মহাঅষ্টমী (Maha Astami)

দুর্গাপূজার মহাঅষ্টমী (Maha Astami) প্রসঙ্গে মহাঅষ্টমীতে অঞ্জলি দান, মহাঅষ্টমী পালনের নিয়ম, মহাঅষ্টমীতে কুমারী পূজা, মহাঅষ্টমীতে কুমারী পূজার অন্তর্নিহিত শিক্ষা, মহাঅষ্টমীতে প্রজাপতি ব্রহ্মার কুমারী পূজা, মহাঅষ্টমীতে কুমারী পূজা সম্পর্কে রামকৃষ্ণের মন্তব্য, মহাঅষ্টমীতে কুমারী পূজা প্রথার প্রচলন, মহাঅষ্টমী ও নবমীর সন্ধিস্থলে সন্ধিপূজা, মহাঅষ্টমীতে সন্ধিপূজা সম্পর্কে পৌরাণিক কাহিনী, মহাঅষ্টমী ও নবমীর সন্ধিস্থলে সন্ধিপূজার নৈবেদ্য, মহাঅষ্টমী ও নবমীর সন্ধিস্থলে সন্ধিপূজার বিভিন্ন আচার-নিয়ম, মহাঅষ্টমীতে অস্ত্রপূজা, দুর্গাপূজা উদযাপনে মহাঅষ্টমী, মহাঅষ্টমীতে অষ্ট শক্তির পূজা, মহাঅষ্টমীর ঐতিহ্য ও দুর্গাপূজার মহাঅষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র।

মহাঅষ্টমী

উৎসবমহাঅষ্টমী
ধরণধর্মীয় উৎসব
পালনকারীহিন্দু সম্প্রদায়
সময়কালআশ্বিন মাস
তিথিশুক্ল অষ্টমী তিথি
সম্পর্কিতমহালয়া, দুর্গাপূজা, অকালবোধন
মহাঅষ্টমী

ভূমিকা:- প্রকৃত অর্থে দুর্গাপূজা শুরু হয় ষষ্ঠীর দিন।  দুর্গাপুজোর পাঁচ দিন দুর্গাষষ্ঠী বা মহাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী, মহানবমী এবং বিজয়া দশমী হিসেবে পরিচিত। তবে মহাষ্টমীর অঞ্জলি ও সন্ধিপূজা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মহাঅষ্টমীতে অঞ্জলি দান

বাঙালি এই দিন ঠাকুরের সামনে নতুন জামা-কাপড় পরে অষ্টমীর অঞ্জলি দেবেই। মন্ত্রপাঠ করে সকলেই দেবী দুর্গার চরণে ফুল, বেলপাতার অঞ্জলি দান করেন।

হিন্দু তিথি মহাঅষ্টমী পালনের নিয়ম

  • (১) এই দিন যে ভক্তেরা মায়ের অঞ্জলি দেবেন, তাঁরা অবশ্যই নিরামিষ আহার গ্রহণ করবেন।
  • (২) এই দিন অঞ্জলি দেওয়ার সময় পদ্মফুল এবং যে কোনও হলুদ রঙের ফুল মায়ের চরণে অর্পণ করতে হবে।
  • (৩) অষ্টমীর দিন ছোট বাচ্চা মেয়েকে কিছু উপহার দেওয়া খুব ভাল বলে মানা হয়। এমনকি যে কোনও মানুষকে এই দিন উপহার দেওয়া খুব ভাল।
  • (৪) মায়ের চরণে অষ্টমীর দিন ১০৮টা পদ্মফুল অর্পণ করুন, তার পর অষ্টমী পুজো সমাপ্ত হলে একটা পদ্মফুল মায়ের চরণ থেকে তুলে এনে ঘরে টাকা রাখার জায়গায় রেখে দিন।
  • (৫) অষ্টমী পুজোর সময় মা দুর্গার চরণে পাঁচটা বা সাতটা কড়ি অর্পণ করুন। অষ্টমী পুজো শেষ হলে কড়িগুলো এনে ঘরের যে কোনও শুদ্ধ জায়গায় রেখে দিলে অর্থ কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • (৬) অষ্টমী পুজোর দিন ১০৮ বার দুর্গা মন্ত্র (মা দুর্গার অষ্টোত্তর শতনাম) জপ করলে খুব শুভ ফল পাওয়া যায়।
  • (৭) সন্ধিপুজোর সময় মায়ের প্রতিমার দিকে তাকিয়ে মনের কামনা জানালে, মনের কামনা পূর্ণ হয়।

