১৮০৮-১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে তুরস্কে সংঘটিত তরুণ তুর্কি আন্দোলন প্রসঙ্গে উদ্দেশ্য, তরুণ তুর্কিদের উপলব্ধি, আন্দোলনের লক্ষ্য, শ্লোগান, গুপ্ত সমিতি গঠন, কার্যকলাপ, জাতীয় পার্লামেন্ট আহ্বান, পার্লামেন্ট ভঙ্গ, সুলতান পরিবর্তন, প্রগতিশীল শাসন সংস্কার, ব্যর্থতা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানবো।
তরুণ তুর্কি আন্দোলন (১৯০৮-১৯০৯ খ্রিঃ)
ঐতিহাসিক ঘটনা | তরুণ তুর্কি আন্দোলন |
সময়কাল | ১৯০৮-১৯০৯ খ্রিস্টাব্দ |
স্থান | তুরস্ক |
নেতা | এনভার পাশা |
ফলাফল | ব্যর্থতা |
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া | প্রথম বিশ্বযুদ্ধ |
ভূমিকা:- ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের শাসনকালে তুরস্কে ‘তরুণ তুর্কি’ আন্দোলন শুরু হলে পূর্বাঞ্চল সমস্যা জটিলতর রূপ ধারণ করে।
তরুণ তুর্কি আন্দোলনের উদ্দেশ্য
বিদেশি প্রভুত্বের অবসান এবং তুরস্কের পুনরুজ্জীবনের উদ্দেশ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত তুরস্কের যুবসমাজ এনভার পাশা-র নেতৃত্বে ‘তরুণ তুর্কি’ নামে এক জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু করে।
তরুণ তুর্কি আন্দোলনে তরুণ তুর্কিদের উপলব্ধি
পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত এই তরুণ দল উপলব্ধি করে যে, মধ্যযুগীয় জড়তা ত্যাগ করে আধুনিক যুগের উপযোগী সংস্কার প্রবর্তন না করলে ইউরোপীয় বৃহৎ শক্তিগুলির আগ্রাসী মনোভাব ও বলকান জাতিগোষ্ঠীর নিরবচ্ছিন্ন বিদ্রোহে তুরস্ক সাম্রাজ্য ভেঙে পড়বে।
তরুণ তুর্কি আন্দোলনের লক্ষ্য
এই তরুণ তুর্কি আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল,
- (১) তুরস্ককে আধুনিকভাবে গড়ে তোলা।
- (২) বিদেশি শক্তির প্রভাব থেকে তুরস্ককে মুক্ত রাখা।
- (৩) পাশ্চাত্য গণতান্ত্রিক ধাঁচে তুরস্কের শাসনতন্ত্র রচনা করা।
তরুণ তুর্কি আন্দোলনের শ্লোগান
তাদের স্লোগান ছিল, ‘তুর্কি জাতি, ইসলাম ধর্ম ও পাশ্চাত্য সভ্যতা’।
তুর্কি যুবকদের গুপ্ত সমিতি গঠন
সূচনা পর্বে এই দেশপ্রেমিক যুবকরা বেশ কিছু গুপ্ত সমিতি গঠন করে তাদের প্রচারকার্য চালায়। এইসব গুপ্ত সমিতির মধ্যে একটি ছিল ‘কমিটি অব ইউনিয়ন অ্যান্ড প্রোগ্রেস’ বা ‘জাতীয় ঐক্য ও প্রগতি সমিতি’। ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে ইব্রাহিমতেনো-র নেতৃত্বে গঠিত এই কমিটির সদর দপ্তর ছিল কনস্টান্টিনোপলে।
তরুণ তুর্কি আন্দোলনের কার্যকলাপ
আধুনিক সংস্কারের দাবিতে সুলতান-বিরোধী প্রচারকার্য চালানোর সঙ্গে সঙ্গে তারা সেনাবাহিনীর একটি অংশকে নিজ পক্ষে আনতে সমর্থ হয়। তাদের আন্দোলনের চাপে সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ অভ্যন্তরীণ সংস্কার সাধনে রাজি হন।
তুরস্ক সুলতানের জাতীয় পার্লামেন্ট আহ্বান
১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে সুলতান সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে জাতীয় পার্লামেন্ট আহ্বান করেন এবং বেশ কিছু সংস্কারমূলক কর্মসূচি ঘোষিত হয়।
তুরস্ক সুলতানের পার্লামেন্ট ভঙ্গ
সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ ছিলেন প্রতিক্রিয়াশীল শাসক। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে রক্ষণশীল গোষ্ঠীর সহায়তায় তিনি পার্লামেন্ট ভেঙে দেন এবং ‘তরুণ তুর্কি’ আন্দোলন দমনে প্রয়াসী হন।
তুরস্কে সুলতান পরিবর্তন
এরপর তুরস্কে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ বন্দি হন। ‘তরুণ তুর্কি’ দল তাঁকে পদচ্যুত করে তাঁর ভ্রাতা পঞ্চম মহম্মদ-কে সুলতান বলে ঘোষণা করে।
নব তুরস্ক সুলতানের প্রগতিশীল শাসন সংস্কার
পঞ্চম মহম্মদের শাসনকালে নানা প্রগতিশীল শাসন-সংস্কার প্রবর্তিত হয়। ব্যক্তি-স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রবর্তিত হয়, বিনা কারণে বা বিনা বিচারে গ্রেপ্তার ও বন্দি করা নিষিদ্ধ হয়।
তরুণ তুর্কি আন্দোলনের ব্যর্থতা
- (১) ‘তরুণ তুর্কি’দের মনে উচ্ছ্বাস ছিল, কিন্তু অভিজ্ঞতা ছিল না। তারা মনে করেছিল। যে, সুলতানি স্বৈরশাসন উচ্ছেদ হলেই দেশের সব সমস্যা মিটে যাবে। বলা বাহুল্য, তা হয় নি।
- (২) গোড়া মোল্লাতন্ত্রের বিরোধিতায় তারা বহুক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়। অভিজ্ঞতার অভাবে তাদের শাসন দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সর্বত্র দুর্নীতি ও অপদার্থতা ফুটে ওঠে। রাস্তাঘাট ও সেতু নির্মাণ, শিক্ষার প্রসার, শহরে বিদ্যুৎ ও জল সরবরাহ—সর্বক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ হয়।
- (৩) এই আমলে অ-তুর্কি জনগণের উপর তুর্কিকরণ নীতি চাপানো হয় এবং অ-তুর্কি জনগণের ভাষা, সাহিত্য ও ধর্মের উপর আক্রমণ চালানো হয়। খ্রিস্টান প্রজাদের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার লোপ করা হয় এবং ম্যাসিডোনিয়ায় তুর্কি উপনিবেশ স্থাপিত হয়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
‘তরুণ তুর্কি’দের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সৃষ্টি হয় আন্তর্জাতিক জটিলতা। যেমন –
- (১) বুলগেরিয়া বার্লিন চুক্তি অগ্রাহ্য করে স্বাধীনতা ঘোষণা করে (১৯০৮ খ্রি:)।
- (২) বার্লিন চুক্তি (১৮৭৮ খ্রিঃ) দ্বারা অস্ট্রিয়া কে স্লাভ অঞ্চল বসনিয়া ও হারজেগোভিনা-র উপর কিছু অধিকার দেওয়া হয়, কিন্তু তুরস্কের গৃহবিবাদের সুযোগ নিয়ে অস্ট্রিয়া এই অঞ্চল দুটি নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করে।
- (৩) অস্ট্রিয়ার এই কাজে জার্মানি, ফ্রান্স, রাশিয়া ও ইংল্যান্ড -এর সমর্থন ছিল। এতে গাত-রাজ্য সার্বিয়া প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়। অস্ট্রিয়া ও সার্বিয়ার এই দ্বন্দ্ব প্রথম বিশ্বযুদ্ধ -এর অগ্নি প্রজ্বলিত করে।
উপসংহার:- তুরস্কের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ইতালি তুরস্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে (১৯১১ খ্রিঃ) এবং পরাজিত তুরস্ক লুসানের সন্ধি দ্বারা ইতালির হাতে ত্রিপোলি তুলে দেয় (১৯১২ খ্রিঃ)। এইসব নানা কারণে বলকান রাজনীতি জটিলতর হয়ে ওঠে।
(FAQ) তরুণ তুর্কি আন্দোলন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৯০৮-১৯০৯ সালে তুরস্কে।
এনভার পাশা।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।