প্রাচীন ভারতে নারীর শিক্ষা

প্রাচীন ভারতে নারীর শিক্ষা প্রসঙ্গে ঋকবৈদিক যুগে ভারতে নারীর শিক্ষা, পরবর্তী বৈদিক যুগে ভারতে নারীর শিক্ষা, প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের যুগে ভারতে নারীর শিক্ষা, মৌর্য যুগে এবং আগে ও পরে ভারতে নারীর শিক্ষা, গুপ্ত যুগে ভারতে নারীর শিক্ষা ও গুপ্ত পরবর্তী যুগে ভারতে নারীর শিক্ষা সম্পর্কে জানবো।

ভারতে নারীর শিক্ষা প্রসঙ্গে ভারতে নারীদের শিক্ষা দেশের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, ঋকবৈদিক যুগে ভারতে নারীর শিক্ষা, মৌর্য যুগে ভারতে নারীর শিক্ষা ও গুপ্ত যুগে ভারতে নারীর শিক্ষা সম্পর্কে জানব।

প্রাচীন ভারতে নারীর শিক্ষা

ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রাচীন ভারতে নারীর শিক্ষা
ঘোষা, অপালাঋকবৈদিক যুগ
গার্গী, মৈত্রেয়ীপরবর্তী বৈদিক যুগ
পণ্ডিতাদ্রৌপদী
উপাধ্যায়পাণিনি
প্রাচীন ভারতে নারীর শিক্ষা

ভূমিকা :- প্রাচীন ভারত-এ বিভিন্ন যুগের সমাজে নারীর মর্যাদার হ্রাসবৃদ্ধি সত্ত্বেও ভারতের নারীরা শিক্ষা গ্রহণের যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছিল এবং শিক্ষাক্ষেত্রে তারা যথেষ্ট কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছিল।

ঋকবৈদিক যুগে ভারতে নারীর শিক্ষা

এক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) নারীর গুরুত্ব

ঋকবৈদিক যুগে (১৫০০-১০০০ খ্রি.পূ.) পরিবারের অধিকাংশ সদস্য পুত্রসন্তান কামনা করলেও নারীরা মোটেই অবহেলিত ছিল না।

(২) নারী শিক্ষা

এই যুগের নারীরা শিক্ষাগ্রহণের যথেষ্ট সুযোগ লাভ করেছিলেন। ঋকবৈদিক যুগের নারীদের শিক্ষাগ্রহণের উদ্দেশ্য ছিল ধর্মচর্চা, চরিত্র গঠন এবং ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটানো। এই যুগে মমতা, ঘোষা, অপালা, লোপামুদ্রা, বিশ্ববারা, বিশাখা প্রমুখ বিদুষী নারীর কথা জানা যায়।

(৩) বেদজ্ঞ নারী

এই যুগে বহু নারী বেদ পাঠের অধিকারী ছিলেন এবং বেদের স্তোত্র রচনাতেও অংশ নিয়েছিলেন বলে জানা যায়।

পরবর্তী বৈদিক যুগে ভারতে নারীর শিক্ষা

এক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) নারীর মর্যাদা হ্রাস

পরবর্তী বৈদিক যুগে (১০০০-৬০০ খ্রি.পূ.) নারীর মর্যাদা হ্রাস পায় এবং নারী বেদ পাঠের অধিকার হারায়।

(২) শিক্ষা গ্রহণে বঞ্চনা

তৈত্তিরীয় সংহিতায় বলা হয়েছে যে, নারীর শিক্ষালাভের কোনো প্রয়োজন নেই। তা সত্ত্বেও এই যুগে নারীশিক্ষার বিষয়টি সম্পূর্ণ ব্যাহত হয় নি। এই সময় কোনো কোনো নারী উচ্চশিক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছিলেন।

(৩) বিদুষী নারী

গার্গী, মৈত্রেয়ী প্রমুখ ছিলেন এই যুগের বিদুষী নারী। পরবর্তী বৈদিক যুগে যে সকল নারী বিবাহের পূর্ব পর্যন্ত বিদ্যাচর্চা করতেন তাঁদের বলা হত ‘সদ্যোদ্বাহা”। যে সকল নারী আজীবন অবিবাহিত থেকে ধর্ম ও দর্শন চর্চা করে জীবন কাটিয়ে দিতেন তাঁরা ‘ব্রহ্মবাদিনী’ নামে পরিচিত ছিলেন।

প্রতিবাদী আন্দোলনের যুগে ভারতে নারীর শিক্ষা

  • (১) মহাকাব্য ও প্রতিবাদী ধর্মের যুগে নারীশিক্ষার প্রমাণ পাওয়া যায়। মহাভারতে দ্রৌপদীকে ‘পণ্ডিতা’ বলে উল্লেখ করার ঘটনা থেকে নারীর পাণ্ডিত্যের প্রমাণ মেলে। নারীরা এই যুগে সামরিক শিক্ষাও গ্রহণ করত বলে জানা যায়। বৌদ্ধ গ্রন্থ বিনয়পিটকে নারীদের বিদ্যার্জনকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
  • (২) শিক্ষিত বৌদ্ধ ভিক্ষুণীরা বিভিন্ন সংগীত রচনা করতেন যেগুলি থেরীগাথা গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। এই যুগের নারীরা সংস্কৃত কাব্য এবং নাটকও রচনা করতেন বলে জানা যায়। চন্দনা, জয়ন্তী প্রমুখ এই যুগের উচ্চশিক্ষিত নারী ছিলেন।