দুর্গা মহাঅষ্টমীতে কুমারী পূজা

  • (১) হিন্দুদের শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজার সময় মহাস্নান শেষে অষ্টমী পূজা করা হয়। মহাষ্টমীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ হল ‘কুমারী পূজা’। যেখানে একজন কুমারীকে দেবী দুর্গারূপে আরাধনা করা হয়। যেসব বালিকারা বয়:সন্ধিতে পৌঁছায়নি এই দিন সকালে তাদের দেবীরূপে পুজো করা হয়।
  • (২) ১৬টি উপকরণ দিয়ে পূজার সূত্রপাত হয়। শুরুতেই গঙ্গাজল ছিটিয়ে কুমারী মা-কে শুদ্ধ করে তাঁর চরণযুগল ধুয়ে তাঁকে বিশেষ অর্ঘ্য প্রদান করা হয়। অর্ঘ্যের শঙ্খপাত্রকে সাজানো হয় গঙ্গাজল, বেল পাতা, আতপ চাল, চন্দন, পুষ্প ও দূর্বাঘাস দিয়ে। দেবীর গলায় পরানো হয় পুষ্পমাল্য। এরপর অগ্নি, জল, বস্ত্র, পুষ্প ও বাতাসা এই পাঁচ উপকরণ দেওয়া হয় ‘কুমারী’ পূজাতে।
  • (৩) বয়স অনুযায়ী এদের নাম হয়ে থাকে সন্ধ্যা, সরস্বতী, ত্রিধামূর্তি, কালিকা, সুভগা, উমা, মালিনী, কুব্জিকা, অপরাজিতা, কালসন্দর্ভা, রুদ্রানি, ভৈরবী, মহালক্ষ্মী, পীঠনায়িকা, ক্ষেত্রঞ্জা ও অম্বিকা। এই ১৬টি নামে বয়স অনুযায়ী কুমারীরা পূজিত হয়।

মহাঅষ্টমীতে কুমারী পূজার অন্তর্নিহিত শিক্ষা

  • (১) আসলে দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে মহামায়ার ষষ্টক অর্থাৎ ৬ বছরের কুমারী রূপ ‘উমা’র পূজা করা হয়। তবে এই দিন মন্দিরে ১ থেকে ১৬ বছরের যেকোনো হিন্দু কুমারী কন্যাকে মাতৃভাবে জীবন্ত প্রতিমা কল্পনা করে পূজা করা হয়।
  • (২) ভক্তদের মতে, এর মধ্য দিয়ে একাধারে ঈশ্বরের উপাসনা, মানববন্দনা আর নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা হয়। মূলত নারীর প্রতি সম্মান, মানুষের প্রতি সম্মান আর ঈশ্বর আরাধনাই কুমারী পূজার অন্তর্নিহিত শিক্ষা।

দুর্গা মহাঅষ্টমীতে প্রজাপতি ব্রহ্মার কুমারী পূজা

  • (১) বৃহদ্ধর্মপুরাণে রামের জন্য ব্রহ্মার দুর্গাপুজোর বিস্তারিত বিবরণ আছে। পুরাণ অনুযায়ী, সেই সময় ছিল শরৎকাল, দক্ষিণায়ন দেবতাদের নিদ্রার সময়। তাই, ব্রহ্মা স্তব করে দেবীকে জাগরিত করেন। দেবী তখন কুমারীর বেশে এসে ব্রহ্মাকে বলেন, বেল গাছের তলায় দুর্গার বোধন করতে।
  • (২) দেবতারা মর্ত্যে এসে দেখলেন, এক দুর্গম স্থানে একটি বেলগাছের শাখায় সবুজ পাতার মধ্যে ঘুমিয়ে রয়েছে একটি তপ্তকাঞ্চন বর্ণা বালিকা। ব্রহ্মা বুঝলেন, এই বালিকাই জগজ্জননী দুর্গা। এরপরেই বোধন-স্তবে তাঁকে জাগরিত করেন ব্রহ্মা।
  • (৩) দেবী জাগরিত হয়ে বালিকামূর্তি ত্যাগ করে চন্ডিকামূর্তি ধারন করেন। কারও কারও মতে আবার প্রাচীনকালে মুনিঋষিরা কুমারীপুজোর মাধ্যমে প্রকৃতিকে পুজো করতেন। প্রকৃতি মানে নারী। সেই প্রকৃতিরই আর এক রূপ কুমারীদের মধ্যে দেখতে পেতেন তাঁরা।

