অব উপনিবেশিকরণের কারণ ও প্রভাব প্রসঙ্গে কারণ হিসেবে বিশ্বযুদ্ধের ফলশ্রুতি, আমেরিকা ও রাশিয়ার চাপ, দ্বন্দ্বের পরিণতি, দারিদ্র মুক্তির আকাঙ্ক্ষা, পাশ্চাত্য ভাবধারার প্রভাব, জনমত গঠন জাতীয়তাবাদীর প্রসার, অব উপনিবেশীকরণের প্রভাব হিসেবে দিগন্তের প্রসার, সংকট ও দুর্বলতা বৃদ্ধি, ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রসার, জাতিপুঞ্জের গুরুত্ব ও আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রসার সম্পর্কে জানবো।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালে অব উপনিবেশিকরণের কারণ ও প্রভাব প্রসঙ্গে বিশ্বযুদ্ধের ফলশ্রুতি অব উপনিবেশিকরণ, আমেরিকা ও রাশিয়ার চাপ, দ্বন্দ্বের পরিণতি অব উপনিবেশিকরণ, অব উপনিবেশীকরণের প্রভাবে দিগন্তের প্রসার অব উপনিবেশীকরণের প্রভাবে আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রসার ও জাতিপুঞ্জের গুরুত্ব সম্পর্কে জানব।
অব উপনিবেশিকরণের কারণ ও প্রভাব
ঐতিহাসিক ঘটনা | অব উপনিবেশীকরণের কারণ ও প্রভাব |
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ | ১৯৩৯-৪৫ খ্রি |
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ | ২৪ অক্টোবর ১৯৪৫ খ্রি |
উপনিবেশের মুক্তি সংগ্রাম | দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর |
আঞ্চলিক সংগঠন | সার্ক, আসিয়ান |
ভূমিকা :- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন উপনিবেশ গুলি পশ্চিমি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অধীনতা থেকে মুক্তি লাভের উদ্দেশ্যে তীব্র সংগ্রাম শুরু করে এবং অধিকাংশ উপনিবেশই স্বাধীনতার লাভে সক্ষম হয়।
অব উপনিবেশীকরণের কারণ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী প্রায় ৩৫ বছরের মধ্যে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ থেকে পশ্চিমি ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটে এবং অধিকাংশ উপনিবেশ সার্বভৌম স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এই ঘটনাকে ‘পরিবর্তনের হাওয়া’ বলে উল্লেখ করেন। এই সময় অব উপনিবেশীকরণ বা উপনিবেশবাদের অবসানের বিভিন্ন কারণ ছিল। এই কারণগুলি হল –
(ক) বিশ্বযুদ্ধের ফলশ্রুতি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে ব্রিটেন ও ফ্রান্স-এর মতো শক্তিশালী ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলির অর্থনীতি খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে। এমনকী তাদের রাজনৈতিক এবং সামাজিক ব্যবস্থাও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে এই ভঙ্গুর ও দুর্বল আর্থিক পরিস্থিতিতে তারা দূরদূরান্তের উপনিবেশগুলিতে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে সক্ষম হচ্ছিল না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এশিয়ার অন্যতম দেশ জাপানের অভাবনীয় সাফল্য প্রমাণ করেছিল যে, পশ্চিমি শক্তির বিরুদ্ধে এশিয়া বা আফ্রিকার দেশগুলির প্রতিরোধ ক্ষমতা কার্যকরী করা সম্ভব। এই পরিস্থিতিতে উপনিবেশগুলি স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে পশ্চিমি ঔপনিবেশিক শক্তিগুলিও উপনিবেশগুলিকে স্বাধীনতা দিতে বাধ্য হয়।
(খ) আমেরিকা ও রাশিয়ার চাপ
আমেরিকা মনে করেছিল যে, ঔপনিবেশিক শাসনমুক্ত হওয়ার পর সদ্য স্বাধীন দেশগুলিতে আমেরিকার বাণিজ্যিক অগ্রগতি সম্ভব হবে। আবার এই সমস্ত দেশগুলিতে রাশিয়া সমাজতন্ত্র প্রসারের সম্ভাবনা দেখেছিল। সেই কারণেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে বিশ্বের দুই বৃহৎ শক্তি আমেরিকা ও রাশিয়া পশ্চিমি দেশগুলিকে তাদের ঔপনিবেশিক দেশ হিসেবে স্বাধীনতা দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে।
(গ) দ্বন্দ্বের পরিণাম
বিভিন্ন ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির নিজেদের মধ্যে তীব্র বিরোধ, প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং লড়াই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পটভূমি প্রস্তুত করেছিল। ইউরোপ-এর বিভিন্ন দেশের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব বা বিরোধ চলছিল, তার জেরে কোনো কোনো ঔপনিবেশিক দেশ তাদের শত্রুদেশের উপনিবেশের বাসিন্দাদের আন্দোলনে সমর্থন ও সহায়তা করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল প্রতিদ্বন্দ্বীকে বিপাকে ফেলা। ফলে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির বিরোধের কারণে অনেক দেশের উপনিবেশ-বিরোধী মুক্তিসংগ্রাম শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং উপনিবেশবাদের অবসান ঘটতে থাকে।
