ক্রিস্টোফার কলম্বাস

ইতালির নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাস প্রসঙ্গে তার জন্ম, শৈশবকাল, পিতৃপরিচয়, স্বপ্ন, বিবাহিত জীবন, স্পেনের সহায়তায় চার বার সমুদ্র যাত্রা, তার শেষ জীবন ও তার মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।

ইতালির নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাস

ঐতিহাসিক চরিত্রক্রিস্টোফার কলম্বাস
জন্মআনুমানিক ১৪৫১ খ্রি:
জন্মস্থানইতালি
পিতাডোমেনিকো কলম্বাস
মাতাসুজানা ফনটানারোজা
পরিচিতিইতালীয় নাবিক
মৃত্যু২০ মে, ১৫০৬ খ্রি:
ইতালির নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাস

ভূমিকা :- ক্রিস্টোফার কলম্বাস ছিলেন একজন ইতালীয় নাবিক ও ঔপনিবেশিক। ক্রিস্টোফার কলম্বাসের আমেরিকা অভিযানের ফলে ঐ অঞ্চলে ইউরোপীয়দের উপনিবেশ স্থাপনের সূচনা করেছিল।

কলম্বাসের জন্ম

ইতালির জেনোয়া শহরে কলম্বাসের জন্ম। সঠিক দিনটি জানা যায় না। তবে অনুমান ১৪৫১ সালের আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে কোনো এক দিনে জন্ম হয়েছিল কলম্বাসের।

নাবিক কলম্বাসের পিতৃপরিচয়

বাবা ডোমেনিকো কলম্বাস ছিলেন তন্তুবায়। কাপড়ের ব্যবসা ছিল তার। সেই সূত্রেই কলম্বাস জানতে পেরেছিলেন প্রাচ্য দেশের উৎকৃষ্ট পোশাক, নানান মশলা, অফুরস্ত ধনসম্পদের কথা। তার মায়ের নাম ছিল সুজানা ফনটানারোজা।

কলম্বাসের স্বপ্ন

সেই ছেলেবেলা থেকেই মনে মনে স্বপ্ন দেখতেন বড় হয়ে জাহাজ নিয়ে পাড়ি দেবেন ভারতবর্ষ-এ। জাহাজ বোঝাই করে বয়ে নিয়ে আসবেন হীরে মণি মুক্তা মাণিক্য।

অতি কষ্টে কলম্বাসের জীবনধারণ

কলম্বাস ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী, অধ্যাবসায়ী। কিন্তু অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে ভাগ্য ছিল নিতান্তই প্রতিকূল। তাই অতিকষ্টে জীবন ধারণ করতেন কলম্বাস।

কলম্বাসের লিসবনে বসবাস

নাবিক কলম্বাসের ভাই তখন লিসবন শহরে বাস করতে। ভাই-এর কাছ থেকে ডাক পেয়ে কলম্বাস লিসবন শহরে গিয়ে বাসা বাঁধলেন।

কাজের সন্ধানে কলম্বাস

কলম্বাসের বয়স তখন আটাশ বছর। অল্পদিনের মধ্যেই ছোটখাট একটা কাজও জুটে গেল। কাজের অবসরে মাঝে মাঝে গীর্জায় যেতেন।

কলম্বাসের বিবাহিত জীবন

  • (১) একদিন গীর্জায় পরিচয় হল ফেলিপা মোঞিস দ্য পেরেছেল্লো নামে এক তরুণীর সাথে। ফেলিপার বাবা বার্থলোমিউ ছিলেন সম্রাট হেনরির নৌবাহিনীর এক উচ্চপদস্থ অফিসার। কলম্বাসের জীবনে এই পরিচয় এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
  • (২) পরিচর্য পর্ব অল্পদিনেই অনুরাগে পরিণত হল। তারপর বিবাহ। বিবাহের পর কলম্বাস শ্বশুরের গৃহেই থাকতেন। শ্বশুরের কাছে শুনতেন তার প্রথম যৌবনের সমুদ্র অভিযানের সব রোমাঞ্চকর কাহিনী। অন্য সময় লাইব্রেরী ঘরে বসে পড়তেন দেশ-বিদেশের নানান ভ্রমণ কাহিনী।