মহাঅষ্টমীতে কুমারী পূজা সম্পর্কে রামকৃষ্ণের মন্তব্য

এই কুমারী পূজা প্রসঙ্গে শ্রী শ্রী ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলেছেন, সমস্ত স্ত্রীলোকই ভগবতীর এক একটি রূপ। আর শুদ্ধাত্মা কুমারীতে সেই ভগবতীর প্রকাশ বেশি।

দুর্গা মহাঅষ্টমীতে কুমারী পূজার প্রথম প্রচলন

১৯০১ সালে ভারতীয় দার্শনিক ও ধর্ম প্রচারক স্বামী বিবেকানন্দ সর্বপ্রথম কলকাতার বেলুড় মঠ -এ নয়জন কুমারী দিয়ে এই পূজার মাধ্যমে কুমারী পূজার পুনঃপ্রচলন করেন। তখন থেকে প্রতি বছর দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে এই পূজা হয়ে আসছে। পূজার আগে পর্যন্ত কুমারীর পরিচয় গোপন রাখা হয়।

মহাঅষ্টমী ও নবমীর সন্ধিস্থলে সন্ধিপূজা

  • (১) অষ্টমী ও নবমী তিথির সন্ধিস্থলে করা হয় সন্ধিপূজা। মহাষ্টমীর সন্ধ্যায় ১০৮টি প্রদীপ জ্বালিয়ে সন্ধি পূজা করা হয়। কথিত আছে, মহিষাসুর বধের জন্য সন্ধির এই ক্ষণেই দেবী দুর্গা চামুণ্ডা বা কালীমূর্তির রূপ ধারণ করেছিলেন। সন্ধি কথার অর্থ হল ‘মিলন’।
  • (২) অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট ও নবমী তিথির শুরুর ২৪ মিনিট, মোট ৪৮ মিনিটের মধ্যে শেষ করতে হয় সন্ধিপুজো। এই দুই তিথির মহামিলনের সময়কে ‘মহাসন্ধিক্ষণ’ বলা হয়। এই পুজো করার অর্থ হল রাগ, অভিমান সব ভুলে একসঙ্গে থাকা।
  • (৩) মা দুর্গার আরেক রূপ হল মহিষাসুরমর্দিনী। মহিষাসুরমর্দিনী অর্থাৎ তিনি এই অসুরের নিধন করেছিলেন। কিন্তু দুর্গা পুজোর পিছনে আরো অসুরবধের কাহিনী আছে, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে সন্ধিপূজা।
  • (৪) অষ্টমী শেষ হয়ে যখন নবমী তিথি শুরু হয়ে তখন সন্ধিপূজার মাধ্যমে মায়ের আরাধনা করা হয়। এই সন্ধিপূজা হল সেই সন্ধ্যার প্রতীক যখন মা দুর্গা চন্ড ও মুন্ড নামে দুই ভয়ঙ্কর অসুরকে বধ করেছিলেন।

