শেরশাহের চরিত্র ও কৃতিত্ব প্রসঙ্গে আফগান শক্তির পুনরুদ্ধার, বিদ্যানুরাগ, পরধর্মমতসহিষ্ণু, বিজেতা, যদুনাথ সরকারের অভিমত, দক্ষ শাসক, সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক, শিল্পানুরাগ ও আকবরের পথপ্রদর্শক হিসেবে শেরশাহের কৃতিত্ব সম্পর্কে জানবো।
ভারতের আফগান শাসক শেরশাহের চরিত্র ও কৃতিত্ব প্রসঙ্গে শেরশাহের বিদ্যানুরাগ, শেরশাহের পরধর্মমত সহিষ্ণুতা, শেরশাহের সাহিত্যানুরাগ, বিজেতা হিসেবে শেরশাহ, শাসক হিসেবে শেরশাহ, শেরশাহের শিল্পানুরাগ, আকবরের পথপ্রদর্শক শেরশাহ, শেরশাহের বংশ, শেরশাহের রাজত্বকাল, সংস্কারক হিসেবে শেরশাহের কৃতিত্ব।
শের শাহের চরিত্র ও কৃতিত্ব (Character and Achievements of Sher Shah)
বিষয় | শেরশাহের চরিত্র ও কৃতিত্ব |
রাজত্বকাল | ১৫৪০-৪৫ খ্রিস্টাব্দ |
অবদান | হুমায়ুনকে পরাজিত করে দিল্লি দখল |
কীর্তি | গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড নির্মাণ, পুরাণ কিল্লা নির্মাণ |
উত্তরসূরি | ইসলাম শাহ সুরি |
ভূমিকা :- মধ্যযুগের ভারত ইতিহাসে শেরশাহ এক উল্লেখযোগ্য নাম। এক অতি সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করে কেবলমাত্র নিজ শক্তি, সাহসিকতা, অদম্য মনোবল, দৃঢ় সংগঠনী শক্তি ও প্রবল ইচ্ছাশক্তির সাহায্যে তিনি এক বিশাল সাম্রাজ্য -এর অধীশ্বর হন।
আফগান শক্তির পুনরুদ্ধার
শতধা-বিভক্ত ও দুর্বল আফগান সর্দারদের ঐক্যবদ্ধ করে তিনি ভারতে আফগান শক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করেন। তিনিই হলেন দ্বিতীয় আফগান সাম্রাজ্যের’ প্রতিষ্ঠাতা।
বিদ্যানুরাগী
আরবি ও ফারসি ভাষায় তাঁর অসাধারণ ব্যুৎপত্তি ছিল এবং ‘গুলিস্তান’, ‘বুস্তান’ও ‘সিকন্দরনামা’ প্রভৃতি গ্রন্থ তাঁর কণ্ঠস্থ ছিল। তাঁর চরিত্রে বিদ্যানুরাগ ও সামরিক প্রতিভার এক সুষ্ঠু সমন্বয় লক্ষ্য করা যায়।
পরধর্মমতসহিষ্ণু
একজন নিষ্ঠাবান সুন্নি মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও তিনি ছিলেন পরধর্মমতসহিষ্ণু।
বিজেতা
বিজেতা ও শাসক হিসেবে তিনি অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। আফগানদের চরমতম দুর্দিনে কেবলমাত্র নিজ সাহসিকতা, অদম্য মনোবল, বাস্তববাদী রাজনীতি ও কূটকৌশলের মাধ্যমে তিনি মোগল সম্রাট হুমায়ুনের বিরুদ্ধে যুদ্ধেজয়লাভ করে দিল্লির সিংহাসন দখল করেন।
যদুনাথ সরকারের অভিমত
অতি সাধারণ অবস্থা থেকে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করা কম দক্ষতা, পারদর্শিতা, যোগ্যতা ও গৌরবের নয়। স্যার যদুনাথ সরকার শের শাহ ও শিবাজির মধ্যে অদ্ভুত মিল খুঁজে পেয়েছেন। পিতৃস্নেহ বঞ্চিত এই দুই বীর ছিলেন দুই জাতির সংগঠক। আফগানদের ক্ষেত্রে শের শাহ, অপরদিকে মারাঠাদের ক্ষেত্রে শিবাজি।
শাসক
প্রশাসক হিসেবে শের শাহ স্থায়ী কীর্তির অধিকারী। মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে তিনি ভারতে এমন এক শাসনব্যবস্থা স্থাপন করেন, যা স্বীয় বৈশিষ্ট্যে ভাস্বর হয়ে আছে। মহান আকবরের পূর্বে এমন জনকল্যাণমুখী, প্রজাহিতৈষী ও ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থা মুসলিম শাসনাধীন ভারতে আর স্থাপিত হয় নি। শেরশাহ প্রবর্তিত শাসনব্যবস্থাই বহুলাংশে আকবর গ্রহণ করেন।
সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক
- (১) তিনি সাহিত্য ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তাঁর চিন্তাধারায় হিন্দু-মুসলিম সংস্কৃতির সমন্বয় লক্ষ্য করা যায়। তাঁর শাসনকালে হিন্দি সাহিত্যের অগ্রগতি ঘটে।
