প্রাচীন রোমের সমাজে দাসদের মুক্তি পাওয়ার প্রক্রিয়া ছিল বিভিন্ন পদ্ধতিতে সম্পন্ন। একে বলা হত “ম্যানুমিশন”। সাধারণত, দাসের মালিকের সম্মতি, মুক্তির অর্থ প্রদানের মাধ্যমে, বা আইনি পদ্ধতিতে দাসদের মুক্ত করা হত। কিছু ক্ষেত্রে, একটি দাস তার মনিবের কাছে বিশ্বস্ততার কারণে বা নির্দিষ্ট সময়ের সেবা শেষ করার পর স্বাধীনতা পেত। এ ছাড়া, দাসরা তাদের স্বাধীনতা লাভ করতে পারত রোমান আইন অনুযায়ী বিশেষ সামাজিক বা রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে।
পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের দাসদের মুক্তির উপায়
ঐতিহাসিক ঘটনা বা গল্প | রোমের দাসদের মুক্তির উপায় |
ম্যানুমিশন (Manumission) | মালিকের দ্বারা দাসের মুক্তি |
মুক্তির অর্থ প্রদান | দাস অর্থ জোগাড় করে নিজের মুক্তি কিনতে পারে |
আইনি প্রক্রিয়া | আদালতের মাধ্যমে মুক্তি পাওয়া |
সেনাবাহিনীতে সেবা | রোমান সেনাবাহিনীতে সেবা করার মাধ্যমে মুক্তি পাওয়া |
ধর্মীয় কারণে মুক্তি | ধর্মীয় অনুপ্রেরণায় মালিক দাসকে মুক্ত করে দিতে পারে |
দাসের মৃত্যু পরবর্তী মুক্তি | মালিকের ইচ্ছাপত্রে দাসকে মুক্ত করার নির্দেশ প্রদান |
ভূমিকা :- রোমান প্রভুরা তাদের অধীনস্থ ক্রীতদাসদের গৃহপালিত পশুর মতো আটকে রাখত। ফলে ক্রীতদাসদের সারাজীবন বন্দি জীবন কাটাতে হত। প্রভুর অধীনে বন্দি অবস্থায় বার্ধক্যে ও রোগভোগে জরাজীর্ণ হয়ে একসময় তারা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ত। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্রীতদাস তার দাসত্বের জীবন থেকে মুক্তিও লাভ করতে পারত। মুক্তিপ্রাপ্ত ক্রীতদাস ‘লিবারটাস’ নামে পরিচিত ছিল। মুক্তিপ্রাপ্ত ক্রীতদাসটির মাথায় মুক্তির প্রতীক হিসেবে বিশেষ আচ্ছাদন পরিয়ে দেওয়া হত। মুক্তিপ্রাপ্ত ক্রীতদাসটি তার পূর্বতন প্রভুর পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করত। মুক্তি পাওয়ার পর তার সন্তান রোম-এর স্বাধীন নাগরিকের মর্যাদা লাভ করত। ক্রীতদাসত্ব থেকে মুক্তির বিভিন্ন উপায়গুলি ছিল নিম্নরূপ –
অর্থ প্রদান
কোনো কোনো ক্রীতদাস তার দাসত্বের জীবনে বহু কাল ধরে পরিশ্রম করে বেশ কিছু অর্থ সঞ্চয় করতে পারত। এই সঞ্চিত অর্থ ক্রীতদাসটি তার প্রভুর হাতে এককালীন প্রদান করলে প্রভু আর্থিক দিক দিয়ে যথেষ্ট লাভবান হত। প্রভুটি দীর্ঘদিন ধরে ক্রীতদাসটির শ্রম শোষণ করেও এতটা লাভবান হতে পারত না। ক্রীতদাসটি তার প্রভুকে এরূপ বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে তার অধীনতা থেকে মুক্তি ক্রয় করতে পারত।
আনুগত্য
কোনো কোনো ক্রীতদাস সারাজীবন ধরে তার প্রভুর প্রতি গভীর আনুগত্য দেখাত। এই আনুগত্যের জন্য সে অনেক সময় পুরস্কার পেত। অধীনস্থ ক্রীতদাসের কাছ থেকে আজীবন এরূপ আনুগত্য পেয়ে কোনো কোনো দয়াবান প্রভু তার ক্রীতদাসটিকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দিত।
প্রভুকে সেবাদান
কোনো কোনো ক্রীতদাস তাঁর প্রভুর অত্যন্ত বিশ্বস্ত সেবক হিসেবে দীর্ঘকাল ধরে তার প্রভুর সেবাযত্ন করে প্রভুর প্রিয়পাত্র হয়ে উঠত। সে প্রভুর পরিবারের একজন সদস্যের মতোই প্রভুর কাছের মানুষ হয়ে উঠত। দীর্ঘকাল ধরে এই সেবাযত্ন প্রাপ্তির পুরস্কার হিসেবে কখনো-কখনো প্রভু তার অধীনস্থ ক্রীতদাসকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দিত।
