ঐতিহাসিক স্থান পাটলিপুত্র প্রসঙ্গে পাটলিপুত্রের বিভিন্ন নাম, পাটলিপুত্রের নামকরণ, রাজধানী পাটলিপুত্র, পাটলিপুত্র নগরী স্থাপন, পাটলিপুত্রের বর্তমান নাম, পাটলিপুত্র নগরের প্রতিষ্ঠাতা, প্রশাসনিক কেন্দ্র ও রাজধানী রূপে পাটলিপুত্র, পাটলিপুত্রে বৌদ্ধ সংগীতির অধিবেশন, দীর্ঘ সময় ধরে রাজধানী পাটলিপুত্র, কালের গর্ভে বিলীন পাটলিপুত্র ও পাটলিপুত্র থেকে পাটনা সম্পর্কে জানব।
ভারতের প্রাচীন নগর পাটলিপুত্র প্রসঙ্গে পাটলিপুত্র নগরের অবস্থান, পাটলিপুত্রের নামকরণের ইতিহাস, পাটলিপুত্র শহরের প্রতিষ্ঠাতা, গৌতম বুদ্ধ ও পাটলিপুত্র, পাটলিপুত্রের উন্নতির সূচনা, চারটি ধারাবাহিক রাজবংশের ইতিহাসের ধারক পাটলিপুত্র, হিউয়েন সাঙের পাটলিপুত্র ভ্রমণ, খ্যাতির শীর্ষে পাটলিপুত্র, পাটলিপুত্রের অবক্ষয় ও পাটনা নামকরণ সম্পর্কে জানব।
পাটলিপুত্র
ঐতিহাসিক স্থান | পাটলিপুত্র |
প্রাচীন নাম | পাটালিগ্রাম, কুসুমপুরা, পুষ্পপুরা ইত্যাদি |
নির্মাতা | অজাতশত্রু |
বর্তমান নাম | পাটনা |
রাজধানী | নন্দ, মৌর্য, শুঙ্গ, গুপ্ত, পাল বংশ |
অবস্থান | বর্তমান বিহার রাজ্যের পাটনা সংলগ্ন অঞ্চল |
ভূমিকা :- পাটলিপুত্র আধুনিক ভারত -এর পাটনা শহরের প্রাচীন নাম। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় অব্দে সম্রাট অশোক-এর রাজত্বকালে পাটলি পুত্র ছিল পৃথিবীর বৃহত্তর শহরগুলির মধ্যে অন্যতম জনাকীর্ণ একটি শহর।
পাটলিপুত্রের বিভিন্ন নাম
দীর্ঘতম সময় ধরে টিকে থাকা শহর হিসেবে পাটনা বিভিন্ন শাসনামলে বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল। যেমন – পাটালিগ্রাম, পাটালিপুত্র, কুসুমপুর, পুষ্পপুরা, আজিমাবাদ এবং বর্তমানের পাটনা, যাকে বলা হয় প্রাচীন পাটলিপুত্রের নতুন রূপ।
ঐতিহাসিক পাটলিপুত্রের নামকরণ
বিখ্যাত পাটলিপুত্রের নামকরণের ইতিহাস কিছুটা অস্পষ্ট।
- (১) ‘পুত্র’ শব্দের অর্থ ছেলে। আবার ‘পাটলি’ ধানের একটি প্রজাতির নাম। একটি কিংবদন্তি অনুসারে, ধানের এই প্রজাতির নামেই পাটলিপুত্র শহরের নামকরণ করা হয়েছিল।
- (২) আরেকটি কিংবদন্তি অনুসারে, ‘পাটলি পুত্র’ নামটির অর্থ পাটলির পুত্র। এই পাটলি ছিলেন রাজা সুদর্শনের কন্যা।
- (৩) কোনো কোনো গবেষকের মতে ‘পাটলিপুত্র’ শব্দটি এসেছে ‘পাটলিপুর’ শব্দটি থেকে।
পাটলীপুত্র শহর নির্মাণ
ভারতে প্রাচীন পাটলীপুত্র শহরটি মূলত অজাতশত্রু ৪৯০ খ্রিস্টপূর্বে গঙ্গানদীর নিকটে একটি ক্ষুদ্রাকৃতির দুর্গ (পাটালীগ্রাম) আকারে নির্মাণ করেছিলেন। পরবর্তীকালে যা প্রাচীন মহাজনপদ সমূহের মধ্যে মগধ রাজ্যের রাজধানীর মর্যাদা লাভ করে।
বিখ্যাত প্রশাসনিক কেন্দ্র ও রাজধানী রূপে পাটলিপুত্র
নন্দ, মৌর্য, সুঙ্গ ও গুপ্ত থেকে শুরু করে পালদের সময় পর্যন্ত উত্তর-মধ্য ভারতীয় রাজবংশের শাসকদের প্রশাসনিক কেন্দ্র ও রাজধানী হিসেবে পাটলীপুত্রের গুরুত্ব ছিল।
