অবোধবন্ধু পত্রিকা

অবোধবন্ধু পত্রিকা প্রসঙ্গে অবোধবন্ধু পত্রিকার সমালোচনা, অবোধবন্ধু পত্রিকার প্রথম খণ্ড প্রথম সংখ্যা, অবোধবন্ধু পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ ও পুনঃ প্রকাশ, অবোধবন্ধু পত্রিকার দ্বিতীয় ভাগের প্রথম সংখ্যা, অবোধবন্ধু পত্রিকার কণ্ঠে শ্লোক, অবোধবন্ধু পত্রিকার সাথে বিহারিলাল চক্রবর্তীর যোগ, অবোধবন্ধু পত্রিকার ভূতপূর্ব স্বত্বাধিকারীর বিজ্ঞাপন, অবোধবন্ধু পত্রিকার ভূতপূর্ব স্বত্বাধিকারীর বিজ্ঞাপন, অবোধবন্ধু পত্রিকার লেখক, অবোধবন্ধু পত্রিকায় বিহারিলালের গ্ৰন্থ প্রকাশ, বিহারীলালের সম্পাদনাকালে অবোধবন্ধু পত্রিকায় রচনা প্রকাশ ও অবোধবন্ধু পত্রিকার সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মন্তব্য সম্পর্কে জানবো।

মাসিক অবোধবন্ধু পত্রিকা প্রসঙ্গে অবোধবন্ধু পত্রিকার ভাষা, অবোধবন্ধু পত্রিকার ধরণ, অবোধবন্ধু পত্রিকার প্রকাশকাল, অবোধবন্ধু পত্রিকার সম্পাদক, অবোধবন্ধু পত্রিকার সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মন্তব্য, অবোধবন্ধু পত্রিকা সমালোচনা সম্পর্কে জানব।

অবোধবন্ধু পত্রিকা

ঐতিহাসিক পত্রিকাঅবোধবন্ধু পত্রিকা
ধরণমাসিক পত্রিকা
ভাষাবাংলা
প্রকাশকালমে ১৮৬৩ খ্রি
সম্পাদকযোগেন্দ্রনাথ ঘোষ
অবোধবন্ধু পত্রিকা

ভূমিকা :- ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের মে (১২৭০, বৈশাখ) মাসে ‘অবোধবন্ধু’ নামে একটি মাসিক পত্র প্রকাশিত হয়। এর সম্পাদক ছিলেন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক যোগেন্দ্রনাথ ঘোষ।

অবোধবন্ধু পত্রিকার সমালোচনা

এই পত্রিকাটির সমালোচনা প্রসঙ্গে ‘সোমপ্রকাশ’ লেখে,

  • (১) “অবোধবন্ধু। কলিকাতা স্কুলবুক যন্ত্রে মুদ্রিত হইতেছে। আমরা ইহার দুই খণ্ড পাইয়াছি। লেখা মন্দ হইতেছে না। প্রতি খণ্ডের মূল্য অর্ধ আনা। (৬ জুলাই ১৮৬৩)
  • (২) অবোধবন্ধু। তৃতীয় ও চতুর্থ সংখ্যা। এই চতুর্থ ভাগে হেয়ার সাহেবের জীবন চরিত আছে। লেখা ক্রমশ উত্তম হইতেছে। (৩১ আগস্ট ১৮৬৩)।

অবোধবন্ধু পত্রিকার প্রথম খণ্ড প্রথম সংখ্যা

এই পত্রিকার ১ খণ্ড ১ সংখ্যার প্রারম্ভে নিচে অংশটি মুদ্রিত হয়েছে। –

স্বদেশের যে প্রকারে হোতে পারে হিত  আরম্ভ৷            

তথাচ নিরস্ত থাকা, যুক্তিযুক্ত নয়;

সাধ্যমত চেষ্টা করা সবার উচিত।                  

কি জানি সহস্ৰ মাঝে যদি কোন জন

তিল সম হেন কাজ যদি মনে লয়,                 

সামান্য সে ক্ষুদ্র কাজে উপকৃত হন।                                           

অবোধবন্ধু পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ ও পুনঃ প্রকাশ

এই পত্রিকা কিছু দিন চলার পর আত্মগোপন করে। ১৯৭৩ সালের ফাল্গুন (১৮৬৭, ফেব্রুয়ারি) মাসে এই পত্রিকা নবোদ্যমে পুনঃপ্রচারিত হয়।

অবোধবন্ধু পত্রিকার দ্বিতীয় ভাগের প্রথম সংখ্যা

এই পত্রিকার দ্বিতীয় ভাগ আরম্ভ হয় ১৯৭৫ সালের বৈশাখ মাসে। প্রথম সংখ্যায় “নববর্ষ” প্রসঙ্গে নিম্নরূপ লিখিত হয়েছে –

