চীনের ম্যান্ডারিন ব্যবস্থা

চীনের ম্যান্ডারিন ব্যবস্থা প্রসঙ্গে উত্থান, শব্দের অর্থ, তাদের যোগ্যতা, তাদের কার্যাবলী, বিভিন্ন স্তর, ব্যবস্থার অবসান, ম্যান্ডারিন শাসনব্যবস্থার ত্রুটি ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো।

সাম্যবাদী চীনের ম্যান্ডারিন ব্যবস্থা প্রসঙ্গে চিনের ম্যান্ডারিন ব্যবস্থার পরিচয়, সাম্রাজ্যবাদী চিনের আমলা ম্যান্ডারিন, ম্যান্ডারিন শব্দের অর্থ, ম্যান্ডারিনদের যোগ্যতা, ম্যান্ডারিনদের বিভিন্ন স্তর, চীনের ম্যান্ডারিনদের কার্যাবলী, ম্যান্ডারিন শাসনব্যবস্থার ত্রুটি, ম্যান্ডারিন শাসনব্যবস্থার পতন ও ম্যান্ডারিন শাসনব্যবস্থার গুরুত্ব বা তাৎপর্য সম্পর্কে জানব।

চীনের ম্যান্ডারিন ব্যবস্থা

ঐতিহাসিক ঘটনাচিনে ম্যান্ডারিন ব্যবস্থা
উত্থানকাল৬১৮ খ্রি
বংশতাং বংশ
অর্থপ্রশাসনিক কর্তা
স্বর্গের সন্তানচিনা সম্রাট
পদ্মরাগমণিযুক্ত টুপিউচ্চপদস্থ ম্যান্ডারিন
আমলাতান্ত্রিক কর্মচারীঝৌ বংশ
চীনের ম্যান্ডারিন ব্যবস্থা

ভূমিকা :- বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় শাসক তাঁর সুবিশাল সাম্রাজ্য বিভিন্ন অঞ্চল বা প্রদেশে ভাগ করে সেই অঞ্চলগুলিতে প্রাদেশিক শাসক নিয়োগের মাধ্যমে শাসনব্যবস্থার দক্ষতা আনার চেষ্টা করেছিলেন। কেন্দ্রীয় সরকার বা শাসকের অধীনে থাকা অতীতের এইসব প্রাদেশিক বা আঞ্চলিক শাসকরা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিলেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন চিন-এর ম্যান্ডারিন।

চিনের প্রাচীন আমলাতান্ত্রিক কর্মচারী

আজ থেকে অন্তত ৩০০০ বছর পূর্বে চিনের প্রশাসনিক কাজে আমলাতান্ত্রিক কর্মচারী ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। প্রাচীন ঝৌ (Zhou) বংশের (১০৪৬-২৫৬খ্রিস্টপূর্ব) শাসনকালে চিনের প্রশাসনে আমলাতান্ত্রিক কর্মচারীদের অস্তিত্ব ছিল। অবশ্য তখন আমলাতন্ত্রের বেশিরভাগ উচ্চপদ সর্বোচ্চ শাসকের অর্থাৎ সম্রাটের আত্মীয় এবং অভিজাত শ্রেণির লোকেরা লাভ করত।

সম্রাট-কর্মচারী আতঙ্ক

অবশ্য সেই সময় সম্রাট এবং পদস্থ কর্মচারী উভয় পক্ষের সম্পর্কে কখনো কখনো আতঙ্কের বাতাবরণ তৈরি হত। কারণ, একদিকে আমলারা সম্রাটের স্বৈরাচারী মানসিকতায় আতঙ্কিত থাকত, অন্যদিকে আমলারা সম্রাটকে এড়িয়ে জনগণকে বেশি গুরুত্ব দিতে পারে – এই ভয়ে স্বয়ং সম্রাট ভীত থাকতেন।

কাজ

যাই হোক, এই সকল আমলারা স্থানীয় ভূস্বামী ও শাসক হিসেবে কাজ করতেন, রাজস্ব আদায় করতেন এবং জনগণ ও সম্রাটের মধ্যে যোগসূত্র রক্ষা করতেন।

ম্যান্ডারিনের উত্থান

এক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) সম্রাটের সর্বোচ্চ ক্ষমতা

চিনের পিকিং-এ সম্রাট ও কেন্দ্রীয় সংগঠনকে নিয়ে চিনের কেন্দ্রীয় সরকার গড়ে উঠেছিল। কেন্দ্রীয় সরকারে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন স্বয়ং চিনা সম্রাট। তাঁকে স্বর্গের সন্তান বলে মনে করা হত। তিনি ‘স্বর্গীয় অনুশাসন’ এবং রাজবংশের প্রচলিত আইন মেনে তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগ করতেন।

(২) নতুন আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা

পরবর্তীকালে চিনের পদস্থ সরকারি কর্মচারী কাঠামোয় নানা বিবর্তন ঘটে। তাং (Tang) বংশের (৬১৮-৯০৭ খ্রি.) রাজত্বকালে পূর্বের প্রচলিত নয়-স্তরীয় ব্যবস্থা বাতিল করে চিনে নতুন আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। এই নতুন আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ম্যান্ডারিন পদটি যথার্থ রূপ লাভ করে।

(৩) ম্যান্ডারিন

নতুন এই আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নতুন ধরনের সরকারি কর্মচারী নিয়োগ করা হয়। এই সরকারি কর্মচারীদের বলা হত ম্যান্ডারিন। এই সরকারি কর্মচারীরা সম্রাটের কাজের অংশীদার হিসেবে চিনা সমাজে স্বর্গীয় অনুশাসন চালু করে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতেন। সপ্তম শতকের শুরু থেকে বিশ শতকের প্রথম দশক পর্যন্ত প্রায় ১৩০০ বছর ধরে চিনের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় ম্যান্ডারিন নামে পদস্থ কর্মচারীদের অস্তিত্ব ছিল।

ম্যাণ্ডারিন শব্দের অর্থ

এক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) শব্দের উৎপত্তি

Mandarin শব্দটি মালয় শব্দভাণ্ডার থেকে পোর্তুগিজ ভাষায় প্রবেশ করেছে এবং পোর্তুগিজ শব্দ mandarim থেকে ইংরেজি mandarin শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে বলে মালয়েশিয়ার অধ্যাপক উঙ্কু আবদুল আজিজ (Ungku Abdul Aziz) মনে করেন। ষোড়শ শতক নাগাদ ম্যান্ডারিন শব্দটি ইউরোপ-এর বিভিন্ন ভাষায় ছড়িয়ে পড়ে।

(২) আধুনিক অর্থ

বর্তমান কালে অনেক সময়ই ইংরেজি mandarin শব্দটির দ্বারা উচ্চ বা যে-কোনো স্তরের প্রশাসনিক কর্তাকে বোঝানো হয়ে থাকে। কখনো কখনো পদস্থ সরকারি কর্মচারীদের প্রতি বিদ্রুপাত্মক অর্থেও mandarin শব্দটি বর্তমানে ব্যবহার করা হয়।

ম্যাণ্ডারিনের যোগ্যতা

এই ম্যাণ্ডারিনদের যোগ্যতার বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) পণ্ডিত-আমলা

ম্যান্ডারিন শব্দটির দ্বারা চিনা প্রশাসনের পণ্ডিত কর্মচারী বা পণ্ডিত আমলাদের বোঝানো হয় যিনি প্রশাসনের কার্য সম্পাদনের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে কাব্য, সাহিত্য এবং কনফুসীয় শিক্ষাচর্চায় নিয়োজিত রাখেন। ম্যান্ডারিন পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে জন্ম, বংশ-কৌলীন্য ও সম্পত্তির পরিবর্তে যোগ্যতা ও শিক্ষাদীক্ষা বিচার করা হত।