নাবিক কলম্বাস কর্তৃক মার্কোপোলোর ভ্রমণ বৃত্তান্ত পাঠ

এই সময়ে একদিন তার হাতে এল মার্কোপেলোর চীন ভ্রমণের ইতিবৃত্ত। পড়তে পড়তে মনের মধ্যে প্রাচ্য দেশে যাবার স্বপ্ন নতুন করে জেগে উঠল। এর পেছনে কাজ করছিল দুটি শক্তি। রোমাঞ্চকর অভিযানের দূরন্ত আকাঙ্ক্ষা, দ্বিতীয়ত স্বর্ণতৃষ্ণা।

কলম্বাসের সময়ের মানুষের ধারণা

তখন মানুষের ধারণা ছিল প্রাচ্য দেশের পথে ঘাটে ছড়িয়ে আছে সোনা-রূপা। সে দেশের মানুষের কাছে তার কোনো মূল্যই নেই। ইচ্ছা করলেই তা জাহাজ বোঝাই করে আনা যায়।

বিখ্যাত ভূগোলবিদের কাছে কলম্বাসের চিঠি

কলম্বাস চিঠি লিখলেন সে যুগের বিখ্যাত ভূগোলবিদ Pagolo Toscanelli কে। Pagolo কলম্বাসের চিঠির জবাবে লিখলেন “তোমার মনের ইচ্ছার কথা জেনে আনন্দিত হলাম। আমার তৈরি সমুদ্র পথের একটা নকসা পাঠালাম। যদিও এই নকশা নির্ভুল নয়, তবুও এই নকশার সাহায্যে প্রাচ্যের পথে পৌঁছতে পারবে। যেখানে ছড়িয়ে আছে অফুরন্ত হীরে জহরৎ সোনা, রূপা, মণি, মুক্তা, মানিক্য।

উপহাসের পাত্র কলম্বাস

চিঠি পেয়ে কলম্বাসের মন থেকে সব সংশয় সন্দেহ দূর হয়ে গেলে। শুরু হয়ে গেল তার যাত্রার প্রস্তুতি। কলম্বাসের ইচ্ছার কথা শুনে সকলে অবাস্তব অসম্ভব বলে উড়িয়ে দিল। অনেকে তাকে উপহাস করল। কেউ কেউ তাকে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করতেও ছাড়ল না। একটি মানুষও এগিয়ে এল না তার সমর্থনে বা সাহায্যে।

কলম্বাসের প্রতি স্পেনের রানীর আশ্বাস

ইতালীয় নাবিক কলম্বাসের অনুরোধে স্পেন-এর রানী ইসাবেলা সহৃদয় বিবেচনার আশ্বাস দিলেও সম্রাট ফার্দিনান্দ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করলেন।

নাবিক কলম্বাসের স্ত্রী ফেলিপার মৃত্যু

ইতিমধ্যে কলম্বাসের স্ত্রী ফেলিপা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। সমস্ত চিকিৎসা সত্ত্বেও অসুখ ক্রমশই গুরুতর হয়ে উঠল। দূর প্রাচ্য অভিযানে পরিকল্পনা স্থগিত রাখতে হল। কিছুদিন পর মারা গেলেন ফেলিপা।

কলম্বাসের নতুন উদ্যম

নাবিক কলম্বাসের জীবনের সমস্ত বন্ধন ছিন্ন হয়ে গেল। এবার নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়লেন তার অভিযানে। দেশের প্রায় প্রতিটি ধনী সম্ভ্রান্ত মানুষের দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়ান। জাহাজ চাই, নাবিক চাই, অৰ্থ চাই।

ইতালীয় নাবিক কলম্বাসের দাবি

কলম্বাসের দাবি ছিল যে দেশ আবিষ্কার হবে, তাকে সেই দেশের ভাইসরয় করতে হবে আর রাজস্বের একটা অংশ দিতে হবে। প্রাথমিকভাবে দু-একজন সম্মতি দিলেও কলম্বাসের দাবির কথা শুনে সকলেই তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন।