(ঘ) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির বিরুদ্ধে বিভিন্ন রণাঙ্গনে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে ব্রিটেন, ফ্রান্স প্রভৃতি ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি তাদের অধীনস্থ উপনিবেশগুলির জনসাধারণের সাহায্য প্রার্থনা করেছিল। এই সাহায্য লাভের বিনিময়ে তারা উপনিবেশগুলিকে যুদ্ধের পর স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার দানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে উপনিবেশগুলির বাসিন্দারা এই প্রতিশ্রুতি পালনের দাবি জানায়।
(ঙ) দারিদ্র্য মুক্তির আকাঙ্ক্ষা
ঔপনিবেশিক শাসনে জর্জরিত উপনিবেশগুলির বাসিন্দারা সীমাহীন শোষণ, দারিদ্র্য, অনাহার ও অশিক্ষার মধ্যে জীবন অতিবাহিত করতে বাধ্য হত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এবং এর পরবর্তীকালে মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, কালোবাজারি প্রভৃতির ফলে এই দুর্দশা চরমে ওঠে। উপনিবেশের বাসিন্দারা অনুভব করে এই দারিদ্র্য ও দুর্দশা থেকে মুক্তিলাভের একমাত্র উপায় হল ঔপনিবেশিক শক্তির অধীনতা ছিন্ন করে স্বাধীনতা লাভ করা।
(চ) পাশ্চাত্য ভাবধারার প্রভাব
উপনিবেশগুলিতে পাশ্চাত্য দর্শন, জ্ঞানবিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক ভাবধারার প্রসারের ফলে উপনিবেশগুলির বাসিন্দাদের মনে গণতন্ত্র, সাম্য, স্বাধীনতা ও জাতীয়তাবাদী চেতনা বৃদ্ধি পায়। ফলে উপনিবেশগুলিতে পশ্চিমি ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির বিরুদ্ধে বিরোধিতার পরিস্থিতি তৈরি হয়। উপনিবেশের প্রগতিশীল বহু নাগরিক পশ্চিমি দেশগুলি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে স্বদেশে ফিরে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল।
(ছ) জনমত গঠন
পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলিতে উদারনীতিবাদের সমর্থক কোনো কোনো মহান ব্যক্তি উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে প্রচার করেন। তাঁরা ঔপনিবেশিক শাসনের ত্রুটিবিচ্যুতির বিষয় উল্লেখ করে উপনিবেশগুলিকে মুক্তিদানের সপক্ষে জনমত গড়ে তোলেন। বেত্থাম, ডিসরেইলি, বার্ক প্রমুখ মহান ব্যক্তি ব্রিটেন ও ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের দাবি করেন। এর ফলে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে ইউরোপে জনমত গড়ে ওঠে এবং ঔপনিবেশিক শাসকদের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়।
(জ) জাতীয়তাবাদের প্রসার
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে বিভিন্ন উপনিবেশে জাতীয়তাবাদের প্রসার ঘটে এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবি জোরদার হয়। এর ফলে উপনিবেশগুলিতে বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী সংগঠন ও রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। আত্মনিয়ন্ত্রণ অর্জনের লক্ষ্যে এই সব সংগঠন ও রাজনৈতিক দল শাসনক্ষমতা দখলের উদ্যোগ নেয়। এইসব জাতীয়তাবাদী সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে উপনিবেশগুলিতে পশ্চিমি ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়।
(ঝ) জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের ভূমিকা
ভারত, যুগোশ্লাভিয়া, মিশর প্রভৃতি দেশগুলি একদা শোষণমূলক ঔপনিবেশিক শাসনের শিকার হয়েছিল বলে স্বাধীনতা লাভের পর তারা কোনো জোটে শামিল হতে চায় নি। এই সব দেশের নেতৃত্বে বিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল। এই আন্দোলনে ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ও প্রতিটি জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের সপক্ষে প্রচার চালানো হয়েছিল। জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের আদর্শে উদবুদ্ধ নেতাদের ভূমিকা বিভিন্ন দেশে উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনকে আরও সক্রিয় করে তুলেছিল।
