আজ ঋক বৈদিক যুগ কাকে বলে? ঋক বৈদিক যুগের সময়কাল, রাষ্ট্রীয় কাঠামো, নারীর স্থান, চতুরাশ্রম প্রথা, পোশাক, অর্থনীতি, কর ব্যবস্থা প্রভৃতি সম্পর্কে জানবো।
ইতিহাসে ঋকবৈদিক যুগ প্রসঙ্গে ঋকবৈদিক যুগ কাকে বলে, ঋকবৈদিক যুগের সময়কাল, ঋকবৈদিক যুগের রাষ্ট্রীয় কাঠামো, ঋকবৈদিক যুগে রাষ্ট্রের আয়তন, ঋকবৈদিক যুগে রাজার ক্ষমতা, ঋকবৈদিক যুগের গণপরিষদ সভা, ঋকবৈদিক যুগের গণপ্রতিনিধিত্বমূলক সংস্থা সমিতি, ঋকবৈদিক যুগে দশ রাজার যুদ্ধ, ঋকবৈদিক যুগে সেনা সংগঠন, ঋকবৈদিক যুগের অস্ত্র, ঋকবৈদিক যুগের পুলিশ ব্যবস্থা, ঋকবৈদিক যুগে মধ্যমাসি ও গ্ৰাম্যবাদিন, ঋকবৈদিক যুগে পুরোহিতের গুরুত্ব, ঋকবৈদিক যুগের সমাজ জীবন, ঋকবৈদিক যুগের সমাজে নারী স্থান, ঋকবৈদিক যুগে কুলপা কন্যা, ঋকবৈদিক যুগে সদ্যোদ্বাহা, ঋকবৈদিক যুগে ব্রহ্মবাদিনী, ঋকবৈদিক যুগে মন্ত্র রচনাকারী নারী, ঋকবৈদিক যুগে জাতিভেদ প্রথা, ঋকবৈদিক যুগে ব্রাত্য ও নিষাদ, ঋকবৈদিক যুগে চতুরাশ্রম প্রথা, ঋকবৈদিক যুগে ব্যবহৃত পোশাক, ঋকবৈদিক যুগে মানুষের খাদ্য, ঋকবৈদিক যুগে আমোদ-প্রমোদ, ঋকবৈদিক যুগের অর্থনৈতিক জীবন, কৃষিকাজ, পশুপালন, শিল্প, ঋকবৈদিক যুগে আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্য, বিনিময়ের মাধ্যম, ঋকবৈদিক যুগে কর ব্যবস্থা, ঋকবৈদিক যুগে ধর্মীয় জীবন, ঋকবৈদিক যুগের দেবদেবী ও ধর্মচর্চার অঙ্গ সম্পর্কে জানব।
বৈদিক সভ্যতার ঋক বৈদিক যুগ
বিষয় | ঋক বৈদিক যুগ |
ভিত্তি | ঋগ্বেদ |
সময়কাল | আনুমানিক ১৫০০-১০০০ খ্রিস্টপূর্ব |
সমাজ | পিতৃতান্ত্রিক |
অর্থনীতি | কৃষি ও পশুপালন |
ভূমিকা :- হরপ্পা সভ্যতা ধ্বংসের পর বেদকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল বৈদিক সভ্যতা। এই সভ্যতার দুটি ভাগ – ঋক বৈদিক যুগ ও পরবর্তী বৈদিক যুগ।
ঋক বৈদিক যুগ
ঋগবেদ থেকে আর্য সভ্যতা সম্পর্কে যে সময়কার কথা জানা যায়, সেই সময়কে ঋকবৈদিক যুগ বলে।
ঋক বৈদিক যুগের সময়কাল
প্রাচীন ঋক বৈদিক যুগের সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ অব্দ পর্যন্ত বিস্তৃত।
ঋক বৈদিক যুগের রাষ্ট্রীয় কাঠামো
ঋক বৈদিক যুগে রাষ্ট্রীয় কাঠামো ছিল রাজতান্ত্রিক। ঋগবেদে বার বার রাজন শব্দটি উল্লিখিত হয়েছে। রাজতন্ত্র ছিল উপজাতিকেন্দ্রিক। রাজপদ বংশানুক্রমিক ছিল।
- (১) গ্রাম – রাষ্ট্রব্যবস্থার নিম্নতম একক ছিল গ্রাম। গ্রামের শাসককে বলা হত গ্রামণী।
- (২) বিশ – কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গঠিত ছিল বিশ। বিশের শাসনকর্তাকে বলা হত বিশপতি।
- (৩) সর্বোচ্চ একক ছিল জন। জনের অধিকর্তাকে বলা হত গোপ।
- (৪) সভ ও সমিতির পরামর্শ
রাজাকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য সভা ও সমিতি নামে দুটি গণ-প্রতিনিধিমূলক সংস্থা ছিল।
ঋক বৈদিক যুগে রাষ্ট্রের আয়তন
সাধারণভাবে রাষ্ট্রের আয়তন ছিল ক্ষুদ্র। তবে এই যুগের শেষদিকে বৃহৎ রাষ্ট্রের উৎপত্তি হতে থাকে এবং রাজারা সম্রাট, একরাট, বিরাট প্রভৃতি উপাধি ধারণ করতে থাকেন।
ঋক বৈদিক যুগে রাজার ক্ষমতা
- (১) ঋক বৈদিক যুগে রাজা ছিলেন যথেষ্ট ক্ষমতা ও মর্যাদার অধিকারী। তিনি ছিলেন প্রধানত যোদ্ধা বা সামরিক নেতা। তিনি ঐশ্বরিক ক্ষমতার অধিকারী বলে দাবি করতেন।
- (২) তবে তাঁর ক্ষমতা অবাধ ছিল না। তাকে তাঁর মন্ত্রী তথা পুরোহিত এবং সভা ও সমিতি নামক দুটি গণ-প্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ গ্রহণ করতে হত। এদের পরামর্শ সবসময় উপেক্ষা করা রাজার পক্ষে সম্ভব হত না।
ঋক বৈদিক যুগের গণপরিষদ সভা
প্রাচীন ঋক বৈদিক যুগে রাজাকে পরামর্শ দেবার জন্য দুটি গণ পরিষদ ছিল। সভা তার মধ্যে অন্যতম। উপজাতির বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত ছিল সভা।
ঋক বৈদিক যুগের গণপ্রতিনিধি মূলক সংস্থা সমিতি
প্রাচীন ঋক বৈদিক যুগে রাজাকে পরামর্শ দেবার জন্য দুটি গণ পরিষদ ছিল। সমিতি তার মধ্যে অন্যতম। গোষ্ঠীর সমস্ত মানুষদের নিয়ে গঠিত সমিতি আকারে ও ক্ষমতায় ছিল সভার তুলনায় বড়ো।
ঋক বৈদিক যুগে দশ রাজার যুদ্ধ
ঋগবেদ থেকে জানা যায় যে, ভরত গোষ্ঠীর রাজা সুদাস রাজপুরোহিতের পদ থেকে বিশ্বামিত্রকে সরিয়ে বশিষ্ঠকে বসান। ক্রুদ্ধ বিশ্বামিত্র দশজন আর্য রাজার জোটট গড়ে সুদাসকে আক্রমণ করেন। এই যুদ্ধ দশ রাজার যুদ্ধ নামে পরিচিত।
ঋক বৈদিক যুগে সেনা সংগঠন
এই সময় রাজকীয় সেনাবাহিনী প্রধানত রথবাহিনী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে গড়ে উঠেছিল। রাজা ও ক্ষত্রিয় শ্রেণী রথে চড়ে যুদ্ধ করতেন। সেনাবাহিনীর প্রধানকে বলা হত সেনানী।
ঋক বৈদিক যুগে যুদ্ধের অস্ত্র
তির ও ধনুক ছিল প্রধান যুদ্ধাস্ত্র। অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্রের মধ্যে বর্শা, বল্লম, কুঠার ও তরবারি ছিল উল্লেখযোগ্য।
ঋক বৈদিক যুগের পুলিশ ব্যবস্থা
অপরাধীদের ধরে আনার জন্য ছিল পুলিশ। তাদের বলা হত উগ্ৰ।
ঋক বৈদিক যুগে মধ্যমসি ও গ্রাম্যবাদিন
পারস্পরিক বিবাদে যিনি মধ্যস্থতা করতেন তাকে বলা হত মধ্যমসি। গ্রামে বিচারকের কাজ করতেন গ্রাম্যবাদিন।
ঋক বৈদিক যুগে পুরোহিতের গুরুত্ব
- (১) ঋক বৈদিক যুগে রাজার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কর্মচারী ছিলেন পুরোহিত।
- (২) পুরোহিত রাজার যাগযজ্ঞ ও ধর্মীয় ব্যাপার পরিচালনা করতেন। রাজনীতির বিভিন্ন বিষয়ে পুরোহিত রাজাকে পরামর্শ দিতেন।