ফাদার পিরেজের সাথে কলম্বাসের সাক্ষাৎ

কলম্বাসের সাথে এই সময় একদিন পরিচয় হল ফাদার পিরেজ-এর। ফাদার পিরেজ ছিলেন রাজ পরিবারের অন্তরঙ্গ বন্ধু এবং রানী ইসাবেলা তাকে অত্যন্ত সম্মান করতেন। কলম্বাসের ইচ্ছার কথা ফাদার নিজেই রাণী ইসাবেলাকে বললেন। অনুরোধ করলেন যদি তাকে কোনভাবে সাহায্য করা যায়। ফাদারের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারবেন না রাণী।

স্পেনের সাথে কলম্বাসের চুক্তি

নতুন দেশ আবিষ্কারের সাথে সাথে বহু মানুষকে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করার পুণ্য অর্জন করা যাবে। ফাদার পিরেজ ছাড়াও আরো কয়েকজন সহৃদয় ব্যক্তি কলম্বাসের সমর্থনে এগিয়ে এলেন। কলম্বাসের সব অনুরোধ স্বীকার করে নিলেন সম্রাট। ১৭ই এপ্রিল, ১৪৯২ তাদের মধ্যে চুক্তি হল। কলম্বাসকে নতুন দেশের শাসনভার দেওয়া হবে আর অর্জিত সম্পদের এক দশমাংশ অর্থ দেওয়া হবে।

কলম্বাসের জাহাজ নির্মাণ

সম্রাটের কাছ থেকে অর্থ পেয়ে তিনখানা জাহাজ নির্মাণ করলেন কলম্বাস। সবচেয়ে বড় ১০০ টনের সান্তামারিয়া, পিন্টা ৫০ টন, নিনা ৪০ টন। জাহাজ তৈরির সময় কোনো বিঘ্ন দেখা গেল না। সমস্যা সৃষ্টি হল নাবিক সংগ্রহের সময়। কলম্বাসের সাহায্যে এগিয়ে এল পিনজন ভাইরা। তাদের সাথে আরো কিছু বিশিষ্ট লোকের চেষ্টায় সর্বমোট ৮৭ জন নাবিক পাওয়া গেল।

অজানা সমুদ্রে কলম্বাসের পাড়ি

অবশেষে ৩ আগস্ট, ১৪৯২ কলম্বাস তার তিনটি জাহাজ নিয়ে পাড়ি দিলেন অজানা সমুদ্রে। সেদিন বন্দরে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের অধিকাংশই ভেবেছিলেন কেউই আর সেই অজানা দেশ থেকে ফিরে আসবে না।

কলম্বাসের বিরুদ্ধে নাবিকদের বিদ্রোহ

ভেসে চললেন কলম্বাস। চারদিকে শুধু জল আর জল। দিনের পর দিন অতিক্রান্ত হয়। কোথাও স্থলের দেখা নেই, অধৈর্য হয়ে ওঠে নাবিকরা। সকলকে সান্ত্বনা ও উৎসাহ দেন কলম্বাস। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর ধৈর্য্য রাখতে পারে না নাবিকরা। সকলে একসাথে বিদ্রোহ করে, জাহাজ ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

নাবিকদের কাছে কলম্বাসের এক দিনের প্রার্থনা

কলম্বাসের চোখে পড়ে ভাঙা গাছের ডাল, সবুজ পাতা। অনুমান করতে অসুবিধা হয় না, তাঁরা স্থলের কাছাকাছি এসে পৌঁছেছেন। নাবিকদের কাছে শুধু একটি দিনের প্রার্থনা করেন। দিনটি ছিল ১২ই অক্টোবর। একজন নাবিক, নাম রোডারিগো প্রথম দেখলেন স্থলের চিহ্ন। আনন্দে উল্লাসে মেতে উঠলেন সকলে।