(ঞ) জাতিপুঞ্জের ভূমিকা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠিত সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ-এর অন্যতম কর্মসূচি ছিল বিশ্বের ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটানো। জাতিপুঞ্জের সনদের বিভিন্ন অংশে উপনিবেশগুলিকে মুক্তিদানের কথা বলা হয়েছে। ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্র ও জাতির সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করাই ছিল জাতিপুঞ্জের অন্যতম লক্ষ্য। জাতিপুঞ্জের উদ্যোগের ফলে বহু উপনিবেশের মুক্তি ঘটে এবং স্বাধীনতাপ্রাপ্তির পর তারা জাতিপুঞ্জের সদস্যপদ গ্রহণ করে।
অব উপনিবেশীকরণের প্রভাব
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন উপনিবেশের মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতাপ্রাপ্তির ঘটনা আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। যেমন –
(ক) দিগন্তের প্রসার
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইউরোপীয় দেশগুলির মধ্যে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে উত্তর আমেরিকা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রসার সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু যুদ্ধের পরে অসংখ্য উপনিবেশের মুক্তির ফলে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার সদ্য-স্বাধীন রাষ্ট্রগুলির সঙ্গেও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সূচনা ঘটাতে পূবর্তন পশ্চিমি ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলি বাধ্য হয়। সদ্য-স্বাধীন রাষ্ট্রগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাদের বিভিন্ন সমস্যা নতুন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে।
(খ) সংকট ও দুর্বলতা বৃদ্ধি
ঔপনিবেশিক শাসনের কবলমুক্ত হওয়ার পর সদ্য-স্বাধীন রাষ্ট্রগুলিকে বিভিন্ন ধরনের সংকট ও দুর্বলতা ঘিরে ধরে। এই সব রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক সংকট, দারিদ্র্য ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে ওঠে এবং স্থানীয় এলিট গোষ্ঠী রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ওপর নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হয়।
(গ) বৃহৎ শক্তিদ্বয়ের তৎপরতা
- (১) তীব্র মুক্তিসংগ্রামের চাপে বিশ্বের বিভিন্ন উপনিবেশ থেকে পশ্চিমের ব্রিটেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস বা হল্যান্ড, পোর্তুগাল প্রভৃতি ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি সরতে বাধ্য হয় এবং সদ্য-স্বাধীন নতুন রাষ্ট্রগুলি পশ্চিমি শক্তির নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়। ফলে উপনিবেশগুলিতে এক ধরনের শক্তিশূন্যতা দেখা দেয়।
- (২) এই সুযোগে বিশ্বের দুই বৃহৎ শক্তি আমেরিকা ও রাশিয়া সদ্য-স্বাধীন সেসব দেশে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে এগিয়ে আসে। আবার সদ্য-স্বাধীন অনেক রাষ্ট্রও নিজেদের নানান দুর্বলতার কারণে বৃহৎ কোনো শক্তির ওপর নির্ভরশীল হতে বাধ্য হয়।
(ঘ) ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রসার
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের মাধ্যমে বহু স্বাধীন রাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশ ঘটলে এই সব দেশে রুশ-মার্কিন ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রসার ঘটে। কোনো বৃহৎ যুদ্ধের পরিবর্তে রাশিয়া ও মার্কিন সাম্রাজ্য তাদের উন্নত মনস্তত্ত্ব ও যুক্তিবাদের সাহায্যে রাজনৈতিক, সামরিক ও আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে সদ্য-স্বাধীন দেশগুলিতে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। বৃহত্তর শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের উদ্দেশ্যে সদ্য-স্বাধীন দেশগুলি রাশিয়া ও আমেরিকার ঠাণ্ডা লড়াইয়ের কেন্দ্রে পরিণত হয়।
(ঙ) সাম্রাজ্যবাদী নীতির সংকট
