ঐতিহাসিক স্থান কপিলাবস্তু প্রাসঙ্গে গৌতম বুদ্ধের বাসস্থান, নামের অর্থ, প্রধান তীর্থস্থান হয়ে উঠতে ব্যর্থ, চীনা তীর্থযাত্রীদের আগমন, দুটি প্রত্নক্ষেত্র, পিপ্রহওয়া, কপিলাবস্তুর অবস্থান এবং বাঙালি প্রত্নতত্ত্ববিদ পূর্ণচন্দ্র মুখোপাধ্যায় কর্তৃক কপিলাবস্তুর ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার সম্পর্কে জানবো।
প্রাচীন শহর কপিলাবস্তু
ঐতিহাসিক স্থান | কপিলাবস্তু |
পরিচিতি | প্রাচীন শহর |
রাজধানী | শাক্য বংশ |
বিশেষ খ্যাতি | গৌতম বুদ্ধ -এর অবস্থান |
ভূমিকা :- ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তরে একটি প্রাচীন শহর ছিল কপিলাবস্তু। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ ও পঞ্চম শতাব্দীর শেষ বা লৌহ যুগ -এর শেষের দিকে শাক্যদের বংশের রাজধানী ছিল কপিলাবস্তু।
গৌতম বুদ্ধের বাসস্থান কপিলাবস্তু
রাজা শুদ্ধোদন এবং রাণী মায়া কপিলাবস্তুতে বসবাস করতেন বলে মনে করা হয়। তাদের পুত্র সিদ্ধার্থ গৌতম বা গৌতম বুদ্ধ ২৯ বছর বয়সে প্রাসাদ ত্যাগ করার আগে পর্যন্ত কপিবস্তুতে ছিলেন।
কপিলাবস্তু নামের অর্থ
বৌদ্ধ সূত্র অনুসারে কপিলভাথু (Kapilvatthu) নামের অর্থ হল “টাউনি এলাকা”। এই অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে লালচে বালি থাকার কারণে এই নামকরণ করা হয়েছে।
প্রধান তীর্থস্থান হয়ে উঠতে ব্যর্থ কপিলাবস্তু
এই কপিলাবস্তু স্থানটি কখনই বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর মতো একটি প্রধান তীর্থস্থান হয়ে ওঠেনি। বৌদ্ধ কেন্দ্র হিসেবে কপিলাবস্তু অস্পষ্ট ছিল।
কপিলাবস্তু স্থানে চীনা তীর্থযাত্রীদের আগমন
হিউয়েন সাঙ -এর রেখে যাওয়া বিবরণ অনুসরণ করে চীন -এর বহু বৌদ্ধ সন্ন্যাসী এই স্থানটিতে প্রাথমিক তীর্থযাত্রা করেছিলেন।
প্রাচীন কপিলাবস্তু হিসেবে দুটি প্রত্নক্ষেত্রের সন্ধান
নেপাল ও ভারত -এর সীমান্তের কাছে এখন দুটি প্রত্নক্ষেত্র রয়েছে যাকে কপিলাবস্তু বলে দাবি করা হয়। নেপালের তিলোরাকোট ও ভারতের উত্তর প্রদেশের পিপ্রহওয়ার।
কপিলাবস্তুর অবস্থান হিসেবে পিপ্রহওয়া
বর্তমানের ভারতের পিপ্রহওয়া ঐতিহাসিক স্থান কপিলাবস্তুর অবস্থান হিসেবে চিহ্নিত। এটি শাক্য রাজ্যের শাসনাধীন ছিল। পিপ্রহওয়া ছিল একটি স্তূপ এবং মঠ সহ একটি উল্লেখযোগ্য প্রাথমিক বৌদ্ধ স্থান।
ঐতিহাসিক স্থান কপিলাবস্তুর অবস্থান
- (১) ১৮৭০-এর দশকে আর্চিবল্ড কার্লাইল গোরক্ষপুরের উত্তর-পশ্চিমে বুলিয়া তাল নামে একটি হ্রদের কাছে একটি প্রাচীন নগরের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পান। এই স্থানকে তিনি কপিলাবস্তু বলে মনে করেন। তাঁর মতকে সমর্থন করেছিলেন কানিংহোম। কিন্তু অনেকেই একথা মানতে রাজি ছিলেন না।
- (২) পরবর্তীতে ডা. অ্যান্টন ফ্যুরার জোর দিয়ে বলেন যে, বুলিয়া তাল কপিলাবস্তু নয়। আবার শুরু হয় অনুসন্ধানের কাজ। ১৮৯০-এর দশকে কপিলাবস্তুর অবস্থান খুঁজতে শুরু করেন প্রত্নতাত্ত্বিক অস্টিন ওয়াডেল। ১৮৯৩ সালে রাপ্তি নদীর মোহনায় একটি নগরের ধ্বংসাবশেষকে কপিলাবস্তু বলে উল্লেখ করেন তিনি। কিন্তু তাঁর মত মানেন না কেউই।
- (৩) আবার শুরু হয় অনুসন্ধান। খুঁজে দেখতে হবে নেপালের তরাই অঞ্চলে। ফ্যুরার এই কাজের দায়িত্ব দেন পূর্ণচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ওরফে পি. সি. মুখার্জি নামে এক বাঙালিকে। তিনি সেই ধ্বংসাবশেষ খুঁজেও পেলেন।
কপিলাবস্তুর আবিষ্কারক পূর্ণচন্দ্র মুখোপাধ্যায়
- (১) ভারতের ইতিহাস পূর্ণচন্দ্র মুখোপাধ্যায়কে মনে রেখেছে কপিলাবস্তু আবিষ্কারের জন্যই। ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে সরকারি প্রত্নতাত্ত্বিকের কাজ শুরু করেন পূর্ণচন্দ্র। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে অনেকেই তাঁকে মেনে নিতে পারেন নি। তাই তিনি পদত্যাগ করে পিডব্লিউডির কাজে যোগ দেন।
- (২) প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ থেকে ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে আবার ডাক আসে। পাটুলিপুত্র নগরের সন্ধানে তখন খননকার্য চলছে। সেই কাজের তদারকির ভার দেওয়া হয় পূর্ণচন্দ্রকে।
- (৩) কপিলাবস্তুর সন্ধানে খননকার্য পরিচালনার দায়িত্ব নেন পূর্ণচন্দ্র। আর এই সমস্ত কাজের তদারকি করেন স্বয়ং ভিনসেন্ট স্মিথ। ১৮৯৯ সালের জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু হয়।
- (৪) এর মধ্যে পূর্ণচন্দ্র বাবু তিলোরাকোট অঞ্চলটির কথা চিন্তা করেন। ইংরেজ বিশেষজ্ঞরা বারবার উপেক্ষা করে গিয়েছেন এই স্থান। তিনি খননকার্য শুরু করেন তাঁর সামনে উঠে আসে কপিলাবস্তুর ধ্বংসস্তূপ।
- (৫) পূর্ণচন্দ্রের অনুসন্ধান যে নির্ভুল, সে বিষয়ে সকলেই একমত হয়েছেন। ভারতবর্ষের ইতিহাস বদলে দিয়েছিলেন বুদ্ধদেব। আর তাঁর হারিয়ে যাওয়া রাজধানী খুঁজে বের করেছিলেন পূর্ণচন্দ্র মুখোপাধ্যায়।
উপসংহার :- স্মরণীয় বাঙালিদের নাম বললে পূর্ণচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের উল্লেখ করবেন না অনেকেই। কিন্তু তাঁকে ছাড়া ভারতের নৃতত্ত্ব গবেষণা সংস্থার দুটো বড়ো কৃতিত্বই অধরা থেকে যেত।
(FAQ) কপিলাবস্তু স্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
শাক্য বংশের।
কপিলাবস্তু।
পূর্ণচন্দ্র মুখোপাধ্যায়।