রাসবিহারী বসু প্রতিষ্ঠিত ও নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ ফৌজ -এর প্রতিষ্ঠা কাল, লক্ষ্য, যোগদানকারী সেনা, নেতাজির হাতে দায়িত্ব প্রদান, আজাদ হিন্দ রেডিও স্টেশন প্রতিষ্ঠা, ঝাঁসীর রাণী রেজিমেন্ট গঠন, অভিযান, আত্মসমর্পণ, সেনাদের বিচার ও অভিযানের ফলাফল সম্পর্কে জানবো।
আজাদ হিন্দ ফৌজ প্রসঙ্গে আজাদ হিন্দ ফৌজের গঠন, আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রতিষ্ঠাতা, আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রতিষ্ঠাকাল, আজাদ হিন্দ ফৌজের নেতা, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজের দায়িত্ব গ্রহণ, আজাদ হিন্দ ফৌজের ঝাঁসির রানী রেজিমেন্ট গঠন, আজাদ হিন্দ সরকার গঠন, আজাদ হিন্দ ফৌজের ভারতের প্রথম শহর দখল, আজাদ হিন্দ ফৌজের ঝাঁসির রানী ব্রিগেডের নেতৃত্ব, আজাদ হিন্দ ফৌজের অভিযান, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে আজাদ হিন্দ ফৌজের অবদান ও আজাদ হিন্দ ফৌজের মূল্যায়ণ।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ ফৌজ
বিষয় | আজাদ হিন্দ ফৌজ |
কার্যকাল | আগস্ট ১৯৪২ – সেপ্টেম্বর ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দ |
আনুগত্য | আজাদ হিন্দ |
আনুষ্ঠানিক প্রধান | সুভাষচন্দ্র বসু |
শাখা | পদাতিক |
সেনা | আনুমানিক ৪৩০০০ |
নীতিবাক্য | ইত্তেফাক, ইতমাদ আউর কুরবানি (একতা, বিশ্বাস এবং আত্মত্যাগ) |
ভূমিকা :- ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ -এর সময় সাম্রাজ্যবাদী জাপান এবং ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের দ্বারা গঠিত একটি সশস্ত্র বাহিনী ছিল Indian National Army বা আজাদ হিন্দ ফৌজ।
ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগ
১৯৪২ সালের ২৮ – ২৯ মার্চ টোকিওতে রাসবিহারী বসুর ডাকে অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লিগ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
সেনাবাহিনী গঠনের প্রস্তাব
ভারত -এর স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেনডেন্স লীগের প্রথম সম্মেলনে রাসবিহারী বসু একটি সেনাবাহিনী গঠনের প্রস্তাব দেন।
রাসবিহারী বসুর সভাপতিত্ব
১৯৪২ সালের ২২ জুন ব্যাংককে লীগের দ্বিতীয় সম্মেলনে রাসবিহারী বসুর সভাপতিত্বে মালয় ও বার্মা ফ্রন্টে জাপানিদের হাতে আটক ভারতীয় সেনাদের ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লিগ ও লীগের সশস্ত্র শাখা ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মিতে যোগদানে উৎসাহিত করা হয়।
আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা
১৯৪২ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রকাশ্যে আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করা হয়।
আজাদ হিন্দ ফৌজের লক্ষ্য
এই সেনাবাহিনীর লক্ষ্য ছিল জাপানের সহায়তায় ভারত থেকে ব্রিটিশ রাজের উচ্ছেদ সাধন করে দেশকে ঔপনিবেশিক শাসনজাল থেকে মুক্ত করা।
আজাদ হিন্দ ফৌজে যোগদানকারী সেনা
এই বাহিনী মূলত গঠিত হয় জাপানের হাতে আটক ভারতীয় যুদ্ধবন্দীদের নিয়ে। এঁরা মালয় অভিযান ও সিঙ্গাপুরের যুদ্ধের সময় জাপানের হাতে ধরা পড়েছিলেন। এছাড়াও মালয় ও ব্রহ্মদেশের ভারতীয় প্রবাসীদের একটি বিরাট অংশ এই বাহিনীতে স্বেচ্ছাসেবকরূপে যোগ দেন।
