ফ্রান্সে ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত ফরাসি বিপ্লবের ফলাফল সম্পর্কে ডেভিড থমসনের মন্তব্য, কার্ল মার্কসের মন্তব্য, নবযুগের জন্ম।
ফরাসি বিপ্লবের প্রভাব হিসেবে পুরাতনতন্ত্রের ভিত্তি দুর্বল, রাজতন্ত্রের অবসান, সামন্ততন্ত্রের অবসান, গির্জার কর্তৃত্ব ও মর্যাদা লোপ, জনগণের সার্বভৌমত্ব, শাসনব্যবস্থার উপর প্রভাব, জাতীয়তাবাদ, পুঁজিবাদী অর্থনীতির বিকাশ, সাম্যবাদের উৎস, শিক্ষা ও সংস্কৃতি।
ফ্রান্সের বাইরে ফরাসি বিপ্লবের প্রভাব সম্পর্কে ভন লুনের মন্তব্য, বিপ্লবী ভাবধারার প্রসার, কবি ও দার্শনিকদের উপর প্রভাব এবং জাতীয়তাবাদী মুক্তি সংগ্রামের সূচনা।
ফরাসি বিপ্লবের ফলাফল (Results of the French Revolution)
ঐতিহাসিক ঘটনা | ফরাসি বিপ্লবের প্রভাব বা ফলাফল |
সময়কাল | ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দ |
স্থান | ফ্রান্স |
রাজা | ষোড়শ লুই |
ফলাফল | রাজতন্ত্রের পতন |
বিপ্লবের ভাবধারা প্রসার | নেপোলিয়ন |
ভূমিকা :- ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ফরাসি বিপ্লব ফ্রান্স তথা সমগ্র পৃথিবীর ইতিহাসে এক অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। রুশ বিপ্লব ছাড়া, সমগ্র মানব জাতির ইতিহাসে ফরাসি বিপ্লবের মতো এত ব্যাপক, গভীর ও সুদূরপ্রসারী বিপ্লব আর ঘটে নি।
ফরাসি বিপ্লব সম্পর্কে ডেভিড থমসনের মন্তব্য
ঐতিহাসিক ডেভিড থমসন (David Thomson)-এর মতে- “প্রথম বিশ্বযুদ্ধ -এর পূর্বে ফরাসি বিপ্লবকেই আধুনিক ইউরোপ -এর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে অভিহিত করা যায়।”
ফরাসি বিপ্লব সম্পর্কে কার্ল মার্কসের মন্তব্য
কার্ল মার্কস ফরাসি বিপ্লবকে ‘দানবীয় ঝাঁটা’ (Giants’ sweep)-র সঙ্গে তুলনা করেছেন, যা পুরাতনতন্ত্রকে সম্পূর্ণভাবে অপসারিত করে।
ফরাসি বিপ্লবের ফলে নবযুগের জন্ম
এই বিপ্লবের ফলে পুরোনো ধ্যান-ধারণা, ঐতিহ্য, বিশ্বাস ও একটি যুগের সমাধি রচিত হয় এবং এরই সূতিকাগারে জন্ম নেয় নতুন চিন্তা-চেতনা ও ধ্যান-ধারণা সমন্বিত এক নবযুগ।
ফরাসি বিপ্লবের প্রভাব
ফ্রান্স তথা ইউরোপের সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও মতাদর্শের উপর ফরাসি বিপ্লব এক ব্যাপক সূদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করে। যেমন –
(১) পুরাতনতন্ত্রের ভিত্তি দুর্বল
এই বিপ্লব ‘পুরাতন ব্যবস্থা’-র তিনটি ভিত্তি – স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র, বৈষম্যমূলক সামন্তভিত্তিক সমাজব্যবস্থা এবং দুর্নীতিগ্রস্ত গির্জার উপর প্রবলতম কুঠারাঘাত হেনে ‘পুরাতনতন্ত্রের’ ভিত্তি দুর্বল করে দেয়।
(২) রাজতন্ত্রের অবসান
- (ক) ফরাসি রাজতন্ত্র ছিলবংশানুক্রমিক ও দৈবস্বত্বে বিশ্বাসী। সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পর্কহীন এই শাসনব্যবস্থার মূল কথাই ছিল স্বৈরাচার। ফরাসি সম্রাট চতুর্দশ লুই ছিলেন ‘সূর্য রাজা’ (Sun King) এবং তিনি নিজেকে স্বয়ং রাষ্ট্র বলে অভিহিত করতেন। রাজা ষোড়শ লুই (১৭৭৪-১৭৯২ খ্রিঃ) বলতেন যে, ‘আমার ইচ্ছাই ‘আইন’।
- (খ) ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে আগস্ট ‘ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারসমূহের ঘোষণা’-র দ্বারা রাজতন্ত্রের অবাধ অধিকার খর্ব করে সাধারণ মানুষের অধিকার ও মর্যাদাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
- (গ) রাজার হঠকারিতায় ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে প্রথম প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। নেপোলিয়ন বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
