জন বার্ডন স্যান্ডার্সন হলডেন

একজন ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত গণিতজীবী, জেনেটিসিস্ট, এবং বায়োলজিস্ট জন বার্ডন স্যান্ডার্সন হলডেন (J.B.S. Haldane) বংশগতির আধুনিক ধারণা এবং বিবর্তন তত্ত্বের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি বংশগতির গাণিতিক ভিত্তি নিয়ে কাজ করেন এবং বংশগতির পপুলেশন জেনেটিক্সে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। হলডেন ভারতের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন এবং জীবনের শেষ পর্যায়ে ভারতে কাজ করেন। তার গবেষণা জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় প্রভাব ফেলেছিল, এবং তিনি বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার জন্যও পরিচিত ছিলেন।

বিজ্ঞানী জন বার্ডন স্যান্ডার্সন হলডেন

ঐতিহাসিক চরিত্রজন বার্ডন স্যান্ডার্সন হলডেন
জন্ম৫ নভেম্বর, ১৮৯২, অক্সফোর্ড, ইংল্যান্ড
প্রাথমিক পরিচিতিগণিতজীবী, জেনেটিসিস্ট, এবং বায়োলজিস্ট
অবদানআধুনিক পপুলেশন জেনেটিক্স এবং বিবর্তন তত্ত্বের বিকাশে ভূমিকা
ভারতের নাগরিকত্ব১৯৫৭ সালে, ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ
গবেষণা ক্ষেত্রবংশগতির গাণিতিক ভিত্তি, পপুলেশন জেনেটিক্স, বিবর্তন তত্ত্ব
সম্মানরয়েল সোসাইটির ফেলো (FRS)
বিখ্যাত রচনা“Daedalus, or Science and the Future,” “The Causes of Evolution”
দর্শনমার্কসবাদ এবং বামপন্থী রাজনীতি
মৃত্যু১ ডিসেম্বর, ১৯৬৪, ভুবনেশ্বর, ভারত
জন বার্ডন স্যান্ডার্সন হলডেন

ভূমিকা :- কথায় কথায় অনায়াস উচ্চারণে আজকাল আমাদের মুখে চলে আসে জিন কথাটি। অথচ খুব বেশিদিন হয় নি মানুষ এই জিন বস্তুটির সন্ধান পেয়েছে। জিনকে নিয়ে সমস্ত কিছু কান্ড ঘটাবার অনেক আগে, যখন বিজ্ঞানীরা জিনের সঙ্গে পরিচিত হতে শুরু করেছেন, তখন যিনি জিনের তত্ত্ব সাবলীলভাবে তুলে ধরেছিল, যাঁকে বলা হয় তত্ত্বীয় জেনেটিক্সের আদিপুরুষ, সেই বিজ্ঞান তাপসের নাম জন বার্ডন স্যান্ডার্সন হলডেন। বিশ্ববিজ্ঞানের ইতিহাসে তিনি জে. বি. এস নামেই সমধিক পরিচিত।

জন হলডেনের জন্ম

হলডেনের জন্ম হয় ব্রিটেনের অক্সফোর্ডে ১৮৯২-এর ৫ই নভেম্বর। তাঁর বাবার নাম জন স্কট হলডেন। তিনি ছিলেন তৎকালের এক প্রখ্যাত শরীরবিজ্ঞানী।