দুর্গা মহাঅষ্টমীতে সন্ধিপূজা সম্পর্কে পৌরাণিক কাহিনী

  • (১) অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণের পিছনে একটি পৌরাণিক কাহিনী আছে। দেবী দুর্গা এক অপরূপা সুন্দরী রূপে দুর্দমনীয় মহিষাসুরের সামনে আবির্ভূতা হন। ঠিক এই সময়েই দেবী দুর্গা চন্ড ও মুন্ড নামে দুই ভয়ঙ্কর অসুরের নিধন করেছিলেন। এই ঘটনাটি মনে রাখার জন্যই প্রতি বছর অষ্টমী এবং নবমীর সন্ধিক্ষণে এই সন্ধিপূজা করা হয়।
  • (২) চান্দ্রমাস ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এই সময়টি প্রতিবছরই পরিবর্তিত হতে থাকে। কোনো বছর এই সন্ধিক্ষণ রাত ৮টাতেও হতে পারে আবার কোনো বছর ভোররাতেও হতে পারে। সেই সময় দেবীর গাত্রবর্ণ বা গায়ের রঙ ছিল স্বর্ণাভ বা সোনালী এবং তিনি হলুদ শাড়ি পরে অবতীর্ণ হন। তাঁর দশ হাত সজ্জিত ছিল দশ ধরণের অস্ত্রে।
  • (৩) যখন মহিষাসুরের সঙ্গে ভয়ানক যুদ্ধে তিনি ব্যস্ত, সেই সময় মহিষাসুরের দুই বন্ধু চন্ড এবং মুন্ড পিছন থেকে দেবীকে আক্রমণ করে। রণনীতির চুক্তি ভঙ্গ হওয়ায় দেবী অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হন এবং রাগে তাঁর মুখ নীল হয়ে যায়। দেবী তাঁর ত্রিনয়ন উন্মীলিত করেন এবং চামুন্ডা রূপ ধারণ করেন।
  • (৪) ঘনীভূত রক্তে কালীরই অন্য রূপ হল চামুন্ডা রূপ। চামুন্ডা রূপে দেবী দুর্গা চন্ড এবং মুন্ডের মাথা কেটে নেন তাঁর হাতের খড়গ দিয়ে। দেবীর এই চামুন্ডারূপেরই আরাধনা করা হয় সন্ধিপূজার মাধ্যমে।

মহাঅষ্টমী ও নবমীর সন্ধিস্থলে সন্ধিপূজার নৈবেদ্য

এই সন্ধিপূজার আয়োজনও সাড়ম্বরে করা হয়। সন্ধিপূজায় দেওয়া হয় ১০৮টি পদ্ম এবং জ্বালানো হয় ১০৮টি মাটির প্রদীপ। নৈবেদ্য দেওয়া হয় গোটা ফল (লাল রঙের ফল থাকা বাঞ্ছনীয়), জবা ফুল, শাড়ি, সাদা চাল, গহনা এবং বেলপাতা। প্রতিটি পারিবারিক পুজোয় এবং বারোয়ারি পুজোয় যে যার নিজের মত করে সাজিয়ে দেন এই নৈবেদ্যগুলি। অবশ্য ১০৮টি পদ্ম এবং ১০৮টি প্রদীপ জ্বালিয়ে সাজিয়ে দেওয়ার নিয়মটি কিন্তু চিরাচরিত, এর কোনো অন্যথা হয় না।

দুর্গা মহাঅষ্টমী ও নবমীর সন্ধিস্থলে সন্ধিপূজার বিভিন্ন আচার-নিয়ম

  • (১) সন্ধিপূজার সঙ্গে নানারকম আচার এবং প্রথা জড়িয়ে আছে। রাজপরিবার ও জমিদার পরিবারের দুর্গা পুজোয় সন্ধিপূজার সময়ে কামান দেগে তোপধ্বনি করা হত। অনেক জায়গায় সন্ধিপূজার সময় ঢাক বাজানো হত।
  • (২) আজকের দিনেও সন্ধিপূজার সময়ে সবাই একটু ব্যস্ত হয়ে ওঠেন, কারণ এই পুজোই মায়ের প্রধান পুজো। তাই কেউই এই পুজোর আয়োজনে কোনো ফাঁক রাখতে চান না। দুর্গোৎসব হল ব্রহ্মান্ডব্যাপী মাতৃশক্তির আরাধনা, যা অশুভশক্তির বিনাশ করে।

মহাঅষ্টমীতে অস্ত্র পূজা

এই দিনটি ‘অস্ত্র পূজা’ (উপাসনার অস্ত্র) নামেও পরিচিত। কারণ এই দিনে দেবী দুর্গার অস্ত্রের পূজা করা হয়। এই দিনে অস্ত্র বা মার্শাল আর্ট ব্যবহার করতে দেখা যায় বলে দিনটি বীর অষ্টমী নামেও পরিচিত।