- (ঘ) ১৮১৫-১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে বুরবোঁ রাজারা পুনরায় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তাদের সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এক কথায় বলা যায় যে, ফরাসি রাজনৈতির রঙ্গমঞ্চ থেকে রাজতন্ত্রের ধারণা চিরতরে অপসৃত হয়।
(৩) সামন্ততন্ত্রের অবসান
- (ক) ফরাসি সমাজ ছিল ত্রিস্তর-বিশিষ্ট এবং অভিজাত ও সামন্তভিত্তিক শ্রেণিবিভক্ত। সমাজ ‘বিশেষ অধিকারভোগী’ ও ‘অধিকারহীন’—এই দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল।
- (খ) সংখ্যালঘিষ্ঠ যাজক ও অভিজাতরা নানা প্রকার সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার ভোগ করত। সরকারি চাকুরিতে ছিল তাদের একচেটিয়া জন্মগত অধিকার। দেশের অধিকাংশ জমির মালিক হওয়া সত্ত্বেও তাদের কোনও ভূমিকর দিতে হত না।
- (গ) অপর দিকে, সর্বপ্রকার সুবিধা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ছিল অন্যায় অত্যাচার ও শোষণের শিকার। তাদের নানা ধরনের করভার বহন করতে হত।
- (ঘ) বিপ্লবের লক্ষ্য ছিল এই ‘বিশেষ অধিকারের বিলুিপ্তি ঘটিয়ে সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করা। ফরাসি ঐতিহাসিক অ্যালফ্রেড কোবান-এর মতে, “বিশেষ অধিকার ছিল শত্রু এবং সাম্য ছিল লক্ষ্য।”
- (ঙ) ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের সংবিধান সভা সর্বপ্রকার সামন্ততান্ত্রিক অধিকার এবং সামাজিক বৈষম্য অস্বীকার করে সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করে। বংশপরিচয় বা জন্মকৌলিন্যের পরিবর্তে যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতাই মানুষের সামাজিক অবস্থান ও মর্যাদার মাপকাঠি হয়ে দাঁড়ায়।
- (চ) কোবান বলেন যে, ফ্রান্সের অষ্টাদশ শতক ছিল আধুনিক যুগের সূতিকাগার। সামন্ততন্ত্র ছিল মধ্যযুগীয় সমাজব্যবস্থার অন্যতম প্রধান ভিত্তি এবং সামন্ততন্ত্র থেকে মুক্তি হল আধুনিক যুগের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।
- (ছ) ফ্রান্সের মাটিতেই সর্বপ্রথম সামন্তপ্রথার সমাধি রচিত হয় এবং কালক্রমে এই ভাবধারা ইউরোপের অন্যান্য দেশে সম্প্রসারিত হয়।
(৪) গির্জার কর্তৃত্ব লোপ
- (ক) বিভেদ-জর্জরিত সামন্ততান্ত্রিক সমাজ ও ‘পুরাতনতন্ত্র’-র অন্যতম প্রধান স্তম্ভ ছিল দুর্নীতিগ্রস্ত ক্যাথলিক গির্জা এবং যাজক সম্প্রদায়। গির্জা ছিল বিপুল সম্পত্তির অধিকারী, শিক্ষাব্যবস্থার পরিচালক এবং ধর্মীয় জীবনের সর্বময় কর্তা।
- (খ) গির্জা নানাভাবে সাধারণ মানুষের উপর বিভিন্ন প্রকার শোষণ ও অত্যাচার চালাত। বিপ্লব গির্জা ও পোপের সর্বময় প্রভুত্ব বিলুপ্ত করে, রাষ্ট্র-বহির্ভূত ক্ষমতা হরণ করে, ভূ-সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে, যাজক শ্রেণি রাষ্ট্রীয় কর্মচারী হিসেবে নিযুক্ত হয় এবং ধর্মীয় সহিষ্ণুতার নীতি গৃহীত হয়।
(৫) জনগণের সার্বভৌমত্ব
- (ক) ফরাসি বিপ্লব কেন্দ্রীভূত স্বৈরতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে ফ্রান্সে জনগণের স্বায়ত্তশাসনের সূচনা করে। এই বিপ্লব প্রমাণ করে যে, জনগণই হল সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস।
- (খ) ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ‘জাতীয় পরিষদ’ কর্তৃক প্রচারিত ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারসমূহের ঘোষণায় জনগণের সার্বভৌমত্ব ও জনগণের ইচ্ছাই আইন—এই দুটি আদর্শের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপিত হয়।
