পল্লব রাজা প্রথম মহেন্দ্রবর্মন প্রসঙ্গে সমসাময়িক রাজা, চির বৈরী সম্পর্ক, চালুক্য পল্লব দ্বন্দ্ব, বিচিত্র গুণাবলী, সঙ্গিতজ্ঞ, ধর্মানুরাগ ও তার শিল্পানুরাগ সম্পর্কে জানবো।
রাজা প্রথম মহেন্দ্র বর্মন
ঐতিহাসিক চরিত্র | প্রথম মহেন্দ্র বর্মন |
রাজত্ব | ৬০০-৬৩০ খ্রি: |
বংশ | পল্লব বংশ |
রাজধানী | কাঞ্চী |
পূর্বসূরি | সিংহবিষ্ণু |
উত্তরসূরি | প্রথম নরসিংহ বর্মন |
ভূমিকা :- পল্লব রাজা সিংহবিষ্ণুর পর প্রথম মহেন্দ্রবর্মন সিংহাসনে বসেন। মহেন্দ্র বর্মনের রাজ্য উত্তরে কৃষ্ণা থেকে দক্ষিণে কাবেরী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। গুন্টুরের কোপিতেশ্বর মন্দিরের লিপি থেকে তার রাজ্যসীমার কথা জানা যায়।
সমসাময়িক রাজা
মহেন্দ্রবর্মনের সমসাময়িক ছিলেন উত্তর ভারতে হর্ষবর্ধন এবং দাক্ষিণাত্যে চালুক্য দ্বিতীয় পুলকেশী। হর্ষবর্ধন -এর সঙ্গে মহেন্দ্রবর্মনের কোনো রাজনৈতিক মৈত্রী বা সংঘাত কিছুই হয়নি। দূরত্ব হেতু উভয় রাজার যোগ ছিল না।
চির বৈরী সম্পর্ক
মহেন্দ্রবর্মনের চির-বৈরী ছিলেন চালুক্য দ্বিতীয় পুলকেশী। তার আমলেই চালুক্য-পল্লব প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরম্ভ হয়, যা প্রায় এক শতক দাক্ষিণাত্যের ইতিহাসকে প্রভাবিত করে।
চালুক্য পল্লব দ্বন্দ্ব তীব্র
মহেন্দ্ৰবৰ্মন বেঙ্গীর প্রথন মহেন্দ্রবর্মন পূর্ব চালুক্যদের পল্লব আধিপত্যে আনার চেষ্টা করলে, দ্বিতীয় পুলকেশী তাতে বাধা দেন। পল্লব মহেন্দ্র চালুক্যদের পূর্বতন অধিরাজ, অধুনা শত্রু কদম্ব বংশের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করায় চালুক্য-পল্লব দ্বন্দ্ব তীব্র হয়।
ভৌগোলিক রাজনীতির প্রভাব
- (১) দাক্ষিণাত্যের পশ্চিম ভাগে বাতাপির চালুক্য রাজ্য অবস্থিত ছিল। এই অঞ্চলের নদীগুলি পূর্বদিকে ঢালু জমিতে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছিল। এই নদীগুলির মধ্যে গোদাবরী ও কৃষ্ণা বেঙ্গীর ব-দ্বীপের দুদিক দিয়ে সমুদ্রে মিলিত হয়। বাতাপির চালুক্য শক্তি এই জলপথ ও নদীগুলিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইত। এই উদ্দেশ্যে তারা বেঙ্গীতে পূর্ব চালুক্য বংশের শাসন স্থাপন করে।
- (২) পল্লব শক্তি তুঙ্গভদ্রার দক্ষিণের উপকূল অঞ্চল থেকে এসে এই নদী মোহনা অঞ্চলে আধিপত্য স্থাপনের চেষ্টা করায় পল্লব-চালুক্য বিবাদ তীব্রতর হয়। এই অঞ্চলের অধিকার নিয়ে এই দুই অঞ্চলের বিভিন্ন রাজবংশের বহু বছর ধরে সংঘাত চলে। এটি ছিল ভৌগোলিক রাজনীতির (Geo-political) প্রভাব।
