হর্ষবর্ধনের সিংহাসন লাভ

হর্ষবর্ধনের সিংহাসন লাভ প্রসঙ্গে উপাদান, ডঃ ত্রিপাঠীর অভিমত, বিবরণে অসঙ্গতি, নালন্দা শীল, বাণভট্টের বর্ণনা ও কনৌজের সিংহাসন লাভ সম্পর্কে জানবো।

হর্ষবর্ধনের সিংহাসন লাভ

ঐতিহাসিক ঘটনাহর্ষবর্ধনের সিংহাসন লাভ
রাজাহর্ষবর্ধন
রাজধানীথানেশ্বর, কনৌজ
বংশপুষ্যভূতি বংশ
হর্ষবর্ধনের সিংহাসন লাভ

ভূমিকা :- শশাঙ্ক -এর হাতে রাজ্যবর্ধনের মৃত্যু হলে ৬০৬ খ্রিস্টাব্দে রাজ্যবর্ধনের কনিষ্ঠ ভ্রাতা হর্ষবর্ধন থানেশ্বরের সিংহাসনে বসেন। হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালকে অধিকাংশ ঐতিহাসিক একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে মনে করেন। চালুক্য শিলালিপিতে তাকে “সকলোত্তরপথনাথ” বলে অভিহিত করা হয়েছে।

হর্ষবর্ধনের রাজত্বকাল সম্পর্কে উপাদান

  • (১) হর্ষবর্ধনের রাজত্বকাল সম্পর্কে তার সভাকবি বাণভট্ট বিরচিত হর্ষচরিত বিখ্যাত উপাদান। কিন্তু এতে হর্ষের রাজত্বকালের সমগ্র ঘটনা পাওয়া যায় নি। চীন -এর পর্যাটক হিউয়েন সাঙ -এর রচনা সি-ইউ-কি এবং হিউয়েন সাঙের জীবনীও অমূল্য উপাদান।
  • (২) হর্ষের রাজত্বকালে খোদিত কয়েকটি শিলালিপিও গুরুত্বপূর্ণ। এগুলির মধ্যে ধানখেরা তাম্রপট, নালন্দা শীল সোনাপট তাম্রপট, মধুবণী তাম্রপট্টি ও চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশীআইহোল শিলালিপি বিশেষ মূল্যবান।

হর্ষবর্ধনের সিংহাসন লাভ সম্পর্কে ডঃ ত্রিপাঠীর অভিমত

  • (১) ডঃ ত্রিপাঠী হিউয়েন সাঙের দেওয়া বিবরণের ওপর নির্ভর করে বলেছেন যে, হর্ষবর্ধন তার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার মৃত্যুর পর থানেশ্বরের সিংহাসনে বসেন। এই সময় গ্রহবর্মনের মৃত্যুর ফলে কনৌজের সিংহাসন খালি হয়েছিল।
  • (২) পো-নি অথবা ডান্ডি বা বানি নামে এক অমাত্যের নেতৃত্বে কনৌজের অমাত্যরা কনৌজের খালি সিংহাসন গ্রহণ করার জন্য হর্ষবর্ধনকে অনুরোধ জানালে তিনি মৌখরী সিংহাসনও নিজ পৈত্রিক সিংহাসনের সঙ্গে যুক্ত করেন। এই বছর (৬০৬ খ্রিস্টাব্দে) তিনি হর্ষসম্বৎ প্রচলন করেন।

বিবরণে অসঙ্গতি

ডঃ ত্রিপাঠীর এই অভিমত অধুনা সমালোচিত হয়েছে। কনৌজে অধিকার সম্পর্কে হিউয়েন সাঙ যে বিবরণ দিয়েছেন তাতে বহু অসঙ্গতি আছে। কনৌজ ছিল মৌখরী বংশ -এর রাজধানী। হর্ষবর্ধন বিনা বাধায় এই রাজ্য পান একথা মনে করা যায় না।

হর্ষবর্ধনের সিংহাসন লাভ সম্পর্কে নালন্দা শীল

নালন্দা শীল থেকে জানা যায় যে, মৃত গ্রহবর্মার কনিষ্ঠ ভ্রাতা শূরসেন জীবিত ছিলেন। তিনিই ছিলেন সিংহাসনের উত্তরাধিকারী এবং তিনি তার মৃত ভাইয়ের সিংহাসনে বসেছিলেন।

হর্ষবর্ধনের রাজত্বকাল সম্পর্কে বাণভট্টের বর্ণনা

বাণভট্টের হর্ষচরিত থেকে জানা যায় যে, গুপ্ত নামে এক অমাত্য গ্রহবর্মার মৃত্যুর পর কনৌজে আধিপত্য পান এবং তিনি রাজ্যশ্রীকে কারাগার থেকে মুক্ত করে দেন। এই অমাত্য সম্ভবত শূরসেন এবং শশাঙ্কের পক্ষে ছিলেন। সুতরাং অমাত্যদের অনুরোধেই হর্ষবর্ধন কনৌজের সিংহাসন পেয়ে যান একথা মনে করা যায় না।

কনৌজের সিংহাসনে হর্ষবর্ধন

চীনা সূত্র থেকে, বিশেষত ফ্যাং-চি থেকে জানা যায় যে  হর্ষ কনৌজের সিংহাসন নিতে খুবই দ্বিধা করেছিলেন। তিনি শেষ পর্যন্ত তার ভগিনী রাজ্যশ্রীর তরফে প্রতিনিধি হিসেবে শুধুমাত্র যুবরাজ শিলাদিত্য নাম নিয়ে কনৌজের শাসন চালান।

উপসংহার :- পরবর্তীতে তাঁর ক্ষমতা দৃঢ় হলে তিনি নিজেকে কনৌজের সম্রাট ঘোষণা করেন। এজন্য অন্তত তাঁকে ছয় বছর অপেক্ষা করতে হয়।

(FAQ) হর্ষবর্ধনের সিংহাসন লাভ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. হর্ষবর্ধন কখন সিংহাসনে আরোহণ করেন?

৬০৬ খ্রিস্টাব্দে।

২. কে কখন হর্ষসম্বৎ প্রচলন করেন?

হর্ষবর্ধন ৬০৬ খ্রিস্টাব্দে।

৩. হর্ষবর্ধনের রাজধানী কোথায় ছিল?

থানেশ্বর ও কনৌজ।

৪. সকলোত্তরপথনাথ কে ছিলেন?

হর্ষবর্ধন।

Leave a Comment