চিনে সংঘটিত বক্সার বিদ্রোহের প্রকৃতি প্রসঙ্গে শ্যেনে-এর মন্তব্য, ফেয়ারব্যাঙ্কের মন্তব্য, বক্সার বিদ্রোহের প্রকৃতি প্রসঙ্গে দরিদ্র শ্রেণীর বিদ্রোহ, নারীদের ভূমিকা, খ্রিস্ট ধর্ম ও বিদেশীদের বিরোধিতা, সামাজিক কর্মসূচি, লেনিনের ভূমিকা, মতাদর্শ এবং বক্সার বিদ্রোহের প্রকৃতি প্রসঙ্গে ভূস্বামী ও রাজপুরুষের ভূমিকা সম্পর্কে জানবো।
বক্সার বিদ্রোহের প্রকৃতি প্রসঙ্গে চীনে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলন বক্সার বিদ্রোহ, বক্সার বিদ্রোহ, আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থিত কৃষক বিদ্রোহ, সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে একটি প্রধান কৃষক বিদ্রোহ বক্সার বিদ্রোহ, বক্সার বিদ্রোহের প্রকৃতি প্রসঙ্গে দরিদ্র শ্রেণীর বিদ্রোহ, বক্সার বিদ্রোহের প্রকৃতি সম্পর্কে লেনিনের ভূমিকা বিষয়ে জানব।
বক্সার বিদ্রোহের প্রকৃতি
ঐতিহাসিক ঘটনা | বক্সার বিদ্রোহের প্রকৃতি |
বিদেশিদের বিতাড়ন | জ্যাক গ্ৰে |
জাতীয়তাবাদী প্রতিক্রিয়া | জাঁ শ্যেনো |
স্বতঃস্ফূর্ত কৃষক বিদ্রোহ | চিনা কমিউনিস্ট পার্টি |
সামাজিক আন্দোলন | এরিক হবসবম |
লাল লণ্ঠন বাহিনী | ১২-১৮ বছরের মেয়েরা |
ভূমিকা :- ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে জাপান -এর হাতে চিনের শোচনীয় পরাজয়, ১৮৯৭-৯৮ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ বিভিন্ন পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তি কর্তৃক চিনের বিভাজন, চিনাদের প্রতি খ্রিস্টান মিশনারিদের দুর্ব্যবহার প্রভৃতি ঘটনার হিংস্র প্রতিক্রিয়া প্রতিফলিত হয়েছিল ১৮৯৯-১৯০১ খ্রিস্টাব্দের বক্সার বিদ্রোহের মধ্যে। ঐতিহাসিক জ্যাক গ্রে বলেছেন, বক্সার বিদ্রোহীদের মূল উদ্দেশ্য ছিল বিদেশিদের চীন থেকে বিতাড়িত করা।
বক্সার বিদ্রোহের প্রকৃতি সম্পর্কে শ্যেনে-এর মন্তব্য
ঐতিহাসিক জাঁ শ্যেনো বলেছেন, বক্সার অভ্যুত্থান ছিল চিনাদের একটি জাতীয়তাবাদী প্রতিক্রিয়া এবং খ্রিস্টান মিশনারি ও ধর্মান্তরিত চিনা খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে জেহাদ। তাছাড়াও, শ্যেনো বলেছেন, এটি ছিল গুপ্ত সমিতির নেতৃত্বাধীন একটি কৃষক বিদ্রোহ।
চীনে বক্সার বিদ্রোহের প্রকৃতি সম্পর্কে ফেয়ারব্যাঙ্কের মন্তব্য
ফেয়ারব্যাঙ্কের মতে, চিনা জনজীবনে যে গভীর সংকট দেখা দিয়েছিল বক্সার বিদ্রোহ ছিল তার বিরুদ্ধে এক প্রত্যক্ষ সংগ্রাম (The Boxer movement emerged as a direct action response to a deepening crisis, in the lives of the whole Chinese people.)।
বক্সার বিদ্রোহের প্রকৃতি প্রসঙ্গে দরিদ্র শ্রেণীর বিদ্রোহ
- (১) ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে বক্সার বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারী যে সমস্ত ব্যক্তি বেঁচে ছিলেন তাঁদের নিয়ে চিনে একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। এই সমীক্ষা অনুযায়ী দেখা যায় যে, বিদ্রোহীদের প্রায় ৭০ শতাংশ এসেছিলেন কৃষক পরিবার থেকে। এঁরা অধিকাংশই ছিলেন খেতমজুর এবং এঁদের বয়স ছিল অত্যন্ত কম (সাধারণত ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সের মধ্যে)।