- (গ) ফরাসি বিপ্লবের বাণী স্বাধীনতা, সাম্য ও মৈত্রী-র আদর্শ ফ্রান্স ও ইউরোপে প্রভূত জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ব্যক্তি-স্বাধীনতা, বাক্-স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার, সভা-সমিতির অধিকার স্বীকৃত হয়।
- (ঘ) বিচারের নামে প্রহসন, রাজপদ ক্রয়-বিক্রয় প্রভৃতির | অবসান ঘটে। এইভাবে ফ্রান্স মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগে পদার্পণ করে।
(৬) শাসনব্যবস্থার উপর প্রভাব
- (ক) বিপ্লবের ফলে ফরাসি শাসনব্যবস্থা পুনর্গঠিত হয়। একটি রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও প্রাক্-বিপ্লব যুগে ফ্রান্স কিন্তু একটি শাসনতান্ত্রিক একক ছিল না। ফ্রান্সের বিভিন্ন প্রদেশ ও অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের আইন-কানুন প্রচলিত ছিল।
- (খ) বিপ্লবের ফলে ফ্রান্স একটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক এককে পরিণত হয়। ফ্রান্সের সর্বত্র একই ধরনের আইন-কানুন ও একই ধরনের কেন মুদ্রাব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়।
- (গ) বিচারের নামে প্রহসন, দুর্নীতিগ্রস্ত ও স্বেচ্ছাচারী প্রশাসন, উচ্চপদ বিক্রয় বন্ধ হয় এবং জন্মকৌলিন্যের পরিবর্তে প্রকৃত যোগ্যতা স্বীকৃতি লাভ করে।
(৭) জাতীয়তাবাদ
- (ক) প্রাক্-বিপ্লব ফ্রান্সে জাতীয়তাবাদ বলতে বোঝাত রাজা ও রাজতন্ত্রের প্রতি প্রশ্নহীন আনুগত্য। ফরাসি বিপ্লব রাজা ও রাজতন্ত্রের পরিবর্তে দেশ ওজাতির প্রতি আনুগত্য গড়ে তোলে।
- (খ) স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামে সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়। এর ফলে জাগ্রত হয় দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদ। ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে ‘জাতীয় সভা’ ‘পিতৃভূমি বিপন্ন’ হওয়ার কথা ঘোষণা করলে সমগ্র ফ্রান্সে প্রবল জাতীয়তাবোধের সঞ্চার হয় এবং বিদেশি শত্রু বিরুদ্ধে সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়।
- (গ) ফ্রান্সের সর্বত্র একই ধরনের আইন-কানুন প্রবর্তিত হয় এবং পূর্বতন প্রদেশগুলির বিভিন্নতা লুপ্ত হলে দেশবাসীর মধ্যে জাতীয়তাবাদী আদর্শ জোরদার হয়ে ওঠে।
(৮) পুঁজিবাদী অর্থনীতির বিকাশ
- (ক) ফরাসি বিপ্লবে বুর্জোয়া বা মধ্যবিত্ত শ্রেণি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। ফরাসি বিপ্লব ছিল মূলত বুর্জোয়া বিপ্লব। এই বিপ্লবে বুর্জোয়াদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল কৃষক ও সর্বহারা শ্রেণি।
- (খ) বুর্জোয়াদের লক্ষ্য ছিল পুঁজিবাদী অর্থনীতির বিকাশ ঘটানো। এর ফলে অবাধ বাণিজ্য নীতি গুরুত্ব পায়। এইভাবে ফ্রান্সে একটি স্বনির্ভর ও সবল মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান হয়।
- (গ) বিপ্লব বুর্জোয় শ্রেণির স্বার্থরক্ষা করলেও সামগ্রিকভাবে সাঁকুলেৎ শ্রেণির স্বার্থরক্ষা করে নি। সাঁকুলেৎ শ্রেণি কালক্রমে সর্বহারায় পরিণত হয়।
(৯) সাম্যবাদের উৎস
- (ক) গির্জা ও অভিজাতদের ভূ-সম্পত্তি কৃষকদের হস্তগত হওয়ায় কৃষকদের আর্থিক অবস্থা উন্নত হয় এবং ফ্রান্সে একটি স্বাধীন কৃষক সমাজ গড়ে ওঠে। ঐতিহাসিক ক্ৰপোটকিন (Kropotkin) বলেন যে, ফরাসি বিপ্লবের কালে ফ্রান্সে সাম্যবাদী আদর্শ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
- (খ) জিরণ্ডিনদের পতনের পর বেবিউফ (Babeuf)-এর আন্দোলনে সাম্যবাদী মতাদর্শের প্রচার লক্ষ্য করা যায়। ঐতিহাসিক ক্ৰপোটকিন বলেন যে, বর্তমান যুগের সাম্যবাদ, নৈরাজ্যবাদ ও সমাজতন্ত্রবাদ-এর ধারণার উৎস হল ফরাসি বিপ্লব।
(১০) শিক্ষা ও সংস্কৃতি