- (৩) এই যুগে পুরোহিতরা রাজার ওপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল। বশিষ্ঠ ও বিশ্বামিত্র ছিলেন এই যুগের প্রভাবশালী পুরোহিত।
ঋক বৈদিক যুগে সামাজিক জীবন
- (১) ঋগ বৈদিক যুগে সমাজের ভিত্তি ছিল পরিবার এবং এই পরিবার ছিল পিতৃতান্ত্রিক ও একান্নবর্তী।
- (২) পরিবারকে বলা হত কুল। পরিবারের প্রধান বা বয়োজ্যেষ্ঠ পুরুষ সদস্যকে গৃহপতি বা কুলপা বলা হত।
- (৩) পরিবারের সকল সদস্য বিনাবাক্যে গৃহপতির শাসন মেনে নিত। এই যুগে পরিবারগুলি ছিল যৌথ।
- (৪) ঋগবেদে অগ্নিদেবকে প্রায়ই অতিথি রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় যে, সে যুগে অতিথিকে বিশেষ সম্মান করা হত।
প্রাচীন ঋক বৈদিক যুগে নারীর স্থান
- (১) পিতৃতান্ত্রিক সমাজ হওয়ায় সকলেই পুত্র কামনা করত। কিন্তু কন্যাকে অবহেলা করা হত না। তাঁদের উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া হত। তাঁরা বেদপাঠ ও উপনয়নের অধিকারিণী ছিলেন।
- (২) এই যুগে পর্দাপ্রথা, সতীদাহ ও বাল্যবিবাহ প্রচলিত ছিল না। এই সময় নারীদের যথেষ্ট স্বাধীনতা ছিল।
- (৩) তারা পতি নির্বাচন করতে পারতেন, বৈদিক মন্ত্র রচনা করতেন, অধ্যাপনা করতেন, প্রকাশ্য সভায় তর্কযুদ্ধে অবতীর্ণ হতেন, সভা ও সমিতির অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন এবং নৃত্য-গীতে পারদর্শিনী ছিলেন।
- (৪) যুদ্ধবিদ্যাতেও অনেকে দক্ষ ছিলেন। স্বামীর যথার্থ সহধর্মিণীরূপে বিবাহিত নারীরা যাগযজ্ঞে অংশ নিতেন। ঘোষা, অপালা, বিশ্ববারা, মমতা, গোপা, লোপামুদ্রা প্রমুখ ছিলেন এই যুগের খ্যাতনামা বিদুষী নারী।
ঋক বৈদিক যুগে কুলপা কন্যা
প্রাচীন ঋক বৈদিক যুগে যে সমস্ত মহিলাদের বিবাহ হত না তাদের বলা হত কুলপা কন্যা।
ঋক বৈদিক যুগে সদ্যোদ্বাহা
এই যুগে যেসব নারী বিয়ের আগে পর্যন্ত বিদ্যাচর্চা করতেন তাদের সদ্যোদ্বাহা বলা হত।
ঋক বৈদিক যুগে ব্রহ্মবাদিনী
যে সব নারী আজীবন ধর্মতত্ত্ব আলোচনা, বিদ্যাচর্চা ও মন্ত্র রচনার কাছে ব্যাপৃত থাকতেন তাঁদের ‘ব্রহ্মবাদিনী’ বলা হত।
ঋক বৈদিক যুগের মন্ত্র রচনাকারী নারী
এই যুগে স্তোত্র বা মন্ত্র রচনা করেছেন এমন করেকজন নারী হলেন ঘোষা, অপালা, বিশ্ববারা, লোপামুদ্রা, গার্গী ও মৈত্রেয়ী।
ঋক বৈদিক যুগে জাতিভেদ প্রথা
- (১) ঋগ্বৈদিক সমাজে প্রথমদিকে বর্ণবৈষম্য থাকলেও জাতিভেদ ছিল না। সমাজের সব মানুষ স্বাধীনভাবে মেলামেশা করতে ও যেকোনো জীবিকা গ্রহণ করতে পারত।
- (২) এই যুগের শেষের দিকে কৃষ্ণকায়া অনার্যদের সঙ্গে গৌরবণ আর্যরা নিজেদের পার্থক্য বোঝানোর জন্য বর্ণপ্রথার উদ্ভব ঘটিয়েছিল।