- (২) তাছাড়া, নৌকার মাঝি, ফেরিওয়ালা, কুলি, কর্মচ্যুত হস্তশিল্পী, ছোটো দোকানদার, স্কুলশিক্ষক প্রভৃতিরাও এই বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, বিদ্রোহীদের অধিকাংশই ছিলেন দরিদ্র শ্রেণীর লোক। তবে পিকিং-এর রাজসভা যখন থেকে বক্সারদের সমর্থন করতে থাকে, তখন প্রচুর রাজপুরুষ এবং জেন্ট্রির সদস্যরা বক্সারদের মদত দিয়েছিলেন।
চীনে বক্সার বিদ্রোহের প্রকৃতি প্রসঙ্গে নারীদের ভূমিকা
এই বক্সার গণ-অভ্যুত্থানে নারীদের বিশেষ ভূমিকা ছিল। তাঁরা কতকগুলি বিশেষ সংগঠনে বিভক্ত ছিলেন। ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েরা লাল লণ্ঠন বাহিনীর সদস্যা ছিলেন। নীল লণ্ঠন বাহিনীর সদস্যা ছিলেন মাঝবয়সী গৃহবধূরা। বর্ষীয়সী গৃহবধূরা ছিলেন কালো লণ্ঠন বাহিনীর অন্তর্গত। বিধবা রমণীদের সংগঠন ছিল সবুজ লণ্ঠন বাহিনী। এদের মধ্যে লাল লণ্ঠনের সদস্যসংখ্যা ছিল সব থেকে বেশি।
বক্সার বিদ্রোহের প্রকৃতি প্রসঙ্গে খ্রিস্টধর্ম ও বিদেশিদের বিরোধিতা
- (১) খ্রিস্টধর্মের বিরোধিতা এবং বিদেশি-বিরোধিতা ছিল বক্সার বিদ্রোহের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। প্রথমদিকে অবশ্য এই বিদ্রোহ ছিল একই সাথে চিং রাজবংশ-বিরোধী এবং বিদেশি-বিরোধী। তখন বিদ্রোহীদের স্লোগান ছিল, “চিং বংশকে উৎপাটিত কর এবং বিদেশিদের খতম কর’।
- (২) কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই যখন চিনের রাজসভা, বিশেষত বিধবা রানি বিদ্রোহীদের মদত দেন তখন থেকেই বক্সার বিদ্রোহীরা চিং রাজবংশের সমর্থক হয়ে ওঠেন। তখন তাঁরা স্লোগান দিয়েছিলেন, ‘চিং বংশকে সমর্থন কর এবং বিদেশিদের ধ্বংস কর’।
- (৩) প্রথম থেকেই বিদেশি-বিরোধিতা প্রসঙ্গে বক্সারদের একটি সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি ছিল এবং যতদিন বিদ্রোহ চলেছিল ততদিন পর্যন্ত তাঁদের এই দৃষ্টিভঙ্গি অপরিবর্তিত ছিল। বিদ্রোহ আরম্ভ হবার সাথে সাথে বিদ্রোহীরা টেলিগ্রাফ এবং রেললাইন ধ্বংস করেন এবং বহুসংখ্যক খ্রিস্টান গির্জায় এবং ইউরোপীয়দের বাসস্থানে অগ্নিসংযোগ করেন। তাছাড়া, বিদ্রোহীরা মিশনারি এবং ধর্মান্তরিতদের নির্বিচারে হত্যা করেছিলেন।
- (৪) বক্সারদের খ্রিস্টধর্মের বিরোধিতা প্রসঙ্গে জি. এন. স্টাইগার বলেছেন, বক্সাররা প্রকৃতপক্ষে খ্রিস্টান-বিরোধী ছিল না, কারণ ধর্মীয় গোঁড়ামি ছিল চিনের ঐতিহ্য বিরোধী। প্রকৃতপক্ষে বিদ্রোহীদের ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ খ্রিস্টান বিরোধিতায় রূপান্তরিত হয়েছিল। এই বক্তব্য আংশিক সত্য হলেও পুরোপুরি সত্য নয়।