গৌতম বুদ্ধ ও পাটলিপুত্র
বৌদ্ধ ধর্ম -এর প্রতিষ্ঠাতা গৌতম বুদ্ধের সময় পাটলিপুত্র শহরটি পাটলীগ্রাম নামে পরিচিত হয়। গৌতম বুদ্ধ এই গ্রামেই তাঁর জীবনের শেষ সময় অতিবাহিত করেছেন।
পাটলিপুত্র শহরে বৌদ্ধ সংগীতির অধিবেশন
এই পাটলিপুত্র শহরেই দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। প্রথমটি গৌতম বুদ্ধের মৃত্যুর সময় রাজা অজাতশত্রুর আমলে এবং দ্বিতীয়টি সম্রাট অশোক -এর রাজত্বকালে।
রাজধানী পাটলিপুত্রের উন্নতির সূচনা
প্রাচীন পাটলিপুত্র মৌর্য শাসকদের অধীনে রাজধানীর মর্যাদা পাওয়ার পরই তা উন্নতির শীর্ষে অবতীর্ণ হয়।
দীর্ঘ সময় ধরে রাজধানী পাটলিপুত্র
পাটলিপুত্র অজাতশত্রু, চন্দ্রগুপ্ত ও অশোক -এর সময়েই শুধু রাজধানী ছিল না গুপ্ত রাজবংশীয় শাসন আমল (তৃতীয় – চতুর্থ শতক) থেকে পাল সাম্রাজ্য (অষ্টম – দশম শতক) পর্যন্ত দীর্ঘ সময় পাটলি পুত্র রাজধানীর মর্যাদায় অধিষ্ঠিত ছিল।
চারটি ধারাবাহিক রাজবংশের ইতিহাসের ধারক পাটলিপুত্র
প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে প্রাপ্ত প্রায় ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের ধ্বংসাবশেষ ও পুরাতাত্বিক নিদর্শন প্রমাণ করে যে, পাটলিপুত্র শহরটি ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৬০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে অন্ততপক্ষে চারটি ধারাবাহিক রাজবংশীয় যুগের ইতিহাস ধারণ করে।
হিউয়েন সাঙের পাটলিপুত্র ভ্রমণ
চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং তাঁর ভ্রমণকালে শহরটির প্রায় ভগ্নদশা দেখতে পান। তিনি তাঁর ভ্রমণবৃত্তান্তে পাথরের তৈরি শহরের বিস্তৃত বর্ণনা দিয়েছেন।
ফাহিয়েনের বর্ণনায় পাটলিপুত্র
চীন -এর পর্যটক ফা-হিয়েন পাটলিপুত্রে গিয়ে মৌর্য বংশের সম্রাট অশোকের প্রাসাদ দেখে হতবাক হয়ে বলে ফেলেছিলেন যে, এমন প্রাসাদ তৈরি করার সাধ্য কোন মানুষের নেই।
চিকিৎসাক্ষেত্র হিসেবে পাটলিপুত্র
প্রাচীন পাটলিপুত্রে সেই সময়েও ছিল পশু হাসপাতাল ও মানুষের জন্য হাসপাতাল।
শক্তির আধার ও কেন্দ্রবিন্দু পাটলিপুত্র
মৌর্য সাম্রাজ্য -এর উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে (খ্রি.পূ. ৩২১-১৮৫) পাটলীপুত্র ভারতীয় উপমহাদেশের শক্তির আধার ও কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ও পাটলিপুত্র
পাটলিপুত্রকে কেন্দ্র করেই মৌর্যদের বিখ্যাত রাজা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য বঙ্গোপসাগর হতে আফগানিস্তান পর্যন্ত তাঁর রাজ্য সম্প্রসারণের মাধ্যমে এক বিস্তৃত ভূ-খন্ড শাসন করেন।
কৌটিল্যের তত্ত্বাবধানে পাটলিপুত্র
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য কৌটিল্য -এর তত্ত্বাবধানে রাজধানী পাটলিপুত্রকে কেন্দ্র করে জটিল প্রশাসনিক ব্যবস্থা সহ একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
অশোকের রাজত্বকালে পাটলিপুত্র
২৭৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সম্রাট অশোক এই কাঠের রাজধানীটিকে পাথরের তৈরি রাজধানীতে রূপান্তরিত করেন।
খ্যাতির শীর্ষে পাটলিপুত্র
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শাসক রাজত্ব করলেও মৌর্য সম্রাট অশোকের রাজধানী হিসেবেই পাটলিপুত্রের খ্যাতি বেশি ছড়িয়ে পড়েছিল। অশোক ছিলেন এক জনদরদী শাসক। তাঁর মহান বাণী ও উপদেশ সমূহ তিনি রাজ্যের নানাস্থানে লিপিবদ্ধ করেছিলেন।
জলদুর্গ পাটলিপুত্র
গঙ্গা, গণ্ডকী ও শোন নদীর সংযোগ স্থলে অবস্থিত পাটলিপুত্র ছিল একটি ‘জলদুর্গ’। এই অবস্থানের কারণে মগধ সাম্রাজ্য-এর প্রথম দিকে সিন্ধু-গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করতে শাসকদের সুবিধা হয়েছিল।
বাণিজ্যিক স্থান হিসেবে পাটলিপুত্র
প্রাচীন পাটলি পুত্র শহরটি ছিল ব্যবসা ও বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র।
গুপ্ত সম্রাট প্রথম চন্দ্রগুপ্ত ও পাটলিপুত্র
প্রথম চন্দ্রগুপ্ত লিচ্ছবী বংশীয় রমনীকে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ করলে রানী যৌতুক হিসেবে পাটলিপুত্র স্থানটি সঙ্গে আনলে চন্দ্রগুপ্ত তাকে রাজ্যের রাজধানীতে রূপান্তরিত করেন।
পাটলিপুত্র শহরের অবকাঠামো
মৌর্য শাসকদের অধীনে প্রাথমিক পর্যায়ের পাটলিপুত্রের অবকাঠামো তৈরি হয়েছিল।
- (১) পাটলি পুত্র শহরের বহুতল বিশিষ্ট কাঠের দালান ও প্রাসাদসমূহ ছিল বাগান ও পুকুর দ্বারা পরিবেষ্ঠিত।
- (২) পাটলিপুত্র শহরের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল এর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। পরিখার আকারে পানির আধার সৃষ্টি করে প্রত্যেক রাস্তার পাশে এমন ব্যবস্থা করা ছিল যা একাধারে শহরের প্রতিরক্ষা ও পয়ঃনিষ্কাশনের কাজ করত।
সেলুকাসের দূত মেগাস্থিনিসের ভাষায় পাটলিপুত্র
গ্রিক দূত মেগাস্থিনিস তাঁর ভাষায় পাটলি-পুত্রকে তিনি বলেছিলেন পালিবোথরা।
মেগাস্থিনিসের বর্ণনায় পাটলিপুত্র
প্রাচীন গ্রিক দূত মেগাস্থিনিস পাটলিপুত্রকে ভারতের বিখ্যাত শহর হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁর বর্ণনায় দেখা যায় যে,
- (১) পাটলিপুত্র নগরীটি গঙ্গা আর শোন নদীর মিলনস্থলে অবস্থিত। এটি মৌর্য সাম্রাজ্য-এর রাজধানী।
- (২) উত্তর পশ্চিম সীমান্ত এলাকা থেকে পাটলিপুত্র পর্যন্ত চওড়া এক রাজপথ আছে। বহু দূর-দূরান্তের মানুষ এই শহরে আসে।
- (৩) লম্বায় এগারো মাইল আর চওড়ায় দুই মাইল। কাঠের তৈরি উঁচু প্রাচীর ঘিরে রেখেছে পুরো শহরটাকে।
