ব্রের্টোল্ট ব্রেখট

জার্মান কবি ও নাট্যকার ব্রের্টোল্ট ব্রেখট -এর জন্ম, পিতৃপরিচয়, শিক্ষা, ব্যক্তিগত জীবন, নির্বাসিত জীবন, কর্মজীবন, নাট্যজীবন, নটকসমূহ, কবিতা সমূহ, পুরস্কার ও সম্মাননা এবং তার মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।

ব্রের্টোল্ট ব্রেখট

ঐতিহাসিক চরিত্র ব্রের্টোল্ট ব্রেখট
জন্ম ১০ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দ
পিতামাতা বের্টোল্ট ফ্রেডরিখ ব্রেখট, সোফিয়া
পেশা নাট্যকার, কবি
দেশ জার্মানি
মৃত্যু ১৪ আগস্ট, ১৯৫৬ সাল
ব্রের্টোল্ট ব্রেখট

ভূমিকা:- একজন জার্মান নাট্যকর্মী, নাট্যকার ও কবি ছিলেন ইগুয়েন বের্টোল্ট ফ্রেডরিখ ব্রেখট। ব্রের্টোল্ট ব্রেখট নামেই তিনি সমধিক পরিচিত। ওয়েমার প্রজাতন্ত্র -এর যুগে তিনি মিউনিখে নাট্যকার হিসেবে প্রথম সাফল্য অর্জন করেন এবং ১৯২৪ সালে বার্লিনে চলে যান।

জন্ম

১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দের ১০ ফেব্রুয়ারি জার্মানির মিউনিখ শহরের চল্লিশ মাইল উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত বাভারিয়ার অগসবার্গে বের্টোল্ট ব্রেখট -এর জন্ম।

পিতৃপরিচয়

ব্রেখটের বাবা বের্টোল্ট ফ্রেডরিখ ব্রেখট ছিলেন স্থানীয় হাইতুল কাগজ কারখানার কর্মচারী এবং তার মা ছিলেন সোফিয়া।

শিক্ষা

১৯০৪ সালে ছ-বছর বয়সে ব্রেখটকে ভরতি করে করা হয় স্থানীয় প্রোটেস্ট্যান্ট প্রাথমিক স্কুলে। দশ বছর বয়সে তাকে পাঠানো হয় রয়্যাল বাভারিয়ান বালজিমনেসিয়ামে। ১৯১৭ সাল থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত ব্রেখট মিউনিখে চিকিৎসাবিদ্যার ওপর পড়াশোনা করেন, কিন্তু তার ঝোঁক ছিল সাহিত্যের দিকে।

ব্যক্তিগত জীবন

১৯২২ সালে ব্রেখট অপেরা গায়িকা মারিয়ানকে বিয়ে করেন। তাঁদের একটি কন্যা সন্তান। তবে তিনি অনুগত স্বামী ছিলেন না। ১৯২৯ সালের ১০ই এপ্রিল তিনি হেলেনে ভাইগেল-কে বিয়ে করেন। বিয়ের পরে তাঁদের একটি সন্তান হয়।

নির্বাসিত জীবন

নাৎসি আমলে তিনি নির্বাসিত জীবন কাটান, প্রথমে স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ -এর সময় আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে, যেখানে তিনি এফবিআইয়ের নজরদারি ও হাউস অনামেরিকান কর্মকাণ্ড কমিটির সমনজারিতে ছিলেন।

নাট্য সংস্থা প্রতিষ্ঠা

যুদ্ধের পরে পূর্ব বার্লিনে ফিরে এসে তিনি তার স্ত্রী এবং দীর্ঘকালীন সহযোগী অভিনেত্রী হেলেন ভেইগেলের সঙ্গে নাট্য সংস্থা বার্লিনার এনসেম্বল প্রতিষ্ঠা করেন।

কর্মজীবন

  • (১) তিনি বার্লিনে কিছুদিনের জন্য মঞ্চ পরিচালক মাক্স রাইনহার্ট ও এর্ভিন পিস্কাটর, এবং নাট্যকার কার্ল সুক্‌মাইয়ারের সাথে কাজ করেন। ১৯২৮ সালে ব্রেখট সুরকার কুর্ট ভাইলের সহযোগিতায় ইংরেজি অপেরা “দ্য বেগার্স অপেরা”-র একটি সম্পূর্ণ সংশোধিত সংস্করণ প্রস্তুত করেন।
  • (২) অপেরাটি ডি দ্রাইগ্রোশেন্‌ওপার (Die Dreigroschenoper) নামে বার্লিনের থিয়েটার আম শিফবাউয়ারডাম-এ মুক্তি পায় ও দারুণ সাফল্য লাভ করে। ১৯৩০ সালে ব্রেখটের আউফশটিগ উন্ট ফাল ডের শ্টাট মাহাগোনি অপেরাটি মুক্তি পাওয়ার পর চরম নিন্দিত হয়।
  • (৩) ১৯৩১ সালে ডি দ্রাইগ্রোশেন্‌ওপার-এর চলচ্চিত্র সংস্করণ মুক্তি পায়। ১৯৩৩ সালে, রাইখশ্টাগে আগুন লাগার একদিন পর ব্রেখট সপরিবারে জার্মানি ত্যাগ করেন। প্রথমে প্রাগ শহরে ও পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেন। ১৯৪৫-১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি হলিউডে কাজ করেন।
  • (৪) ১৯৪৭ সালে মার্কিন-সোভিয়েত রাশিয়া ঠান্ডা যুদ্ধের জের হিসেবে ব্রেখটকে অন্যান্য অনেক চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের সাথে মার্কসবাদী সাম্যবাদী সন্দেহে জেরা করা হয়। জেরার দিনেই তিনি যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করেন।

