গঙ্গাসাগর মেলা প্রসঙ্গে মেলার সময়, দ্বিতীয় বৃহত্তম হিন্দু মেলা, কিংবদন্তি, পালযুগের সাথে সম্পর্ক, লোক কাহিনী, পূণ্যতিথি, বিশেষ আকর্ষণ, সেবামূলক কাজ সম্পর্কে জানবো।
ধর্মীয় উৎসব গঙ্গাসাগর মেলা
উৎসব | গঙ্গাসাগর মেলা |
সময় | মকর সংক্রান্তি |
ধরণ | ধর্মীয় উৎসব |
পালন | হিন্দু সম্প্রদায় |
উদযাপন | বাৎসরিক |
ভূমিকা :- ভারত -এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণে সাগর দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত কপিলমুনির আশ্রমে প্রতি বছর মক্রর সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত একটি মেলা ও ধর্মীয় উৎসব হল গঙ্গাসাগর মেলা।
গঙ্গাসাগর মেলার সময়
যুগ যুগ ধরে পৌষ মাসের শেষে মক্রর সংক্রান্তিতে গঙ্গাসাগর মেলা হয়। এই মেলাতে বহু পূণ্যার্থী আসে দুঃখ, কষ্ট, শোক, তাপ ও পাপ থেকে মুক্ত হতে গঙ্গার সঙ্গম স্থলে পূর্ণ স্নান করে। আসে লক্ষ লক্ষ মানুষ সারা ভারত তথা বিদেশ থেকেও আসে বহু সাধুসন্ত।
গঙ্গাসাগর
পবিত্র গঙ্গা নদী বা হুগলি নদী ও বঙ্গোপসাগরের মিলন স্থানকে বলা হয় গঙ্গাসাগর। একদিকে তীর্থভূমি আবার অন্যদিকে মেলাভূমি হল গঙ্গাসাগর। এই দুয়ের মেলবন্ধনে আবদ্ধ গঙ্গাসাগর মেলা।
গঙ্গাসাগর মেলার কেন্দ্র সাগরদ্বীপ
সাগরদ্বীপের দক্ষিণপ্রান্তে হুগলি নদী বা গঙ্গা নদী বঙ্গোপসাগরে এসে পতিত হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের মহাদেশীয় সোপানে অবস্থিত একটি দ্বীপ হল এই সাগরদ্বীপ। এই দ্বীপটি কলকাতা শহর থেকে ১০০ কিমি দূরে অবস্থিত।
দ্বিতীয় বৃহত্তম হিন্দু মেলা গঙ্গাসাগর মেলা
কুম্ভমেলার পর দ্বিতীয় বৃহত্তম হিন্দু মেলা হল গঙ্গাসাগর মেলা। সাগর দ্বীপের এই স্থানটি হিন্দুদের কাছে পবিত্র তীর্থ। প্রতিবছর মকর সংক্রান্তির দিন এখানে বহু লোক তীর্থস্নান করতে আসেন। তবে বিহার-উত্তরপ্রদেশ থেকে আগত অবাঙালি পুণ্যার্থীদের ভিড়ই সর্বাধিক।
গঙ্গাসাগর মেলা সম্পর্কে কিংবদন্তী
- (১) কিংবদন্তি আছে যে, এখানে সাংখ্য দর্শনের প্রবক্তা কপিলমুনির আশ্রম ছিল। একসময় কপিলমুনির ক্রোধাগ্নিতে সগর রাজার ষাট হাজার পুত্র ভস্মীভূত হন এবং তাদের আত্মা নরকে নিক্ষিপ্ত হয়।
- (২) রামায়ণ অনুসারে জানা যায় যে, সগরের পৌত্র ভগীরথ স্বর্গ থেকে গঙ্গাকে নিয়ে এসে সগরপুত্রদের ভস্মাবশেষ ধুয়ে তাদের আত্মাকে মুক্ত করে দেন। মহাভারতের বনপর্বেও তীর্থযাত্রা অংশে গঙ্গাসাগর তীর্থের কথা বলা হয়েছে।
পাল যুগের সাথে গঙ্গাসাগর মেলার সম্পর্ক
বাংলার পাল সাম্রাজ্য -এর রাজা দেবপাল-এর একটি লিপিতে তার গঙ্গাসাগর-সঙ্গমে ধর্মানুষ্ঠান করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
গঙ্গাসাগর মেলা উপলক্ষে লোককাহিনী
লোক-কাহিনী অনুসারে এখানে কপিল মুনির একটি আশ্রম ছিল। একসময় আশ্রমটি সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে আশ্রমটিকে কেন্দ্র করে তার ভক্তদের সমাগম বাড়তে থাকে।
পূণ্যতিথিতে গঙ্গাসাগর মেলা
এই সাগর সঙ্গমে প্রত্যেক বছর জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি মকর সংক্রান্তি বা পৌষ-সংক্রান্তির পূণ্যতিথিতে লক্ষ লক্ষ লোকের সমাগম ঘটে। এই সমাগমকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বিরাট মেলা যার নাম গঙ্গাসাগর মেলা।
গঙ্গাসাগর মেলার বিশেষ আকর্ষণ
মেলার বিশেষ আকর্ষণ হল হিমালয়ের সাধুসন্তরা। তীব্র শীত উপেক্ষা করে শুধু ছাইভস্ম গায়ে মেখে অনাবৃত অবস্থায় তারা তাদের ধর্মীয় নিয়ম পালন করে থাকেন।
পবিত্র গঙ্গাসাগর মেলায় সেবামূলক কাজ
সরকারের পাশাপাশি অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মেলায় প্রাথমিক চিকিৎসা থেকে আরম্ভ করে সেবামূলক কার্য পরিচালনা করে থাকে।
২০২৪ সালে গঙ্গাসাগর মেলা
২০২৪ সালে ৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে গঙ্গাসাগর মেলা। এই মেলা চলবে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত।
উপসংহার:- জাতপাত ভুলে, সমস্ত সঙ্কীর্ণতা দূরে সরিয়ে ঐক্যের এক ভারতের সূচনা ঘটে এই গঙ্গাসাগর মেলায়।
(FAQ) গঙ্গাসাগর মেলা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
গঙ্গাসাগর মেলা।
কুম্ভমেলা।
মকর সংক্রান্তি।
কপিল মুনির।