প্রাচীন বাংলার পরিচয় প্রসঙ্গে বাংলাদেশের নাম, বাংলার চারটি ভাগ, বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন নাম, প্রাচীন বাংলার নগর, বৈদিক যুগে বাংলা, মহাভারতের যুগে বাংলা ও জৈন সাহিত্যে বাংলা সম্পর্কে জানবো।
প্রাচীন বাংলার পরিচয়
বিষয় | প্রাচীন বাংলার পরিচয় |
প্রধান ভাগ | চারটি |
নগর | তাম্রলিপ্ত, কর্ণসুবর্ণ |
আইন-ই-আকবরী | আবুল ফজল |
রঘুবংশ | কালিদাস |
ভূমিকা :- বাংলা দেশ বলতে হিমালয়ের দক্ষিণ ও বঙ্গোপসাগরের উত্তরে এবং ব্রহ্মপুত্রের পশ্চিমে ও সুবর্ণরেখার পূর্বে অবস্থিত ভূভাগ বুঝায়। প্রাচীন যুগে এই সমগ্র অঞ্চলের কোনো একটি নাম ছিল না। প্রাচীন যুগে বাংলা বলতে এই সমগ্ৰ অঞ্চলকে বুঝাত না।
বাংলা দেশের নাম
- (১) আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরী থেকে জানা যায় যে, বাংলা নামটি বাঙ্গাল, অর্থাৎ বঙ্গ + আল থেকে উদ্ভূত হয়। প্রাচীন যুগে রাজারা জলসেচের জন্য বড় খাল খনন করতেন। সেই খালের আল বা বাঁধগুলি থাকত ১০ গজ চওড়া।
- (২) ডঃ আর সি মজুমদার তাঁর হিস্ট্রি অফ বেঙ্গল গ্রন্থে অবশ্য বলেছেন যে, বঙ্গ নাম অনেক আগে থেকে প্রচলিত ছিল। কালিদাস রঘুবংশে বঙ্গদেশের নাম করেছেন। সুতরাং গুপ্ত যুগে বঙ্গ বা বাংলা নাম সুপরিচিত ছিল।
বাংলার চারটি প্রাচীন ভাগ
ডঃ মজুমদারের মতে, প্রাচীন যুগ থেকে বাংলা বা বঙ্গদেশ চারটি প্রধান ভাগে বিভক্ত ছিল দেখা যায়। যথা –
- (১) গঙ্গা বা পদ্মার উত্তরে ও ব্রহ্মপুত্রের পশ্চিমের অঞ্চলের নাম ছিল পুণ্ড্রবর্ধন। এখনকার রাজশাহী ও কোচবিহার নিয়ে এই অঞ্চল গঠিত ছিল।
- (২) ভাগীরথীর পশ্চিমে ছিল রাঢ় দেশ।
- (৩) পশ্চিমে ভাগীরথী ও পূর্বে পদ্মা, নিম্ন ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনার মধ্যবর্তী অঞ্চলের নাম ছিল বঙ্গ বা গঙ্গাহৃদি। প্রেসিডেন্সী বিভাগ ও ঢাকা বিভাগ নিয়ে এই অঞ্চল গঠিত ছিল।
- (৪) মেঘনার পূর্বদিকে ছিল সমতট। এখনকার চট্টগ্রাম বিভাগ, দক্ষিণ বাংলা ও ত্রিপুরা নিয়ে এই অঞ্চল গঠিত ছিল।
বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন নাম
পুণ্ড্রবর্ধন, রাঢ়, বঙ্গ, সমতট ওপরের এই চারটি অঞ্চল ছাড়া বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের প্রাচীন যুগে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নাম ছিল। যথা –
(১) তাম্রলিপ্ত
প্রাচীন যুগে এটি ছিল বাংলার বন্দর। এই নগর মেদিনীপুর জেলায় অবস্থিত ছিল।
(২) হরিকেল
হেমচন্দ্র ও হিউয়েন সাঙ এই অঞ্চলের বর্ণনা দিয়েছেন। পূর্ব বাংলার বাখরগঞ্জ, চট্টগ্রাম, নোয়াখালি ও শ্রীহট্ট নিয়ে এই অঞ্চল গঠিত ছিল। অনেকে মনে করেন শিলেট বা শ্রীহট্ট জেলার নাম ছিল হরিকেল।
