সংবাদ সাধুরঞ্জন পত্রিকা প্রসঙ্গে সংবাদ সাধুরঞ্জন পত্রিকার কণ্ঠে কবিতা, সংবাদ সাধুরঞ্জন পত্রিকা সম্পর্কে বঙ্কিমচন্দ্রের উক্তি, সংবাদ সাধুরঞ্জন পত্রিকার প্রচার বন্ধ হবার কারণ ও সংবাদ সাধুরঞ্জন পত্রিকার পুনঃ প্রকাশের চিন্তা সম্পর্কে জানবো।
সাপ্তাহিক সংবাদ সাধুরঞ্জন পত্রিকা প্রসঙ্গে সংবাদ সাধুরঞ্জন পত্রিকার ভাষা, সংবাদ সাধুরঞ্জন পত্রিকার ধরণ, সংবাদ সাধুরঞ্জন পত্রিকার প্রকাশকাল, সংবাদ সাধুরঞ্জন পত্রিকার সম্পাদক, সংবাদ সাধুরঞ্জন পত্রিকার প্রচার বন্ধ, সংবাদ সাধুরঞ্জন পত্রিকা সম্বন্ধে বঙ্কিমচন্দ্রের উক্তি সম্পর্কে জানব।
সংবাদ সাধুরঞ্জন পত্রিকা
ঐতিহাসিক পত্রিকা | সংবাদ সাধুরঞ্জন পত্রিকা |
ধরণ | সাপ্তাহিক পত্রিকা |
ভাষা | বাংলা |
প্রকাশকাল | আগস্ট ১৮৪৭ খ্রি |
সম্পাদক | ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত |
ভূমিকা :- ‘পাষণ্ডপীড়ন’ বন্ধ হবার পর ১২৫৪ সালের ভাদ্র মাসে (আগস্ট ১৮৪৭) ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ‘সংবাদ সাধুরঞ্জন’ নামে সাপ্তাহিক পত্র প্রকাশ করেন। এটি প্রতি সোমবার প্রভাকর যন্ত্র থেকে প্রকাশিত হত।
সংবাদ সাধুরঞ্জন পত্রিকার কণ্ঠে কবিতা
এই পত্রিকার কণ্ঠে নিম্নলিখিত শ্লোকটি শোভা পাইত –
“প্রচণ্ড পাষণ্ড তরু প্রভঞ্জনঃ।
সমস্ত সল্লোক মনোহনুরঞ্জন।।
সদা সদালোচন লোচনাঞ্জনঃ।
প্রকাশতে সংপ্রতি সাধুরঞ্জনঃ।।”
“প্রচণ্ড পাষণ্ডরূপ তরুপ্রভঞ্জন।
সমস্ত সজ্জনগণ মানসরঞ্জন॥
সদা সৎ আলোচন লোচন অঞ্জন।
সম্প্রতি প্রকাশ হল এ সাধুরঞ্জন।।”
নবকৃষ্ণ রায় সংবাদ সাধুরঞ্জন পত্রিকার সম্পাদক
কিছু দিন পরে অবস্থা কিঞ্চিৎ সচ্ছল হলে ঈশ্বরচন্দ্র তার জ্ঞাতিভ্রাতা নবকৃষ্ণ রায়ের নাম ‘সংবাদ সাধুরঞ্জনে’র সম্পাদক রূপে প্রকাশ করেন। ‘সংবাদ সাধুরঞ্জনে’ ঈশ্বরচন্দ্রের ছাত্রমণ্ডলীর কবিতা ও প্রবন্ধ স্থান পেত।
সংবাদ সাধুরঞ্জন সম্পর্কে বঙ্কিমচন্দ্রের উক্তি
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের জীবনচরিতে বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছেন, “সাধুরঞ্জন ঈশ্বরচন্দ্রের মৃত্যুর পর কয়েক বর্ষ পর্য্যন্ত প্রকাশ হইয়াছিল।” এই উক্তি ঠিক নয়। ঈশ্বরচন্দ্রের মৃত্যু হয় ১২৬৫ সালের ১০ই মাঘ। ‘সংবাদ সাধুরঞ্জন’ ১২৬৬ সালের বৈশাখ মাস পর্যন্ত জীবিত ছিল।
পরাধীন ভারতে সংবাদ সাধুরঞ্জন পত্রিকার প্রচার বন্ধ হবার কারণ
কি অবস্থায় এর প্রচার বন্ধ হয়, ৫ আষাঢ় ১২৬৬ (১৮ জুন ১৮৫৯) তারিখের সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায় মুদ্রিত সম্পাদকীয় বিবৃতি পাঠে তা জানা যাবে –
“কি কারণে সংবাদ সাধুরঞ্জন পত্র মাসত্রয় হইল অপ্রকাশ রহিয়াছে, আমরা পাঠক মহাশয়দিগকে তদ্বিবরণ বিদিত করা আবশ্যক বোধ করিলাম, গুণাকর প্রভাকর পত্র গ্রাহক মহোদয়দিগের মধ্যে অনেকেই অবগত আছেন, যে এতৎ পত্রের পূৰ্ব্বতন সম্পাদক ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত মহাশয় নীতি, ইতিহাস ও বিবিধ সংপ্রবন্ধ এবং রহস্য এবং অন্যান্য বিষয়ে কবিতাদি প্রকাশকরণার্থ উক্ত পত্রের সৃজন করিয়াছিলেন, তাহার লিপিনৈপুণ্যগুণে সাধুরঞ্জন অল্পকালের মধ্যেই আপনার নামানুরূপ কাৰ্য সাধন করাতে সাধারণ-সমাজে সম্যক বিধায়েই আদর প্রাপ্ত হয়, জ্ঞানবিশারদ পণ্ডিত অবধি বিদ্যালয়ের ছাত্র পর্যন্ত অনেকেই সমাদরে সাধুরঞ্জন পত্র গ্রহণ করেন, কুলবালারাও অন্তঃপুরে তাহা পাঠ করিয়া পরস্পর আমোদিতা হইতেন, এবং কেহ কেহ তাহাতে প্রকাশার্থে কবিতা লিখিয়াও পাঠাইতেন, সাধুরঞ্জন পত্র এই ভারতবর্ষ-এর বহুদেশে এইরূপে সমাদৃত হইলে কলিকাতার সরিফ সাহেব তাহাতে আপন কার্যালয়-এর বিজ্ঞাপন সকল প্রকাশার্থে প্রেরণ করেন, ঐ সময়ে ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত মহাশয় বিবেচনা করিলেন, সাধুরঞ্জন পত্রে যখন প্রকাশ্য বিজ্ঞাপন সকল আসিতে আরম্ভ হইল তখন তাহা আর আপনার নামে রাখা কর্ত্তব্য নহে, অতএব জ্ঞাতিভ্রাতা শ্রীযুক্ত নবকৃষ্ণ রায়কে তাহার সম্পাদক নামে পরিচিত করিলেন, নবকৃষ্ণ রায় ঐ সময়ে প্রভাকর যন্ত্রালয়ে থাকিয়া মেডিকেল কালেজে চিকিৎসা শাস্ত্রের অনুশীলন করিতেন, সাধুরঞ্জনের লিপিকাৰ্য কি অন্যান্য বিষয়ের সহিত তাঁহার কিছুমাত্র সম্বন্ধ ছিল না, প্রভাকর সম্পাদক ও তাহার সহকারিরাই তাহার সকল কার্য্য পরিচালন করিতেন, শ্রীমান নবকৃষ্ণ রায় কেবল নামমাত্র সম্পাদক ছিলেন।
পরন্তু ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত মহাশয় পরলোক গমন করিলে উক্ত নবকৃষ্ণ রায় সাধুরঞ্জন পত্র স্বয়ং গ্রহণ করিয়া প্রকাশ করণের প্রার্থনা করাতে আমরা বলিলাম যে, সাধুরঞ্জন পত্র স্বচ্ছন্দে নির্ব্বাহ কর, তাহাতে কোন আপত্তি নাই, তাহা হইতে যে কিছু উৎপন্ন হইবেক, তাহাও তোমাকে দিতে প্রস্তুত আছি। কিন্তু সাধুরঞ্জনের স্বত্ব তোমাকে দিতে পারি না, যেহেতু তাহা তোমার সম্পত্তি নহে, তোমার নামে কেবল বেনামী করা হইয়াছিল, একথা ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত মহাশয় আপনার শেষ উইলপত্রে স্পষ্টরূপেই উল্লেখ করিয়াছেন, এবং বিস্তর ভদ্রলোকেও ইহার সাক্ষী আছেন, আমারদিগের এই উত্তর শ্রবণ করিয়া নবকৃষ্ণ রায় কোনো কথার উল্লেখ মাত্র না করিয়া এক দিবসে আমারদিগের অজ্ঞাতসারে সরিফ সাহেবের কাৰ্য্যালয়ে গমন করিয়া সাধুরঞ্জন পত্রের সরিফ সেলের বিজ্ঞাপনের যে ছয় মাসের বিলের টাকা ছিল, তাহা আনয়ন করেন, আমরা তাঁহাকে এই অন্যায় ব্যবহারের কারণ জিজ্ঞাসা করাতে তিনি কোনো উত্তর না করিয়া রজনীযোগে যন্ত্রালয় হইতে সাধুরঞ্জন পত্রের হেড অর্থাৎ শিরোভূষণ এবং রূল ইত্যাদি লইয়া এক মাসের অধিক হইল, প্রস্থান করিয়াছেন, আর আমারদিগের সহিত সাক্ষাৎ করেন নাই, এইক্ষণে লোকের নিকটে বলিয়া বেড়াইতেছেন, যে সাধুরঞ্জন যখন তাঁহার নামে ছিল, তখন তাহারই কাগজ অন্য যন্ত্র হইতে প্রকাশ করিবেন, কিন্তু সংবাদ পত্র প্রকাশ করা সকলের সাধ্য নহে।”
সংবাদ সাধুরঞ্জন পত্রিকার পুনঃ প্রকাশের চিন্তা
এই সংবাদ সাধুরঞ্জন পত্র কয়েক মাস অপ্রকাশ থাকবার মূল কারণ, অতি সংক্ষেপে উপরিভাগে লেখা হল। এরপর ঐ পত্র পুনঃ প্রকাশে আমরা বিশেষরূপেই যত্নবান আছি, তাতে যপি একান্তই কৃতকাৰ্য হতে না পারি তবে সাধুরঞ্জনের পরিবর্তে অপর পত্র প্রকাশ করে অনুগ্রাহক পত্রগ্রাহক মহাশয়দের নিকটে প্রেরণ করব।
উপসংহার :- ‘সংবাদ সাধুরঞ্জন’ পত্রিকা আর প্রকাশিত হয় নি। তার পরিবর্তে প্রভাকর যন্ত্রালয় থেকে ‘সংবাদ দ্বিজরাজ’ নামে অপর একটি সাপ্তাহিক পত্রের উদয় হয়েছিল।
(FAQ) সংবাদ সাধুরঞ্জন পত্রিকা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
সাপ্তাহিক পত্রিকা।
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত।
আগস্ট ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে।