বুড়িবালামের যুদ্ধ -এর সময়কাল, স্থান, বিবাদমান পক্ষ, যুদ্ধের পটভূমি হিসেবে বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানে বাঘা যতীন, জার্মানির সাহায্য, বিপ্লবের প্রস্তুতি, রিজ কোম্পানি লুণ্ঠন, মন্টেগু-চেমসফোর্ড রিপোর্ট, অর্থ ও অস্ত্র আমদানি, পূর্ববঙ্গে বিপ্লবের পরিকল্পনা, পশ্চিমবঙ্গে বিপ্লবের পরিকল্পনা, বালেশ্বরে বাঘা যতীন, অস্ত্র বোঝাই জাহাজ আটক, পুলিশের তল্লাশি, বুড়িবালামের যুদ্ধ, যুদ্ধের ফলাফল ও যুদ্ধের গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো।
বুড়িবালামের যুদ্ধ প্রসঙ্গে বুড়িবালামের যুদ্ধের সময়কাল, বুড়িবালামের যুদ্ধে বিবাদমান পক্ষ, বুড়িবালামের যুদ্ধের স্থান, বুড়িবালামের যুদ্ধের প্রেক্ষাপট, বুড়িবালামের যুদ্ধ বর্ণনা, বুড়িবালামের যুদ্ধের নায়ক, বুড়িবালামের যুদ্ধে অংশগ্রহণ, বুড়িবালাম নদীর তীরে সংঘটিত বুড়িবালামের যুদ্ধ, বুড়িবালামের যুদ্ধের ফলাফল ও গুরুত্ব।
১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের বুড়িবালামের যুদ্ধ
ঐতিহাসিক যুদ্ধ | বুড়িবালামের যুদ্ধ |
সময়কাল | ৯ সেপ্টেম্বর, ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ |
স্থান | বালেশ্বরের বুড়ীবালাম নদীর তীরে |
বিবাদমান পক্ষ | চারজন সঙ্গী সহ বাঘা যতীন ও ব্রিটিশ পুলিশ বাহিনী |
ফলাফল | বাঘা যতীন ও তার সঙ্গীদের পরাজয় |
ভূমিকা:- প্রথম বিশ্বযুদ্ধ -এর সময় ভারত -এর ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল বাঘা যতীনের নেতৃত্বে সংঘটিত বুড়িবালামের যুদ্ধ।
বুড়িবালামের যুদ্ধের প্রেক্ষাপট
বুড়িবালামের যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার প্রেক্ষাপট ছিল নিম্নরূপ –
(১) বৈপ্লবিক অভুত্থানে বাঘা যতীন
রাসবিহারী বসুর পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার পর যুগান্তর দল -এর যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বা বাঘা যতীন জার্মানির সহযোগিতায় বাংলায় বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানে অবতীর্ণ হন।
(২) জার্মানির সাহায্য
১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে শ্রীরামপুরের জিতেন্দ্রনাথ লাহিড়ী জার্মানি থেকে ফিরে এসে জানান যে, জার্মানি বাংলাদেশ -এর বিপ্লবীদের অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করবে। এই জন্য যেন কোনো বিপ্লবীকে বাটাভিয়া পাঠানো হয়।
(৩) বিপ্লবের প্রস্তুতি
এই মর্মে নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য সি. মার্টিন নাম নিয়ে ছদ্মবেশে বাটাভিয়া রওনা হন (এপ্রিল, ১৯১৫)। বিপ্লবের প্রস্তুতি হিসেবে বাংলার অভ্যন্তরে নানা স্থানে রাজনৈতিক ডাকাতি, অর্থলুঠ ও বিশ্বাসঘাতক নিধনযজ্ঞ চলতে থাকে।
(৪) রিজ কোম্পানি লুন্ঠন
ইতিপূর্বে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে আগস্ট বিপ্লবীরা কলকাতার বিখ্যাত অস্ত্র ব্যবসায়ী রিজ কোম্পানি’র পঞ্চাশটি ‘মাউজার পিস্তল ও ছেচল্লিশ হাজার কার্তুজ লুণ্ঠন করে। পরে এই পিস্তল ও কার্তুজ বাংলার বিভিন্ন জেলার বিপ্লবী-কেন্দ্রে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
(৫) মন্টেগু চেমসফোর্ড রিপোর্ট
মন্টেগু চেমসফোর্ড শাসন সংস্কার রিপোর্টে বলা হয় যে, ৫০টি মাউজার পিস্তল ‘বাংলা সরকারকে অচল করে দেয়’।
(৬) অর্থ ও অস্ত্র আমদানি
জার্মানি থেকে কেবলমাত্র অস্ত্রশস্ত্র নয়—টাকাও আসে প্রচুর পরিমাণে। জার্মান অর্থেই ভারতীয় বিপ্লবীরা জাভা, মালয়, পেনা প্রভৃতি অঞ্চলে ঘোরাফেরা করতেন।
