বোলপুর স্থানটি প্রসঙ্গে ভৌগলিক অবস্থান, জনসংখ্যা, জলবায়ু, সংস্কৃতি কেন্দ্র, নামকরণ, পুরানে উল্লেখ, আন্দোলনের স্মৃতি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, পরিবহন ও স্বাস্থ্য পরিষেবা সম্পর্কে জানবো।
বোলপুর
স্থান | বোলপুর |
জেলা | বীরভূম |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
দেশ | ভারত |
ভূমিকা :- ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলার একটি মহকুমা শহর ও পৌরসভা হল বোলপুর। স্থানটি কলকাতার ১৪৫ কিমি উত্তরে অবস্থিত। নোবেলজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বোলপুর বিখ্যাত।
ভৌগোলিক অবস্থান
বোলপুর শহরটি ২৩.৬৭° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৭.৭২° পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত।
জনসংখ্যা
বোলপুর শহরের জনসংখ্যা ৮০ হাজারেরও বেশি। এখানে সাক্ষরতার হার ৭৩ %। পুরুষদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৭৯ % এবং নারীদের মধ্যে ৬৬ %।
জলবায়ু
গ্রীষ্মকালে বোলপুর খুব উষ্ণ হয়ে ওঠে এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত এখানকার তাপমাত্রা থাকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সংস্কৃতি কেন্দ্র
শান্তিনিকেতন এবং শ্রীনিকেতনের নিকটবর্তী পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি ও শিক্ষা কেন্দ্রগুলির মধ্যে অন্যতম হল বোলপুর।
নামকরণ
‘বোলি-পুর’ শব্দ থেকে বোলপুর নামটির উৎপত্তি হয়েছে। বাংলা ভাষায় ‘বোলি’ শব্দের অর্থ হল ‘বধ’ এবং ‘পুর’ শব্দের অর্থ হল ‘শহর’।
পুরাণে উল্লেখ
- (১) বোলপুরের উল্লেখ আছে প্রাচীন পুরাণে। পুরাণ অনুসারে রাজা সুরথ, যিনি মর্ত্যে প্রথম দুর্গাপুজোর প্রচলন ঘটান, তাঁর রাজ্যের রাজধানী ছিল বোলপুর সংলগ্ন সুপুর এলাকায়। সেখানেই প্রতি বছর কয়েক লক্ষ ছাগবলি দেওয়া হয় দুর্গাপুজোর সন্ধিক্ষণে।
- (২) সেই বলির রক্তে ভেসে যেত চার পাশ। একটি বিশেষ স্থানে বাঁধ দিয়ে সেই রক্তস্রোত আটকানো হত। এই বলি থেকেই সংলগ্ন অঞ্চলের নাম হয় বলিপুর বা অধুনা বোলপুর, আর যে স্থানে ওই বাঁধ নির্মিত হয়েছিল, তাই হল আজকের বাঁধগোড়া।
বিদেশে নামের বিস্তার
- (১) মুঘল আমল বা তারও আগে থেকেই লোহা ও লাক্ষা শিল্পের জন্য দূরদূরান্তে বোলপুরের নাম ছড়িয়ে পড়ে। পরে এর সঙ্গে যুক্ত হয় নীল চাষের খ্যাতি। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স দুই দেশের শাসকই ব্যবসার প্রয়োজনে বোলুপুরে আসেন।
- (২) ১৭৮২ সালে বোলপুরে আসেন ইংরেজ ব্যবসায়ী জন চিপ। তার নামে আজও বোলপুরের উপকণ্ঠেই রয়েছে চিপকুঠি। আর একটি কুঠি থেকে ফরাসি ব্যবসায়ী মনলি সিনর ব্যবসা পরিচালনা করতেন। পরবর্তীতে এই কুঠি বিশ্বভারতী অধিগ্রহণ করে নেয়।
আন্দোলনের স্মৃতি
- (১) ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের বহু স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই বোলপুর শহরের সঙ্গে। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় বয়কট ও স্বদেশির পক্ষে প্রচার চালিয়ে একে একে জেলার কংগ্রেস নেতৃত্ব গ্রেফতার হয়েছেন।
- (২) ১৯১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গাঁধীজি প্রথম বোলপুরে পা রাখেন। ফলে স্বাধীনতা আন্দোলনে জোয়ার লাগে। এখানকার ছাত্র আন্দোলন থেকেই দেশ জুড়ে অসহযোগ আন্দোলনের সূচনা করেন তিনি। তাঁর আহ্বানে ঢেউ লাগে শান্তিনিকেতনের ছাত্রমহলে।
রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব
ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় ১৯৮৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৪ বছর বোলপুর অঞ্চলের সাংসদ ছিলেন।
পরিবহন
- (১) বোলপুর শহরে পৌঁছনোর জন্য দুর্গাপুর সিটি সেন্টার বাস স্টপ এবং কলকাতায় সাতরাগাছি রেলওয়ে স্টেশন থেকে শীঘ্রই বাস ও প্রাইভেট গাড়ি পাওয়া যায়। বোলপুর শহরের মধ্যে অটোরিক্সা, টোটো, রিক্সা প্রভৃতি যানবাহন চলাচল করে।
- (২) বোলপুর থেকে সাঁইথিয়া, সিউড়ি, দুর্গাপুর, কলকাতা, আসানসোল প্রভৃতি শহরের সঙ্গে বাস যোগাযোগ রয়েছেবোলপুর শহরের প্রধান রেলস্টেশন হল বোলপুর শান্তিনিকেতন রেলওয়ে স্টেশন। বোলপুর থেকে হাওড়া, গয়া, জলপাইগুড়ি, গুয়াহাটি, নতুন দিল্লি এবং কলকাতা পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন আছে।
স্বাস্থ্য পরিসেবা
১২৫ টি শয্যা বিশিষ্ট বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল এখানকার প্রধান স্বাস্থ্যকেন্দ্র। বোলপুর-শ্রীনিকেতন সমষ্ঠি উন্নয়ন ব্লকের চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করে বোলপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
উপসংহার :- লোককথা, পুরাণ অনুষঙ্গ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – এই তিন নিয়েই বোলপুরের ইতিহাস। আমাদের রাজ্যের একমাত্র কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বভারতীর অবস্থান এবং আদালত, অফিস, স্কুল, কলেজে মোড়া জনবহুল এই বোলপুর শহর আজ থেকে দেড়শো বছর আগেও ছিল ধুধু প্রান্তর।
(FAQ) বোলপুর সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
বীরভূম জেলার বোলপুর শহরে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলায়।
নোবেলজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বোলপুর বিখ্যাত।