জীববিজ্ঞানী হলডেনের ছেলেবেলা

  • (১) বিজ্ঞানী পিতার পুত্র যে বিজ্ঞানীই হবেন তার কোন মানে নেই। কিন্তু তবু বলতে হয়, বিজ্ঞানের প্রথম পাঠ হলডেন বাল্যকালেই পেয়েছিলেন বাবার কাছ থেকে। প্রকৃতির রাজ্যে নানা জিনিসের প্রতি আগ্রহ জাগাবার জন্য তাঁর বাবা তাঁকে নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন নানা জায়গায়। শোনাতেন দেশবিদেশের বিজ্ঞানীদের রোমাঞ্চকর জীবনকাহিনী।
  • (২) একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরী ছিল তাঁদের বাড়িতে। বিজ্ঞান ছাড়াও নানা বিষয়ের উল্লেখযোগ্য বই ছিল সেখানে। বালক হলডেন সেখানে বই মুখে গুঁজে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিতেন। সবচেয়ে আনন্দ পেতেন তিনি বিজ্ঞান বিষয়ের বই পড়ে। বিজ্ঞানের প্রতি তাঁর আকর্ষণ ছিল সহজাত।
  • (৩) বাবার নিজস্ব ল্যাবরেটরিটি ছিল বাড়ির পাশেই। আধুনিক সব ব্যবস্থাই ছিল সেখানে। বাবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করতেন তিনি। সাগ্রহে হাতের কাছে মোতায়েন থাকতেন যদি এটা সেটা লাগিয়ে দেবার কাজে বাবাকে সাহায্য করতে পারেন।
  • (৪) এভাবেই বালক বয়সেই বিজ্ঞানী বাবার পাশে থেকে থেকে হাতে-কলমে বিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত হবার সুযোগ পেয়েছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি নিজে বহুবার উল্লেখ করেছেন, তাঁর বহু বিচিত্র বিষয়ের গবেষণার প্রেরণাটি তিনি লাভ করেছিলেন শৈশবে বাবার ল্যাবরেটরি থেকেই।
  • (৫) বাবা যে কেবল তাঁকে হাতে ধরে বিজ্ঞান-মন্দিরের প্রবেশ পথটি চিনিয়ে দিয়েছিলেন তাই নয়। চরিত্রগঠনের শিক্ষাও জে. বি. এস হলডেন লাভ করেছিলেন তাঁর বাবার কাছ থেকে। সত্য ও ন্যায়ের পথে চলা, অন্যায় অসত্যের বিরুদ্ধে আপসহীন দৃঢ়তা অবলম্বন করে সহজ সরল ভাবে চলার শিক্ষা বাবাই দিয়েছিলেন তাঁকে। এভাবে একটি পরিপূর্ণ মানুষের সত্তা নিয়েই শিশু বয়স থেকে বড় হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

জন হলডেনের মনে বিশ্বসৃষ্টির রহস্য

পড়াশুনা, প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ ও বাবার সাহচর্যে হলডেনের অন্তস্থিত ভাবুক মনটি ক্রমেই পরিপুষ্ট হয়ে উঠেছিল। সময় পেলেই তিনি জীবনের নানা জটিল দিক নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করতে বসে যেতেন। মনের মধ্যে অহরহ ঘোরাফেরা করত বিশ্বসৃষ্টির রহস্য, মানুষের সভ্যতা, জীবনের উৎস, জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিস্ময়কর ইতিহাস। বিস্ময়-মুগ্ধ হয়ে তিনি ভাবতেন সমস্ত কথা।

নকল করার চেষ্টায় জন হলডেন

ছেলেবেলা থেকে একটা অদ্ভুত প্রবণতা দেখা গিয়েছিল হলডেনের মধ্যে। কাউকে নকল করার আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল তাঁর। যাকে দেখতেন তাঁকেই নকল করার চেষ্টা করতেন। এই কান্ডটা একরকম অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিল।

দুঃসাহসি জন হলডেন

রাস্তায় দিনরাত ঘোরাঘুরি করছে কত কুকুর। তাদের মুখের গড়ন কত বিচিত্র ধরনের। কারো মুখ খুঁচলো, কারো চৌকো, কারও কান লম্বা, কারো ঝুলে পড়া, কারো চোখে দুষ্টুমি-সবকিছু খুঁটিয়ে লক্ষ্য করতেন বালক হলডেন। পরে ঘরে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পথে দেখা কুকুরদের মুখের চেহারা নিজের মুখে ফুটিয়ে তোলার প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকেন। এই অভ্যাসটিই পরবর্তীকালে তাঁর জীবনে অন্য রূপ নিয়েছিল। বিজ্ঞানের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ক্রমাগত নিজের শরীরের ওপরে ঘটাবার দুঃসাহস তাঁর মধ্যে দেখা গেছে।