প্রাচীন বাংলার নগর
প্রাচীন বাংলায় যে নগরগুলির নাম পাওয়া যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, তাম্রলিপ্ত বন্দর, দণ্ডভুক্তি বা দাঁতন; বর্ধমান ভুক্তি, পুণ্ড্রনগর – মহাস্থান গড়, সিংহপুর – সিঙ্গুর হুগলী জেলায়, কর্ণসুবর্ণ – মহারাজা শশাঙ্ক -এর রাজধানী মুর্শিদাবাদ জেলায়, নদীয়া – সেন রাজাদের রাজধানী, বিক্রমপুর – ঢাকা জেলায়, সেন রাজাদের দ্বিতীয় রাজধানী।
বৈদিক যুগে বাংলা
বৈদিক সাহিত্য -এ বাংলাদেশের উল্লেখ দেখা যায় না। ঐতরেয় ব্রাহ্মণে পুণ্ড্র জাতির নাম করে বলা হয়েছে যে, তারা দস্যু ও বর্বর জাতি। বৌধায়ন তাঁর ধর্মশাস্ত্রে পুণ্ড্র ও বঙ্গদেশের অধিবাসীদের অপবিত্র ও অদ্ভুত বলে মনে করতেন। তাঁর মতে, তারা আর্য সভ্যতার দ্বারা আলোকিত ছিল না। বাংলাদেশে এলে তিনি প্রায়শ্চিত্ত করার বিধান দিয়েছেন।
মহাভারতের যুগে বাংলা
- (১) মহাভারতের যুগে বাংলাদেশ আর আর্যদের কাছে বৈদিক সভ্যতার মত অস্পৃশ্য ছিল না। এই সময় আর্য সভ্যতা বাংলায় কিছুটা প্রভাব ফেলেছিল। রামায়ণ-এ বলা হয়েছে যে, বঙ্গ বা বাংলার লোকেদের সঙ্গে অযোধ্যার যোগ ছিল। মহাভারতের বনপর্বে বলা হয়েছে যে, ভীম পুণ্ড্র, বঙ্গ, তাম্রলিপ্ত ও সুহ্ম প্রভৃতি অঞ্চল জয় করেন।
- (২) পুণ্ড্রবর্ধনের করতোয়া নদকে ও বাংলার ভাগীরথীকে পবিত্র নদী বলে গণ্য করা হয়েছে। মহাভারতে পৌণ্ড্রক বাসুদেবের উপাখ্যানও পাওয়া যায়। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ -এ বাংলার রাজারা দুর্যোধনের পক্ষ নেন বলে জানা যায়।
জৈন সাহিত্যে বাংলা
- (১) খ্রিস্ট পূর্ব ষষ্ঠ শতকে জৈন সাহিত্য আচারাঙ্গ সূত্রে বাংলার নামের উল্লেখ দেখা যায়। জৈন ধর্ম -এর প্রবর্তক বর্ধমান মহাবীর রাঢ় দেশে ধর্মপ্রচারে এলে তার প্রতি কুকুর লেলিয়ে দেওয়া হয় বলে কথিত আছে।
- (২) জৈন সাহিত্যে রাঢ়দেশকে বঙ্গভূমি বা ব্রজভূমি অর্থাৎ বীরভূম, বর্ধমান ও হুগলী এবং সুব্বভূমি বা সুক্ষ্ম অর্থাৎ হুগলীর একাংশ ও মেদিনীপুরের তাম্রলিপ্ত অঞ্চল বলে দুভাগে ভাগ করা হয়েছে। মিলিন্দ পহ্নেও বঙ্গভূমির উল্লেখ আছে।
উপসংহার :- আসলে প্ৰাচীনকালে বাংলা নামে কোনো অখণ্ড রাষ্ট্ৰ ছিল না। বাংলার বিভিন্ন অংশ তখন পুণ্ড্ৰ, বঙ্গ, সমতট, গৌড়, হরিকেল, বরেন্দ্ৰ – প্ৰভৃতি জনপদে বিভক্ত ছিল। বাংলার জনপদগুলোর মধ্যে প্ৰাচীনতম হলো পুণ্ড্ৰ।
(FAQ) প্রাচীন বাংলার পরিচয় সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
রঘুবংশ।
তাম্রলিপ্ত।
বৈদিক সাহিত্যে।
নদীয়া, বিক্রমপুর।