- (৩) কালক্রমে সমাজে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশা ও শূদ্র – এই চারটি শ্রেণীর উদ্ভব হলে এবং জীবিকা বংশানুক্রমিক হয়ে উঠলে জাতিভেদ প্রথার উদ্ভব ঘটে।
- (৪) যারা ঈশ্বর উপাসনা, যাগযজ্ঞ, অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা করতেন তাঁরা ব্রাহ্মণ বলে পরিচিতি লাভ করেন।
- (৫) যারা রাজকর্ম, রাজাশাসন ও যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী তারা ক্ষত্রিয় হিসেবে পরিচিত হয়।
- (৬) কৃষিকাজ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে যুক্ত ব্যক্তিগণ বৈশ্য নামে পরিচিত ছিলেন।
- (৭) পরাজিত অনার্যরা আর্য সমাজে বাস করে উচ্চ তিনবর্ণের সেবা করত এবং তারা শুদ্র নামে পরিচিত ছিল।
ঋক বৈদিক যুগে ব্রাত্য ও নিষাদ
আর্যদের বর্ণ ব্যবস্থার বাইরে দুটি জনগোষ্ঠী হল ব্রাত্য ও নিষাদ। ব্রাত্যরা ছিল ব্রাহ্মণ্যধর্মের প্রভাব বহির্ভূত যাযাবর আর্য জনগোষ্ঠী। আর নিষাদ বলতে অনার্যদের বোঝাত।
ঋক বৈদিক যুগে চতুরাশ্রম প্রথা
প্রাচীন ঋক বৈদিক যুগের শেষ পর্বে আর্য সমাজে চতুরাশ্রম প্রথার উদ্ভব ঘটে। বৈদিক আর্যরা মানুষের জীবনকে চারটি পর্যায়ে ভাগ করেছিলেন। এগুলিকে একত্রে চতুরাশ্রম বলা হয়।
- (১) বাল্যকালে গুরুগৃহ বসবাস করে ব্রহ্মচর্য পালন ও বিদ্যাচর্চা হল ব্রহ্মচর্যাশ্রম।
- (২) যৌবনে বিবাহ করে সংসার ধর্ম পালন করা হল গার্হস্থ্যাশ্রম।
- (৩) প্রৌঢ় বয়সে সংসার ত্যাগ করে অরণ্যে গিয়ে ঈশ্বর চিন্তায় নিমগ্ন হওয়াকে বানপ্রস্থ বলা হয়।
- (৪) শেষজীবনে সব বন্ধন ছিন্ন করে সন্ন্যাস গ্রহণ করে পরমার্থ চিন্তায় কালযাপন করাই হল সন্ন্যাস আশ্রম।
ঋক বৈদিক যুগে ব্যবহৃত পোশাক
প্রাচীন ঋক বৈদিক যুগে বাস বা বহির্বাস ও অধিবাস এ-র প্রচলন ছিল। এই যুগে পশুর চামড়া, সুতি ও পশমের বস্ত্র ব্যবহৃত হত।
- (১) পুরুষরা দেহের ঊর্ধ্বাঙ্গ ও নিম্নাঙ্গের দুটি বস্ত্র পরিধান করত।
- (২) নারীরা সোনা, রূপা ও দামি পাথরের অলংকার এবং ফুলের মালা ব্যবহার করত। মেয়েরা নানাভাবে কেশবিন্যাস করত। তারা তেল ও চিরুনি ব্যবহার করত। নারী-পুরুষ উভয়েই পাগড়ি পরিধান করত বলে অনুমান করা হয়।
ঋক বৈদিক যুগে মানুষের খাদ্য
আর্যদের খাদ্যাভ্যাস ছিল সাধারণ ও অনাড়ম্বর।
- (১) খাদ্য হিসাবে তারা চাল, গম, যব, ফল-মূল, সবজি, মাছ, মাংস, দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য ব্যবহার করত।
- (২) তারা ঘোড়া, ভেড়া, ছাগল ও গোরুর মাংস ভক্ষণ করত। তবে গাভি হত্যা নিন্দনীয় ছিল।
- (৩) সূরা ছিল সাধারণ পানীয়, উৎসবাদিতে সোমরস নামক পানীয় ব্যবহার করত।
ঋক বৈদিক যুগে আমোদ-প্রমোদ