(২) পরীক্ষা

ম্যান্ডারিন পদপ্রার্থীদের কঠিন যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হত। তাদের কনফুসীয় আদর্শ সম্পর্কে গভীর জ্ঞান যাচাই করা হত। এ ছাড়া সাহিত্য ও কাব্যচর্চা, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা প্রভৃতি বিষয়ে প্রার্থীর যথেষ্ট জ্ঞান থাকা আবশ্যিক ছিল। তাদের অবশ্যই ধ্রুপদি চিনের ঐতিহ্য সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হত।

(৩) পদ লাভে সুযোগ

অবশ্য চিনের সকলের জন্য ম্যান্ডারিনের পদলাভের সুযোগ ছিল না। পাহারাদার, অপরাধী, শ্রমিক, জেল খাটা আসামি, অভিনেতা, সংগীতজ্ঞ, ক্রীতদাস, ভিক্ষুক প্রমুখ ম্যান্ডারিন হিসেবে নিয়োগের পরীক্ষায় বসার যোগ্য ছিল না।

(৪) নিয়োগ

পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের স্থানীয়, প্রাদেশিক এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ করা হত। অবশ্য কোনো কোনো উচ্চপদস্থ ম্যান্ডারিন সম্রাটের ইচ্ছায় বহাল হতেন।

(৫) পদচ্যুতি

মিং বংশের (১৩৬৮-১৬৪৪ খ্রি.) শাসনকালে চিনে রাজতন্ত্রের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এই বংশের রাজারা তাদের অপছন্দের উচ্চপদস্থ ম্যান্ডারিন, এমনকি প্রধানমন্ত্রীকেও তাদের পদ থেকে সরিয়ে দিতেন।

(৬) নিজস্ব এলাকার বাইরে নিয়োগ

ম্যান্ডারিনদের মধ্যে যাতে স্থানীয় স্বার্থ গড়ে না ওঠে সেজন্য আইনের মাধ্যমে এই কর্মচারীদের তাদের নিজস্ব এলাকার বাইরে নিয়োগ করা হত। এর ফলে তারা সাম্রাজ্যের স্বার্থ-বিরোধী কোনো কাজকর্মে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ পেতেন না।

(৭) ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ

কোনো একজন ম্যান্ডারিনের ক্ষমতা অন্য একজন ম্যান্ডারিনের ক্ষমতার দ্বারা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও ছিল।

ম্যান্ডারিনের কার্যাবলি

ম্যান্ডারিনরা চিনের কেন্দ্রীয় সরকারের সচিবালয়ের অধীনে কাজ করতেন।

(১) কঠোর পরিশ্রম

প্রশাসনের প্রধান আমলা হিসেবে ম্যান্ডারিনদের কঠোর পরিশ্রম করতে হত। ভোর পাঁচটায় তাদের কাজ শুরু হত। প্রশাসনের যাবতীয় কাজ তাঁরা পরিচালনা করতেন।

(২) রাজাকে সহায়তা

চিনে মাঞ্চু রাজবংশের আমলের প্রথমদিকে ম্যান্ডারিনদের কাজ ছিল সম্রাটকে সমস্ত বিষয়ে সহায়তা করা।

(৩) অন্যান্য কাজ

প্রশাসনিক কাজকর্ম ছাড়াও সরকারের অন্যান্য কাজকর্মও ম্যান্ডারিধদের করতে হত। তাঁরা ব্যাবসাবাণিজ্যের কাজের তদারকি করতেন, অর্থের জোগান সচল রাখতেন, প্রদেশের নিরাপত্তা বজায় রাখতেন ইত্যাদি।

(৪) পুরস্কার

যে সকল ম্যান্ডারিন খুব ভালো কাজ করতেন তাঁদের পুরস্কার প্রদান করা হত।

ম্যান্ডারিনদের বিভিন্ন স্তর

এক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) মর্যাদা

ম্যান্ডারিনরা চিনের কেন্দ্রীয় ক্ষমতার খুব কাছাকাছি অবস্থান করতেন বলে সমাজে তাদের খুবই সম্মানীয় স্থান ছিল। কিং বংশের (১৬৪৪- ১৯১১ খ্রি.) রাজত্বকালে চিনের সামাজিক ক্ষেত্রে ম্যান্ডারিনদের মর্যাদা সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছোয়।

