রোমান সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক অগ্রগতি

রোমান সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক অগ্রগতি প্রসঙ্গে রোমান সাম্রাজ্যের উত্থান, রোম ও রোমান সাম্রাজ্যের গঠন, পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্য, রোমান সাম্রাজ্যের বিস্তার, রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী, রোমান সাম্রাজ্যের বিভাজন, রোমান সম্রাট সিজার ও অগাস্টাসের ভূমিকা এবং রোমান সাম্রাজ্যের পতন সম্পর্কে জানবো।

প্রাচীন যুগে রোমান সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক অগ্রগতি প্রসঙ্গে রোম ও রোমান সাম্রাজ্যের গঠন, রোমান সাম্রাজ্যের উত্থান, পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্য রোমান সাম্রাজ্য, রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী, রোমান সাম্রাজ্যের বিখ্যাত সম্রাট জুলিয়াস সিজার, রোমান সাম্রাজ্যের বিস্তার, রোমান সাম্রাজ্যের বিভাজন ও রোমান সাম্রাজ্যের অবক্ষয় সম্পর্কে জানব।

রোমান সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক অগ্রগতি

ঐতিহাসিক ঘটনারোমান সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক অগ্ৰগতি
রোমটাইবার নদী
পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যরোম
পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যকনস্ট্যান্টিনোপল
জুলাই মাসজুলিয়াস সিজার
আগস্ট মাসঅগাস্টাস সিজার
রোমান সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক অগ্রগতি

ভূমিকা :- প্রাচীন যুগে ইউরোপ-এ সুবিশাল রোমান সাম্রাজ্যের উদ্ভব ঘটেছিল। সাম্রাজ্য-এর প্রসার, শাসনব্যবস্থার অগ্রগতি, শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশ প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে রোমান সাম্রাজ্য কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিল।

ইউরোপের ইতিহাসে যুগ

সাধারণভাবে ইউরোপের ইতিহাসে প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে শুরু করে ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে ‘প্রাচীন যুগ” এবং ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে ‘মধ্যযুগ’ বলে ধরা হয়।

রোমান সাম্রাজ্যের উত্থান

প্রাচীন যুগে ইউরোপে ম্যাসিডনীয় সাম্রাজ্যের পতনের পর এই সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে সেখানে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের উত্থান ঘটে। প্রাচীন যুগের সমাপ্তিকাল পর্যন্ত পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের এবং মধ্যযুগের সমাপ্তিকাল পর্যন্ত পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল।

প্রাচীন রোম ও রোমান সাম্রাজ্যের গঠন

ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত ইতালির টাইবার নদীর উপকূলে আনুমানিক ৭৫৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোম নগরীর প্রতিষ্ঠা হয়। এই নগরীকে কেন্দ্র করে পরবর্তীকালে সুবিশাল রোমান সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে।

পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্য

এই রোমান সাম্রাজ্য ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ও দীর্ঘস্থায়ী সাম্রাজ্য। রোমান সাম্রাজ্যের বিশাল ব্যাপ্তির জন্য বলা হত যে, পৃথিবীর সব রাজপথই রোমে গিয়ে মিলিত হয়েছে।

রোমান সাম্রাজ্যের বিস্তার

শক্তিশালী রোমান সেনাবাহিনী খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের মধ্যে বিশাল এলাকা জুড়ে সাম্রাজ্যের প্রসার ঘটাতে সক্ষম হয়। ৩১ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে দক্ষিণ ও পশ্চিম ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড জুড়ে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের প্রসার ঘটে।

প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী

সাম্রাজ্যের আয়তন বৃদ্ধি পাওয়ায় একমাত্র রাজধানী রোম থেকে তা আর শাসন করা সম্ভব ছিল না। এজন্য রোমান সম্রাট কনস্টানটাইন ৩৩০ খ্রিস্টাব্দে কৃষ্ণসাগরের তীরবর্তী বাইজানটিয়াম বা কনস্ট্যান্টিনোপল-এ (বর্তমান নাম ইস্তানবুল) এই সাম্রাজের দ্বিতীয় রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেন।

রোমান সাম্রাজ্যের বিভাজন

এভাবে সুবিশাল রোমান সাম্রাজ্য দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। যথা – পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্য যার রাজধানী হল রোম এবং পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য যার রাজধানী হল বাইজানটিয়াম বা কনস্ট্যান্টিনোপল।

মহান রোমান সম্রাট সিজার ও অগাস্টাসের ভূমিকা

রোমান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন রোমান সম্রাট একের পর এক সফল সামরিক অভিযানের মাধ্যমে বহুদূর পর্যন্ত রোমান সাম্রাজ্যের প্রসার ঘটান। এক্ষেত্রে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন জুলিয়াস সিজার ও অগাস্টাস সিজার।

রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার

সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণে সর্বপ্রথম সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার (৫৯-৪৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)। তার রাজত্বকালের বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) ডিক্টেটর পদ লাভ

তিনি ৫৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমের কনসাল পদ লাভ করেন এবং ৪৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমান সাম্রাজ্যের ডিক্টেটর বা একনায়ক হিসেবে স্বীকৃতি পান।

(২) প্রথমদিকের আধিপত্য

তিনি ফ্রান্স-এর বিভিন্ন উপজাতিগুলিকে পরাজিত করে সেখানে রোমের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। এর দ্বারা রোমান সাম্রাজ্যের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত সুরক্ষিত হয়।

