ইংল্যান্ডের ইতিহাসে নতুন রাজতন্ত্র

নতুন রাজতন্ত্র প্রসঙ্গে গোলাপের যুদ্ধ, সপ্তম হেনরির সিংহাসন লাভ, মার্টিন ও ওয়ার্নারের মন্তব্য, সপ্তম হেনরির বিবাহ, আধুনিক যুগের সূচনা, নতুন রাজতন্ত্র বলার কারণ হিসেবে ব্যারনদের ক্ষমতা হ্রাস, নতুন শাসন ব্যবস্থা, ধর্ম সংস্কার আন্দোলন, সাম্রাজ্যবাদের সূচনা, পার্লামেন্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি, সামাজিক পরিবর্তন ও বিচার বিভাগের মর্যাদা বৃদ্ধি সম্পর্কে জানবো।

ইংল্যান্ডে নতুন রাজতন্ত্র প্রসঙ্গে সপ্তম হেনরির ইংল্যান্ডের সিংহাসন লাভ, সপ্তম হেনরির বিবাহ, ইংল্যান্ডে আধুনিক যুগের সূচনা, নতুন রাজতন্ত্র বলার বিভিন্ন কারণ সম্পর্কে জানব।

নতুন রাজতন্ত্র

ঐতিহাসিক ঘটনানতুন রাজতন্ত্র
সম্পর্কিতইংল্যান্ড
বংশটিউডর বংশ
রাজাসপ্তম হেনরি
রাজত্বকাল১৪৮৫-১৫০৯ খ্রি
গোলাপের যুদ্ধ১৪৫৫-৮৫ খ্রি
যুগআধুনিক যুগ
নতুন রাজতন্ত্র

ভূমিকা:- নতুন রাজতন্ত্র বিষয়ক ঘটনাটি ইংল্যান্ডের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। দীর্ঘদিন যুদ্ধ চলার পর ১৪৮৫ সালে সপ্তম হেনরির সিংহাসন লাভের ফলে ইংল্যান্ডে নতুন রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

গোলাপের যুদ্ধ

ইংল্যান্ডের সিংহাসনে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে হাউস অব ল্যাঙ্কাস্টার ও হাউস অব ইয়র্ক-এর মধ্যে দীর্ঘ ত্রিশ বছর ব্যাপী গোলাপের যুদ্ধ (১৪৫৫-১৪৮৫ খ্রি.) চলে।

সপ্তম হেনরির সিংহাসন লাভ

গোলাপের যুদ্ধের অবসানের পর সপ্তম হেনরি (১৪৮৫-১৫০৯ খ্রি.) ১৪৮৫ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের সিংহাসনে বসলে সে দেশে টিউডর রাজবংশের প্রতিষ্ঠা হয়।

মার্টিন ও ওয়ার্নারের মন্তব্য

ওয়ার্নার এবং মার্টিন সপ্তম হেনরির রাজত্বকালকে “প্রতিকার ও বীজ বপনের কাল” বলে চিহ্নিত করেছেন।

সপ্তম হেনরির বিবাহ

দীর্ঘদেহী ও কঠোর প্রকৃতির রাজা সপ্তম হেনরি ইয়র্কের এলিজাবেথের সঙ্গে প্রণয়ে আবদ্ধ হয়ে তাঁকে বিবাহ করেন। সপ্তম হেনরি এভাবে রক্ত গোলাপকে শ্বেত গোলাপের সঙ্গে যুক্ত করে ইংল্যান্ডের সিংহাসনে নিজের ক্ষমতা সুপ্রতিষ্ঠিত করেন।

আধুনিক যুগের সূচনা

টিউডর বংশের প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ইংল্যান্ড মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগে প্রবেশ করে। এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা সপ্তম হেনরি ইংল্যান্ডে এক নতুন শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। তাঁর শাসনকালে ইংল্যান্ডে শাসনতান্ত্রিক ও রাষ্ট্রনীতি বিষয়ক বেশ কিছু আধুনিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এজন্য সপ্তম হেনরি প্রতিষ্ঠিত রাজতন্ত্রকে ‘নতুন রাজতন্ত্র’ বলে অভিহিত করা হয়।

নতুন রাজতন্ত্র বলার কারণ

রাজা সপ্তম হেনরি প্রতিষ্ঠিত রাজতন্ত্রকে ‘নতুন রাজতন্ত্র’ বলে অভিহিত করার কারণ হল, তাঁর আমল থেকে ইংল্যান্ডে সামগ্রিক ক্ষেত্রে পরিবর্তনের সূচনা হয়। যেমন –