বাহমা দ্বীপপুঞ্জে কলম্বাসের অবতরণ

পরদিন কলম্বাস নামলেন বাহমা দ্বীপপুঞ্জের এক অজানা দ্বীপে। পরবর্তীকালে তিনি সেই দ্বীপের নাম রাখেন সান সালভাদর। (বর্তমান নাম ওয়েস্টলিং আইল্যাণ্ড)। এই দিনটি আজও উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় কলম্বাস দিবস হিসাবে উদ্‌যাপন হয়।

ভাবনায় কলম্বাসের এশিয়া আগমন

ভেবেছিলেন সমুদ্র পথে তিনি এশিয়ায় এসে পৌঁছেছেন। যেখানে অফুরন্ত সোনাদানা ছড়ানো আছে। কিন্তু কোথায় আছে সেই সম্পদ… দিনের পর দিন চারদিক তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পাওয়া গেল না ধনসম্পদের কোনো চিহ্ন।

কিউবা এবং হিস্পানিওয়ালার দ্বীপে কলম্বাসের আগমন

এরপর কলম্বাস গেলেন কিউবা এবং হিস্পানিওয়ালার দ্বীপে। স্থির করলেন, এখানে সাময়িক আস্তানা স্থাপন করে ফিরে যাবে স্পেনে । এরপর আরো বিরাট সংখ্যক লোক এনে অনুসন্ধান করবেন ধনরত্নের। হিস্পানিওয়ালাতে সাময়িক আস্তানা গড়ে তুললেন।

কলম্বাসের স্বদেশে প্রত্যাবর্তন

হিস্পানিওয়ালাতে ৪২ জন নাবিকের থাকার ব্যবস্থা করে রওনা হলেন স্বদেশভূমির পথে। নতুন দ্বীপে পৌঁছবার প্রমাণস্বরূপ কিছু স্থানীয় আদিবাসীকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন।

স্বদেশে সম্মানিত কলম্বাস

শূন্য হাতে ফিরে এলেও দেশে অভূতপূর্ব সম্মান পেলেন কলম্বাস। তাঁর সম্মানে রাজা-রাণী বিরাট ভোজের আয়োজন করলেন। স্বয়ং পোপ কলম্বাসকে আশীর্বাদ জানিয়ে ঘোষণা করলেন, নতুন আবিষ্কৃত সমস্ত দেশ স্পেনের অন্তর্ভুক্ত হবে।

দ্বিতীয়বার কলম্বাসের সমুদ্র যাত্রা

সম্রাট ফার্দিনান্দ নতুন অভিযানের আয়োজন করলেন। বিরাট নৌবহর, অসংখ্য লোকজন নিয়ে ১৪৯৩ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর কলম্বাস আটলান্টিক পার হয়ে দ্বিতীয় সমুদ্র অভিযানে যাত্রা করলেন।

হিস্পানিওয়ালাতে পৌঁছান কলম্বাস

দীর্ঘ সমুদ্র যাত্রার পর কলম্বাস গিয়ে পৌঁছলেন হিস্পানিওয়ালাতে। সেখানে গিয়ে দেখলেন তার সঙ্গী-সাথীদের একজনও আর জীবিত নেই। কিছু মানুষ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য মারা গিয়েছে। অবশিষ্ট সকলে স্থানীয় আদিবাসীদের হাতে মারা পড়েছে।

কলম্বাস কর্তৃক স্থানীয় অধিবাসীদের দাস হিসেবে স্পেনে প্রেরণ

এই দ্বিতীয় অভিযানের সময় কলম্বাস চারদিকে ব্যাপক অনুসন্ধান করেও কোনো ধনসম্পদের সামান্য মাত্র চিহ্ন খুঁজে পেলেন না। শুধু মাত্র নতুন কিছু দ্বীপ আবিষ্কার করলেন। কোন অর্থ সম্পদ না পেয়ে জাহাজ ভর্তি করে স্থানীয় আদিবাসীদের দাস হিসাবে বন্দী করে স্পেনে পাঠলেন।

