১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে সংঘটিত ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের তাৎপর্য প্রসঙ্গে জার্মানি ও ইতালির ঐক্যের পথ প্রশস্ত, সামন্ততন্ত্রের পতন, টমসনের মন্তব্য, স্বাধীন কৃষক শ্রেনির উদ্ভব, সমাজতন্ত্রের বিকাশ, শহরকেন্দ্রিক বিপ্লব, বুদ্ধিজীবী বিপ্লব, নেমিয়ারের মন্তব্য, জনতার বিপ্লব ও ঐতিহাসিক এ জে পি টেলরের মন্তব্য সম্পর্কে জানবো।
ইউরোপে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের তাৎপর্য
ঐতিহাসিক ঘটনা | ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের তাৎপর্য |
সময়কাল | ২২-২৪ ফেব্রুয়ারি, ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দ |
নেতা | থিয়ার্স, লা মার্টিন |
স্থান | ফ্রান্স |
ফলাফল | ব্যর্থতা |
মেটারনিখের পদত্যাগ | ১৩ মার্চ, ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দ |
হাঙ্গেরির ম্যাৎসিনী | লুই কসুথ |
ভূমিকা:- ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি বিপ্লব -এর ফলে ফ্রান্সে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্যর্থ হলেও নানাদিক থেকে এই বিপ্লব যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
(১) ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের ফলে জার্মানি ও ঐক্যের পথ প্রশস্ত
এই বিপ্লব ভিয়েনা সম্মেলন বা বন্দোবস্ত ও মেটারনিখ ব্যবস্থার মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়ে দেয়। এই বিপ্লবের দ্বারা ইতালি বা জার্মানি ঐক্যবদ্ধ হয় নি ঠিকই, কিন্তু এই বিপ্লব এই দুটি রাজ্যের ঐক্যের পথ প্রস্তুত করেছিল। স্থির হয়ে গিয়েছিল যে, প্রাশিয়ার নেতৃত্বে জার্মানি এবং পিডমন্ট-সার্ডিনিয়ার নেতৃত্বে ইতালির ঐক্য সম্পন্ন হবে।
(২) ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের ফলে সামন্ততন্ত্রের পতন
এই বিপ্লব সামন্ততন্ত্র-এর পতনকে সুনিশ্চিত করে। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ৭ই সেপ্টেম্বর অস্ট্রিয়ার সরকার ভূমি আইন সংশোধন করে কৃষকদের সামন্তপ্রভুদের শোষণ ও নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্তি দেয়।
(৩) ফেব্রুয়ারি বিপ্লব সম্পর্কে টমসনের মন্তব্য
ঐতিহাসিক ডেভিড টমসন-এর মতে, সামন্ততন্ত্রের পতনই হল বিপ্লবের ‘সবচেয়ে স্মরণীয় ও দীর্ঘমেয়াদি অবদান।”
(৪) ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের ফলে স্বাধীন কৃষক শ্রেনির উদ্ভব
ভূমিদাস প্রথা দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এর ফলে হ্যাপসবার্গ সাম্রাজ্য-এর বিভিন্ন প্রদেশে স্বচ্ছল, রাজনীতি সচেতন এবং নিজ জমির মালিক স্বাধীন কৃষক শ্রেণির উদ্ভব ঘটে।
(৫) ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের ফলে সমাজতন্ত্রের বিকাশ
এই বিপ্লবের দ্বারা ফ্রান্সে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং সমাজতান্ত্রিক মতবাদ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। শ্রমিকদের কাজের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য ‘জাতীয় কর্মশালা’ প্রতিষ্ঠিত হয়।
(৬) ফেব্রুয়ারি বিপ্লব হল শহরকেন্দ্রিক বিপ্লব
এই বিপ্লব ছিল মূলত শহরকেন্দ্রিক বিপ্লব। প্যারিস, ভিয়েনা, বার্লিন, রোম, মিলান, ভেনিস, বুদাপেস্ট প্রভৃতি শহর ছিল এই বিপ্লবের প্রাণকেন্দ্র।
(৭) ফেব্রুয়ারি বিপ্লব হল বুদ্ধিজীবী বিপ্লব
এই বিপ্লব ছিল বুদ্ধিজীবীদের বিপ্লব। কবি, সাহিত্যিক, অধ্যাপক, সাংবাদিক প্রভৃতি মানুষ এই বিপ্লবে নেতৃত্ব দেন। ফ্রান্সে কবি লা-মার্টিন, বোহেমিয়াতে ঐতিহাসিক প্যালাকি, হাঙ্গেরিতে কবি ও সাহিত্যিক পেটোফ্রি, ইতালিতে পণ্ডিত ও আদর্শবাদী দেশপ্রেমিক ম্যাৎসিনি এই বিপ্লবে নেতৃত্ব দেন।
(৮) ফেব্রুয়ারি বিপ্লব সম্পর্কে নেমিয়ারের মন্তব্য
ঐতিহাসিক নেমিয়ার ফেব্রুয়ারি বিপ্লবকে ‘বুদ্ধিজীবীদের বিপ্লব’ (‘Revolution of the Intellectuals’) বলে অভিহিত করেছেন।
(৯) ফেব্রুয়ারি বিপ্লব হল জনতার বিপ্লব
ডেভিড টমসন, অধ্যাপক টেলর প্রমুখ ঐতিহাসিক এই বিপ্লবকে ‘জনতার বিপ্লব’ বলে অভিহিত করেছেন। ডেভিড টমসন বলেন যে, ১৮৪৮ সাল জনগণের যুগের সূচনা করে।
(১০) ফেব্রুয়ারি বিপ্লব সম্পর্কে টেলরের মন্তব্য
অধ্যাপক টেলর বলেন যে, ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দের প্রকৃত নায়ক ছিল জনগণ। কেবলমাত্র বিপ্লবী নেতাদের উপর নির্ভর করলে এই বিপ্লব আদৌ সংঘটিত হত না। তিনি বলেন যে, ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে রাজনীতি ও দেশের শাসন-সংক্রান্ত বিষয় আর ধনীর বৈঠকখানায় নিয়ন্ত্রিত হত না –এখন থেকে তা রাজপথ -এ সাধারণ মানুষদের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে।
উপসংহার:- ফেব্রুয়ারি বিপ্লব ব্যর্থ হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তা ছিল সাময়িক। ১৮৪৮ ছিল একটি যুগ-সন্ধিক্ষণ। এই সময় যে বীজ রোপিত হয়েছিল তা অচিরেই মহীরুহ -এ পরিণত হয়। তবে এর জন্য অবশ্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হয়।
(FAQ) ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের তাৎপর্য সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
২২-২৪ ফেব্রুয়ারি ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে।
১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দকে ইউরোপ -এর বিপ্লবের বৎসর বলা হয়।
হাঙ্গেরির বিখ্যাত নেতা লুই কসুথ।
১৫ মার্চ, ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে মেটারনিখ ইংল্যান্ড -এ পলায়ণ করেন।