মৌর্য যুগে এবং আগে ও পরে ভারতে নারীর শিক্ষা

  • (১) প্রাক-মৌর্য, মৌর্য ও মৌর্য-পরবর্তী যুগে নারীশিক্ষার অগ্রগতি ঘটে। এই যুগে অভিজাত নারীরা শিক্ষালাভের যথেষ্ট সুযোগ পেতেন। পাণিনির অষ্টাধ্যায়ী গ্রন্থে এই যুগের বেদজ্ঞা নারীর উল্লেখ আছে। কৌশাম্বীর রাজকন্যা আজীবন অবিবাহিতা থেকে বিদ্যাচর্চা করেছিলেন বলে জৈনশাস্ত্র থেকে জানা যায়। পাণিনি তাঁর গ্রন্থে ‘উপাধ্যায়া’ নামে নারী-শিক্ষিকার উল্লেখ করেছেন।
  • (২) কাত্যায়নের রচনাতেও অনুরূপ উল্লেখ পাওয়া যায়। অর্থশাস্ত্র-এ উল্লেখ করা হয়েছে যে, মৌর্য যুগে অভিজাত পরিবারের নারীরা শিক্ষিতা হলেও তাঁদের মধ্যে পর্দাপ্রথার প্রচলন ছিল। এই যুগের সংস্কৃত সাহিত্যে লেখাপড়া জানা, চিত্রশিল্পে দক্ষ এবং সংগীত রচয়িতা বহু নারীর উল্লেখ পাওয়া যায়। মৌর্য যুগে শিক্ষিতা নারীরা রাজকার্যেও অংশগ্রহণ করতেন।

গুপ্ত যুগে ভারতে নারীর শিক্ষা

  • (১) নারীশিক্ষার বিষয়টি গুপ্ত যুগেও অব্যাহত ছিল। এই যুগের নারীদের সামাজিক মর্যাদা হ্রাস পেলেও তা তাদের শিক্ষালাভের অধিকারকে কেড়ে নেয় নি। গুপ্ত যুগের সাহিত্যে সমকালীন নারীদের ইতিহাস ও কাব্যচর্চর উল্লেখ আছে।
  • (২) বাৎস্যায়ন তাঁর কামসূত্রে গুপ্ত যুগের উচ্চবংশজাত মহিলাদের শাস্ত্রচর্চা ও চৌষট্টি কলাবিদ্যার অনুশীলনের উল্লেখ করেছেন। শাস্ত্রজ্ঞান এই যুগের নারীর মেধাকে তীক্ষ্ণ করত বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
  • (৩) বাৎস্যায়ন বলেছেন যে, আদর্শ পত্নীকে সুশিক্ষিতা হতে হবে এবং তাকে বাৎসরিক আয়ব্যয়ের হিসাব রাখতে হবে। তবে এ যুগে নারীশিক্ষায় যা কিছু অগ্রগতি ঘটেছিল তা সমাজের উচ্চস্তরেই সীমাবদ্ধ ছিল। সাধারণ দরিদ্র নারীদের শিক্ষার সুযোগ যথেষ্ট সংকুচিতই ছিল।

গুপ্ত-পরবর্তী যুগে ভারতে নারীর শিক্ষা

গুপ্ত যুগের পরবর্তীকালে নারীশিক্ষা একইভাবে প্রচলিত ছিল। হর্ষবর্ধন-এর আমলে নারীরা নৃত্য, সংগীত, চিত্রকলা প্রভৃতি ক্ষেত্রে শিক্ষালাভ করতেন বলে জানা যায়। বাণভট্ট উল্লেখ করেছেন যে, হর্ষবর্ধনের ভগিনী রাজ্যশ্রী নৃত্য, সংগীত ও অন্যান্য কলার চর্চা করতেন। হর্ষবর্ধনের পরবর্তীকালেও নারীরা শিক্ষা-সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

উপসংহার :- তবে ভারতে তুর্কি আক্রমণ ও তার পরবর্তীকালে হিন্দুধর্মের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নারীশিক্ষার বিষয়টি কিছুটা হলেও ব্যাহত হয়েছিল।

(FAQ) প্রাচীন ভারতে নারীর শিক্ষা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ঋক বৈদিক যুগের দুজন বিদুষী নারীর নাম লেখ।

অপালা, লোপামুদ্রা, ঘোষা, বিশ্ববারা।

২. পরবর্তী বৈদিক যুগের দুজন বিদুষী নারীর নাম লেখ।

 গার্গী, মৈত্রেয়ী।

৩. মহাভারতে কাকে ‘পন্ডিতা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে?

দ্রৌপদী।

৪. ব্রহ্মবাদিনী নামে কারা পরিচিত ছিলেন?

পরবর্তী বৈদিক যুগে যে সকল নারী আজীবন অবিবাহিত থেকে ধর্ম ও দর্শন চর্চা করে জীবন কাটিয়ে দিতেন তারা ব্রহ্মবাদিনী নিয়ে নামে পরিচিত ছিলেন।

Leave a Comment