কুষাণ সম্রাট বিম কদফিসেস প্রসঙ্গে সিংহাসনে আরোহণ, শকাব্দ প্রবর্তন, রাজত্বকাল, রাজ্যের বিস্তার, ভারতের রাজ্য বিস্তার, রাজ্য সীমা, শৈব ধর্মে অনুরক্তি, বাণিজ্য বৃদ্ধি, রেশম পথ ও আমদানি রপ্তানি সম্পর্কে জানবো।
সম্রাট বিম কদফিসেস প্রসঙ্গে বিম কদফিসেসের সিংহাসনে আরোহণ, বিম কদফিসেসের উপাধি, শকাব্দ প্রবর্তন, বিম কদফিসেসের রাজত্বকাল, বিম কদফিসেসের রাজ্য বিস্তার, বিম কদফিসেসের ভারতে রাজ্য বিস্তার, বিম কদফিসেসের রাজ্য সীমা, শৈব ধর্মে বিম কদফিসেসের অনুরাগ, বিম কদফিসেসের সময় চিন ও রোমের সাথে বাণিজ্য বৃদ্ধি, বাণিজ্যে আমদানি ও রপ্তানি।
রাজা বিম কদফিসেস
ঐতিহাসিক চরিত্র | বিম কদফিসেস |
জাতি | কুষাণ |
সাম্রাজ্য | কুষাণ সাম্রাজ্য |
শ্রেষ্ঠ রাজা | কণিষ্ক |
শেষ রাজা | দ্বিতীয় বাসুদেব |
ভূমিকা :- ইউ-চি জাতির পাঁচটি শাখার অন্যতম শাখা কুষাণরা যাযাবর জীবন অতিবাহিত করত। ডঃ মুখার্জীর মতে, গোড়ার দিকে এই কুষাণরা মূল ইউ-চি জাতির অধীনে ছিল। কুষাণ জাতির অন্যতম রাজা ছিলেন বিম কদফিসেস।
বিম কদফিসেসের সিংহাসনে আরোহণ
কুজুল কদফিসেস -এর পর তাঁর পুত্র বিম কদফিসেস বা ইয়েন কাও-চেন কুষাণ সিংহাসনে বসেন।
শকাব্দ প্রবর্তন
স্টেন কোনোর মতে, ৭৮ খ্রিস্টাব্দে বিম কদফিসেস সিংহাসনে বসেন এবং এই সন থেকে তিনি শকাব্দ -এর পত্তন করেন। ডঃ রায়চৌধুরীর মতে, এই সম্বত বিম কদফিসেস প্রবর্তন করেন বলে সঠিক জানা যায়নি। কণিষ্কও এই সম্বত প্রবর্তন করতে পারেন বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
বিম কদফিসেসের রাজত্বকাল
কোনো কোনো পণ্ডিত দাস্ত-ই নাবুর শিলালিপির ভিত্তিতে মনে করেন যে, বিম কদফিসেস ৩২ অব্দে রাজত্ব করেন। মোট কথা, বিম কদফিসেসের রাজত্বকাল প্রথম খ্রীষ্টাব্দের প্রথম ভাগে অথবা দ্বিতীয় ভাগের গোড়ার দিকে ধার্য করা যেতে পারে।
বিম কদফিসেসের রাজ্যের বিস্তার
বিম কদফিসেস তাঁর পিতার রাজ্য ব্যাকট্রিয়া সহ উত্তর-পশ্চিম ভারত ও কাশ্মীর বা কি-পিন লাভ করেন। তার সঙ্গে তিনি তক্ষশীলা ও পাঞ্জাব রাজ্যভুক্ত করেন। পরে তিনি রাজ্যসীমা আরও বাড়ান।
ভারতে বিম কদফিসেসের রাজ্য বিস্তার
- (১) ভারত -এর কোন কোন অঞ্চল তাঁর রাজ্যভুক্ত ছিল তা দেখা যেতে পারে। বিম কদফিসেসের মুদ্রা থেকে জানা যায় যে, তিনি কান্দাহার ও সেন-টু অধিকার করেন। সেন-টু বলতে নিম্ন সিন্ধু অঞ্চল বুঝায়। নিম্ন সিন্ধু অঞ্চলে বিম কদফিসেসের মুদ্রা পাওয়া গেছে। এজন্য এই অঞ্চল তাঁর রাজ্যভুক্ত ছিল বলে ধরা হয়।
