ঘোষা

ঋক বৈদিক যুগের বিদুষী নারী ঘোষা প্রসঙ্গে তার জন্ম পরিচয়, বিবাহ, ঋক বা মন্ত্র রচনা, ঘোষা কর্তৃক অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের বন্দনা, ঘোষার সৌভাগ্যস্বরূপ অশ্বিনীকুমারদ্বয়, ঘোষা কর্তৃক যজ্ঞের সময় অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের কার্য বর্ণনা, অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের কাছে ঘোষার প্রার্থনা ওঘোষা কর্তৃক কর্তৃক অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের স্তব বন্দনা সম্পর্কে জানবো।

ঋক বৈদিক যুগের বিদুষী নারী ঘোষা

ঐতিহাসিক চরিত্রঘোষা
পরিচিতঋকবৈদিক যুগ-এর বিদুষী নারী
পিতৃ পরিচয়কক্ষিবান ঋষি
রোগকুষ্ঠরোগগ্রস্তা
আরাধ্যঅশ্বিনীকুমারদ্বয়
বিশেষ খ্যাতিঋকবেদের ঋক রচনা
ঋক বৈদিক যুগের বিদুষী নারী ঘোষা

ভূমিকা :- বৈদিক সভ্যতাভারত-এর সমাজে নারীজাতির বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা ছিল। প্রাচীনকালে বেদ-এর ভাষায় স্ত্রীজাতির সাধারণ নাম ছিল ‘নারী’। নারী শব্দে নেত্রী বুঝানো হত৷ এই একটি শব্দ থেকেই আর্যসমাজে স্ত্রীজাতির যে কিরূপ সম্মান ছিল, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। ঋকবৈদিক যুগের এইরকম একজন বিদুষী নারী হলেন ঘোষা।

ঘোষার জন্ম পরিচয়

ব্রহ্মবাদিনী ঘোষা কক্ষীবান্ ঋষির কন্যা।

আর্য নারী ঘোষার বিবাহ

বিদুষী নারী ঘোষা কুষ্ঠরোগগ্রস্তা হওয়ায় তার বিবাহ হয় নি। পরে স্বর্গের বৈদ্য অশ্বিনীকুমার তাঁর রোগ ভাল করে দিলে, তিনি পতিলাভ করেন।

ঘোষা কর্তৃক ঋক রচনা

ঋগ্বেদ-এর দশম মণ্ডলের ৩৯ এবং ৪০ সংখ্যক ঋক ঘোষার দ্বারা সংকলিত।

বিদুষী নারী ঘোষা কর্তৃক অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের বন্দনা

অশ্বিনীকুমারদ্বয়কে সম্বোধন করে ঘোষা বলছেন –

  • (১) হে অশ্বিনীকুমারদ্বয়, আপনাদের যে সর্বত্রবিহারী সুগঠন রথ আছে, আমরা রাতদিন সেই রথের নাম করছি। যেমন পিতার নামে আনন্দ হয়, সেরূপ ঐ নামেও আনন্দ হয়।
  • (২) আমাদেরকে মধুর বাক্য উচ্চারণ করতে প্রবৃত্ত করুন। আমাদের কর্ম সুসম্পন্ন করুন। যজ্ঞে সোমরস যেরূপ প্রীতিপ্রদ হয়, আমরা যেন জনগণের নিকট তেমন প্রীতিময়ী এবং আনন্দদায়িনী হই। আমাদেরকে প্রশংসনীয় ধনভাগ প্রদান করুন।

ঘোষার সৌভাগ্যস্বরূপ অশ্বিনীকুমারদ্বয়

একটি কন্যা পিত্রালয়ে অবিবাহিতা অবস্থায় থেকে বৃদ্ধাবস্থা প্রাপ্ত হচ্ছিল, আপনারাই তার সৌভাগ্যস্বরূপ তার বর আনয়ন করে দিয়েছিলেন। আপনারা অন্ধ, রুগ্ন, খঞ্জ, অথবা যে নীচ তাঁর আশ্রয়স্বরূপ।

বিদুষী ঘোষা কর্তৃক যজ্ঞের সময় অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের কার্য বর্ণনা

যেমন পুরনো রথকে কেউ নতুন করে নির্মাণ করে তাকে নতুনের মতো করে তোলে, তেমনই আপনাদের কৃপাতেই জরাজীর্ণ চ্যবন ঋষি পুনয়ায় যৌবন প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। তুগ্রের পুত্রকে জলের উপর নিরুপদ্রবে বহন করে তীরে উত্তীর্ণ করে দিয়েছিলেন। যজ্ঞের সময় আপনাদের দু’জনের সেই সমুদয় কার্য বিশেষ রূপে বর্ণনা করার যোগ্য।

অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের কাছে ঘোষার প্রার্থনা

লোকসমাজে আপনাদের অপূর্ব বীরত্বসূচক সমুদয় কার্য আমি বর্ণনা করে থাকি। এতদ্ব্যতীত আপনারা দুজন অতি নিপুণ চিকিৎসক, এই নিমিত্তআপনাদের আশ্রয় পাবার আশায় আপনাদেরকে স্তব করছি। পিতা পুত্রকে যেরূপ শিক্ষা দেন, আপনারা আমাকে সেইরূপ শিক্ষা দান করুন। আমি নিঃসঙ্গ, আমি জ্ঞানহারা, অতএব প্রার্থনা করছি আমাকে এইরূপ বর দিন যেন আমার কোনো দুর্গতি না ঘটে।

