনিষদ্
চার বেদের শেষ অংশ হল বেদান্ত বা উপনিষদ। উপনিষদে আছে কর্মফল তত্ত্ব ও জন্মান্তরবাদ সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়।
বৈদিক সভ্যতার সূত্র সাহিত্য
বৈদিক সাহিত্য কালক্রমে বিশাল ও জটিলতর রূপ ধারণ করলে তার মূলতত্ত্ব সম্পর্কে ভালোভাবে অনুধাবনের জন্য রচিত সাহিত্যই হল সূত্রসাহিত্য। এর দুটি অংশ – বেদাঙ্গ ও ষড়দর্শন।
বৈদিক সভ্যতার বেদাঙ্গ
বেদাঙ্গের ছটি ভাগে বিভক্ত। এগুলি হল শিক্ষা, কল্প, ব্যাকরণ, নিরুক্ত, ছন্দ ও জ্যোতিষ।
বৈদিক সভ্যতার ষড়দর্শন
ষড়দর্শন বলতে বোঝায় ছটি দর্শনকে। এগুলি হল – সাংখ্যদর্শন (কপিল), যোগদর্শন (পতঞ্জলি), ন্যায়শাস্ত্র (গৌতম), বৈশেষিক দর্শন (কণাদ), পূর্ব মীমাংসা (জৈমিনী) ও উত্তরমীমাংসা (বেদব্যাস)।
উপসংহার :- বৈদিক সাহিত্যের উপর ভিত্তি করে গঠিত বৈদিক সভ্যতা দুই ভাগে বিভক্ত হয়। যেমন – ঋক্ বৈদিক যুগ ও পরবর্তী যুগ।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “বৈদিক সভ্যতা” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যেকোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) বৈদিক সভ্যতা হতে জিজ্ঞাস্য?
আর্যরা।
সৎবংশজাত বা অভিজাত।
বেদ।