(৩) নীলনদের যুদ্ধ

তিনি মিশরের রাজা ত্রয়োদশ টলেমিকে নীলনদের যুদ্ধে (৪৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) পরাজিত করে মিশর দখল করেন। রাজা ফারনাকেস-কে পরাজিত করে জুলিয়াস সিজার এশিয়া মাইনরে রোমের আধিপত্য স্থাপন করেন। শুধু বিজেতা হিসেবেই নয়, জুলিয়াস সিজার সুদক্ষ শাসনব্যবস্থা প্রণয়নে যথেষ্ট প্রতিভার পরিচয় দেন।

(৪) সংস্কারকার্য

তিনি রোমান পঞ্জিকা ও ক্যালেন্ডারের সংস্কার করেন। তাঁর নামানুসারেই ইংরেজি জুলাই মাসের নামকরণ করা হয়। রোমান সাম্রাজ্যের দুরন্ত প্রসারে জুলিয়াস সিজারের উক্তি “আমি এলাম, আমি দেখলাম, আমি জয় করলাম” (“Veni, Vidi, Vici”)  – এই কথা শুধু জুলিয়াস সিজারের রাজত্বকালেই নয়, তার পরবর্তী ৫০০ বছরের রোমান সাম্রাজ্যের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য।

রোমান সম্রাট অগাস্টাস সিজার

সাম্রাজ্যের প্রসারে অগাস্টাসের বিশেষ ভূমিকা ছিল। তার রাজত্বকালের বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) নৈরাজ্য

ব্রুটাস নামে জনৈক আততায়ীর হাতে জুলিয়াস সিজার নিহত (৪৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) হওয়ার পর রোমান সাম্রাজ্যে চূড়ান্ত নৈরাজ্য দেখা দেয়। 

(২) সিংহাসনে আরোহণ

পরবর্তীকালে তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র অক্টাভিয়াস বা অগাস্টাস সিজার (২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ-১৪ খ্রিস্টাব্দ) রোমের সিংহাসনে বসে নৈরাজ্য দূর করেন এবং রাজতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।

(৩) সাম্রাজ্যের প্রসার

তিনি সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করে রোমান সাম্রাজ্যের সীমানা ইউরোপের গণ্ডি ছাড়িয়ে পশ্চিম এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকা পর্যন্ত বিস্তৃত করেন। এই সময় রোমান সাম্রাজ্যের সীমানা পশ্চিমে ফ্রান্স ও স্পেন থেকে পূর্বে ইউফ্রেটিস নদী এবং উত্তরে রাইন ও দানিয়ুব নদী থেকে দক্ষিণে সাহারা মরুভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

(৪) শান্তি ও সমৃদ্ধি

তিনি রোমে এক শান্তি ও সমৃদ্ধির যুগের সূচনা করেন। অগাস্টাসের রাজত্বকালে দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধির ফলে তিনি দেশের অভিজাত ও সাধারণ মানুষের সমর্থন লাভ করেছিলেন।

(৫) শক্তি বৃদ্ধি

এই সময় তিনি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নিজের শক্তি বৃদ্ধি করেন। সামরিক বিভাগের সংস্কার করে তিনি দেশের সেনাবাহিনীর উপর নিজের পূর্ণ কর্তৃত্ব স্থাপন করেন। তাঁর নামানুসারেই ইংরেজি আগস্ট মাসের নামকরণ হয়েছে।

রোমান সাম্রাজ্যের পতন

বহুদূর সম্প্রসারণ ও দীর্ঘ অস্তিত্বের পর ইতিহাসের নিয়মেই একসময় ইউরোপের রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।

(১) পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতন

বহিরাগত বর্বর জাতির আক্রমণে ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিম রোমান সম্রাজ্যের পতন ঘটে। ওডোয়াসার নামে জনৈক জার্মান সেনাপতি ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের সম্রাট রোমুলাসকে সিংহাসনচ্যুত করলে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের সম্পূর্ণ অবলুপ্তি ঘটে। এরপর এখানে বিভিন্ন জার্মান জাতিগোষ্ঠীর বেশ কয়েকটি স্বাধীন রাজ্য গড়ে ওঠে। জার্মানদের শাসনকালে যুদ্ধ, নৈরাজ্য, বর্বরতা প্রভৃতির ফলে পশ্চিম ইউরোপে জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতি ব্যাহত হয়, ব্যাবসাবাণিজ্য ধ্বংস হয় এবং শহরগুলির অবলুপ্তি ঘটতে থাকে। এভাবে সেখানে এক অন্ধকারময় যুগ শুরু হয়।

(২) পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের পতন

কিন্তু ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটলেও পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য আরও অন্তত ১০০০ বছর টিকেছিল। শেষপর্যন্ত ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে অটোমান তুর্কি মুসলিমদের আক্রমণে কনস্ট্যান্টিনোপলের পতন ঘটে এবং পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য অবলুপ্ত হয়।

উপসংহার :- প্রাচীন রোমান সভ্যতা ও সংস্কৃতি ইউরোপের সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে। রোমের লাতিন ভাষা, সাহিত্য, শিল্প, আইনকানুন প্রভৃতি জার্মানদের মাধ্যমে সমগ্র ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। সংস্কৃত ভাষার উপর ভিত্তি করে যেমন ভারতবর্ষ-এর প্রধান ভাষাগুলি গড়ে উঠেছে, তেমনি লাতিন ভাষা থেকে ইউরোপের প্রধান ভাষাগুলি গড়ে উঠেছে।

(FAQ) রোমান সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক অগ্রগতি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. রোম নগরীর প্রতিষ্ঠা হয় কখন?

আনুমানিক ৭৫৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে।

২. পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী কোথায় ছিল?

রোম নগরী।

৩. পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী কোথায় ছিল?

বাইজানটিয়াম বা কনস্ট্যান্টিনোপল।

৪. পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে কখন?

৪৭৬ খ্রিস্টাব্দে।

৫. পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে কখন?

১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে।

Leave a Comment