জন হলডেনের শিক্ষা

  • (১) বিজ্ঞানের প্রতি এতটাই আগ্রহ বেড়ে উঠেছিল তাঁর যে বিভিন্ন ভাষায় লেখা বিজ্ঞানের বই পড়বার জন্য তিনি আগ্রহ নিয়ে নানা ভাষা শিক্ষা করলেন। বিজ্ঞানের সমস্ত বিষয়ের মধ্যে গণিতের প্রতিই বেশি টান ছিল হলডেনের। ফলে অল্প বয়সেই গণিতে অসম্ভব পোক্ত হয়ে উঠেছিলেন। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ষোল বছর বয়সেই তিনি গণিতের জন্য রাসেল পুরস্কার লাভ করেছিলেন। গণিত প্রতিভার এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়েই হলডেনের ভবিষ্যৎ জীবনের সম্ভাবনাটি আভাসিত হয়ে উঠেছিল।
  • (২) কিন্তু কিশোর হলডেন সকলকে বিস্মিত করলেন স্কুলের সর্বশেষ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর উচ্চশিক্ষার জন্য অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে। তিনি ভর্তি হলেন বিজ্ঞান বিভাগে নয়, কলা বিভাগে। বিজ্ঞানে আবাল্য উৎসাহী মানুষটির এই মানসিক পরিবর্তনের কোন কারণ খুঁজে পাওয়া গেল না। যথাসময়ে সসম্মানে বি. এ. পাস করলেন। সময়টা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-এর কাল।

সেনাবাহিনীতে জন হলডেন

ব্রিটেনের সেনাবাহিনীতে নাম লেখালেন হলডেন। সেখানে এমন এক কাজের দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হল যা ছিল রীতিমত দুঃসাহসিক ও বিপজ্জনক। নির্ভীকতা, বীরত্ব ও প্রচন্ড উপস্থিত বুদ্ধি থাকলে তবেই কেবল এই দায়িত্ব পালন করা সম্ভব। সেনাবাহিনীতে হলডেনের কাজ ছিল, গভীর রাতে শত্রুপক্ষের শিবিরে ঢুকে গোপনে সংবাদ সংগ্রহ করা। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও দেশের স্বার্থে এই দুঃসাহসিক কাজটি করতে আনন্দ পেতেন হলডেন। এই সময়ে গোপনে শত্রুশিবিরে একাধিক ধ্বংসকাণ্ডও ঘটিয়েছেন হলডেন। শত্রুর বেড়াজাল থেকে প্রচন্ড উপস্থিত বুদ্ধির জোরে নিজেকে মুক্ত করে নিয়ে এসেছেন। তাঁর সাহসিকতা ও বীরত্বে অন্যান্য সৈনিকরা মুগ্ধ হয়ে যেত। এই ভাবে সকলেরই প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছিলেন তিনি। গুণমুগ্ধ ব্রিটিশ সৈনিকরা তাঁর নাম দিয়েছিল রোম্বো।

শারীরবিদ্যার গবেষণায় রত জন হলডেন

১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে যুদ্ধ শেষ হলে হলডেন আবার ফিরে আসেন অক্সফোর্ডে। বাবার ল্যাবরেটরিতে শারীরবিদ্যা সংক্রান্ত গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। হঠাৎ করে শারীরবিদ্যা কেন? শৈশবে বাবার সঙ্গে থেকে গবেষণার কাজটি রপ্ত করে নিয়েছিলেন তিনি। বাবার সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছিল শারীরবিদ্যা সংক্রান্ত। ফলে এই বিদ্যাতেই তিনি হাত পাকিয়েছিলেন। তাই সুযোগ যখন এলো তখন শরীরের নানা জৈবিক ক্রিয়াকলাপ নিয়েই তিনি বসে গেলেন ল্যাবরেটরির টেবিলে।