বিভিন্ন উপনিবেশের স্বাধীনতা লাভের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে জাতিবিদ্বেষ ও সাম্রাজ্যবাদী নীতি পিছু হঠতে থাকে। সদ্য-স্বাধীন আফ্রো-এশীয় দেশগুলি বৃহৎ শক্তিসম্পন্ন দেশগুলির সাম্রাজ্য নীতির বিরুদ্ধে তাদের ঘৃণা ও লড়াইকে জারি রাখে। এই লড়াই তখনও ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে থাকা দেশগুলির বাসিন্দাদের মনে জাতীয়তাবাদের চেতনাকে তীব্রতর করে। এর ফলে বিশ্ব থেকে সাম্রাজ্যবাদ ও বর্ণবৈষম্য নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন আরও প্রবল হয়।
(চ) জাতিপুঞ্জের গুরুত্ব
- (১) এশিয়া ও আফ্রিকার সদ্য-স্বাধীন দেশগুলি সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের কর্মকাণ্ডের প্রতি আন্তরিক সমর্থন জানায় এবং দলে দলে জাতিপুঞ্জের সদস্যপদ গ্রহণ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে জাতিপুঞ্জের মোট ১৭৯টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে অন্তত ১০০টি সদস্যই ছিল সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্র। এর ফলে জাতিপুঞ্জের কর্ম পরিধি ও গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়।
- (২) সদ্য-স্বাধীন দেশগুলি নিজেদের আর্থিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে জাতিপুঞ্জের সাহায্যকে কাজে লাগায়। সদ্য-স্বাধীন দেশগুলির জোরালো সমর্থন পাওয়ায় জাতিপুঞ্জের পক্ষেও বিশ্বের উপনিবেশবাদ ও বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে সক্রিয় কর্মসূচি গ্রহণ করা সহজ হয়ে ওঠে।
(ছ) নতুন সংকটের সৃষ্টি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রগুলিকে কেন্দ্র করে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আন্তর্জাতিক সংকটের নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি হয়। বহু ক্ষেত্রে সদ্য-স্বাধীন একাধিক দেশ আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এরূপ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংকট হল কোরিয়ার যুদ্ধ (১৯৫০-৫৩ খ্রি.), ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধ (১৯৬৫, ১৯৭১ খ্রি.), ভারত-চিন যুদ্ধ (১৯৬২ খ্রি.), আরব-ইজরায়েল ধারাবাহিক সংঘর্ষ, ইরাক-ইরান যুদ্ধ (১৯৮০- ১৯৮৮ খ্রি.) প্রভৃতি।
(জ) আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রসার
আঞ্চলিক সংঘর্ষ সত্ত্বেও সদ্য-স্বাধীন বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতারও প্রসার ঘটে। সহযোগিতার উদ্দেশ্যে এসব দেশকে নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন গড়ে ওঠে। এরূপ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সংগঠন হল আসিয়ান (Association of Southeast Asian Nations বা ASEAN), সার্ক (South Asia Association of Regional Cooperation বা SAARC), আরব লিগ (Arab League) প্রভৃতি।
মূল্যায়ণ
পশ্চিমি শক্তিগুলি নতুন করে সরাসরি ঔপনিবেশিক শাসনের প্রতিষ্ঠা না করলেও তারা বিভিন্ন পণ্যের বাজার দখল, অর্থনৈতিক সহায়তা দান প্রভৃতির মাধ্যমে সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রগুলির অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রকে পরিণত হয়। সদ্য-স্বাধীন দুর্বল ও ভঙ্গুর রাষ্ট্রগুলি পশ্চিমি শক্তিগুলির আর্থিক ও সামরিক শক্তির ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হয়। এই ধরনের অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ নয়া-উপনিবেশবাদ নামে পরিচিত।
উপসংহার :- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে দীর্ঘ সংগ্রামের দ্বারা এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বহু উপনিবেশ স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু সদ্য-স্বাধীন রাষ্ট্রগুলি শীঘ্রই নয়া-উপনিবেশবাদের শিকার হতে থাকে।
(FAQ) অব উপনিবেশিকরণের কারণ ও প্রভাব সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
সাউথ এশিয়া অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কো-অপারেশন।
অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথ ইস্ট এশিয়ান নেশনস।
১৯৩৯-৪৫ খ্রিস্টাব্দে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২৪ অক্টোবর।