ঘোষা কর্তৃক কর্তৃক অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের স্তব বন্দনা

  • (১) শুন্ধুব নামে পুরুমিত্র রাজার যে কন্যা ছিল, আপনারা রথে করে তাকে নিয়ে বিমদের সাথে তার বিবাহ দিয়েছিলেন। বধ্রিমতী যখন প্রসববেদনায় কাতর হয়ে আপনাদের আহ্বান করেছিল, তখন আপনারা সেই নারীর প্রসব বেদনা দূর করে সুখে প্রসব করিয়েছিলেন।
  • (২) কলি নামক স্তোতা জরাজীর্ণ হয়ে যখন আপনাদের স্তব করেছিল, তখন আপনারাই তাঁকে নবযৌবন দান করেছিলেন। আপনারাই বন্দন নামক ব্যক্তিকে কূপের মধ্য থেকে উদ্ধার করেছিলেন। আপনারাই বিপ্পলা নামক ছিন্নপদ নারীকে লৌহময় চরণ দ্বারা সংযোজিত করে তৎক্ষণাৎ চলৎশক্তিবিশিষ্টা করেছিলেন।
  • (৩) শত্রুগণ যখন রেভ নামক ব্যক্তিকে মৃতপ্রায় করে গুহামধ্যে নিক্ষেপ করেছিল, তখন আপনারাই তার জীবন রক্ষা করেছিলেন। অত্রিমুনি যখন সপ্ত বন্ধনে বন্ধ হয়ে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন, তখন আপনারাই অগ্নির তেজ হ্রাস করে তাহার প্রাণ দান করেছিলেন।
  • (৪) হে অশ্বিনীকুমারদ্বয় ! আপনাদের দুই জনের নাম কীর্তনে আনন্দ হয়। আপনারা যে পথে গমন করেন সেই পথের চতুর্দিকে সকলের কণ্ঠে আপনাদের বন্দনারব ধ্বনিত হয়। আপনারা যদি পত্নীসহ কোনো ব্যক্তিকে আপনাদের রথে গ্রহণ করেন তাহলে তাকে কোনো পাপ, কোনো দুর্গতি বা কোনো বিপদ স্পর্শ করতে পারে না।
  • (৫) ঋতু নামক দেবতারা আপনাদের যে রথ প্রস্তুত করে দিয়েছেন, যে রথ আকাশে উত্থিত হলে আকাশ-দুহিতা উষাদেবীর আবির্ভাব হয় এবং সূর্যদেব হতে অতিসুন্দর দিন ও রাত্রি আবির্ভাব হয়, মন অপেক্ষাও অধিক বেগশালী সেই রথে আরোহণ করে আপনারা পর্বতাভিমুখে গমন করেন। শযু নামক ব্যক্তির বৃদ্ধা ধেনুকে পুনরায় দুগ্ধবতী করে দিন।
  • (৬) ভৃগুসন্তানগণ যেমন রথ প্রস্তুত করে, আমিও সেইরূপ আপনাদের জন্য এই মন্ত্র রচনা করলাম। বিবাহের সময় পিতা যেমন কন্যাকে বসন-ভূষণে অলঙ্কৃত করে সম্প্রদান করেন, সেরূপ আমি এই স্তবকে অলঙ্কৃত করছি।
  • (৭) হে অন্নসম্পন্ন ধনসম্পন্ন অশ্বিনীকুমারদ্বয় ! আপনারা আমার প্রতি কৃপাপরবশ হউন। আমার মনের অভিলাষ পূর্ণ হোক। আপনারা উভয়ে আমার কল্যাণ-বিধাতা, অতএব আমার রক্ষক হউন। আমি যেন পতিগৃহে গমন করে পতির প্রিয়পাত্রী হতে পারি। আমি আপনাদের স্তব করে থাকি, অতএব আপনারা আমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে আমার পতির ভবনে ধনবল ও লোকবল বিধান করুন। আমার পতিগৃহে যাবার পথ ভয়বিহীন করুন। আমাকে আশীর্বাদ করুন। আপনাদের আশীর্বাদে আমার পুত্র-পৌত্র প্রপৌত্রাদি যেন স্বপ্রতিষ্ঠিত হয়ে দিন যাপন করে।

উপসংহার :- বৈদিক মহিলারাও পতিপ্রেমাকাঙ্খিণী হবার জন্য কিরূপ ব্যাকুলতা প্রকাশ করতেন ঘোষার এই সমুদয় মন্ত্র থেকে তা প্রকাশ পায়।

(FAQ) ঋক বৈদিক যুগের বিদুষী নারী ঘোষা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ঘোষা কে ছিলেন?

ঋকবৈদিক যুগের একজন বিদুষী নারী ছিলেন ঘোষা।

২. ঘোষা কতগুলি ঋক রচনা করেন?

ঋকবেদের দশম মণ্ডলের ৩৯ ও ৪০ সংখ্যক ঋক।

৩. ঘোষার আরাধ্য বা উপাসক কে ছিলেন?

অশ্বিনীকুমারদ্বয়।

৪. ঘোষা কার কন্যা?

কক্ষিবান ঋষি।

Leave a Comment