অধ্যাপনার কাজে জন হলডেন

এভাবে কাটল কয়েকটা বছর। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে চাকরির সুযোগ পেয়ে গেলেন। রিডার হিসেবে যোগ দিলেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবরসায়ন বিভাগে। এই ভাবেই সূত্রপাত হল কর্মজীবনের। জীববিজ্ঞানে সবে চালু হয়েছে শারীরবিদ্যা নামে একটি নতুন শাখা। জীবরসায়ন তারই অন্তর্ভুক্ত। শরীরের সজীব কোষে প্রতিনিয়ত যেসব জটিল রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে চলেছে তা পর্যবেক্ষণ করাই হল জীবরসারনের কাজ। এই নতুন বিষয়ে উৎসাহ ও আগ্রহ নিয়ে শুরু করলেন তিনি অধ্যাপনার কাজ।

হপকিন্সের তত্ত্বাবধানে জন হলডেনের গবেষণা

অধ্যাপনার পাশাপাশি নানা আধুনিক বিষয়ের গবেষণার কাজও সমান্তরাল ভাবে করে চললেন হলডেন। ভিটামিন আবিষ্কার করে জীবরসায়নবিদ ফ্রেডেরিক গাইল্যান্ড হপকিন্স বিশ্বখ্যাতি লাভ করেছিলেন। তাঁরই তত্ত্বাবধানে চলতে লাগল হলডেনের গবেষণা।

বংশগতি সম্পর্কে হলডেনের গবেষণা

এই ভাবে অতিক্রান্ত হল তিন বছর। নিজের গবেষণার সূত্র ধরেই ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে হলডেন আকৃষ্ট হন সমস্ত প্রজননবিদ্যা বা জেনেটিক্সের প্রতি। শুরু করেন হেরিডিটি অ্যান্ড ভেরিয়েশন বা বংশগতি ও পরিবর্তন নিয়ে গভীর গবেষণা। প্রধানতঃ তাঁর অন্যতম প্রিয় বিষয় গণিতের সাহায্যেই এই নতুন গবেষণা এগিয়ে নিয়ে চলতে থাকেন।

ডারউইনের অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করেন জন হলডেন

  • (১) বিশ্ববিজ্ঞানে ডারউইনই সর্বপ্রথম জৈব অভিব্যক্তি নিয়ে তাঁর মতামত ব্যক্ত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, প্রাকৃতিক নির্বাচন বা নেচারাল সিলেকশানের মাধ্যমেই উদ্ভিদ ও প্রাণিজগতে উদ্ভূত ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতি থেকে সৃষ্টির বৈচিত্র্য রূপ পরিগ্রহ করেছে। ডারউইনের প্রজাতির উৎস সম্পর্কীয় তত্ত্বের মূল কথাই হল, সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট। সবল বা যোগ্যতমই টিকে থাকে জীবনসংগ্রামে।
  • (২) যোগ্যতম সম্পর্কে বললেও ডারউইন সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট অর্থাৎ যোগ্যতম প্রজাতির আগমন সম্পর্কে নীরবই থেকেছেন। অভিব্যক্তির প্রকৃত রূপ যে নানা প্রজাতির বংশগতির বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন সেই সত্য ধরা পড়েছে বহু পরে।
  • (৩) ডারউইনের বিবর্তনবাদের মূল কথাই হল সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট। অর্থাৎ পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকে যোগ্যতম। কিন্তু যোগ্যতমের প্রজাতি সম্পর্কে ডারউইন পরিষ্কার কোনও ধারণা দিয়ে যেতে পারেন নি। তাই এক হিসাবে ডারউইনের তত্ত্ব ছিল অসম্পূর্ণ এবং স্বভাবতই জীববিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে নিঃসন্দেহ হতে পারেন নি।
  • (৪) ডারউইনের অসম্পূর্ণ কাজটি সম্পূর্ণ করেছিলেন বিজ্ঞানী হলডেন। অবশ্য তাঁর আগে অপর দুই বিজ্ঞানী রোলান্ড ফিশার এবং স্যামুয়েল রাইট জৈব অভিব্যক্তির জটিল বিষয় নিয়ে গবেষণায় মেতেছিলেন। কিন্তু তাঁরাও সেভাবে স্পষ্ট কোনও ইঙ্গিত এ বিষয়ে দিয়ে যেতে পারেননি। হলডেনের হাতেই বলা যায় তত্ত্বীয় জেনেটিক্সের সূত্রপাত হয় সাফল্যজনকভাবে।

