জয়দেব মেলা প্রসঙ্গে স্মৃতি, কবি জয়দেব, কেন্দুলী গ্রাম, মেলা শুরু হওয়ার কারণ, মেলার ইতিহাস, পুণ্যস্নান, বাউল গান, সাহিত্যবাসর, অন্নসত্র, বিকিকিনি ও যাত্রাপথ সম্পর্কে জানবো।
বীরভূম জেলার ঐতিহ্যবাহী জয়দেব মেলা প্রসঙ্গে জয়দেব মেলার স্থান, কবি জয়দেবের স্মৃতিতে জয়দেব মেলা, কবি জয়দেবের পরিচয়, কেন্দুলি গ্ৰামের মেলা জয়দেব মেলা, জয়দেব মেলা শুরু হওয়ার কারণ, জয়দেব মেলার ইতিহাস, আনন্দমঠ উপন্যাসে জয়দেব মেলার উল্লেখ, জয়দেব মেলায় বিকিকিনি, জয়দেব মেলায় অন্নসত্র, জয়দেব মেলায় বাউল গানের আসর, জয়দেব মেলায় সাহিত্য বাসর ও জয়দেব মেলার প্রতিবন্ধকতা।
ঐতিহ্যবাহী জয়দেব মেলা
উৎসব | জয়দেব মেলা |
অন্য নাম | কেন্দুলি মেলা |
পালনকারী | বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায় |
স্থান | কেন্দুলি, বীরভুম জেলা |
তারিখ | মকর সংক্রান্তি |
সংঘটন | বার্ষিক |
ভূমিকা:- ভারত -এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলার জয়দেব কেন্দুলি গ্রামের একটি ঐতিহ্যবাহী মেলা হল জয়দেব মেলা বা জয়দেব-কেন্দুলি মেলা। প্রতি বছর মকর সংক্রান্তির দিন পুণ্যস্নানের মাধ্যমে এই ঐতিহ্যবাহী মেলা শুরু হয়। এই মেলাকে ঘিরে মানুষের মধ্যে এক উন্মাদনার সৃষ্টি হয়।
কবি জয়দেবের স্মৃতিতে জয়দেব মেলা
জয়দেব মেলা মূলত বীরভূমের সংস্কৃত পণ্ডিত কবি জয়দেবের স্মৃতি তর্পণ উদ্দেশ্যে উদযাপিত হয়।
কবি জয়দেব
কেন্দুলি গ্রামে গীতগোবিন্দের রচয়িতা কবি জয়দেব -এর জন্মস্থান। বাংলার সেন বংশ -এর লক্ষ্মণ সেন -এর সভাকবি ছিলেন তিনি। লক্ষ্মণসেনই এখানে রাধামাধব মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
কেন্দুলি গ্রামে জয়দেব মেলা
অজয় নদের তীরে ছোট্ট গ্রাম জয়দেব কেন্দুলি। নদীর পাড়ে বাউল আখড়ায় বসে জমজমাট গানের আসর। প্রতিবছরই এই সময়টার অপেক্ষায় দিন গোনেন বাউলপ্রেমী মানুষজন। মকরস্নানের দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় গান-বাজনা, মেলা, উত্সব।
জয়দেব মেলা শুরু হওয়ার কারণ
- (১) কথিত আছে যে কবি জয়দেব প্রতি বছর মকর সংক্রান্তিতে মকরস্নান করতে যেতেন কাটোয়ার গঙ্গায়। এক বার তিনি এমন অসুস্থ হয়ে পড়েন যে এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি।
- (২) রাতে তিনি স্বপ্ন দেখেন তাঁর জন্য মা গঙ্গা উজান বেয়ে অজয় নদে এসে মিলিত হবেন। তাই অজয় নদে স্নান করলেই গঙ্গাস্নানের ফল পাবেন তিনি। এই কাহিনির বিস্তারেই মকর সংক্রান্তিতে কেন্দুলির মেলাকে বাঙালি উৎসর্গ করেছে কবি জয়দেবের স্মৃতি তর্পণে।
জয়দেব মেলার ইতিহাস
- (১) বীরভূম-বর্ধমান জেলার সীমান্ত বরাবর প্রবাহিত অজয় নদের ধারে কেন্দুলি গ্রাম। এখানেই ছিল রাজা লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি জয়দেবের নিবাস। রাধাগোবিন্দের মন্দির সহ কেন্দুলিতে জয়দেবের স্মৃতিধন্য বহু দ্রষ্টব্য রয়েছে।
- (২) কেন্দুলির সব চেয়ে বড় পরিচয় পৌষ সংক্রান্তির মেলা, যাকে কেন্দ্র করে কেন্দুলির কথা আজ দেশের সীমানা ছাড়িয়েছে। প্রাচীনত্ব ও জনপ্রিয়তার নিরিখে এই মেলা আজ দেশের অন্যতম প্রধান মেলা হিসেবে পরিগণিত হয়। এই একবিংশ শতকেও সমাগম হয় লক্ষাধিক মানুষের।