নাবিক কলম্বাসের কাজের অসমর্থন

তখনো ইউরোপ-এর বুকে দাস ব্যবসায়ের ব্যাপক প্রচলন ঘটেনি। কলম্বাসের এই কাজকে অনেকে আন্তরিকভাবে সমর্থন করতে পারল না। তাছাড়া আদিবাসীদের বিরাট অংশই নতুন পরিবেশে গিয়ে অল্পদিনের মধ্যে মারা পড়ল। ইসাবেলা কলম্বাসের এই আচরণকে অন্তর থেকে সমর্থন করত পারলেন না।

কলম্বাসের পুনরায় স্পেনে আগমন

এই সংবাদ কলম্বাসের কাছে পৌঁছতে বিলম্ব হল না। তিনি আর মুহূর্ত মাত্র বিলম্ব করলেন না। আড়াই বছর পর ১৪৯৬ সালের ১১ই জুন ফিরে এলেন স্পেনে। কিন্তু প্রথম বারের মত এবারে কোনো সম্বর্ধনা পেলেন না।

ইতালীয় নাবিক কলম্বাসের তৃতীয়বার সমুদ্র যাত্রা

কিন্তু অজেয় মনোবল কলম্বাসের। নতুন অভিযানের জন্য আবেদন জানালেন কলম্বাস। প্রথমে দ্বিধাগ্রস্থ থাকলেও শেষ পর্যন্ত সম্মতি দিলেন সম্রাট। ১৪৯৮, ৩০শে মে তৃতীয়বারের জন্য অভিযান শুরু করলেন কলম্বাস। এই বার তার সঙ্গী হল তার পুত্র এবং ভাই।

কলম্বাসের বিদ্রোহ দমন

নাবিক কলম্বাসের জীবনের সৌভাগ্যের দিন ক্রমশই শেষ হয়ে এসেছিল। হিস্পানিওয়ালার স্থানীয় মানুষেরা ইউরোপীয়ানদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করল। মানসিক দিক থেকে বিপর্যন্ত কলম্বাস অত্যাচারী শাসকের মত কঠোর হাতে বিদ্রোহ দমন করলেন। শত শত মানুষকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হল।

ইতালীয় নাবিক কলম্বাসের বিরুদ্ধে সেনা প্রেরণ

কলম্বাসের সহযোগীরাও তাঁর কাজে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছিল। সম্রাটের কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠল, তিনি স্বাধীন রাজ্য গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। তিনি ফ্রান্সিসকো দ্য বোবদিলা নামে একজন রাজকর্মচারীকে সৈন্যসামান্ত দিয়ে পাঠালেন কলম্বাসের বিরুদ্ধে তদন্ত করবার জন্য।

নাবিক কলম্বাসের বিরুদ্ধে নির্বুদ্ধিতার অভিযোগ

কয়েকদিন ধরে অনুসন্ধান করে রাজ্য স্থাপনের কোনো অভিযোগ না পেলেও কলম্বাসের বিরুদ্ধে নির্বুদ্ধিতার অভিযোগ আনা হল। কারণ কলম্বাস কোনো সম্পদশালী দেশ আবিষ্কার করবার পরিবর্তে সম্পদহীন দেশ আবিষ্কার করেছেন। যার জন্য সম্রাটের বিরাট পরিমাণ অর্থের অপচয় হয়েছে।

স্পেনের কারাগারে বন্দী কলম্বাস

এই অভিযোগে প্রথমে বন্দী করা হল কলম্বাসের ভাই ও পুত্রকে। তারপর কলম্বাসকে শৃঙ্খলিতে করে নিয়ে আসা হল স্পেনে। তাঁকে রাখা হল নির্জন করাগারে।

রানী ইসাবেলাকে কলম্বাসের চিঠি

বন্দী অবস্থাতেই রানী ইসাবেলাকে চিঠি লিখলেন কলম্বাস। রানী ইসাবেলা ছিলেন দয়ালু প্রকৃতির। তাছাড়া কলম্বাসের প্রতি বরাবরই ছিল তার সহানুভূতিবোধ। তাঁর চিঠি পড়ে তিনি মার্জনার আদেশ দিলেন।