দুই ক্রোমোজোমের মিলন ঘটান জন হলডেন

বংশগতির ধারাকে বহন করে যে কণা বা অণু তাকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন জিন। এই জিনের রাসায়নিক গঠন এমনই জটিল ও সূক্ষ্ম যে তা শক্তিশালী আলট্রামাইক্রোস্কোপের সাহায্য ছাড়া নিরূপণ করা সম্ভব হয় না। প্রত্যেক সজীব কোষের নিউক্লিয়াসেই এরা থাকে মুক্তোর মালার চেহারা নিয়ে। তাকে ঘিরে থাকে এক ধরনের ক্ষারীয় প্রোটিনের আবরণ। এই আবরণ সমেত জিনই হল ক্রোমোজম। কোষ বিভাজন ক্রিয়ায় ওই বংশগতির একক ক্রোমোজোম সমান দুই ভাগে বিভক্ত হয়। সন্তানের প্রতিজোড়া ক্রোমোজোমের একটি মায়ের অন্যটি বাবার। দুটিরই বৈশিষ্ট্য ভিন্ন। একটির রং সাদা, অন্যটির হলুদ। দুয়ের মিলন ঘটালেন হলডেন। তাদের যে সন্তান হল তার গায়ের রং হল হালকা হলুদ। এই বিষয়টি হলডেন বুঝিয়ে দিলেন গণিতের ভাষায়। জিনের এই ধারা যদি বিঘ্নিত না হয়, স্বাভাবিক পরিবেশে নিয়মিত থাকে, তাহলে অভিব্যক্তি বা বিবর্তন ঘটে না।

জন হলডেন নির্দিষ্ট চারটি কারণ

যখন কোনও কারণে পরিবেশের বদল ঘটে, জিনের ওপরে বিরুদ্ধ চাপ বশতঃ তখনই বিবর্তনের পথ হয় প্রশস্ত। জিনের ওপরে কোনো অবস্থায় বিরুদ্ধ চাপ পড়ে তা বোঝাতে গিয়ে হলডেন চারটি কারণ নির্দেশ করেছেন। সেগুলো হল –

  • (১) জিনের মূল গঠনের আকস্মিক পরিবর্তন। হলডেন বলেছেন, এই পরিবর্তন ঘটে প্রতি পঞ্চাশ হাজার মানুষে একটি। এর ফলে সন্তানের মধ্যে যে বৈশিষ্ট্য দেখা যায় তা বাবা বা মা কারোর মধ্যেই থাকে না।
  • (২) বহমান বংশগতিতে যখন বহিরাগত কোনও জিন ঢুকে পড়ে। যেমন অসবর্ণ মিলন।
  • (৩) এই অসবর্ণ মিলন ছাড়া অন্য একটি কারণেও বংশধারায় বিবর্তন ঘটে থাকে। তা হল নির্বাচনের চাপ। এর ফলে জিনের স্বাভাবিক কম্পাঙ্ক কমবেশি হয়ে পড়ে। জিনের নির্দিষ্ট কম্পাঙ্ক বিঘ্নিত হলে ঘটে অকাল মৃত্যু, কেউ হয় দীর্ঘায়ু, কারো স্বভাবে ছেলেমানুষী ভাব থেকেই যায়। সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে সময়ের তারতম্য ঘটতে দেখা যায়।
  • (৪) জিনের অংশগ্রহণের তারতম্যের ফলে কম্পাঙ্কের পরিবর্তন ঘটিয়ে বিবর্তন ঘটায়।

