আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ

মহাত্মা গান্ধী পরিচালিত আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ -এর সূচনা, শ্রমিকদের সাথে সম্পর্ক, গান্ধীজীর প্রথম অনশন, সত্যাগ্রহের কারণ, গান্ধীজীর ভূমিকা, সত্যাগ্রহের পরিণতি ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো।

আমেদাবাদ সত্যাগ্ৰহ প্রসঙ্গে ভারতে প্রথম সত্যাগ্ৰহ, আমেদাবাদ সত্যাগ্ৰহ কি, আমেদাবাদ সত্যাগ্ৰহের সময়কাল, আমেদাবাদ সত্যাগ্ৰহের নেতৃত্ব, আমেদাবাদ সুতাকল শ্রমিকদের সাথে গান্ধীজির যোগাযোগ, গান্ধীজির প্রথম অনশন আমেদাবাদ সত্যাগ্ৰহ, আমেদাবাদ সত্যাগ্ৰহের কারণ, আমেদাবাদ সত্যাগ্ৰহে গান্ধীজির ভূমিকা, আমেদাবাদ সত্যাগ্ৰহের পরিণতি ও আমেদাবাদ সত্যাগ্ৰহের গুরুত্ব।

গুজরাটের আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ

ঐতিহাসিক ঘটনাআমেদাবাদ সত্যাগ্রহ
সময়কাল১৯১৮ খ্রিস্টাব্দ
স্থানগুজরাটের আমেদাবাদ
নেতৃত্বমহাত্মা গান্ধী
ফলাফলগান্ধীজীর সাফল্য
আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ

ভূমিকা :- জাতীয় রাজনীতিতে গান্ধীর উত্থান বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯১৫ খ্রীস্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন গান্ধীজী দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারত -এ ফিরে আসেন এবং সর্বভারতীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণের পূর্বে তিনি (১৯১৭-১৯১৮) তিনটি আঞ্চলিক সত্যাগ্রহ -এ যোগদান করেন। আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ হল তার মধ্যে অন্যতম।

সত্যাগ্রহ

সত্যাগ্রহ হল আক্ষরিক অর্থে সত্যের প্রতি আগ্রহ। কিন্তু ভারতীয় রাজনীতির আঙিনায় মহাত্মা গান্ধী প্রবর্তিত সত্যাগ্রহ ছিল সত্য ও অহিংসার উপর প্রতিষ্ঠিত এবং অন্যায়ের বিরূদ্ধে পরিচালিত সংগ্রাম।

সত্যাগ্রহের উদ্দেশ্য

তাঁর আদর্শের উপর গীতার ইংরাজী ভাষ্য, লিও তলস্তয়, রাসকিন প্রমুখ পশ্চিমী লেখক এবং বৈষ্ণব ও জৈন ধর্মতত্ত্বের প্রভাব ছিল। তাঁর মতে, মানুষের সত্যের শক্তিকে ব্যবহার করে অশুভ শক্তির অন্তরের শুভবুদ্ধির জাগরণ ঘটানোই হল সত্যাগ্রহের উদ্দেশ্য।

তিনটি আঞ্চলিক সত্যাগ্রহ

সর্বভারতীয় রাজনীতিতে প্রবেশের আগে গান্ধীজী তিনটি আঞ্চলিক সত্যাগ্রহ- চম্পারণ সত্যাগ্রহ, খেদা সত্যাগ্রহ ও আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ পরিচালনা করেন।

আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর গুজরাটের আমেদাবাদে গুজরাটি বস্ত্র ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সুতাকলের শ্রমিকদের যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তা আমেদাবাদ শ্রমিক আন্দোলন ( ফেব্রুয়ারি, ১৯১৮ খ্রি.) নামে পরিচিত।

আমেদাবাদ সত্যাগ্রহের মাধ্যমে গান্ধীজির সাথে শ্রমিকদের সাথে সম্পর্ক

এই আন্দোলনে নেতৃত্বদানের মধ্যে দিয়ে মহাত্মা গান্ধী শ্রমিক শ্রেণীর সঙ্গে প্রথম সরাসরি সম্পর্ক গড়ে তোলেন।

গান্ধীজির প্রথম অনশন আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ

আমেদাবাদেই তিনি সর্বপ্রথম অনশন ধর্মঘটের হাতিয়ার প্রয়োগ করেন। এই প্রসঙ্গে ‘ইয়ং ইন্ডিয়া’ পত্রিকায় তিনি লেখেন, ‘চোখ যেমন বহির্দৃষ্টির জন্য, তেমনি উপবাস অন্তর্দৃষ্টির জন্য’ (‘What the eyes are for the outer world, fasts are for the inner’)।

আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ আন্দোলনের কারণ

গুজরাটের আমেদাবাদ ‘ভারতের ম্যানচেস্টার’ নামে পরিচিত ছিল। এখানে গুজরাটিরা বহু কাপড়ের কল গড়ে তুলে বস্ত্র শিল্পের প্রসার ঘটিয়েছিল। মিল মালিকদের মুনাফা প্রচুর হলেও শ্রমিকদের উন্নতি প্রায় কিছুই হয়নি ।

(১) বোনাস সমস্যা

১৯১৮ সাল নাগাদ আমেদাবাদে প্লেগ রোগ মহামারির আকার নিলে বহু শ্রমিক কাজ ছাড়তে উদ্যত হওয়ায়, ব্রিটিশ সরকার শ্রমিকদের কারখানার কাজে উৎসাহিত করার জন্য প্লেগ বোনাস চালু করে। কিন্তু প্লেগ মহামারির প্রকোপ ধীরে ধীরে কম হতে থাকলে শ্রমিকদের প্রাপ্য এই বোনাস বন্ধ করে দিলে শ্রমিকরা বিক্ষুদ্ধ হয়।