- (৪) প্রাচীরের মাঝে মাঝে ছিল মস্ত বড় বড় ফটক। এমন ৬৪ টি ফটকের বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।
- (৫) পাটলিপুত্র শহরে আছে ৫০০টির মতো কেল্লা।
- (৬) শহরের নিরাপত্তার জন্য বড় একটি পরিখা দিয়ে শহরটিকে ঘিরে রাখা হয়েছে। এই পরিখা বা খালটি দুশো গজ চওড়া আর বিশ গজ গভীর।
- (৭) এই শহরের মাঝে কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এক চমৎকার রাজপ্রাসাদ। প্রাসাদের থামগুলো সাজানো আছে সোনার তৈরি আঙুরলতা আর রূপোর তৈরি পাখি দিয়ে।
- (৮) পাটলিপুত্র শহরটি ছিল একটি সামন্তরিক ক্ষেত্র, যার দীর্ঘ অংশ ৮০ স্টেড (Stade, জার্মান একক) ও ক্ষুদ্র অংশ ১৫ স্টেড।
- (৯) একটি কাঠের তৈরি দেওয়াল দ্বারা পুরো পাটলিপুত্র শহরটি ঘেরা। পর্যটকদের বর্ণনানুযায়ী দেওয়ালটিতে ছিল ৫৭০টি টাওয়ার ও ৬৪টি তোরণ। দেওয়ালের বাইরে ছিল গভীর খাত, যা একাধারে প্রতিরক্ষা ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার কাজ করতো।
ঐতিহাসিক স্থান পাটলিপুত্রে প্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন
পাটলিপুত্রে উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া যায়। যেমন –
(১) আশি স্তম্ভ হল
পাটলিপুত্রে উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক চিহ্ন সমূহের মধ্যে অন্যতম নিদর্শন হল মৌর্য যুগের (৩২৪-১৮৫ খ্রি. পূ.) ৮০ স্তম্ভ বিশিষ্ট একটি হল।
(২) প্রস্তরভস্ম
১৯১২-১৯১৫ সালের মধ্যে ডি.বি. স্পুনার কর্তৃক প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে পাটলিপুত্র শহরে একটি মসৃণ পাথরের স্তম্ভ ও ব্যাপক সংখ্যক পাথরের খন্ডাংশ পাওয়া গিয়েছে।
(৩) ছাইভস্মের গহ্বর
খননকার্যের ফলে ৭২টি ছাইভস্মের গহবর এবং প্রচুর পাথরকুচির অস্তিত্ব থেকে প্রমাণ হয় যে, উক্ত স্থানে অন্যান্য আরো স্তম্ভের অস্তিত্ব ছিল।
(৪) সম্মেলনশালা
১৯৫১-১৯৫৫ সালের মধ্যে কে পি যশওয়াল কর্তৃক খননকার্য সম্পাদনকালে অনুরূপ ৮টি ভস্মের গর্তের সন্ধান পাওয়া যাওয়ার পর উক্ত প্রত্নস্থলের নামকরণ হয় ৮০ স্তম্ভ বিশিষ্ট সম্মেলনশালা।
(৫) অশোকর্মা
কোনো কোনো ঐতিহাসিক ৮০ স্তম্ভ হলের অস্তিত্বের সূত্র ধরে মনে করেন যে, ২৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মৌর্য সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে (খ্রি.পূ ২৭৩-২৩২) পাটলিপুত্রের অন্তর্গত অশোকর্মার এ স্থানেই তৃতীয় বৌদ্ধ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
(৫) আনন্দ বিহার
পাটলিপুত্রে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে কাঠের পাটাতন ও মাটির মূর্তি ছাড়াও ইটের ভিত্তির উপর নির্মিত বৌদ্ধ বিহারের অস্তিত্বের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। বর্তমানে স্থানটি আনন্দ বিহার নামে উদ্যান পরিবেষ্টিত ও জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত দর্শনীয় স্থান।