(৭) কলকাতায় দোকান
নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা ও বিদেশী অর্থ গ্রহণ করার জন্য বিপ্লবীরা কলকাতায় লোক দেখানো দু’টি দোকান খোলেন। সেগুলি হল শ্রমজীবী সমবায়’ এবং ‘হ্যারী এ্যাণ্ড সন্স’।
(৮) পূর্ববঙ্গে বিপ্লবের পরিকল্পনা
স্থির হয় যে, জার্মানদের প্রেরিত অস্ত্রের একটি অংশ আসবে নোয়াখালি এবং এই অস্ত্র নিয়ে বরিশালের বিপ্লবীরা পূর্ববঙ্গে বিপ্লব ঘটাবেন।
(৯) পশ্চিমবঙ্গে বিপ্লবের পরিকল্পনা
অপর অংশটি আসবে সুন্দরবনের রায়মঙ্গলে। বিপ্লবী নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য (এম.এন.রায়), বিপিনবিহারী গাঙ্গুলী ও ভূপতি মজুমদার এই অস্ত্রগুলি নিয়ে কলকাতা সহ ফোর্ট উইলিয়ম দখল করে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ -এ বিপ্লব ঘটাবেন।
(১০) বালেশ্বরে বাঘা যতীন
আরেক ভাগ অস্ত্র আসার কথা ছিল উড়িষ্যার বালেশ্বরে। যতীন্দ্রনাথ কয়েকজন অনুচর নিয়ে বালেশ্বর যান এবং মহলদিয়ায় বাস করতে থাকেন। যোগাযোগের কেন্দ্র হিসেবে বালেশ্বরে ইউনিভার্সাল এম্পোরিয়াম নামে একটি দোকান খোলা হয়।
(১১) অস্ত্র বোঝাই জাহাজ আটক
জার্মানি তার প্রতিশ্রুতি মত অস্ত্র বোঝাই জাহাজ ভারতের দিকে পাঠিয়েছিল। কিন্তু কোনো জাহাজই শেষ পর্যন্ত ভারতে পৌঁছায় নি। অস্ত্র-বোঝাই জাহাজ ‘অ্যানি লারসেন’, ‘হেনরী এস্’ এবং ‘ম্যাভেরিক’ যথাক্রমে আমেরিকান, ইংরেজ ও ডাচ কর্তৃপক্ষের হাতে ধরা পড়ে।
(১২) পুলিশের তল্লাশি
এর ফলে সমস্ত পরিকল্পনা বানচাল হয়ে যায়। ‘ম্যাভেরিক’ ধরা পড়ার পর ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ৭ই আগস্ট পুলিশ ‘হ্যারী এণ্ড সন্স’ এবং ৫ই সেপ্টেম্বর বালেশ্বরের ‘ইউনিভার্সাল এম্পোরিয়াম’-এ তল্লাশি চালায় এবং সন্দেহজনক অনেক তথ্যাদি পায়।
বুড়ীবালামের যুদ্ধ
পুলিশের বিরাট বাহিনী যতীন্দ্রনাথের খোঁজে মহলদিয়ার দিকে অগ্রসর হয়। বাঘা যতীন ও তাঁর চার সঙ্গী তখন বুড়ীবালাম নদী অতিক্রম করে জঙ্গলে আশ্রয় গ্রহণের চেষ্টা করেন। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ৯ই সেপ্টেম্বর পুলিশের সঙ্গে বাঘা যতীন ও তাঁর সঙ্গীদের খণ্ডযুদ্ধ হয়।
বুড়িবালামের যুদ্ধের ফলাফল
চিত্তপ্রিয় রায়চৌধুরী যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুমুখে পতিত হন, বাঘা যতীন বালেশ্বর হাসপাতালে মারা যান, আহত মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত ও নীরেন দাশগুপ্ত ফাঁসিকাঠে প্রাণ দেন এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জ্যোতিষ পাল কারাগারে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বুড়িবালামের যুদ্ধের গুরুত্ব
বুড়ীবালামের তীরে চার্লস টেগার্ট-এর নেতৃত্বে বিরাট পুলিশ ও সেনাদলের বিরুদ্ধে যতীন্দ্রনাথ ও তাঁর চার সঙ্গীর এই অসম যুদ্ধ মরণ-ভীরু বাঙালিকে নতুন চেতনা ও শৌর্য-বীর্যে উদ্দীপ্ত করে তোলে।
উপসংহার:- ঐতিহাসিক ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেন যে, বুড়ীবালামের যুদ্ধ বঙ্গীয় বিপ্লববাদের ইতিহাসে এক স্মরণীয় ঘটনা। বাঘা যতীনের মৃত্যুর পর ডাঃ যাদুগোপাল মুখোপাধ্যায় বিপ্লবীদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেন, কিন্তু তাঁর প্রয়াস তখন সাফল্যমণ্ডিত হয় নি।
(FAQ) বুড়িবালামের যুদ্ধ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ৯ সেপ্টেম্বর।
চার্লস টেগার্ট।
যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বা বাঘা যতীন।