- (২) মথুরায় বিম কদফিসেসের মূর্তি পাওয়া গেছে এবং মথুরা তাঁর অধিকারে ছিল বলে মনে করা হয়। চীনা ঐতিহাসিক ফ্যান-ইর মতে, “বিম কদফিসই প্রকৃতপক্ষে ভারত বিজয় করেন।”
বিম কদফিসেসের রাজ্য সীমা
বিম কদফিসেসের সাম্রাজ্য মধ্য এশিয়ার তুর্কীস্থান থেকে গঙ্গা উপত্যকা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
শৈব ধর্মে বিম কদফিসেসের অনুরক্তি
বিম কদফিসেসের মুদ্রায় “মহীশ্বর” নাম খোদাই এবং শিব মূর্তি, ষাঁড় ও ত্রিশূল চিহ্ন পাওয়া যায়। এর থেকে তাঁর শৈবধর্মের প্রতি অনুরক্তি বোঝা যায়।
বিম কদফিসেসের সময় চীন ও রোমের সাথে বাণিজ্য বৃদ্ধি
সম্রাট বিম কদফিসেসের রাজত্বকালে ভারতের সঙ্গে চীন ও রোমান সাম্রাজ্যের বাণিজ্য খুবই বেড়ে যায়। রোমিলা থাপারের মতে, বিম কদফিসেস রোম -এর স্বর্ণমুদ্রা ‘দিনারি’র অনুকরণে তাঁর স্বর্ণমুদ্রা প্রবর্তন করেন। এর দরুন বাণিজ্য ও দামের বিনিময় সহজ হয়।
কুষাণ সাম্রাজ্য সম্পর্কে জওহরলাল নেহরুর মন্তব্য
জওহরলাল নেহেরু তাঁর ডিস্কভারি অফ ইণ্ডিয়া গ্রন্থে বলেছেন যে, “কুষাণ সাম্রাজ্য একটি বিরাট স্তম্ভের মতো একদিকে গ্রীক-রোমান জগত, অপর দিকে চীনা জগতের মধ্যে সেতু বন্ধন করেছিল; ভারত-রোম; ভারত-চীনের মধ্যে কুষাণ সাম্রাজ্য ছিল এক সিংহদ্বার।”
বিম কদফিসেসের সময় বাণিজ্যের রেশম পথ
ভারত থেকে স্থলপথে তক্ষশীলা হয়ে, হিন্দুকুশ পার হয়ে ভারতীয় পণ্য ব্যাকট্রিয়া দিয়ে চীন ও রোমের রেশম রাস্তায় মিলত। এই বাণিজ্যের মূলে ছিল ব্যাকট্রিয়া থেকে গঙ্গা উপত্যকা পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল কুষাণ সাম্রাজ্য। এই সাম্রাজ্যের একদিকে ছিল ইউফ্রেটিস, অন্যদিকে গঙ্গা নদী।
বিম কদফিসেসের সময় আমদানি-রপ্তানি
ভারত থেকে মশলা, রেশম, মণি-মুক্তা, গজদন্ত, চন্দন প্রভৃতি চালান যেত। রোম থেকে এজন্য প্রচুর সোনা ভারতে চলে আসত। তাই রোমান পণ্ডিত প্লিনি রোমের সোনা দ্রুত ক্ষয় পাচ্ছে বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন।
উপসংহার :- বিন কদফিসেসের মৃত্যুর পর কুষাণ সাম্রাজ্যে ভাঙ্গন দেখা দেয়। সম্রাট কনিষ্ক ক্ষমতায় এসে এই ভাঙ্গন রোধ করে কুষাণ সাম্রাজ্যে শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “বিম কদফিসেস” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) বিম কদফিসেস সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
ইউ-চি।
মিয়াওস।
বিম কদফিসেস।
শৈব ধর্ম।
কণিষ্ক।
পুরুষপুর বা পেশোয়ার।