- (২) তাঁর সময়েই মালিক মহম্মদ জয়সী ‘পদ্মাবৎ’ কাব্য রচনা করে যশস্বী হন। এই সময়েই মথুরা নব্য-বৈষ্ণব ধর্মচর্চারকেন্দ্রে পরিণত হয়।
শিল্পানুরাগ
- (১) তাঁর নির্মিত স্থাপত্য কীর্তিগুলিতে হিন্দু-পারসিক ও আরবীয় শিল্পরীতির সুষম সমন্বয় লক্ষ্য করা যায়। প্রতিরক্ষার স্বার্থে তিনি ঝিলামের তীরে রোটাসগড় দুর্গ নির্মাণ করেন।
- (২) দিল্লির ‘পুরানা কিল্লা’ ও দুর্গের অভ্যন্তরস্থ কিলা-ই কুহনা’ মসজিদ তাঁর উল্লেখযোগ্য কীর্তি। বিহারের সাসারামে নির্মিত তাঁর সমাধি মন্দির তাঁর শিল্প-কীর্তির সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ। ফার্গুসন, হ্যাভেল, পার্শি ব্রাউন প্রমুখ শিল্প-বিশেষজ্ঞরা এর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
আকবরের পথপ্রদর্শক
- (১) শের শাহকে আকবরের পথপ্রদর্শক বলা হয়ে থাকে। বলা হয় যে, আকবর শের শাহের ধর্মনিরপেক্ষতা, জনকল্যাণ নীতি, ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা, শাসনব্যবস্থার বিভাজন, ‘কবুলিয়ত্’ ও ‘পাট্টা’ ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে প্রজাদের ঋণদান, জমি জরিপ, সেনাবাহিনীর ‘দাগ’ ও ‘হুলিয়া’ প্রথা প্রভৃতি গ্রহণ করেছিলেন। এই সব কারণে শের শাহকে আকবরের অগ্রদূত বলা হয়ে থাকে।
- (২) শের শাহের সকল কৃতিত্ব মেনে নিয়েও বলতে হয় যে, আকবরের ব্যবস্থাগুলি ছিল অনেক উন্নত, প্রাণবন্ত ও স্থায়ী, এবং আকবরের প্রশাসনিক ব্যবস্থার মধ্যে মৌলিকতা ও সৃজনশীলতার ছাপ অতি স্পষ্ট।
উপসংহার :- ডঃ ত্রিপাঠী বলেন যে, “যদিও শের শাহ ছিলেন সুশাসক ও ন্যায়পরায়ণ, তিনি ছিলেন মুখ্যত আফগানদের জাতীয় শাসক।” আকবরের মতো উদার ও মহৎপ্রাণ এবং বিরাট সাংস্কৃতিক চেতনা তার মধ্যে ছিল না। আকবর ছিলেন ভারতের জাতীয় সম্রাট।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “শেরশাহের চরিত্র ও কৃতিত্ব” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) শেরশাহের চরিত্র ও কৃতিত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে কনৌজের যুদ্ধ।
শেরশাহ।
১৫৪০-১৫৪৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পাঁচ বছর।
সুরি বংশ।
অন্যান্য ঐতিহাসিক চরিত্রগুলি
- ফিওদর মিখাইলোভিচ দস্তয়েভস্কিদস্তয়েভস্কি (১৮২১-১৮৮১) একজন রাশিয়ান ঔপন্যাসিক, দার্শনিক এবং মনস্তাত্ত্বিক, যিনি মানব …
- হেরোডোটাস“ইতিহাসের জনক” নামে পরিচিত হেরোডোটাস (৪৮৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দ – ৪২৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) …
- জিওফ্রে চসারজিওফ্রে চসার (১৩৪০-১৪০০) ছিলেন ইংরেজি সাহিত্যের প্রথম যুগের অন্যতম প্রধান …
- আলাউদ্দিন খাঁসঙ্গীত সম্রাট আলাউদ্দিন খাঁ (১৮৬২-১৯৭২) ছিলেন উপমহাদেশের অন্যতম প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ …
- ক্যাপ্টেন জেমস কুকক্যাপ্টেন জেমস কুক (১৭২৮-১৭৭৯) ছিলেন একজন ব্রিটিশ নৌ-অফিসার, আবিষ্কারক ও …
- ওয়াল্টার হুইটম্যানওয়াল্টার হুইটম্যান (১৮১৯–১৮৯২) ছিলেন একজন প্রভাবশালী আমেরিকান কবি, প্রাবন্ধিক এবং …
- বালজাকঅনর দ্য বালজাক (Honore de Balzac) ছিলেন ১৯শ শতকের একজন …
- সার্ভেন্টিসমিগেল দে সার্ভেন্টিস (১৫৪৭-১৬১৬) ছিলেন স্পেনের একজন বিশিষ্ট লেখক এবং …
- রাহুল সাংকৃত্যায়নরাহুল সাংকৃত্যায়ন (১৮৯৩-১৯৬৩) একজন বিশিষ্ট ভারতীয় পণ্ডিত, ইতিহাসবিদ, এবং ভ্রমণকারী …