(২) জীবনযাপন

ম্যান্ডারিনরা অত্যন্ত বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন এবং বহুমূল্য পোশাক পরিধান করতেন। মূল্যবান ধাতুর অলংকারযুক্ত ও রত্নখচিত পোশাক ম্যান্ডারিনদের পদমর্যাদা নির্দেশ করত।

(৩) উচ্চপদস্থ ম্যান্ডারিন

চিনের প্রশাসনে ম্যান্ডারিনদের বিভিন্ন স্তরভেদ ছিল। সর্বোচ্চ স্তরের ম্যান্ডারিন চিনা সম্রাটের প্রধানমন্ত্রীর সমগোত্রীয় পদ লাভ করতেন। চিনের বিভিন্ন প্রদেশের প্রাদেশিক শাসক বা গভর্নর পদেও উচ্চপদস্থ ম্যান্ডারিনদের নিয়োগ করা হত। উচ্চপদস্থ ম্যান্ডারিনরা নামি পদ্মরাণমণিযুক্ত টুপি পরিধান করতেন।

(৪) সাধারণ ম্যান্ডারিন

সাধারণ ও নিম্ন স্তরের ম্যান্ডারিনরা প্রবাল, লাপিস লাজুলি, সোনা, রুপা প্রভৃতির দ্বারা নির্মিত টুপি ব্যবহার করতেন।

ম্যান্ডারিন ব্যবস্থার অবসান

এক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) স্থায়িত্ব

সাম্রাজ্যের যুগে চিনের দীর্ঘকালীন অস্তিত্ব এবং প্রশাসনিক সাফল্য অনেকটাই ম্যান্ডারিন ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল ছিল। চিনে রাজবংশ ও সাম্রাজ্যের পতন ঘটলেও সুশিক্ষিত ম্যান্ডারিনদের নিয়ে গড়ে ওঠা এই আমলাতন্ত্র চিনা প্রশাসনে দক্ষতা ও স্থায়িত্ব দান করেছিল।

(২) বিশিষ্ট সম্প্রদায়

চিনের ম্যান্ডারিনরা সেদেশের বিশিষ্ট সম্প্রদায় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ম্যান্ডারিনদের মধ্যে থেকে পরবর্তীকালে চিনের জেন্ট্রি সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে।

(৩) ক্ষমতা হ্রাস

যাই হোক, চিনে ১৭২১ খ্রিস্টাব্দে ‘Grand Council’ গঠিত হলে ম্যান্ডারিনদের ক্ষমতা ও দায়িত্ব অনেকাংশে হ্রাস পায়।

(৪) আধুনিক আমলাতন্ত্র

এরপর ঊনবিংশ শতকে চিনের প্রশাসনে আধুনিক রাষ্ট্রনীতির ঢেউ লাগে। ফলে প্রাচীন ম্যান্ডারিন ব্যবস্থার স্থলে আধুনিক ইউরোপীয় ধাঁচের আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রয়োজন দেখা দেয়।

(৫) ম্যান্ডারিন ব্যবস্থার অবসান

শেষপর্যন্ত পাশ্চাত্য শিক্ষাধারার চাপে চিনে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে ম্যান্ডারিনদের নিয়োগ-সংক্রান্ত পরীক্ষার অবসান ঘটে এবং কিং বংশের পতনের (১৯১১ খ্রি.) পর চিনের সমগ্র ম্যান্ডারিন ব্যবস্থার অবসান ঘটে। এরপর চিনে আধুনিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। চিনের শেষ পর্বের ম্যান্ডারিনদের মধ্যে অন্যতম ম্যান্ডারিন ছিলেন লিং চু চুয়ান।

ম্যান্ডারিন শাসনব্যবস্থার ত্রুটি

চিনের ম্যান্ডারিন ব্যবস্থার প্রধান ত্রুটিগুলি ছিল –

(১) সন্দেহপ্রবণতা

ম্যান্ডারিনদের ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে চিনের শাসক সম্প্রদায় চিন্তায় পড়ে যান। ফলে ম্যান্ডারিনদের ক্ষমতা খর্ব করার বিষয়কে কেন্দ্র করে রাজা ও ম্যান্ডারিনদের মধ্যে সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল। চিনের প্রশাসনে এর ক্ষতিকারক প্রভাব পড়েছিল।

(২) প্রশাসনিক স্থবিরতা

অনেকে সমালোচনা করে থাকেন যে, ম্যান্ডারিন ব্যবস্থা চিনের প্রশাসনে বিরাট কোনো পরিবর্তন ঘটাতে পারে নি। ফলে প্রশাসনের অগ্রগতি ব্যাহত হয়েছিল।

(৩) সাধারণ মানুষের প্রতি উদাসীনতা

ম্যান্ডারিনদের সঙ্গে চিনের সাধারণ মানুষের বিশেষ কোনো যোগসূত্র গড়ে ওঠে নি। ফলে সাধারণ মানুষের চাহিদা ও অধিকার অনেকাংশেই পূরণ হয় নি।

(৪) নিয়োগ পদ্ধতির ত্রুটি

চিনের প্রজাদের একটি বড়ো অংশের মানুষ ম্যান্ডারিন হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছিল।

ম্যান্ডারিন ব্যবস্থার গুরুত্ব

চিনের সুপ্রাচীন ম্যান্ডারিন ব্যবস্থার বিভিন্ন গুরুত্ব ছিল। যেমন –

(১) উন্নত প্রশাসনিক ব্যবস্থা

ম্যান্ডারিন ব্যবস্থার মাধ্যমে চিনে আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে যে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল তা ছিল যথেষ্ট উন্নত।

(২) যোগসূত্র রক্ষা

ম্যান্ডারিনরা চিনের স্থানীয় শাসক ও রাজার মধ্যে যোগসূত্র রক্ষার কাজ করত। ফলে সেখানে প্রশাসনিক ব্যবস্থায় সর্বনিম্ন থেকে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত ধারাবাহিকতা রক্ষিত হয়েছিল।

(৩) অত্যধিক শ্রমদান

ম্যান্ডারিনরা কঠোর পরিশ্রম করতেন এবং দিনের বেশিরভাগ সময় কাজে নিযুক্ত থাকতেন। ফলে প্রশাসনে গতি এসেছিল বলে অনেকে মনে করেন।

(৪) বিভিন্ন ধরনের কার্য

শাসন পরিচালনা করা ছাড়াও ম্যান্ডারিনরা দেশের নিরাপত্তা, ব্যাবসাবাণিজ্য প্রভৃতি বহুবিধ কাজ করতেন। ফলে প্রশাসনে উৎকর্ষ এসেছিল।

উপসংহার:- ম্যান্ডারিনরা ছিলেন সাম্রাজ্যবাদী চিনের আমলা। চিনা শাসনতন্ত্রে এদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার ব্যাপারে তারা ছিলেন সম্রাটের সহযোগী।

(FAQ) চীনের ম্যান্ডারিন ব্যবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ম্যান্ডারিন ব্যবস্থা কোথায় গড়ে উঠেছিল?

চিনে।

২. ম্যান্ডারিন শব্দে কাদের বোঝানো হয়?

প্রশাসনিক কর্তা।

৩. কাকে স্বর্গের সন্তান বলে মনে করা হত?

চিনা সম্রাট।

৪. পদ্মরাগমণিযুক্ত টুপি পরত কারা?

উচ্চপদস্থ ম্যান্ডারিনরা।

৫. চিনে গ্ৰ্যাণ্ড কাউন্সিল গঠিত হয় কখন?

১৭২৯ খ্রিস্টাব্দে।

Leave a Comment