(২) মজুরি সমস্যা

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে শ্রমিকরা শতকরা ৫০ ভাগ মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানালে মালিকপক্ষ তা নস্যাৎ করে দেয়। এর ফলে শ্রমিকশ্রেণী আন্দোলন শুরু করে।

আমেদাবাদ সত্যাগ্রহে গান্ধীজির ভূমিকা

  • (১) আমেদাবাদ শ্রমিক আন্দোলনে গান্ধীজি নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসেন। মিল মালিকদের কাছে গান্ধীজি মজুরি বাড়ানোর দাবি করেন, কিন্তু এই দাবি ব্যর্থ হয়।
  • (২) মিল মালিকরা একজোট হয়ে লকআউট ঘোষণা করে এবং দু সপ্তাহ এই ভাবে চলার পর মিল মালিকদের পক্ষ থেকে মজুরদের জন্য সামান্য বেতন বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করা হয়।
  • (৩) কিন্তু সন্তুষ্ট না হয়ে গান্ধীজি শ্রমিক মজুরদের নিয়ে উপযুক্ত বেতন বৃদ্ধির দাবি জানান এবং অবশেষে শুরু করেন ভারতে তাঁর প্রথম অনশন।

আমেদাবাদ সত্যাগ্রহের পরিণতি

গান্ধীজির অনশনের চতুর্থ দিনের মাথায় মালিক পক্ষ ৩৫ ভাগ মজুরি বৃদ্ধি করতে সম্মত হন। এর ফলে আমেদাবাদের শ্রমিক আন্দোলন সফল হয়।

আমেদাবাদ সত্যাগ্রহের গুরুত্ব

গান্ধীজীর রাজনৈতিক  সাফল্যের ইতিহাসে আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ ও অনশনের রাজনৈতিক হাতিয়ারের গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন –

(১) শ্রমিক নেতা হিসেবে

আমেদাবাদের শ্রমিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে গান্ধীজি প্রথম শ্রমিক শ্রেণীর প্রিয় নেতা হয়ে ওঠেন।

(২) সার্বিক পরিচিতি

স্বল্প মেয়াদি এই আন্দোলনে গুজরাটের বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে গান্ধীজির পরিচয় ঘটে। গ্রামাঞ্চল ছাড়িয়ে এই প্রথম শহরাঞ্চলেও গান্ধীজির নিজস্ব রাজনৈতিক পরিচিতি গড়ে ওঠে।

(৩) অনশন ধর্মঘটের নিদর্শন স্থাপন

অনশন ধর্মঘটকে দাবি আদায়ের হাতিয়ার করে যে নিদর্শন তিনি আমেদাবাদে তৈরি করেন তা ভবিষ্যতের রাজনীতিতে এক অমোঘ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

(৪) শ্রমিক ও মালিক শ্রেণির আস্থা অর্জন

এই আন্দোলনের অহিংস নীতির মাধ্যমেই গান্ধীজি শ্রমিক – মালিক দু পক্ষেরই আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হন।

(৫) রাজনীতির মূল স্তম্ভে প্রতিষ্ঠিত

প্রকৃতপক্ষে তিনি শ্রেণি সংগ্রামের পরিবর্তে  শ্রমিক-মালিক সহযোগিতার নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। এই কারণে শহরাঞ্চলে তার রাজনৈতিক ভিত্তি গড়ে ওঠে এবং তিনি রাজনীতির মূল স্তম্ভে পরিণত হন।

আমেদাবাদ সত্যাগ্রহের মূল্যায়ন

আমেদাবাদের শ্রমিক আন্দোলন গান্ধীজির রাজনৈতিক তৎপরতার দ্বিতীয় সাফল্য। ড. অমলেশ ত্রিপাঠী বলেছেন যে, গান্ধীজি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে শ্রমিকদের ব্যবহার করেননি বা মালিকপক্ষের কোনোরকম ক্ষতি করে শ্রমিকদের অন্যায় দাবিগুলিকে সমর্থন করেননি।

উপসংহার :- আমেদাবাদ সত্যাগ্রহে গান্ধিজির মতাে ইংরেজি শিক্ষিত কোনাে ভারতীয় নেতা প্রথম শ্রমিক কল্যাণে তাদের ত্রাণকর্তা হিসেবে এগিয়ে আসায় তিনি জনগণের একচ্ছত্র নেতৃত্ব লাভে সক্ষম হন।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ কি?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর গুজরাটের আমেদাবাদে গুজরাটি বস্ত্র ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সুতাকলের শ্রমিকদের যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তা আমেদাবাদ শ্রমিক আন্দোলন ( ফেব্রুয়ারি, ১৯১৮ খ্রি.) নামে পরিচিত।

২. আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ আন্দোলন কখন শুরু হয়?

১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে।

৩. সত্যাগ্রহ কী?

মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর প্রতিষ্ঠিত একটি দর্শন এবং অহিংস প্রতিরোধের অনুশীলন।

৪. ভারতে গান্ধীজীর প্রথম অনশন আন্দোলন কোনটি?

আমেদাবাদ সুতাকল শ্রমিকদের জন্য সত্যাগ্রহ আন্দোলন।

অন্যান্য ঐতিহাসিক ঘটনাগুলি

Leave a Comment