“১২৭৩ সালের ফাল্গুন মাসে অবোধ বন্ধু প্রকাশিত হইয়া গত ১২৭৪ সালের মাঘ মাসে তাহার এক বর্ষ পূর্ণ হয়। এক্ষণে নানা কারণ এবং সুবিধা বশতঃ বর্তমান বর্ষের প্রথম মাস হইতে অবোধবন্ধুর দ্বিতীয় বর্ষ আরম্ভ হইল। ইহার ক্ষুদ্র কলেবর পরিবর্তন করা আবশ্যক বোধে আমরা যেরূপ করিবার মানস করিয়াছিলাম, তাহা রহিত করিয়া এইরূপ আকারে প্রকাশ করিলাম। … উপসংহার কালে, যে সকল ভ্রাতা ভগিনী গত বর্ষে আমাদিগকে সাহায্য প্রদান করিয়াছেন, তাহাদিগের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিতেছি। এবং আমার পরম বন্ধু শ্রীযুক্ত বাবু বিহারিলাল চক্রবর্তী মহাশরের নাম এস্থলে উল্লেখ না করিয়া থাকিতে পারিলাম না। তিনি অবোধবন্ধুর জন্য এরূপ শারীরিক ও মানসিক যত্ন ও পরিশ্রম স্বীকার করিয়াছেন যে অবোধবন্ধু চিরকাল তাহার নিকট কৃতজ্ঞতা পাশে বদ্ধ রহিল।”

অবোধবন্ধু পত্রিকার কণ্ঠে শ্লোক

দ্বিতীয় বর্ষ থেকে এই পত্রিকার কণ্ঠে নিম্নলিখিত শ্লোকটি শোভা পেত । –

“করবদরসদৃশমখিলং ভুবনতলং যৎপ্রসাদতঃ কবয়ঃ।

পশ্যন্তি সুক্ষ্মমতয়ঃ সা জয়তি সরস্বতী দেবী।।”

অবোধবন্ধু পত্রিকার সাথে বিহারিলাল চক্রবর্তীর যোগ

কবি বিহারিলাল চক্রবর্তী ‘অবোধ বন্ধু’ পত্রিকার সাথে বিশেষভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। দ্বিতীয ভাগের নবম সংখ্যা (পৌষ ১২৭৫) থেকে তিনি পত্রিকার স্বত্বাধিকারী হন।

অবোধবন্ধু পত্রিকার ভূতপূর্ব স্বত্বাধিকারীর বিজ্ঞাপন

তৃতীয় ভাগের প্রথম সংখ্যায় (বৈশাখ ১২৭৬) এই পত্রিকার ভূতপূর্ব স্বত্বাধিকারীর নিম্নোক্ত বিজ্ঞাপনটি মুদ্রিত হয়েছে। –

“১২৭৬ সাল, ১৫ই বৈশাখ। আমি ১৯৭৫ সালের পৌষ মাসের সংখ্যা অবধি অবোধবন্ধুর স্বত্বাধিকার শ্রীযুক্ত বাবু বিহারিলাল চক্রবর্তীকে প্রদান করিয়াছি।” … শ্রীযোগেন্দ্রনাথ ঘোষ। অবোধবন্ধুর ভূতপূর্ব্ব স্বত্বাধিকারী।

অবোধবন্ধু পত্রিকার লেখক

এই পত্রিকার অন্যতম প্রধান লেখক ছিলেন আচার্য্য কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য্য। তাঁর বহু রচনা এই পত্রিকায় স্থান পেয়েছিল। তিনি স্মৃতিকথায় বলেছেন যে,

“কিছু দিন পরে বিহারিলাল ও যোগীন্দ্রচন্দ্র ঘোষ প্রমুখ কয়েকজন বন্ধু একত্র হইয়া ‘অবোধবন্ধু’ নামক একখানি মাসিক পত্র প্রতিষ্ঠিত করেন। এই পত্রিকাখানি বোধ হয়, ইংরাজি ১৮৭১ সাল পর্যন্ত জীবিত ছিল। ইহাতে আমি অনেক বিষয়ে লিখিয়াছিলাম। সমগ্র ‘পল-বর্জিনিয়া’ গ্রন্থ ফরাসী ভাষা হইতে অনুবাদ করিয়া ক্রমশ প্রকাশিত হইয়াছিল; নেপোলিয়ন-এর একটি জীবনবৃত্তান্ত বহুবিস্তারিতভাবে লোডির যুদ্ধ পর্যন্ত বাহির করা হইয়াছিল। অনেক প্রবন্ধও লিখিয়াছিলাম। মনে পড়ে, একটি প্রবন্ধে য়ুরোপের duel (অর্থাৎ য়ুরোপীয়েরা অপমানিত হইলে পরস্পর প্রাণান্ত পর্যন্ত যে মারামারিতে প্রবৃত্ত হয়, তাহারই) সম্বন্ধে আলোচনা করিয়াছিলাম।”

