ইউরোপে ধর্মসংস্কার আন্দোলন, ধর্মসংস্কার আন্দোলনকে ধর্মবিপ্লব বলার কারণ হিসেবে পোপের একাধিপত্যের অবসান, জাতিভিত্তিক গীর্জা গঠন, প্রতিবাদী আন্দোলন, প্রতি-ধর্মসংস্কার আন্দোলন, প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মমতের উত্থান, ধর্মসংস্কার আন্দোলনের পথিকৃৎ, ধর্মসংস্কার আন্দোলনের কারণ, প্রসার ও ফলাফল সম্পর্কে জানবো।
ইউরোপে ধর্মসংস্কার আন্দোলন
ঐতিহাসিক ঘটনা | ইউরোপে ধর্মসংস্কার আন্দোলন |
সময়কাল | ষোড়শ শতক |
স্থান | ইউরোপ |
পথিকৃৎ | মার্টিন লুথার |
প্রতিপক্ষ | পোপ ও ক্যাথলিক চার্চ |
ফলাফল | পোপের আধিপত্য বিনষ্ট |
নতুন ধর্মমত | প্রোটেস্ট্যান্ট |
ভূমিকা :- নবজাগরণ কেবলমাত্র নতুন নতুন সাহিত্য ও শিল্পের সৃষ্টি, বিজ্ঞানচর্চা বা ভৌগোলিক আবিষ্কারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না – খ্রিস্টধর্ম ও ধর্মপ্রতিষ্ঠানের প্রকৃত রূপ কী হওয়া উচিত সেই সম্পর্কেও যথেষ্ট উৎসাহের সৃষ্টি করেছিল।
ইউরোপে ধর্মসংস্কার আন্দোলন
ষোড়শ শতাব্দীর ইউরোপে পোপের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব ও ধর্মাধিষ্ঠানের দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে আন্দোলন শুরু হয় তাকে ‘রিফর্মেশন’ (Reformation) বা ‘ধর্মসংস্কার আন্দোলন’ বলা হয়।
ধর্মসংস্কার আন্দোলনকে ধর্মবিপ্লব বলার কারণ
অনেকে একে ধর্মসংস্কার আন্দোলন না বলে ‘ধর্মবিপ্লব’ বলার পক্ষপাতী। ধর্মবিপ্লব বলার কারণ গুলি হল –
(১) পোপের একাধিপত্য বিনষ্ট
এই আন্দোলনের ফলে খ্রিস্টীয় জগতের উপর রোম -এর পোপের একাধিপত্য বিনষ্ট হয়। জার্মানির উত্তরাংশ, সুইডেন, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস বা হল্যান্ড, ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড প্রভৃতি দেশ পোপের প্রতি আনুগত্য প্রত্যাহার করে।
(২) জাতিভিত্তিক গীর্জা গঠন
পোপের একাধিপত্যের অবসান ঘটলেও এইসব দেশগুলিতে জাতিভিত্তিক গির্জা গড়ে ওঠে।
(৩) প্রতিবাদী আন্দোলন
নবজাগরণের ফলে মানুষ ধর্মের প্রকৃত স্বরূপ উপলব্ধি করে এবং পোপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আন্দোলন-এর ফলে ইউরোপে ধর্মযুদ্ধ শুরু হয়।
(৪) প্রতিসংস্কার আন্দোলন
এই আন্দোলনের ফলেই ক্যাথলিক গির্জাকে দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য এক ধরনের সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়, যা ‘প্রতি-সংস্কার আন্দোলন’ নামে পরিচিত।
ইউরোপে ধর্মসংস্কার আন্দোলনকে ধর্মবিপ্লব বলার সিদ্ধান্ত
এইসব কারণে অনায়াসেই একে ধর্মসংস্কার আন্দোলনের পরিবর্তে ‘ধর্মবিপ্লব’ বলা যায়।
ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ফলে প্রোটেস্টান্ট ধর্মমতের উত্থান
রোমান ক্যাথলিক ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ইউরোপে প্রতিবাদী বা প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মমতের উত্থান ঘটে।এর ফলে পোপের নেতৃত্বাধীন রোমান চার্চের একাধিপত্ব নষ্ট হয়।
ধর্মসংস্কার আন্দোলনের পথিকৃৎ
ইউরোপের ধর্মসংস্কার আন্দোলনের পথিকৃৎ ছিলেন মার্টিন লুথার। পোপের বিরুদ্ধে তার প্রতিবাদ থেকেই ধর্মসংস্কার আন্দোলন শুরু হয়ে যায়।
ধর্মসংস্কার আন্দোলনে কারণ
ইউরোপের ধর্মসংস্কার আন্দোলনের কারণ ছিল বিভিন্ন পোপের আধিপত্য, নৈতিক অবক্ষয়, আর্থিক শোষণ ও দুর্নীতি, নবজাগরণ ও মানবতাবাদ, নগর জীবনের বিকাশ, জাতীয় রাষ্ট্রের উদ্ভব, জন ওয়াইক্লিফের ভূমিকা, জন হাসের ভূমিকা এবং সর্বোপরি মার্টিন লুথারের প্রতিবাদের মধ্য দিয়েই প্রত্যক্ষভাবে ইউরোপে ধর্ম সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়ে যায়।
ইউরোপে ধর্মসংস্কার আন্দোলনে প্রসার
ষোড়শ শতকে জার্মানির মাটির লুথার ক্যাথলিক চার্চের অনাচারের বিরুদ্ধে সংঘটিত ধর্মসংস্কার আন্দোলনের প্রদীপে সর্বপ্রথম অগ্নি সংযোগ করেন। জার্মানি থেকে ক্রমে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড প্রভৃতি দেশে ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়ে।
ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ফলাফল
ইউরোপে ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ফলাফল ছিল সুদূর প্রসারী। ধর্মসংস্কার আন্দোলন ইউরোপের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করেছিল। এর ফলে চার্চ ব্যবস্থায় ভাঙন, বিভিন্ন মতবাদের উদ্ভব, প্রতিবাদের ভিত্তি স্থাপন, ক্যাথলিক চার্চের সংস্কার, সাহিত্যের বিকাশ, চিন্তার স্বাধীনতা ও আধুনিক যুগের পটভূমি তৈরি হয়।
উপসংহার :- পঞ্চদশ শতকে নবজাগরণ এবং ষোড়শ শতকের ধর্মসংস্কার আন্দোলন ইউরোপে মধ্যযুগের অবসান ঘটায় এবং আধুনিক যুগের আগমনের পটভূমি তৈরি করে।
(FAQ) ইউরোপে ধর্মসংস্কার আন্দোলন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
ষোড়শ শতকে।
মার্টিন লুথার।
ক্যাথলিক গির্জাকে দুর্নীতি মুক্ত করার জন্য যে আন্দোলন শুরু হয় তাকে প্রতি-ধর্মসংস্কার আন্দোলন বলে।
প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মমত।