- (ক) শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বিপ্লব যথেষ্ট পরিবর্তন আনে। আগে শিক্ষা ছিল গির্জার নিয়ন্ত্রণাধীন। বিপ্লব শিক্ষাক্ষেত্রে গির্জার একচেটিয়া অধিকার অবলুপ্ত করে এবং শিক্ষার লৌকিকীকরণ ও আধুনিকীকরণ হয়।
- (খ) শিক্ষা রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আসে এবং সর্বস্তরে শিক্ষাবিস্তারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। শিক্ষার উদ্দেশ্য হয় দেশপ্রেম জাগ্রত করা ও সুনাগরিক গড়ে তোলা। জেকোবিনরা প্রাথমিক শিক্ষা এবং থার্মিডোরীয়রা উচ্চশিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করে। বিজ্ঞান পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
- (গ) সাহিত্য জগতেও পরিবর্তন আসে। বিপ্লবের ঘটনা সাহিত্যিকদের প্রেরণা যোগায়। শিল্পজগতে দাভিদ এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনেন। তাঁর আঁকা ‘টেনিস কোর্টের শপথ‘ এক অনবদ্য সৃষ্টি।
- (ঘ) সংগীতের জগতে বিপ্লবের প্রভাব ছিল ব্যাপক। গোসেক, মেহুল, গেত্রে রচনা করেন উৎসবের গান। পোশাক-পরিচ্ছদ ও সামাজিক আচার-আচরণের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসে।
ফ্রান্সের বাইরে ফরাসি বিপ্লবের প্রভাব
কেবলমাত্র ফ্রান্স নয়- ইউরোপ ও পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলেও ফরাসি বিপ্লবের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। যেমন –
(১) ভন লুনের মন্তব্য
ঐতিহাসিক ডঃ এইচ. ডব্লিউ. ভন লুন (Dr. H. W. Von Loon) বলেন যে, ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লব পেট্রোগ্রাড থেকে মাদ্রিদ পর্যন্ত সমগ্র মহাদেশকে আলোড়িত করেছিল এবং পুরোনো রাষ্ট্রনীতি ও কূটনীতিকে কয়েক টন গণতান্ত্রিক ইটের নীচে সমাহিত করেছিল।
(২) বিপ্লবের ভাবধারার প্রসার
নেপোলিয়ন তাঁর সাম্রাজ্যবাদের মাধ্যমে বিপ্লবের ভাবধারাকে সমগ্র ইউরোপে বিস্তৃত করেন। তিনি ছিলেন ‘আধুনিক ভাবধারার তরবারি’। তাঁর শাসন-সংস্কারের মাধ্যমে ইউরোপের বিজিত দেশগুলিতে সামাজিক সাম্য, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ, আইনগত সমদর্শিতা, পরধর্মসহিষ্ণুতা, জন্মকৌলিন্যের পরিবর্তে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রভৃতি আদর্শ কার্যকর হয় এবং সামন্ততন্ত্র, ভূমিদাস ব্যবস্থা প্রভৃতির অবসান ঘটে।
(৩) কবি, দার্শনিকদের ওপর প্রভাব
ফরাসি বিপ্লবের আদর্শ টমাস পেইন, কান্ট, হেগেল, ফিক্টে, স্নেগেল, বায়রন, কোলরিজ, ওয়ার্ডসওয়ার্থ প্রমুখ বুদ্ধিজীবী, কবি ও দার্শনিকদের গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে।
(৪) জাতীয়তাবাদী মুক্তিসংগ্রামের সূচনা
ইংল্যান্ড, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড প্রভৃতি দেশে ফরাসি বিপ্লবের আদর্শে সভা-সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। ইতালি, জার্মানি, পর্তুগাল, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, গ্রিস, বলকান প্রভৃতি অঞ্চলে শুরু হয় জাতীয়তাবাদী মুক্তিসংগ্রাম।
উপসংহার :- এক কথায় বলা যায় যে, ফ্রান্সের সীমানা অতিক্রম করে ফরাসি বিপ্লবের ভাবধারা ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলে বিস্তৃত হয়ে মহা আলোড়ন সৃষ্টি করে।
(FAQ) ফরাসি বিপ্লবের প্রভাব বা ফলাফল সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে।
বুরবোঁ রাজবংশ।
ষোড়শ লুই।
স্বাধীনতা, সাম্য ও মৈত্রী।
নেপোলিয়ন।
আর্টিকেলটি পরে ভালো লাগলো । কিন্তু রাজতন্ত্র নিয়ে বলা কিছু ইনফরমেশনে হয়তোবা ভুল আছে ভাইয়া । কারন এইখানে তো অন্য কথা বলছে :https://shorturl.at/ADEHM