সমর সেন

নাগরিক কবি সমর সেন -এর জন্ম, পিতৃপরিচয়, শৈশব, শিক্ষা, কর্মজীবন, সাহিত্য সাধনা, কাব্য বিষয়, কাব্যগ্ৰন্থ, পত্রিকা সম্পাদনা ও তার মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।

সমর সেন

ঐতিহাসিক চরিত্র সমর সেন
জন্ম ১০ অক্টোবর, ১৯১৬ সাল
পিতা অরুণচন্দ্র সেন
পেশা লেখক
পরিচিতি কবি ও সাংবাদিক
মৃত্যু ২৩ আগস্ট, ১৯৮৭ সাল
সমর সেন

ভূমিকা:- আধুনিক বাংলা কবিতায় নগরজীবনের বিশেষত মধ্যবিত্ত সমাজের চেতনার ক্লান্তি, নৈরাশ্য আর অবক্ষয়ের নিপুণ রূপকার ছিলেন সমর সেন। তিনি স্বাধীনতা-উত্তর কালের ভারতীয় কবি এবং সাংবাদিক।

জন্ম

কবি সমর সেনের জন্ম কলকাতার বাগবাজারে ১০ অক্টোবর ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে।

পিতৃপরিচয়

পিতা অরুণচন্দ্র সেন। পিতামহ প্রখ্যাত সাহিত্যিক আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন। তাদের আদি নিবাস ছিল অধুনা বাংলাদেশ -এর ঢাকার সুয়াপুরে।

শৈশব

সমর সেন অল্প বয়সে মাকে হারান। পিতা দ্বিতীয় বিবাহ করায় সমরকে প্রচণ্ড জীবনসংগ্রামের মুখোমুখি হতে হয়। ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে নাস্তিক হয়ে ওঠেন।

শিক্ষা

সমর সেন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। কাশিমবাজার পলিটেকনিক স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করার পরে স্কটিশচার্চ কলেজে ভরতি হন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে ইংরাজী সাহিত্যে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন এবং ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে ইংরাজী ভাষা ও সাহিত্যের এম.এ পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেনীতে প্রথম হন।

কর্মজীবন

  • (১) সমর সেন ছিলেন বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক। তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় কলেজে অধ্যাপনায়। তাতে তাঁর স্থায়িত্ব ছিল অল্প। আকাশবাণীতে নিউজ এডিটর হিসেবে কাজ করেন কয়েক বছর। তারপর সাব-এডিটর হয়ে স্টেটসম্যানে কাজ করেন।
  • (২) অনুবাদকের কাজ নিয়ে সোভিয়েত রাশিয়া চলে যান ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে। কলকাতায় ফিরে আসেন ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে। বিজ্ঞাপন সংস্থায় কয়েক মাস কাজ করেন। তারপর যোগ দেন হিন্দুস্থান শীতার্ত পত্রিকায়। চাকরি ছেড়ে দেন মতের অমিল হওয়ায়।
  • (৩) হুমায়ুন কবীরের ‘নাউ’ পত্রিকায় প্রথম সম্পাদকের পদে কাজ করেন ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে। মাত্র চার বছর থাকার পর মতবিরোধের কারণে চাকরি ছাড়েন ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে। অবশেষে ইংরেজিতে ‘ফ্রন্টিয়ার’ পত্রিকা প্রকাশ করেন এবং জীবনের শেষ অবধি এটি সম্পাদনা ও পরিচালনা করেন।

সাহিত্য সাধনা

  • (১) সাহিত্যের ক্ষেত্রে সমর সেনের পরিচয় কবি হিসেবে। কবি হিসেবে তিনি স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। তাঁর কাব্যসাধনা মাত্র ১২ বছরের (১৯৩৪-১৯৪৬ খ্রি.)। তিনি যখন খ্যাতির চূড়ায়, তখন হঠাৎ কবিতা লেখায় ছেদ টেনে দেন।
  • (২) তিনি ছিলেন সাম্যবাদের ভাবাদর্শে দীক্ষিত। তিনি ছিলেন গদ্যছন্দের সম্পূর্ণ অনুসারী। নতুন কাব্যরীতিতে তীক্ষ্ণ ভাষায় লেখা রোমান্টিকতা বর্জিত তাঁর সৃষ্ট কবিতা বাংলা সাহিত্যজগতে আলোড়ন তুলেছিল।

কাব্য বিষয়

নগর জীবনের ক্লেদ ও ক্লান্তি, মধ্যবিত্ত জীবনের প্রতি অবজ্ঞা এবং সংগ্রামী গণচেতনাকে তিনি কাব্যে রূপ দিয়েছেন। কাব্যের সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও ব্যতিক্রমী ও নিজস্ব বৈশিষ্টতায় অনন্য। রোমান্টিকতা বর্জিত তীক্ষ্ণ ভাষা প্রয়োগ সাহিত্যজগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।

কাব্যগ্ৰন্থ

তাঁর লেখা কাব্যগ্রন্থগুলি হল ‘কয়েকটি কবিতা’ (১৯৩৭), ‘গ্রহণ’ (১৯৪০), ‘নানা কথা’ (১৯৪২), ‘খোলা চিঠি’ (১৯৪৩), ‘তিন পুরুষ‘ (১৯৪৪), ‘সমর সেনের কবিতা’ (১৯৫৪)। তা ছাড়া তাঁর আত্মজীবনীমূলক রচনা ‘বাবু বৃত্তান্ত’।

সম্পাদনা

তিনি ছিলেন বিখ্যাত সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ দীনেশচন্দ্র সেনের পৌত্র। তিনি ‘কবিতা’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।

মৃত্যু

সমর সেনের দেহাবসান ঘটে ২৩ আগস্ট, ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে।

উপসংহার:- গোষ্ঠী এবং দলীয় রাজনীতির বাইরে জাগ্ৰত মুক্ত কণ্ঠ, প্রতিবাদী, স্বাধীন বিবেকের অন্য নাম ছিল সমর সেন।

(FAQ) সমর সেন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. নাগরিক কবি কাকে বলা হয়?

সমর সেন।

২. সমর সেন কোন পত্রিকা সম্পাদনা করতেন?

কবিতা পত্রিকা।

৩. সমর সেনের দুটি কাব্যগ্ৰন্থের নাম লেখ।

কয়েকটি কবিতা, গ্ৰহণ।

৪. সমর সেনের আত্মজীবনীমূলক রচনার নাম কি?

বাবু বৃত্তান্ত।

Leave a Comment