পালাল্লুরের যুদ্ধ
চালুক্য দ্বিতীয় পুলকেশী তুঙ্গভদ্রা পার হয়ে পল্লব রাজধানী কাঞ্চী আক্রমণ করলে পালাল্লুরের যুদ্ধে মহেন্দ্রবর্মন তাকে বাধা দেন এবং রাজধানী কাঞ্চী রক্ষা করতে সক্ষম হন। আইহোল শিলালিপিতে এই যুদ্ধে দ্বিতীয় পুলকেশীর জয়ের কথা বলা হলেও, কাসাক্কুদি লিপিতে পল্লব পক্ষ থেকে জয়লাভের দাবী করা হয়। তবে মহেন্দ্রবর্মন বেঙ্গীর ওপর অধিকার হারান।
মহালিঙ্গমের অভিমত
ডঃ মহালিঙ্গম মনে করেন যে, পালাল্লুরের যুদ্ধে মহেন্দ্র বর্মন দ্বিতীয় পুলকেশীর হাতে পরাস্ত হন এমন কথা নিশ্চিত বলা যায় না। হয়ত পরবর্তী পল্লব রাজা প্রথম নরসিংহবর্মন-ই তাঁর হাতে পরাস্ত হন। কারণ আইহোল লিপিতে মহেন্দ্রবর্মনের নাম নেই।
বিচিত্র গুণাবলী
মহেন্দ্রবর্মন ছিলেন বিবিধ গুণের অধিকারী। এজন্য তাকে “বিচিত্রচিত্ত” বলা হয়। তিনি ত্রিচিনোপল্লী, চিঙ্গলপেট ও আর্কট জেলায় পাহাড় খোদাই করে বহু মন্দির তৈরি করেন। তাঁর রচিত ব্যঙ্গ নাটক “মত্ত বিলাস প্রহসন” তার সংস্কৃত ভাষায় দক্ষতার পরিচয় দেয়। সমকালীন কাপালিক, পাশুপত প্রভৃতি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের দ্বন্দ্বের কথা এই নাটক থেকে জানা যায়।
সঙ্গীতজ্ঞ
মহেন্দ্রবর্মন ছিলেন বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ। সঙ্গীত শাস্ত্রের ওপর তিনি গ্রন্থ রচনা করেন। পদুকোট্টাই রাজ্যের সঙ্গীত সম্পর্কীয় শিলালিপি তারই নির্দেশে খোদাই করা হয়। তিনি চিত্রকলারও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।
ধর্মানুরাগ
প্রথম জীবনে তিনি জৈন ধর্ম -এর অনুরাগী ছিলেন। পরে তিনি শিবের উপাসকে পরিণত হন এবং শিবলিঙ্গ পুজার প্রতি অনুরাগ দেখান।
শিল্পানুরাগ
তাঁর আমলে যে ভাস্কর্য নিদর্শন পাওয়া যায় তার মধ্যে ত্রিচিনোপল্লী গুহায় গঙ্গাবতরণের ভাস্কর্য চিত্র বিখ্যাত। বহু মন্দির নির্মাণের জন্যে তিনি “চৈতা-কারী” বলে প্রসিদ্ধ ছিলেন।
উপসংহার :- পল্লব বংশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজা হিসেবে তাঁকে গণ্য করা হয়। তিনি “পল্লবমল্ল” নামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি “গুণভার” উপাধি গ্ৰহণ করেন।
(FAQ) পল্লব রাজা প্রথম মহেন্দ্রবর্মন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
প্রথম মহেন্দ্র বর্মন।
প্রথম মহেন্দ্র বর্মন।
প্রথম মহেন্দ্র বর্মন।
প্রথম মহেন্দ্র বর্মন।