নৃত্যগীত, শিকার, মুষ্টিযুদ্ধ প্রভৃতি ছিল দৈনন্দিন আমোদ প্রমোনের অঙ্গ। এছাড়া অবসর বিনোদনের উপায় হিসেবে পাশাখেলা, মৃগয়া, রথের দৌড় প্রভৃতি প্রচলিত ছিল। ঋগবেদে বীণা, দুন্দুভি, বাঁশি, মৃদঙ্গ প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্রের উল্লেখ আছে।
ঋক বৈদিক যুগের অর্থনৈতিক জীবন
এই যুগের সভ্যতা ছিল গ্রামীণ সভ্যতা। প্রত্যেক গ্রামে পুর বা দুর্গ ছিল। যুদ্ধকালে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা সেখানে আশ্রয় নিত।
ঋক বৈদিক যুগের অর্থনীতি
ঋক বৈদিক যুগের অর্থনীতির প্রধান দুই ভিত্তি ছিল কৃষি ও পশুপালন
(১) ঋক বৈদিক যুগের কৃষি
ঋকবেদে লাঙল চালনা, বীজবপন, কাস্তে দিয়ে ফসল কাটা, শসা মাড়াই, ফসল গোলাজাত করার উল্লেখ আছে। উৎপন্ন ফসলের মধ্যে যব ও ধান উল্লেখযোগ্য।
(২) ঋক বৈদিক যুগের পশুপালন
- (১) পালিত পশুর মধ্যে প্রধান ছিল গোরু। ঋগবেদে গোরুকে বলা হয় অঘ্ন্য, যাকে হত্যা করা যায় না। গো-ধন বা গোসম্পদ বৃদ্ধির জন্য আর্যরা প্রার্থনা করত।
- (২) আর্য জীবনচর্চায় গোরুর গুরুত্ব অনুধাবন করা যায় গাভিষ্টি বা গাভীর সন্ধান শব্দটি থেকে, যার অর্থ যুদ্ধ। এই যুগে বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে গোরু ব্যবহৃত হত।
- (৩) যুদ্ধের সময়, শস্য ও পশুখাদ্য বহনের জন্য ঘোড়া ব্যবহার করা হত। পশমের জোগান দিত বলে এযুগের অর্থনীতিতে ভেড়ার স্থান ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
- (৪) পরবর্তীকালে উট পালন শুরু হলে অর্থনীতিতে পশুপালনের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়।
(৩) ঋক বৈদিক যুগের শিল্প
কৃষি ও পশুপালনের সঙ্গে সঙ্গে কারিগরি শিল্পেরও প্রসার ঘটে।
- (১) এই যুগে বয়নশিল্প প্রধানত পশমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। যুদ্ধে রথ ব্যবহৃত হওয়ায় রথ নির্মাণ শিল্পের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়।
- (২) ধাতুশিল্পীরা ব্রোঞ্জ ও তামার উপকরণ ও অস্ত্র নির্মাণ করত।
- (৩) মৃৎশিল্পেরও প্রচলন ছিল, ঋগবেদে যাকে ‘কুলাল’ বলা হয়েছে।
- (৪) এছাড়া তাঁতি, কসাই, চর্মশিল্পী প্রভৃতি নানা নতুন বৃত্তির উদ্ভব হয়।
ঋক বৈদিক যুগে আভ্যন্তরীণ বাণিজ্য
এই যুগে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য স্থল ও জলপথে পরিচালিত হত। এই যুগে ব্যবসা-বাণিজ্যে লিপ্ত ধনশালী সম্প্রদায় পণি নামে পরিচিত। সমাজে এদের যথেষ্ট প্রতিপত্তি ছিল। সম্ভবত পণি শব্দ থেকেই বণিক শব্দের উৎপত্তি হয়েছে।
ঋক বৈদিক যুগে বৈদেশিক বাণিজ্য
প্রাচীন ঋক বৈদিক যুগে বৈদেশিক বাণিজ্য মূলত সমুদ্রপথে পরিচালিত হত। অর্ণব অর্থাৎ সমুদ্রগামী জলযান, শতারিত্র অর্থাৎ শত দাঁড় বিশিষ্ট নৌকা প্রভৃতির উল্লেখ এই যুগে সামুদ্রিক বাণিজ্যের পরিচয় দেয়।