- (৫) কারণ, প্রথমত, কনফুসীয় মতবাদ, তাওবাদ এবং বৌদ্ধধর্মের প্রশ্রয়ে লালিত রক্ষণশীল চিনা বুদ্ধিজীবীরা প্রচার করেছিলেন খ্রিস্টধর্মের অশুভ প্রভাব চিনের বর্তমান সংকটের জন্য দায়ী। তাই বিদ্রোহীদের পক্ষে খ্রিস্টধর্ম-বিরোধী হওয়া অস্বাভাবিক ছিল না।
- (৬) দ্বিতীয়ত, খ্রিস্টান মিশনারিরা চিনাদের সাথে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করতেন এবং তাদের ধর্মান্তরিত করার জন্য যে-কোনো স্তরের নীচু কাজ করতে কুণ্ঠিত হতেন না। তাঁদের অসততা ও দুর্ব্যবহার চিনাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছিল। সুতরাং পরিস্থিতি চিনাদের খ্রিস্টান-বিরোধী করে তুলতে সাহায্য করেছিল এবং এই বিরোধিতার সাথে চিনাদের ধর্মীয় গোঁড়ামির কোনো সম্পর্ক নেই।
- (৭) তবে, বিদ্রোহীদের একটি পর্যায়ে খ্রিস্টান-বিরোধিতা এবং বিদেশি বিরোধিতা একাকার হয়ে গিয়েছিল। ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের প্রথম পাঁচ মাসে চিহলি অঞ্চলে বক্সার বিদ্রোহীরা বহু মিশনারি প্রতিষ্ঠান অগ্নিদগ্ধ করেছিলেন এবং অসংখ্য চিনা খ্রিস্টানকে হত্যা করেছিলেন।
চীনে বক্সার বিদ্রোহের প্রকৃতি প্রসঙ্গে সামাজিক কর্মসূচি
- (১) প্রকৃতপক্ষে বক্সার বিদ্রোহীদের কোনো উন্নতমানের সামাজিক কর্মসূচি ছিল না। তাছাড়া, একটি বিদ্রোহকে সফল করার জন্য যে সাংগঠনিক দক্ষতার প্রয়োজন সে ধরনের কোনো দক্ষ সংগঠনও বক্সারদের ছিল না। সেই দিক থেকে তাইপিং বিদ্রোহীদের থেকে তাঁরা অনেকটাই পিছিয়ে ছিলেন।
- (২) তাই একদল ইউরোপীয় ঐতিহাসিক বক্সার বিদ্রোহকে “উন্মত্ত গোঁড়ামির” দ্বারা পরিচালিত একটি “প্রতিক্রিয়াশীল” অভ্যুত্থান হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু ঐতিহাসিক ইস্রায়েল এপস্টেইন এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলেছেন, এই অভ্যুত্থানকে “প্রতিক্রিয়াশীল” হিসাবে আখ্যায়িত করা অমার্জিত সাম্রাজ্যবাদী কুৎসা ছাড়া কিছুই নয়।
- (৩) তাঁর মতে চিনের সাধারণ মানুষ একদল সংস্কৃতিবোধ সম্পন্ন দস্যু, যারা তাদের দেশকে ভাগ করে গ্রাস করতে চেয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন বক্সার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের ঐতিহাসিকরাও বক্সার বিদ্রোহকে দেশপ্রেমিক চিনাদের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রাম হিসাবে চিহ্নিত করেছেন।
বক্সার বিদ্রোহের প্রকৃতি প্রসঙ্গে লেনিনের ভূমিকা
রুশ বিপ্লব-এর রূপকার লেনিন ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে বক্সারদের কার্যকলাপের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন। তাছাড়া, বক্সার বিদ্রোহীরা সমসাময়িক বিশ্বের বহু উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন মানুষের সহানুভূতি লাভ করেছিলেন। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, প্রখ্যাত আমেরিকান ঔপন্যাসিক মার্ক টোয়েন “সভ্যতার তথাকথিত রক্ষক” সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির বিরুদ্ধে বক্সারদের সংগ্রামকে উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়েছিলেন।