দুর্গাপূজা উদযাপনে মহাঅষ্টমী

নবরাত্রি বা দুর্গাপূজা উদযাপনের অষ্টম দিন দুর্গাষ্টমী বা দুর্গা অষ্টমী নামে পরিচিত। এটি মহাষ্টমী নামেও পরিচিত এবং হিন্দুধর্ম অনুসারে এটি অন্যতম শুভ দিন। এটি হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে আশ্বিন মাসের উজ্জ্বল চান্দ্র পাক্ষিক অষ্টমী তিথিতে পড়ে।

মহাঅষ্টমীতে অষ্ট শক্তির পূজা

  • (১) কিছু কিছু অঞ্চলে বিশ্বাস করা হয়, দেবী চামুন্ডা এই দিনে মা দুর্গার কপাল থেকে আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং চন্ড, মুন্ড এবং রক্তবীজকে বিনাশ করেছিলেন। মহাষ্টমীতে দুর্গা পূজার সময় ৬৪ টি যোগিনী এবং অষ্ট শক্তি বা মাতৃকা (দেবী দুর্গার আটটি উগ্র রূপ) পূজা করা হয়। অষ্ট শক্তি, যা আট শক্তি নামেও পরিচিত।
  • (২) আটটি দেবীই শক্তির অবতার। তারা একই শক্তিশালী ঐশ্বরিক মেয়েলি, বিভিন্ন শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে। দুর্গা পূজার সময় যে অষ্ট শক্তির পূজা করা হয় তারা হল ব্রাহ্মণী, মহেশ্বরী, কৌমারী, বৈষ্ণবী, বারাহী, নরসিংহী, ইন্দ্রাণী এবং চামুন্ডা।

হিন্দু তিথি মহাঅষ্টমীর ঐতিহ্য

  • (১) দুর্গা অষ্টমীর সাথে যুক্ত একটি ঐতিহ্য উত্তর ভারত-এ প্রচলিত আছে, তা হল ঘরের কন্যাকে সম্মান জানানো। অল্পবয়সী, অবিবাহিত মেয়েদের (পাঁচ থেকে সাতজনের একটি দল) সম্মান জানাতে বাড়িতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ঐতিহ্যটি এই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে যে প্রত্যেক তরুণীকেই পৃথিবীতে দুর্গার শক্তি (শক্তি) প্রতিনিধিত্ব করে।
  • (২) মেয়েদের পা ধুয়ে স্বাগত জানানো হয়, তাদের বাড়িতে স্বাগত জানানো হয় এবং তারপরে আলতা এবং পূজা হিসাবে আচারগুলি সম্পন্ন করা হয়। অনুষ্ঠানের পর মেয়েদের মিষ্টি ও খাবার খাওয়ানো হয় এবং ছোট ছোট উপহার দিয়ে সম্মানিত করা হয়।

বাঙালির দুর্গাপূজার মহাঅষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র

দেবীর সামনে স্নান করে শুদ্ধ আসনে পূর্ব দিকে বা দেবীর সম্মুখে বসতে হয়।

(১) আচমন

বাঁ হাতে জল নিয়ে ডান হাতের সমস্ত আঙ্গুলের অগ্রভাগ বাঁ হাতের জলে ডুবিয়ে নমঃ বিষ্ণুঃ নমঃ বিষ্ণু নমঃ বিষ্ণু বলে মুখে তিন বার ছিটাতে হয়।

(২) বিষ্ণুস্মরণ

হাত জোড় করে বলতে হয়-

নমঃ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতো হপি বা।

যঃ স্মরেত্ পুন্ডরীকাক্ষং সবাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ।।

নমঃ সর্বমঙ্গলমঙ্গল্যং বরেণ্যং বরদং শুভম্ ।

নারায়ণং নমস্কৃত্য সর্বকর্ম্মাণি কারয়েৎ ।।

(৩) আসন শুদ্ধি

আসনের সামনে ডান হাতের মধ্যমার সাহায্যে জল দিয়ে একটি ত্রিকোণ আঁকতে হয়। তার উপর একটি ফুলদিয়ে বলতে হয় ” নমঃ আধারশক্তয়ে কমলাসনায় নমঃ”। তারপর জোড়হাত করে বলতে হয়