- (৩) ঐতিহাসিকদের মতে গঙ্গাকে স্মরণ করে অজয় নদে মকরস্নান উপলক্ষেই এই মেলার সূচনা হয়েছে সুদূর অতীতে। পরে তার সঙ্গে জয়দেবীয় ঐতিহ্যধারা যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে তা হয়েছে জয়দেবের মেলা।
আনন্দমঠ উপন্যাসে জয়দেব মেলার উল্লেখ
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৮২ সালে তার আনন্দমঠ উপন্যাসে জয়দেবের কেন্দুলি মেলার কথা উল্লেখ করেছেন।
পৌষ সংক্রান্তির পূণ্যস্নান
মকর সংক্রান্তির দিনে পুণ্যার্থীরা অজয় নদে স্নান করেন। এই সময় নদীতে জল কম থাকে বলে প্রতিবছর প্রশাসন থেকে বালি তুলে জল জমানোর ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে ডুব দেওয়ার জন্য পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা আলাদা ঘাট বানানো হয়।
বাউল গানের আসরে মাতোয়ারা জয়দেব মেলা
জয়দেব মেলা মানেই বাউল গানের আসর। সেই সঙ্গে অবশ্যই কীর্তন। প্রতিবছর এই মেলায় তৈরি করা হয় কীর্তনীয়াদের জন্য কীর্তনের আখড়া এবং বাউলদের জন্য বাউলের আখড়া। প্রায় ৩০০ টি আখড়া তৈরি করা হয় মেলাটিতে। আজ জয়দেব মেলার অন্যতম পরিচয় বাউল মেলা হিসেবে।
জয়দেব মেলায় সাহিত্যবাসর
এই মেলার এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সাহিত্যবাসর। সেখানে সারা রাত ধরে চলে কবিতা পাঠ, সাহিত্য আলোচনা। মেলা উপলক্ষে প্রকাশিত হয় অসংখ্যা পত্রপত্রিকা।
জয়দেব মেলায় অন্নসত্র
এই মেলার আর এক বিশেষত্ব অন্নসত্রগুলিতে। মন্দির চত্বর ছাড়িয়ে স্নানঘাটের রাস্তার দু-ধার বরাবর কৃপাপ্রার্থী নিরন্ন অসহায় মানুষের ঢেউ এসে মেশে শীতের শীর্ণ অজয়ের বালুচরে।
জয়দেব মেলায় বিকিকিনি
পাথরের বাসন, লোহার সামগ্রীর সঙ্গে এই মেলায় সব চেয়ে বেশি বিক্রি হয় কলা। এছাড়া নাগরদোলা, সার্কাস, পুতুলনাচ তো রয়েছেই। সরকারি ভাবে মেলা ৩ দিনের হলেও মেলা চলে প্রায় ১৫ দিন।
জয়দেব মেলার প্রতিবন্ধকতা
আন্তর্জাতিক আঙিনায় পৌঁছেলও এই মেলা মূলত গ্রামীণ মেলা। তাই মিলবে না কোনও হোটেল, লজ বা অতিথিশালা। ভরসা কেবল গৃহস্থদের ঘরভাড়া নেওয়া ও বাউলদের আখড়া।
জয়দেব মেলা যাওয়ার পথ
ট্রেনে বোলপুর স্টেশন থেকে বাসে করে যাওয়া যায়। বোলপুর বাস স্ট্যান্ড থেকেও কেন্দুলি যাওয়ার বাস পাওয়া যায়। অন্যান্য গাড়িও আছে।
উপসংহার:- কেন্দুলির জয়দেবের মেলা সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র মেলা, যেখানে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের এক বিচিত্র সমাবেশ ঘটে। বিশেষত সমাজের বিদ্বজ্জনের উপস্থিতি এখানে লক্ষ্য করার মতো। রাজ্যের অন্যান্য অংশের সঙ্গে কলকাতার সাহিত্যিক, গবেষক, অধ্যাপক, সাংবাদিক, লোকশিল্প-বিশারদ, শিল্পী, সমালোচকদের নিত্য আনাগোনা এই মেলায়। ভিনদেশি মানুষের আসা-যাওয়াও প্রায় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “জয়দেব মেলা” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) জয়দেব মেলা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
সংস্কৃত পণ্ডিত কবি জয়দেব।
গীতগোবিন্দ।
রাজা লক্ষণ সেন।
অজয় নদ।
পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার কেন্দুলি গ্রামে।