(ক) ব্যারনদের ক্ষমতা হ্রাস

ইংল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যারন পরিবার সেদেশের রাজপরিবারের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করে নিজেদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করত। এই ক্ষমতাবান ব্যারনরা শাসনব্যবস্থায় নানা জটিলতার সৃষ্টি করত। কিন্তু রাজা সপ্তম হেনরি ব্যারন পরিবারের পরিবর্তে স্পেন, ফ্রান্স ও স্কটল্যান্ডের রাজবংশগুলির সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। এতে একদিকে যেমন টিউডর বংশের মর্যাদা ও গুরুত্ব বৃদ্ধি পায় অন্যদিকে তেমনি জটিলতা সৃষ্টিকারী ব্যারনদের ক্ষমতা হ্রাস পায়।

(খ) নতুন শাসনব্যবস্থা

ইতিহাসবিদ ডি. এল. কেয়ার বলেছেন যে, এই সময় রাজতন্ত্রের চূড়ান্ত ক্ষমতা প্রকাশের পথে বাধাবিপত্তিগুলি দূর হয় এবং ইংল্যান্ডে নতুন ধরনের শাসনব্যবস্থার প্রচলন ঘটে।

(গ) ধর্মসংস্কার আন্দোলন

টিউডর বংশের শাসনকালে আধুনিক মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কৃত হলে যুক্তিবাদী জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা শুরু হয়। ইংল্যান্ডের মানুষ যুক্তির নিরিখে ধর্মকে বিচার করতে শুরু করলে সেদেশে ধর্মসংস্কার আন্দোলন-এর পথ প্রশস্ত হয়। ইংল্যান্ডে প্রোটেস্টান্ট ধর্মমত স্থায়িত্ব লাভ করে।

(ঘ) সাম্রাজ্যবাদের সূচনা

  • (১) ইংল্যান্ডের রাজারা ইতিপূর্বে ফ্রান্সে আধিপত্য বিস্তারের যে চেষ্টা করত তার পরিবর্তে এই যুগে কলম্বাস আবিষ্কৃত (১৪৯২ খ্রি.) আমেরিকা মহাদেশে আধিপত্য বিস্তারের প্রয়াস শুরু হয়। এর ফলে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদের সূচনা হয়।
  • (২) প্রসঙ্গত বলা দরকার যে, ইংল্যান্ডে রাজতন্ত্রের ক্ষমতা বৃদ্ধি, ধর্মসংস্কার আন্দোলন, ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদ প্রভৃতি যেসব বিষয়গুলি ঘটে চলেছিল সে ধরনের পরিবর্তনগুলি ইউরোপ-এর অন্যান্য কয়েকটি রাষ্ট্রেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঘটতে দেখা গিয়েছিল।
  • (৩) কিন্তু সপ্তম হেনরির প্রতিষ্ঠিত রাজতন্ত্র ইংল্যান্ডের সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে ধরনের অভিনবত্ব এনেছিল তা ইউরোপের অন্যান্য দেশে সামগ্রিকভাবে আসে নি।

(ঙ) পার্লামেন্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি

সপ্তম হেনরি আইনের মাধ্যমে সামন্তপ্রভুদের ক্ষমতা হ্রাস করে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেন। এর ফলে ইংল্যান্ডে জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা সরকার গঠন এবং নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হয়।

(চ) সামাজিক পরিবর্তন

সপ্তম হেনরির পদক্ষেপের ফলে অভিজাত শ্রেণির ক্ষমতা হ্রাস পেয়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে ইংল্যান্ডের সামাজিক ক্ষেত্রে বড়ো ধরনের পরিবর্তন ঘটে যায়।

(ছ) বিচার বিভাগের মর্যাদা বৃদ্ধি

এই সময় বিচার বিভাগের মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং বিচার বিভাগের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরে আসে।

উপসংহার :- এই সব কারণে সপ্তম হেনরি প্রতিষ্ঠিত রাজতন্ত্রকে নতুন রাজতন্ত্র বলা অযৌক্তিক নয়।এই সময়েই ইংল্যান্ড মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগে পদার্পণ করে।

(FAQ) নতুন রাজতন্ত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. কার প্রতিষ্ঠিত রাজতন্ত্রকে ইংল্যান্ডে নতুন রাজতন্ত্র বলা হয়?

সপ্তম হেনরি।

২. সপ্তম হেনরি কোন বংশের রাজা ছিলেন?

টিউডর বংশ।

৩. সপ্তম হেনরির রাজত্বকাল কত?

১৪৮৫-১৫০৯ খ্রিস্টাব্দ।

৪. গোলাপের যুদ্ধ সংঘটিত হয় কখন?

১৪৫৫-৮৫ খ্রিস্টাব্দে।

অন্যান্য ঐতিহাসিক ঘটনাগুলি

Leave a Comment