অবোধবন্ধু পত্রিকায় বিহারিলালের গ্ৰন্থ প্রকাশ

কবি বিহারিলাল চক্রবর্তীর বহু রচনা, যেমন – ‘নিসর্গসন্দর্শন’, ‘বঙ্গসুন্দরী, ‘সুরবালা কাব্য’ প্রভৃতি এই সময় ‘অবোধবন্ধু’তে প্রকাশিত হয়।

বিহারীলালের সম্পাদনাকালে অবোধবন্ধু পত্রিকায় রচনা প্রকাশ

তাঁর সম্পাদনকালেই হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ইন্দ্রের সুধাপান’ (শ্রাবণ ১২৭৬) এবং কৃষ্ণকমলের ‘পৌলভর্জ্জিনী’, ‘নেপোলিয়ন বোনাপার্টের জীবন বৃত্তান্ত’ ও অন্যান্য রচনা ‘অবোধ বন্ধু’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

অবোধবন্ধু পত্রিকা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের মন্তব্য

এই পত্রিকা সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য তিনি লিখেছেন,

  • (১) “বাংলা ভাষায় বোধ করি সেই প্রথম মাসিক পত্র বাহির হইয়াছিল যাহার রচনার মধ্যে একটা স্বাদবৈচিত্র্য পাওয়া যাইত। বর্তমান বঙ্গ-সাহিত্যের প্রাণসঞ্চারের ইতিহাস যাহারা পৰ্যালোচনা করিবেন তাহারা অবোধবন্ধুকে উপেক্ষা করিতে পারিবেন না। বঙ্গদর্শনকে যদি আধুনিক বঙ্গসাহিত্যের প্রভাতসূর্য বলা যায় তবে ক্ষুদ্রায়তন অবোধবন্ধুকে প্রত্যুষের শুকতারা বলা যাইতে পারে।” (সাধনা)
  • (২) “বাল্যকালে আর একটি ছোট কাগজের পরিচয় লাভ করিয়াছিলাম। তাহার নাম অবোধবন্ধু। ইহার আবাঁধা খণ্ডগুলি বড়দাদার আলমারি হইতে বাহির করিয়া তাঁহারই দক্ষিণদিকের ঘরে খোলা দরজার কাছে বসিয়া বসিয়া কতদিন পড়িয়াছি। এই কাগজেই বিহারিলাল চক্রবর্ত্তীর কবিতা প্রথম পড়িয়াছিলাম। তখনকার দিনের সকল কবিতার মধ্যে তাহাই আমার সব চেয়ে মন হরণ করিয়াছিল। তাহার সেই সব কবিতা সরল বাশির সুরে আমার মনের মধ্যে মাঠের এবং বনের গান বাজাইয়া তুলিত। এই অবোধবন্ধু কাগজেই বিলাতী পৌলবর্জ্জিনী গল্পের সরল বাংলা অনুবাদ পড়িয়া কত চোখের জল ফেলিয়াছি তাহার ঠিকানা নাই। আহা, সে কোন সাগরের তীর। সে কোন সমুদ্রসমীরকম্পিত নারিকেলের বন। ছাগল চরা সে কোন পাহাড়ের উপত্যকা ! কলিকাতা শহরের দক্ষিণের বারান্দায় দুপুরের রৌদ্রে সে কী মধুর মরীচিকা বিস্তীর্ণ হইত। আর সেই মাথায় রঙিন রুমাল-পরা বর্তিনীর সঙ্গে সেই নির্জন দ্বীপের শ্যামল বনপথে একটি বাঙ্গালি বালকের কী প্রেমই জমিয়াছিল।” (জীবনস্মৃতি)

উপসংহার :- অবোধবন্ধু পত্রিকা তৎকালীন সময়ে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। বিহারীলাল চক্রবর্তী এই পত্রিকার সাথে ঘণিষ্ঠ ভাবে যুক্ত ছিলেন‌। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই পত্রিকার বিশেষ গুণগ্ৰাহী ছিলেন।

(FAQ) অবোধবন্ধু পত্রিকা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. অবোধবন্ধু কি ধরণের পত্রিকা?

মাসিক পত্রিকা।

২. অবোধবন্ধু পত্রিকা প্রকাশিত হয় কখন?

মে ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে।

৩. অবোধবন্ধু পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন?

যোগেন্দ্রনাথ ঘোষ।

অন্যান্য ঐতিহাসিক পত্রিকাগুলি

Leave a Comment