মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে পরিচালিত লবণ সত্যাগ্রহ -এর সময়কাল, পদযাত্রা, ডান্ডি মার্চ, আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা, তৎকালীন ভারতের পরিস্থিতি, কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং, নেতৃত্ব, দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকের ব্যর্থতা, গান্ধী-আর উইন চুক্তি লঙ্ঘন, শীর্ষ নেতাদের বন্দী, দ্বিতীয় পর্বে লবণ সত্যাগ্রহ, সরকারের নির্যাতন, সুভাষচন্দ্র বসুর ভূমিকা, মাতঙ্গিনী হাজরার ভূমিকা সম্পর্কে জানবো।
লবণ সত্যাগ্ৰহ প্রসঙ্গে লবণ সত্যাগ্ৰহ কি, লবণ সত্যাগ্ৰহ আন্দোলন, লবণ সত্যাগ্ৰহ আন্দোলনের নেতা, লবণ সত্যাগ্ৰহের সময়কাল, ডান্ডি অভিযান, হরিজন পত্রিকা প্রকাশ, লবণ আইন ভঙ্গের মাধ্যমে আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা, ডান্ডি অভিযানের সূচনাকাল, লবণ আইন কি, লবণ আইন ভঙ্গের কারণ, ডান্ডি অভিযানের উদ্দেশ্য, ডান্ডি মার্চ, লবণ সত্যাগ্ৰহের নেতৃত্ব, লবণ সত্যাগ্ৰহ সেতু।
গান্ধীজির লবণ সত্যাগ্রহ
ঐতিহাসিক ঘটনা | লবণ সত্যাগ্রহ |
সময়কাল | ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১২ মার্চ |
প্রধান নেতা | মহাত্মা গান্ধী |
স্থান | আরব সাগরের তীরে অবস্থিত ডান্ডি |
উদ্দেশ্য | লবণ আইন ভঙ্গ |
ভূমিকা :- লবণ সত্যাগ্রহ ঔপনিবেশিক ভারতে ব্রিটিশদের একচেটিয়া লবণ নীতির বিরুদ্ধে একটি অহিংস করপ্রদান-বিরোধী প্রতিবাদ আন্দোলন। এই আন্দোলনের মাধ্যমেই আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা হয়।
লবণ সত্যাগ্রহের সময়কাল
১৯৩০ সালের ১২ মার্চ ডান্ডি পদযাত্রা বা লবণ সত্যাগ্রহ শুরু হয়। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল লবণ সত্যাগ্রহ।
অসহযোগ পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন
১৯২০-২২ সালের অসহযোগ আন্দোলন -এর পর লবণ সত্যাগ্রহই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংগঠিত ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলন।
কংগ্রেসের পূর্ণ স্বরাজ প্রস্তাব গ্ৰহণ
২৬ জানুয়ারি ১৯৩০ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস “পূর্ণ স্বরাজ” প্রস্তাব গ্রহণ করার অব্যবহিত পরেই এই সত্যাগ্রহ -এর সূচনা ঘটে।
লবণ সত্যাগ্রহের পদযাত্রা
মহাত্মা গান্ধী আমেদাবাদের কাছে সবরমতী আশ্রম থেকে ডান্ডি পদযাত্রা শুরু করে ২৪ দিনে ২৪০ মাইল (৩৯০ কিলোমিটার) পথ পায়ে হেঁটে ডান্ডি গ্রামে এসে বিনা করে সমুদ্রের জল থেকে লবণ প্রস্তুত করেন।
ডান্ডি মার্চ
১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১২ ই মার্চ ৭৮ জন সত্যাগ্রহীকে নিয়ে গান্ধিজি গুজরাটের সবরমতী আশ্রম থেকে প্রায় দুশো মাইল দূরে আরব সাগরের তীরে অবস্থিত ডান্ডি অভিমুখে তাঁর ঐতিহাসিক পদযাত্রা শুরু করেন। এই দীর্ঘ ঐতিহাসিক পদযাত্রা ‘ডান্ডি মার্চ’ নামে পরিচিত।
লবণ সত্যাগ্রহের মাধ্যমে আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা
১৯৩০ সালের ৬ এপ্রিল সকালে গান্ধীজি লবণ আইন ভেঙে প্রথম লবণ প্রস্তুত করেছিলেন। সেই সঙ্গে তার লক্ষাধিক অনুগামীও লবণ আইন ভেঙে ভারতে আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা করেন।
আইন অমান্য আন্দোলনের পটভূমি
১৯৩০ সালে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর নেতৃত্বে শুরু হওয়া একটি ব্রিটিশ সরকার বিরোধী আইন অমান্য আন্দোলনের পটভূমি ছিল সাইমন কমিশন।
আইন অমান্য আন্দোলনের অনিবার্যতা