চীনে বক্সার বিদ্রোহের প্রকৃতি প্রসঙ্গে মতাদর্শ
- (১) এই বক্সার বিদ্রোহীদের মতাদর্শগত কিছু ত্রুটি ছিল। তাঁরা ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। তাছাড়া, তাঁরা মতাদর্শ দিয়ে জনগণকে প্রভাবিত করার পরিবর্তে মুষ্টিযুদ্ধ অনুশীলনের মাধ্যমে জনসাধারণকে আকৃষ্ট করার পক্ষপাতী ছিলেন।
- (২) তাঁরা বিশ্বাস করতেন যে, নানা ধরনের জাদুবিদ্যার অনুশীলন এবং রক্ষাকবচ তাঁদের অপরাজেয় করে তুলেছে। যদিও তদানীন্তন চিনের কৃষির সংকট বক্সার বিদ্রোহকে ত্বরান্বিত করেছিল এবং বিদ্রোহীদের অধিকাংশই এসেছিলেন কৃষক পরিবার থেকে, তা সত্ত্বেও, বক্সাররা ভূমি সংস্কারের বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করেন নি।
- (৩) এই যুগের বিখ্যাত ঐতিহাসিক এরিক হবসবম তাঁর Primitive Rebels নামক গ্রন্থে বলেছেন, বক্সার বিদ্রোহ ছিল সামাজিক আন্দোলন ও প্রতিবাদের আদিম অভিব্যক্তি, যেখানে রবিন হুড সুলভ ডাকাতি, গ্রাম্য গুপ্ত সংস্থার প্রতিবাদী সংগ্রাম এবং প্রাক্-সর্বহারা শহুরে জনতার দাঙ্গার এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ ঘটেছিল।
বক্সার বিদ্রোহের প্রকৃতি প্রসঙ্গে ভূস্বামী ও রাজপুরুষের ভূমিকা
চিনের ভূস্বামী শ্রেণী এবং একদল রাজপুরুষ বক্সার বিদ্রোহকে সমর্থন করেছিলেন, কারণ, তাঁদের রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি ছিল পাশ্চাত্যের প্রগতিশীল ভাবধারার পরিপন্থী। আবার বহু চিং রাজপুরুষ বক্সারদের কুসংস্কারাচ্ছন্ন গোঁড়ামিকে ঘৃণা করলেও বক্সারদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও দেশপ্রেমিক চেতনার প্রতি তাঁদের সহানুভূতি ছিল।
উপসংহার :- চিনের কমিউনিস্ট পার্টি বহু বছর পর বক্সার বিদ্রোহের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে বলেছিল, বক্সার বিদ্রোহ ছিল একটি স্বতঃস্ফূর্ত কৃষক বিদ্রোহ। কিন্তু বিদ্রোহীদের অন্ধ বিদেশি-বিরোধিতার জন্য এই বিদ্রোহ সামন্ততন্ত্র-বিরোধী সংগ্রামের রূপ নিতে পারে নি। তবে, সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী লড়াই গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাঁরা গৌরবময় ভূমিকা পালন করেছিলেন।
(FAQ) বক্সার বিদ্রোহের প্রকৃতি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
চিনের কমিউনিস্ট পার্টি।
এরিক হবসবম।
জাঁ শ্যেনো।
১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েরা।
অন্যান্য ঐতিহাসিক ঘটনাগুলি
- কেন্দ্রীয় চোল শাসন
- সাম্রাজ্য ও রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য
- অর্থনীতিতে দাসপ্রথার গুরুত্ব
- রোমের দাসদের মুক্তির উপায়
- রোমান সাম্রাজ্য ও উপমহাদেশীয় সাম্রাজ্যগুলির মধ্যে যোগাযোগের প্রভাব
- জাস্টিনিয়ান পরবর্তী রাজবংশ
- রোমান সমাজে নারীর অবস্থান
- বাইজানটাইন সভ্যতা-সংস্কৃতির নানা দিক
- রোমান সাম্রাজ্য ও ভারতীয় উপমহাদেশ