নেতাজীর হাতে আজাদ হিন্দ ফৌজের দায়িত্ব প্রদান
রাসবিহারী বসু নেতাজির হাতে তুলে দেন ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’-এর ভার৷ এরপর ১৯৪৩ সালে সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে পুনর্গঠিত হয়ে এই বাহিনী সুভাষচন্দ্রের আর্জি হুকুমত-এ-আজাদ হিন্দ (স্বাধীন ভারতের অস্থায়ী সরকার)-এর সেনাবাহিনী ঘোষিত হয়।
সুভাষ চন্দ্র বসুর নেতাজী উপাধি লাভ
এই সময়ই জার্মানির ভারতীয় সম্প্রদায় সুভাষ চন্দ্রকে ‘নেতাজী’ উপাধি দেয়। এখানেই ‘জয় হিন্দ’ এবং ‘দিল্লী চলো’ স্লোগানের জন্ম।
আজাদ হিন্দ রেডিও
এই রেডিও স্টেশনটি সুভাষ চন্দ্র বসুর নেতৃত্বে দেশবাসীকে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে উৎসাহিত করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। এটি সাপ্তাহিক বিরতিতে ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, পাঞ্জাবি, উর্দু ইত্যাদি বিভিন্ন ভাষায় সংবাদ সম্প্রচার করত। এর মূল লক্ষ্য ছিল ভারতীয় নাগরিকদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করার জন্য গর্ব ও প্রেরণা দিয়ে পূর্ণ করা।
আজাদ হিন্দ ফৌজের অধীনে রানি ঝাঁসি রেজিমেন্ট
নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু নারী শক্তির প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি রাণী লক্ষ্মীবাই -এর নামে আজাদ হিন্দ ফৌজের অধীনে রাণী ঝাঁসি রেজিমেন্ট গঠন করেন। এর দায়িত্বে ছিলেন লক্ষ্মী সেহগল।
আজাদ হিন্দ সেনাবাহিনীর যুদ্ধাভিযান
- (১) ব্রহ্মদেশ, ইম্ফল ও কোহিমায় সাম্রাজ্যবাদী জাপানি সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় এই বাহিনী ব্রিটিশ ও কমনওয়েলথ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযান চালায়।
- (২) ব্রিটিশ মিত্রবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্রহ্মদেশ অভিযান চালিয়ে তারা ব্যর্থ হন। যুদ্ধের শেষে বাহিনীর একটি বৃহত্তর অংশকে ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়।
- (৩) রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে তাদের কারোর কারোর বিচারও হয়। এই ঘটনা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা।
আজাদ হিন্দ ফৌজের আত্মসমর্পণ
আমেরিকা ও ব্রিটিশ বাহিনী তাদের শক্তি বৃদ্ধি করে এবং জাপান আক্রমণের উদ্যোগ নিলে জাপানিরা ভারত অভিযান পরিকল্পনা বাতিল করে। আজাদ হিন্দ ফৌজও পিছু হটতে বাধ্য হয়। মিত্রবাহিনী বার্মা পুনর্দখল করলে আজাদ হিন্দ ফৌজ আত্মসমপর্ণ করতে বাধ্য হয়।
আজাদ হিন্দ ফৌজের বিচার
১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে দিল্লীর লালকেল্লার প্রকাশ্য সামরিক আদালতে আজাদ হিন্দ ফৌজের বিচার ভারতীয় জনগণের ওপর ভয়ংকর প্রভাব বিস্তার করে। আজাদ হিন্দ ফৌজের বন্দি আধিকারিকদের বিচারে যে সিদ্ধান্ত হয় তার প্রতিবাদে –
- (১) দেশব্যাপী গণবিক্ষোভ ও ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়।
- (২) ভারতের নানা স্থানে বিশেষত কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী শিল্পাঞ্চলে ব্যাপক ধর্মঘট ডাকা হয়।
- (৩) আজাদ হিন্দ বাহিনীর বন্দি সেনাদের বিচারকে কেন্দ্র করে সারা ভারতে যে প্রবল গণবিক্ষোভ ও গণ-উন্মাদনা দেখা দিয়েছিল তার ফলে ব্রিটিশ শাসকদের মধ্যে প্রবল ভীতির সঞ্চার হয়।