“নমঃ পৃথ্বি ত্বয়া ধৃতা লোকা দেবী ত্বং বিষ্ণুণা ধৃতা

ত্বঞ্চ ধালয় মাং নিত্যং পবিত্রং কুরু চাসনম্

সম্মুখে পূজিতদেবতা শ্রী দুর্গায়ৈ নমঃ”

(৪) নারায়ণাদির অর্চনা

এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ নারায়ণায় নমঃ ,

এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ শ্রীগুরবে নমঃ ,

এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ গণেশায় নমঃ ,

এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ দুর্গায়ৈ নমঃ ,

এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ শিবায় নমঃ ,

এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ লক্ষ্মীদেবৈ নমঃ ,

এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ সরস্বতৈ নমঃ ,

এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ কার্ত্তিকায় নমঃ ,

এতে গন্ধপুষ্পে নমঃসর্বদেবদবীভ্যোনম

(৫) গুরু পূজা

এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ শ্রী গুরবে নমঃ।

অথবা, পঞ্চপোচারে গন্ধ, পুষ্প, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য সহকারে পূজা করা যেতে পারে।

(৬) জপ

২৮ বার নিজ নিজ গুরু মন্ত্র জপ করতে হবে।

(৭) জপ সর্মপন

হাতে এক গন্ডুষ জল নিয়ে বলতে হয়-

নমঃ গুহ্যাতিগুহ্যগোপত্রী ত্বং গৃহণাস্মত্ কৃতং জপম্।

সিদ্ধির্ভবতু মে দেবী তত্প্রসাদাত্ সুরেশ্বরী।।

(৮) গুরুপ্রনাম

অখন্ডমন্ডলাকারং ব্যাপ্তংযেন চরাচরম্।

তৎপদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।।

(৯) অষ্টমীর অঞ্জলি মন্ত্র

নমঃ মহিষগ্নি মহামায়ে চামুন্ডে মুন্ডমালিনি।

আয়ুরারোগ্য বিজয়ং দেহি দেবী নমোস্তুতে।।

নমঃ সৃষ্টিস্থিতিবিনাশানাং শক্তিভূতে সনাতনি।

গুণাশ্রয়ে গুণময়ে নারায়ণি নমোস্তু তে।।

নমঃ শরণাগতদীর্নাত পরিত্রাণপরায়ণে।

সর্বস্যাতিহরে দেবী নারায়ণি নমোস্তু তে।।

এষ সচন্দন-পুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলিঃ নমঃ দক্ষযঞ্জ বিনাশিন্যে মহাঘোরায়ৈ যোগিনী কোটিপরিবৃতায়ৈ ভদ্রকাল্যৈ ভগবত্যৈ দুর্গায়ৈ নমঃ

(১০) প্রণাম মন্ত্র

জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কাপালিনী। 

দুর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোহস্তুতে।।

উপসংহার:- বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয়া দুর্গোৎসবের মহাঅষ্টমী দুর্গাপূজার সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ দিন। এই দিন উৎসবের আমেজে নতুন কাপড় পরে বাহারি সাজে মন্দিরে মন্দিরে দেবীকে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার ভিড় লক্ষ্য করা যায়।

(FAQ) মহাঅষ্টমী (Maha Astami) সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. দুর্গাপূজার সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ দিন কবে?

মহাঅষ্টমীর দিন।

২. দুর্গাপূজার সময় কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয় কবে?

অষ্টমীর দিন।

৩. কোন সময় সন্ধিপূজা অনুষ্ঠিত হয়?

মহাঅষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে।

৪. অষ্টমীর দিন কুমারী পূজার প্রথম প্রচলন কে কখন করেছিলেন?

স্বামী বিবেকানন্দ ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে।

৫. কুমারী পূজার প্রথম প্রচলন হয় কোথায়?

বেলুড় মঠে।

Leave a Comment