পত্রিকা সম্পাদনা

জন্মস্থানে থাকাকালীনই তিনি ‘দ্য হারভেস্ট’ নামে একটা পত্রিকা সম্পাদনা করেন।

নাট্য জীবন

  • (১) ১৯১৪ সালে রচনা করেন জীবনের প্রথম নাটিকা ‘দ্য বাইবেল’। ১৯১৮-তে চলতি নাট্যধারার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে ব্রেখট লেখেন তাঁর প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের নাটক ‘বল’। ১৯২০ সালে ব্রেখট চলে আসেন বার্লিনে। ১৯২২ সালে লেখেন ‘ম্যান ইকুয়ালস্ ম্যান’।
  • (২) ১৯২৮ সালে অষ্টাদশ শতকের ‘দ্য বেগার্স অপেরা’ অবলম্বনে তিনি রচনা করলেন ‘দ্য থ্রি পেনি অপেরা। ১৯২৯ সাল থেকে ব্রেখটের প্রচারমূলক নাটকসমূহের সূচনা। ১৯৩৫ সালে মস্কোয় গিয়ে ব্রেখটের মনে হয় যে সেটিই হল পৃথিবীতে নাটকের একমাত্র উপযুক্ত শহর।
  • (৩) ১৯৩৫ সালে নাৎসি সরকার তাঁর জার্মান নাগরিকত্ব খারিজ করে দেয় এবং স্বদেশে তাঁর প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। ফলে ব্রেখটের নাট্যরচনা ও প্রযোজনা কিছুটা থামে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তাঁর নাটকে প্রকাশিত হতে থাকে তীব্র শ্লেষ। যুদ্ধ-পরবর্তী আমেরিকাতে কমিউনিস্ট হওয়ার কারণে ব্রেখটকে আমেরিকা ছাড়তে হয়।

নাটকসমূহ

ব্রেখটের লেখা উল্লেখযোগ্য নাটক গুলি হল ড্রামস্ ইন দ্য নাইট (১৯১৮-২০), দ্য বেগার (১৯১৯), আ রেসপেকটেবল ওয়েডিং (১৯১৯), ইন দ্য জা অফ সিটিস (১৯২১-২৪), ম্যান ইকোয়ালস্ ম্যান (১৯২৪-২৬), লিটল মাহাগনি (১৯২৭), দ্য থ্রি পেনি অপেরা (১৯২৮), সেন্ট জোন অফ স্টকইয়ার্ডস (১৯২৯-৩১), লাইফ অফ দ্য গ্যালিলিও (১৯৩৭-৩৯), দ্য ট্রায়াল অব লুকুলাস (১৯৩৮-৩৯), দ্য ডেস অফ দি কমিউন (১৯৪৮-৪৯), করিওলেনাস (১৯৫১-৫৩) ইত্যাদি।

কবিতা সমূহ

ব্রেখটের লেখা উল্লেখযোগ্য কবিতা গুলি হল আ ব্যাড টাইম ফর পোয়েট্রি, আলবামা সং, চিলড্রেনস ক্রুসেড, হিম টু কমিউনিজম, আই অ্যাম নট সোয়িং এনিথিং, সেন্ড মি আ লিফ, টু দোস বর্ন আফটার, হোয়াট হ্যাস হ্যাপেণ্ড, কোয়েশ্চেন ফ্রম আ ওয়ার্কার হু রীডস ইত্যাদি।

পুরস্কার ও সম্মাননা

১৯২২ সালে তাকে সাহিত্যে জার্মানির সর্বোচ্চ সম্মান ‘লিস্ট’ (kleist) পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়। ১৯৫৫ সালে ব্রেখট সম্মানিত হন লেনিন আন্তর্জাতিক পুরস্কারে।

মৃত্যু

১৯৫৬ সালের ১৪ই আগস্ট ব্রেখট পূর্ব বার্লিনে হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।

উপসংহার:- মৃত্যুর পূর্বে মাত্র আটান্ন বছরের জীবনেই তিনি বিশ্বনাটকের ইতিহাসকে সম্পূর্ণ অন্য ধারায় বইয়ে দিয়ে গেছেন।

(FAQ) ব্রের্টোল্ট ব্রেখট সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ব্রের্টোল্ট ব্রেখট কে ছিলেন?

জার্মান কবি ও নাট্যকার।

২. ব্রের্টোল্ট ব্রেখটের জন্ম কোথায়?

জার্মানির অগসবার্গ শহরে।

৩. ব্রেখটের বিখ্যাত নাটকের নাম কি?

দ্য থ্রি পেনি অপেরা।

৪. ব্রেখটের জার্মান নাগরিকত্ব খারিজ করে কে?

নাৎসি সরকার।

Leave a Comment