কলম্বাসের চতুর্থবার সমুদ্র যাত্রার আবেদন

পঞ্চাশ বছরে পা দিলেন তিনি। শরীরে তেমন জোর নেই কিন্তু মনের অদম্য সাহসে ভর দিয়ে চতুর্থ বারের জন্য সমুদ্র যাত্রার আবেদন করলেন। সম্রাট সম্মতি দিলেন, শুধু হিস্পানিওয়ালাতে প্রবেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেন।

কলম্বাসের চতুর্থবার সমুদ্র যাত্রা

১৫০২ সালের ১৯শে মে কলম্বাস শুরু করলেন তার চতুর্থ সমুদ্রযাত্রা। তার ইচ্ছে ছিল আরো পশ্চিমে যাবেন। পথে তুমুল ঝড় উঠল। নিরুপায় কলম্বাস আশ্রয় নিলেন এক অজানা দ্বীপে। কলম্বাস পৌঁছেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এক দ্বীপে। সেখান থেকে ফিরে যান জামাইকা দ্বীপে। ক্রমশই তার দেহ ভেঙে পড়েছিল। অজানা রোগে তার সঙ্গীদের অনেকেই মারা গিয়েছিল।

কলম্বাসের শেষ জীবন

দু বছর পর নিরুৎসাহিত মনে স্পেনে ফিরে এলেন। এরপর আর মাত্র দু বছর বেঁচে ছিলেন। যদিও অর্থ ছিল কিন্তু মনের শান্তি ছিল না। রাজ অনুগ্রহ থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হয়েছিলেন। তার আবিষ্কারের গুরুত্ব উপলব্ধি করবার ক্ষমতা দেশবাসীর ছিল না।

কলম্বাসের মৃত্যু

১৫০৬ সালে ভ্যাসাডোলিড শহরে এক সাধারণ কুটিরে সকলের অগোচরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন কলম্বাস। সেখানে থেকে তর মৃতদেহ নিয়ে গিয়ে ডেমিঙ্গোতে সমাধিস্থ করা হয়।

উপসংহার :- ক্রিস্টোফার কলম্বাস, যাকে আমেরিকা মহাদেশের আবিষ্কারক নামে সবাই জানেন। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে ভুলবশত আমেরিকার ভূখন্ড আবিষ্কার করে ফেলেন। আমেরিকায় ইউরোপিয়দের শাসন প্রতিষ্ঠায় ও আধুনিক সভ্যতার সূচনায় যার ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

(FAQ) ইতালির নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাস সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ক্রিস্টোফার কলম্বাস কে ছিলেন ?

ক্রিস্টোফার কলম্বাস ছিলেন ইতালীয় নাবিক ও স্পেনের অভিযাত্রী।

২. ক্রিস্টোফার কলম্বাসের জন্ম কোথায় হয় ?

ক্রিস্টোফার কলম্বাসের জন্ম হয় ইতালির জেনোয়া প্রদেশে।

৩. ক্রিস্টোফার কলম্বাস কত সালে জামাইকা আবিষ্কার করেন?

ক্রিস্টোফার কলম্বাস ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৪৯৩ সালে জামাইকা আবিষ্কার করেন।

৪. ক্রিস্টোফার কলম্বাস কোন বছর মার্গারেট দ্বীপ আবিষ্কার করেন?

ক্রিস্টোফার কলম্বাস ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে মার্গারেট দ্বীপ আবিষ্কার করেন।

৫. কত সালে ক্রিস্টোফার কলম্বাস স্পেনে ফিরে আসেন?

১৫০৪ সালে ক্রিস্টোফার কলম্বাস স্পেনে ফিরে আসেন।

৬. কত সালে ক্রিস্টোফার কলম্বাসের মৃত্যু হয়?

২০ মে, ১৫০৬ সালে ক্রিস্টোফার কলম্বাসের মৃত্যু হয়।

Leave a Comment