নেহরু রিপোর্ট কার্যকর করতে ব্রিটিশ সরকারের সহায়তার অভাব ও দেশের সর্বত্র ব্রিটিশ বিরোধী বিক্ষোভ ও অসন্তোষের কারণে আইন অমান্য আন্দোলন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল।
তৎকালীন ভারতের পরিস্থিতি
- (১) প্রথম বিশ্বযুদ্ধ -এর পর বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ভারতীয় অর্থনীতিকে অচল করে এবং ব্যবসায়ী, কৃষক, মজুর সকলেই চরম দুর্দশার মধ্যে পড়ে।
- (২) এই সময়ে সর্বত্র কৃষক এবং শ্রমিকদের ট্রেড-ইউনিয়ন কংগ্রেস স্থাপিত হয়। ট্রেড-ইউনিয়নগুলির নেতৃত্বে সর্বত্র সরকারি নীতি ও কর্মপদ্ধতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শিত হতে থাকে।
- (৩) সব মিলিয়ে ভারতবাসীর মনে অস্থিরতা পরিলক্ষিত হয় এবং ব্রিটিশ সরকার দমনমূলক নীতি প্রয়োগ করে বিক্ষোভ দমনে সচেষ্ট হন।
কংগ্রেসের মিটিং
১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৩০ সালে জাতীয় কংগ্রস সবরমতী আশ্রমে ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং করে ও গান্ধিজির সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে অহিংস আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
নেতৃত্ব
এই আন্দোলনের যাবতীয় দায়িত্ব গান্ধিজির ওপর অর্পণ করা হয়। গান্ধিজি প্রথমেই ঠিক করেছিলেন লবণ সত্যাগ্রহের দ্বারা আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা করবেন। এছাড়াও খান আবদুল গফফর খান, সরোজিনী নাইডু, বাসন্তী দেবী, ঊর্মিলা দেবী, সরলা দেবী চৌধুরাণী, লীলা নাগ, স্বরূপরানি নেহরু, কমলা নেহরু প্রমুখ এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।
দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকের ব্যর্থতা
১৯৩১ সালের ৫ মার্চ গান্ধি আরউইন চুক্তির শর্তকে কেন্দ্র করে দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠক -এর আলোচনা ব্যর্থ হলে গান্ধিজি ১৯৩১ সালের ২৮শে ডিসেম্বর ভারতে ফিরে আসেন।
গান্ধী-আরউইন চুক্তি লঙ্ঘন
গান্ধীজী দেশে ফিরে লক্ষ্য করেন যে, গান্ধি-আরউইন চুক্তি লঙ্ঘন করে ব্রিটিশ সরকার দেশজুড়ে দমনমূলক নীতি অনুসরণ করে স্বৈরাচারী শাসন চালাচ্ছে।
শীর্ষ নেতাদের কারাবন্দী
উত্তরপ্রদেশে খাজনা বন্ধ আন্দোলন করার সময় ভজহরি মাহাতো, জওহরলাল নেহরু, আবদুল গফফর খান সহ লালকোর্তা বাহিনীর বহু কর্মী এবং আরও অনেকে গ্রেফতার হন।
দ্বিতীয় পর্বে লবণ সত্যাগ্রহ
এই পরিস্থিতিতে ১৯৩২ সালের ৩ জানুয়ারি গান্ধিজি আবার লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনের ডাক দেন। ৪ঠা জানুয়ারি গান্ধীজিকে গ্রেফতার করে কারারুদ্ধ করা হয়।
লবণ সত্যাগ্রহে সরকারের নির্যাতন
কংগ্রেসকে বেআইনি সংগঠন রূপে নিষিদ্ধ করে তার যাবতীয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। জনসাধারণের ওপর সরকারি নির্যাতন ও দমনমূলক আইন যথেচ্ছভাবে প্রযুক্ত হতে থাকে। সংবাদপত্র সমূহের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ বলবৎ হয়।
লবণ সত্যাগ্রহে সুভাষচন্দ্রের ভূমিকা
সত্যাগ্রহী ও নিরীহ দর্শকদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয় এবং নির্বিচারে অসংখ্য নরনারীকে গ্রেফতার করার প্রতিবাদে ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে সুভাষচন্দ্র বসু কলকাতায় এক মিছিল বার করবার চেষ্টা করলে পুলিশের হাতে নিগৃহীত হন।
দ্বিতীয় পর্বে আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা
গান্ধি-আরউইন চুক্তি আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হলে ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে এই চুক্তি ভেঙ্গে দিয়ে আবার আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হয়। বাংলা, উত্তরপ্রদেশ, উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে।
মাতঙ্গিনী হাজরার ভূমিকা
মেদিনীপুর জেলার কাঁথি মহকুমাতে মাতঙ্গিনী হাজরার নেতৃত্বে এই আন্দোলনের ব্যাপকতা লক্ষ্য করা যায়।
হরিজন আন্দোলন
কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে গান্ধিজি অস্পৃশ্য মানুষের স্বার্থে হরিজন আন্দোলনের প্রতি মনোনিবেশ করেন। ১৯৩২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি নিখিল ভারত অস্পৃশ্যতা বিরোধী লিগ গঠন করেন।
বোমা নিক্ষেপ
১৯৩৩ সালের জানুয়ারি মাসে হরিজন পত্রিকা প্রকাশিত গান্ধিজির এক বক্তব্যেব কারণে ক্ষুব্ধ বর্ণহিন্দুরা পুনায় গান্ধিজির বাড়ি লক্ষ করে বোমা নিক্ষেপ করে। ফলে ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের আইনসভার মন্দিরে প্রবেশ সংক্রান্ত বিল ভেস্তে যায়। অনেকে গান্ধিজির আইন অমান্য আন্দোলন ছেড়ে সরকারপক্ষে যোগ দেয়।
তৃতীয় গোলটেবিল বৈঠক
- (১) ১৯৩২ সালের নভেম্বর মাসে লন্ডনে তৃতীয় গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কংগ্রেস পূর্বের মতই এই বৈঠকে যোগদান করেনি।
- (২) অন্যান্য দল ও সম্প্রদায়ের অল্প কিছু সংখ্যক প্রতিনিধি এই বৈঠকে যোগদান করেছিলেন। তারা ভবিষ্যৎ শাসনতন্ত্রে কয়েকটি প্রগতিশীল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চাইলে সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে।
- (৩) তবে এই বৈঠক এবং পরবর্তী আলোচনা সমূহের ফলশ্রুতি হিসাবে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন বিধিবদ্ধ হয়।
লবণ সত্যাগ্রহের উৎসাহ প্রদান
ভারতীয় সংবাদপত্র গুলি ছবিসহ ঐতিহাসিক ডান্ডি পদযাত্রার বিবরণ প্রকাশ করলে সারা দেশে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার সঞ্চার হয়।
লবণ সত্যাগ্রহ সেতু
গান্ধীজীর লবণ সত্যাগ্রহের ঢেউ মেদিনীপুরের কাঁথিতেও ছড়িয়ে পড়েছিল। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ছিল পিছাবনি খাল এলাকা। প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় -এর উদ্যোগে এখানে ছয়ের দশকে লোহার সেতু তৈরি হয়েছিল। ২০০৬ সালে নতুন ব্রিজ তৈরি হয় এবং নাম রাখা হয় লবণ সত্যাগ্রহ সেতু।
উপসংহার :- ব্রিটিশ ইতিহাস বলে, গান্ধীর লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলন ব্রিটিশ সরকারের শক্ত ভিত অনেকখানি কাঁপিয়ে দিয়েছিল। অহিংস আন্দোলন ব্রিটিশ সরকারকে আরো বেশি দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলেছিল।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “লবণ সত্যাগ্রহ” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) লবণ সত্যাগ্রহ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
মহাত্মা গান্ধী।
১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১২ মার্চ।
গুজরাটের সবরমতী আশ্রম থেকে।
আইন অমান্য আন্দোলন।
অন্যান্য ঐতিহাসিক ঘটনাগুলি
- কেন্দ্রীয় চোল শাসন
- সাম্রাজ্য ও রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য
- অর্থনীতিতে দাসপ্রথার গুরুত্ব
- রোমের দাসদের মুক্তির উপায়
- রোমান সাম্রাজ্য ও উপমহাদেশীয় সাম্রাজ্যগুলির মধ্যে যোগাযোগের প্রভাব
- জাস্টিনিয়ান পরবর্তী রাজবংশ
- রোমান সমাজে নারীর অবস্থান
- বাইজানটাইন সভ্যতা-সংস্কৃতির নানা দিক
- রোমান সাম্রাজ্য ও ভারতীয় উপমহাদেশ