(৬) আরোগ্য বিহার
পাটলিপুত্র শহরে প্রাচীনকালের ভারতীয় চিকিৎসক ধনন্তরীর কর্তৃত্বাধীনে নিয়ন্ত্রিত একটি আরোগ্য বিহারের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে যা প্রাচীন ভারতীয় আয়ুর্বেদ চর্চার সূত্রের সন্ধান দেয়।
(৭)দুরুখি দেবী মন্দির
১৮৯০-এর দশকে প্রত্নতত্ত্ববিদ ওয়াডেল কর্তৃক খননের ফলে একটি সূতপ এর উপরে উভয় পাশে নারী মূর্তি সংযোজিত বাঁকানো পাথরের রেলিং এর সন্ধান পাওয়া গেছে।
- (ক) দুইমুখে নারী মূর্তি সংস্থাপিত থাকার ফলে মন্দিরের নামকরণ হয়েছে দুরুখী বা দুরুখ্যিয়া দেবী মন্দির, যা সুঙ্গ শিল্পের উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
- (খ) মুর্তিগুলির গাছের ডাল হাতে ধরে তা ভাঙনরত ভঙ্গিমায় দাঁড়ানো যার নাম সালভঞ্জিকা (গাছের ডাল বা শাখা ভাঙা) এবং এর প্রতীকী অর্থ সন্তান উৎপাদনের উদ্দেশ্যে আয়োজিত ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে উপস্থিত যুবতী নারী।
- (গ) পরবর্তীকালে প্রত্নস্থল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরত্বে নয়াটোলা (কঙ্করবাগ) নামক স্থানে এই মূর্তিগুলোকে নিয়ে আসা হয় এবং মন্দির সদৃশ্য স্থানে রেখে তার পূজা দেওয়া হয়।
- (ঘ) অনুরূপ একটি প্রতীকী মূর্তি বর্তমানে পাটনা জাদুঘর-এ রক্ষিত আছে।
যেহেতু পাটনা শহরের খুব সামান্য অংশেই প্রত্নতাত্ত্বিক খননের কাজ হয়েছে, সেহেতু ধারণা করা যায় যে, পাটলীপুত্রের অসংখ্য প্রত্ননিদর্শন আধুনিক পাটনা শহরের মাটির নীচে এখনো রয়ে গেছে।
কালের গর্ভে বিলীন পাটলিপুত্র
প্রাচীন মৌর্য সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসেবে খ্যাত পাটলিপুত্র শহরটি কালের গর্ভে হারিয়ে গিয়ে প্রত্নতাত্ত্বিকদের গবেষণার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। তবে এক সময় শহরটি ছিল ঐতিহাসিক স্থাপনা সমৃদ্ধ ও প্রাণশক্তিতে ভরপুর।
রাজধানী পাটলিপুত্র থেকে পাটনা
শের শাহ শুরী তাঁর রাজধানী পাটলিপুত্রে স্থাপন করে নতুন নাম করেন পাটনা। এই পাটনা শহরের কাছাকাছি এলাকাতেই প্রাচীন নগরী পাটলিপুত্রের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে।
উপসংহার :- আজকের মানুষও যখন প্রাচীন নগরী পাটলিপুত্রের ধ্বংসাবশেষের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় তখন তাঁদের চোখের সামনে ভেসে উঠে হাজার হাজার বছর আগেকার কোলাহল মুখরিত এক হারিয়ে যাওয়া শহরের স্মৃতি।
[FAQ] পাটলিপুত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
অজাতশত্রুর পুত্র উদয়িন বা উদয়ভদ্র।
পাটনা।
মগধ।
গঙ্গা, গণ্ডকী ও শোন নদী