মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের চরিত্র ও কৃতিত্ব প্রসঙ্গে পরস্পর বিরোধী বিভিন্ন গুণাবলী, সংস্কৃতিবান পুরুষ জাহাঙ্গীর, আত্মজীবনী রচনা, জাহাঙ্গীরের ধর্মবিশ্বাস, সংগীত ও চিত্রকলায় জাহাঙ্গীরের অবদান, জাহাঙ্গীরের শিল্পানুরাগ, জাহাঙ্গীরের ওপর নূরজাহানের প্রভাব ও তার চরিত্রের ত্রুটি সম্পর্কে জানবো।
জাহাঙ্গীরের চরিত্র ও কৃতিত্ব
বিষয় | জাহাঙ্গীরের চরিত্র ও কৃতিত্ব |
রাজত্বকাল | ১৬০৫-১৬২৮ খ্রিস্টাব্দ |
পূর্বসূরি | আকবর |
উত্তরসূরি | শাহজাহান |
ভূমিকা :- মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীর -এর চরিত্রে পরস্পর-বিরোধী নানা গুণের সমন্বয় ঘটেছিল। তিনি একাধারে ছিলেন দয়ালু ও নিষ্ঠুর, ন্যায়বিচারক ও খামখেয়ালি, সংস্কৃতিবান ও বর্বর।
পরস্পর-বিরোধী গুণাবলী
- (১) ইংরেজ ধর্মযাজক এডওয়ার্ড টেরি (Edward Terry) লিখছেন যে, জাহাঙ্গীরের চরিত্র কোমলে-কঠোরে গঠিত ছিল। কখনও কখনও তিনি নিষ্ঠুর হয়ে উঠতেন, আবার সময় সময় তাঁকে অতি বিনয়ী ও মৃদু-স্বভাবের মানুষ বলে মনে হত।
- (২) পিতা আকবরের সান্নিধ্যে উদার পরিবেশে বয়োপ্রাপ্ত হওয়ার ফলে তাঁর মধ্যে যে নানা সদগুণের বিকাশ হয়েছিল সে সম্পর্কে কোনও সন্দেহ নেই। তাঁর হৃদয় ছিল খুবই কোমল। আত্মীয়-স্বজন ও পশু-পক্ষীর প্রতি তাঁর প্রবল মমত্ব ছিল।
- (৩) পিতা আকবরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলেও তিনি পিতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তিনি নগ্নপদে সেকান্দ্রায় গিয়ে পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করতেন।
- (৪) পিতা হিসেবেও তিনি ছিলেন স্নেহপরায়ণ। খসরুর অন্ধত্ব বা মৃত্যুর জন্য তাঁকে দায়ী করা যায় না। বিদ্রোহী শাহজাহান বশ্যতা স্বীকার করলে তিনি তাঁকে ক্ষমা করেন।
- (৫) দরিদ্রদের প্রতি তিনি মুক্তহস্ত ছিলেন। বিচারের ব্যাপারে তিনি ধনী-দরিদ্রদের মধ্যে ভেদাভেদ করতেন না এবং দেশের দরিদ্রতম ব্যক্তিও যাতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে, সেজন্য তিনিষাটটি ঘণ্টা-যুক্ত সোনার শেকলের ব্যবস্থাও করেছিলেন।
- (৬) ডঃ বেণী প্রসাদ (Dr. Beni Prasad)-এর মতে তাঁর রাজত্বকাল ছিল শান্তি-সমৃদ্ধির যুগ। এই সময় শিল্প-বাণিজ্য বৃদ্ধি পায়। স্থাপত্য, শিল্প ও চিত্রকলার যথেষ্ট উন্নতি ঘটে।
সংস্কৃতিবান পুরুষ জাহাঙ্গীর
জাহাঙ্গীর ছিলেন সংস্কৃতিবান পুরুষ। শিল্প, সাহিত্য, সংগীত, চিত্রকলা প্রভৃতির প্রতি তাঁর স্বাভাবিক আকর্ষণ ছিল। তুর্কি ও ফারসি ভাষায় তাঁর যথেষ্ট দক্ষতা ছিল।
আত্মজীবনী রচনা
ফারসি ভাষায় রচিত তাঁর আত্মজীবনী ‘তুজুক-ই-জাহাঙ্গীরী’ একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। তিনি ইতিহাস, দর্শন, ভূগোল ও জীবনচরিত পাঠ করতেন।
ধর্মবিশ্বাস
ধর্ম বিষয়েও তিনি উদার ছিলেন। তবে জাহাঙ্গীর সাধারণত পরধর্মসহিষ্ণুতা প্রদর্শন করলেও মাঝে মাঝে ধর্মসহিষ্ণুতা নীতি থেকে বিচ্যুত হন।
সংগীত ও চিত্রকলা
সংগীতে তাঁর প্রবল অনুরাগ ছিল। তিনি নিজে একজন দক্ষ চিত্রশিল্পী ছিলেন। আগ্রা দরবারের বহু দেওয়াল-চিত্র তিনি নিজেই অঙ্কন করেন। মনসুর, ফারুক বেগ, কেশব, মনোহর প্রমুখ চিত্রশিল্পী তাঁর দরবার অলংকৃত করতেন।
শিল্পানুরাগ
স্থাপত্য শিল্পের প্রতিও তাঁর যথেষ্ট অনুরাগ ছিল। তাঁর আমলে আবদুর রহিম খান খানানের সমাধি, ইতিমাদ উদ দৌলার সমাধি ভবন নির্মিত হয়।
নূরজাহানের প্রভাব
তিনি পত্নী নূরজাহান -এর প্রতি অন্ধ ভালোবাসা ও আরাম প্রিয়তার বশবর্তী হয়ে রাজ্য শাসনের কাজে বেগমকে হস্তক্ষেপ করতে দেন।যার ফল ভালো হয়নি।
চরিত্রের ত্রুটি
মদ্যপান, অহিফেন সেবন ও আরামপ্রিয়তা ছিল তাঁর চরিত্রের প্রধান ত্রুটি। এর ফলেই তিনি শেষ জীবনে অকর্মণ্য হয়ে পড়েন এবং সাম্রাজ্যে নানা অশান্তি দেখা দেয়।
উপসংহার :- ঐতিহাসিক ডঃ বেণী প্রসাদের মতে জাহাঙ্গীরের রাজত্বকাল ছিল সমগ্ৰ মোগল সাম্রাজ্যের শান্তি ও সমৃদ্ধির সূচক।
(FAQ) জাহাঙ্গীরের চরিত্র ও কৃতিত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৬২৮ খ্রিস্টাব্দে।
‘তুজুক-ই-জাহাঙ্গীরী’।
ক্যাপ্টেন হকিন্স (১৬০৯) ও স্যার টমাস রো (১৬১৫)।