আজাদ হিন্দ বাহিনীর ভারত অভিযানের ফলাফল
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ বাহিনী তার ঘোষিত লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হলেও ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসে আজাদ হিন্দ বাহিনীর অভিযানের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী।
- (১) আজাদ হিন্দ বাহিনীর সংগ্রামের তাৎক্ষণিক ফল হিসাবে ভারতীয় নৌ-সেনারা নৌ বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
- (২) ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতের নৌ-সেনাদের বিদ্রোহের পর আজাদ হিন্দ সরকারের প্রধান হিসাবে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুই ভারতবর্ষের স্বাধীনতার দাবিকে একটি আন্তর্জাতিক প্রশ্নে পরিণত করেন।
- (৩) আজাদ হিন্দ বাহিনীর বন্দি সেনাদের বিচারকে কেন্দ্র করে ১৯৪৫ সালের শেষের দিকে সারা ভারতে যে তুমুল উত্তেজনা ও ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের সৃষ্টি হয় তা সরকার পক্ষকে ক্রমশ ভীতি ও সন্ত্রস্ত করে তোলে।
আজাদ হিন্দ ফৌজ সম্পর্কে ফিলিপ ম্যাসনের উক্তি
প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ফিলিপ ম্যাস্ন বলেছেন, ‘এই ঐতিহাসিক বিচার ভারতে ব্রিটিশ শাসনের মৃত্যু ঘন্টা বাজিয়ে দেয়।’
স্বাধীনতা আন্দোলনে আজাদ হিন্দ ফৌজের অনুপ্রেরণা
যদিও নেতাজীর আজাদ হিন্দ ফৌজ ভারতের স্বাধীনতা অর্জন করতে পারেনি তথাপি তাদের এই চেষ্টা ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবোধের সৃষ্টি করে পরবর্তীকালে তা স্বাধীনতা আন্দোলনে এক বিরাট অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে।
আজাদ হিন্দ ফৌজের মূল্যায়ন
ঐতিহাসিক দিক থেকে বিচার করলে দেখা যায়, নেতাজির আজাদ হিন্দ বাহিনী প্রকৃত পক্ষে ব্যর্থ হয় নি। ব্রিটিশ শক্তির ওপর চূড়ান্ত আঘাত হেনে তারা ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের পথকে সুগম করে তুলেছিল।
উপসংহার :- যুদ্ধের পর বন্দী আইএনএ আধিকারিকদের বিচার ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে সহায়ক হয়। এর ফলে ব্রিটিশ ভারতীয় বাহিনীতে সংগঠিত হয় বোম্বাই বিদ্রোহের মতো ঘটনা। ব্রিটিশ রাজের সায়াহ্নকালে এই সকল ঘটনা ভারতের ব্রিটিশ শাসনের দ্রুত অবসানের সহায়ক হয়।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “আজাদ হিন্দ ফৌজ” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) আজাদ হিন্দ ফৌজ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
রাসবিহারী বসু।
১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে সিঙ্গাপুরে।
২১ অক্টোবর, ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে।
কোহিমা।
লক্ষ্মী সেহগল।
রাসবিহারী বসু, ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ১ লা সেপ্টেম্বর।
সিঙ্গাপুরে।
অন্যান্য ঐতিহাসিক ঘটনাগুলি
- কেন্দ্রীয় চোল শাসন
- সাম্রাজ্য ও রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য
- অর্থনীতিতে দাসপ্রথার গুরুত্ব
- রোমের দাসদের মুক্তির উপায়
- রোমান সাম্রাজ্য ও উপমহাদেশীয় সাম্রাজ্যগুলির মধ্যে যোগাযোগের প্রভাব
- জাস্টিনিয়ান পরবর্তী রাজবংশ
- রোমান সমাজে নারীর অবস্থান
- বাইজানটাইন সভ্যতা-সংস্কৃতির নানা দিক
- রোমান সাম্রাজ্য ও ভারতীয় উপমহাদেশ