প্রভুর প্রাণরক্ষা
এমনও দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় যে, অত্যন্ত বিপদসংকুল পরিস্থিতিতে ক্রীতদাস নিজের জীবন বিপন্ন করে তার প্রভুর প্রাণরক্ষার উদ্দেশ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ত। এরূপ ক্ষেত্রে কখনো-কখনো প্রভু তার প্রাণরক্ষাকারী ক্রীতদাসটির প্রতি সদয় হয়ে তাকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দিত।
লড়াইতে গ্ল্যাডিয়েটারের জয়লাভ
প্রাচীন রোমে গ্ল্যাডিয়েটারের লড়াই নামে এক নিষ্ঠুর ও অমানবিক ক্রীড়ানুষ্ঠান প্রচলিত ছিল। এই অনুষ্ঠানে গ্ল্যাডিয়েটার নামে পরিচিত ক্রীতদাস বাঘ, সিংহ প্রভৃতি হিংস্র পশুর সঙ্গে লড়াই করত। লড়াইয়ে ক্ষুধার্ত হিংস্র পশুর বিরুদ্ধে গ্ল্যাডিয়েটার জয়লাভ করলে ক্রীতদাসটির প্রভু খুশি হয়ে অনেক সময় তাকে মুক্তি দিত। 6. সেনেটের উদ্যোগ: রোমান সেনেট বা আইনসভা কখনো- কখনো ক্রীতদাসদের মুক্তির বিষয়ে উদ্যোগ নিত। সেনেটের অনুমোদনক্রমে সেখানকার ম্যাজিস্ট্রেটরা কোনো কোনো ক্রীতদাসকে মুক্তি দিতে পারত।
উপসংহার :- রোমের দাসদের মুক্তির উপায়গুলো ছিল রোমান সমাজ-এর আইন, অর্থনৈতিক অবস্থা এবং সামাজিক সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে জটিল এবং বিভিন্ন। ম্যানুমিশন ছিল দাসদের মুক্তির সবচেয়ে প্রচলিত উপায়, যেখানে দাসদের মালিক তাদের স্বাধীনতা দিত। কিছু ক্ষেত্রে দাসরা নিজেদের স্বাধীনতা অর্থের বিনিময়ে কিনতে পারত, আবার অনেক সময় বিশেষ সামাজিক, রাজনৈতিক, বা ধর্মীয় কারণে তাদের মুক্তি দেওয়া হতো। দাসদের সেনাবাহিনীতে সেবা করার সুযোগও ছিল, যা একটি নির্দিষ্ট সময়ের সেবা পরবর্তী স্বাধীনতা প্রদান করত। যদিও মুক্তিপ্রাপ্ত দাসরা ‘লিবার্টি’ হিসাবে সমাজে সীমিত অধিকার ভোগ করত, তবুও তারা রোমান নাগরিকত্ব পাওয়ার পথে অগ্রসর হতে পারত। এই ব্যবস্থা সমাজে দাসদের জন্য স্বাধীনতার আশা তৈরি করলেও, তা পুরোপুরি নির্ভর করত মালিকের ইচ্ছা, দাসের আর্থিক সামর্থ্য এবং সমাজের প্রচলিত আইন ও প্রথার ওপর।
(FAQ) রোমের দাসদের মুক্তির উপায় সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
সাধারণত না, কিন্তু দাসরা যদি অর্থ জোগাড় করতে পারত, তবে তারা মুক্তির জন্য অর্থ প্রদান করতে পারত। অন্যথায়, এটি মালিকের ইচ্ছার উপর নির্ভর করত।
হ্যাঁ, রোমান আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সামাজিক, রাজনৈতিক বা সেনাবাহিনীর সেবা করার মাধ্যমে দাসরা মুক্তি পেতে পারত। এছাড়াও, কিছু আইনি বা রাষ্ট্রীয় উৎসবের সময়ে মুক্তির সুযোগ ছিল।
মুক্তি পাওয়ার পরে দাসরা রোমান সমাজে ‘লিবার্টি’ (freedmen) হিসাবে গণ্য হত। তাদের রোমান নাগরিকত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল, তবে সামাজিক মর্যাদা কিছুটা সীমাবদ্ধ থাকত।
মুক্তির পর দাসরা ব্যক্তিগত সম্পত্তি অর্জন করতে পারত, তবে উত্তরাধিকার পাওয়া বা সম্পত্তি রাখা কিছু শর্তাধীন ছিল।
ম্যানুমিশন ছিল সবচেয়ে প্রচলিত উপায়, যেখানে মালিক স্বেচ্ছায় দাসকে মুক্তি দিত।