ঋক বৈদিক যুগে বিনিময়ের মাধ্যম
ঋক বৈদিক যুগে মুদ্রাভিত্তিক অর্থনীতির প্রচলন ছিল না। দ্রব্যের মাধ্যমে বিনিময় ব্যবস্থা বলবৎ ছিল। গোধন বা গোরু ছিল বিনিময়ের প্রধান মাধ্যম। তবে নিম্ন ও মনা নামে স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন ছিল বলে জানা যায়।
ঋক বৈদিক যুগে কর ব্যবস্থা
জমির ওপর রাজার কোনো অধিকার সেই যুগে ছিল না। নিয়মিত কোনো করও তিনি পেতেন না।
- (১) তবে রাজা প্রজাদের কাছ থেকে বলি নামে একটি কর বা দান আদায় করতেন। তবে খুব সম্ভবত বলি ছিল অনিয়মিত একটি কর।। এই বলি পণ্যের মাধ্যমে সংগৃহীত হত।
- (২) এছাড়া পরাজিত উপজাতিগুলি বিজয়ী রাজাকে বাধ্যতামূলক দান বা বলি প্রদান করত।
ঋক বৈদিক যুগে ধর্মীয় জীবন
আর্য সভ্যতা যেহেতু গ্রামীণ সভ্যতা সেহেতু তারা বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির উপাসনা করত। বৃষ্টি, চন্দ্র, সমুদ্র, সূর্য, আকাশ, পাহাড়, বায়ু প্রভৃতির উপর দেবত্ব আরোপ করা হত।
ঋক বৈদিক যুগের দেবতা ইন্দ্র
দেবতাদের মধ্যে ইন্দ্র ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দেবরাজ। তাঁকে ‘পুরন্দর অর্থাৎ দুর্গ-ধ্বংসকারী বলা হয়। এযুগে প্রাকৃতিক দেবতারা হলেন— ইন্দ্র–যুদ্ধ, বৃষ্টি, বজ্রের দেবতা।
ঋক বৈদিক যুগের অন্যান্য দেবতা
পাপ-পুণ্যের ধারক ও জলের দেবতা বরুণ, বৃক্ষাদির দেবতা সোম, বজ্রের বা ঝড়ের দেবতা মরুৎ, বৃষ্টির দেবতা পর্জন্য, আলোক দেবতা সূর্য, মৃত্যুর দেবতা যম, ধ্বংসের দেবতা রুদ্র বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
ঋক বৈদিক যুগের দেবী
পিতৃতান্ত্রিক সমাজে পুরুষ দেবতা ছাড়াও কিছু দেবীর উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন – অদিতি, সূর্য মণ্ডলের অধিষ্ঠাত্রী ও প্রাণদাত্রী সাবিত্রী, নদী বা বিদ্যার দেবী সরস্বতী, সৌরমণ্ডলের দেবী ঊষা বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
ঋক বৈদিক যুগে মানুষের ধর্ম চর্চার অঙ্গ
প্রার্থনা, স্তব-স্তুতি, বলিদান, যাগযজ্ঞ ছিল তাদের ধর্মচর্চার প্রধান অঙ্গ। তবে এই যুগে বিগ্রহ বা মন্দিরের কোনো স্থান ছিল না।
উপসংহার :- ঋক বৈদিক যুগের পর পরবর্তী বৈদিক যুগ শুরু হয়। পরবর্তী বৈদিক যুগে আর্যদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “ঋক বৈদিক যুগ” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যেকোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) ঋক বৈদিক যুগ হতে জিজ্ঞাস্য?
ইন্দ্র।
নিস্ক ও মনা।
পিতৃতান্ত্রিক।
আনুমানিক ১৫০০-১০০০ খ্রিস্টপূর্ব।
রাজা সুদাস।