হলডেন রচিত গ্রন্থ

বিবর্তনে এই কারণগুলিকে হলডেন গাণিতিক পদ্ধতিতে সাজিয়ে সকল বিভ্রান্তির অবসান ঘটান। এ বিষয় নিয়েই তিনি পরে লেখেন তিনটি বই-দা কজেস অব এভোলিউশান, নিউ পাথস ইন জেনেটিক্স, দ্য বায়োকেমেস্ট্রি অব জেনেটিক্স। হলডেন তাঁর এই তত্ত্বীয় পদ্ধতির সাহায্যে জিন-ঘটিত রোগের সম্পর্কেও ইঙ্গিত করেছেন।

জন হলডেনের তত্ত্বে প্রাকৃতিক নির্বাচন

পরবর্তীকালের জীববিজ্ঞানীদের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে হলডেনের তত্ত্ব অভ্রান্ত-অভিব্যক্তির প্রকৃত সংঘটক হল প্রাকৃতিক নির্বাচন। হলডেনের গবেষণায় আরও ধরা পড়েছে, প্রাকৃতিক নির্বাচনের পাশাপাশি নানান চাপের ফলেও পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে পরিবর্তন ফুটে উঠতে পারে। যার সঙ্গে বাবা-মায়ের বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য নজরে পড়ে।

লণ্ডনের রয়াল সোসাইটির ফেলো জন হলডেন

১৯৩২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়েই ছিলেন হলডেন। এরপর যোগ দেন লন্ডনের জেনেটিক্যাল সোসাইটির সভাপতি পদে। একই বছরে অসাধারণ প্রজননবিদ্যার গবেষণার স্বীকৃতি হিসাবে লণ্ডনের রয়াল সোসাইটি তাঁকে ফেলো নির্বাচিত করেন।

গাণিতিক জীববিদ্যার অধ্যাপক জন হলডেন

১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োকেমেস্ট্রি বা গাণিতিক জীববিদ্যা নামে একটি নতুন বিভাগ খোলা হয়। জেনেটিক্যাল সোসাইটির সভাপতির পদ ত্যাগ করে হলডেন যোগ দেন এই নতুন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক হিসাবে। এই পদে কাজ করেন একটানা কুড়ি বছর।

পত্রিকা সম্পাদক জন হলডেন

লন্ডনের জীববিজ্ঞানীদের উদ্যোগে ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রকাশিত হতে থাকে পৃথিবীর প্রথম প্রজনন বিদ্যা সংক্রান্ত পত্রিকা জার্নাল অব জেনেটিক্স। হলডেন হলেন এই জার্নালের প্রধান সম্পাদক। কিছুদিন পরেই প্রকাশিত হয় ব্রিটেনের সাম্যবাদী পত্রিকা ডেইলি ওয়ার্কার। হলডেন হলেন এই পত্রিকার সম্পাদকীয় সমিতির প্রধান। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন।

হলডেনের শত্রু

নিষ্ঠাবান বিজ্ঞানকর্মী হয়েও রাজনীতির সঙ্গে ঘোরতর যোগাযোগ ছিল হলডেনের। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন দৃঢ়চেতা ও স্পষ্টবাদী। অন্যায়কে বরদাস্ত করতেন না কখনও। এই প্রতিবাদী ভাবটি ছিল তাঁর চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এ কারণে স্বাভাবিকভাবেই নানাক্ষেত্রেই শত্রু তৈরি হয়েছিল।

জন হলডেনের ভারতে আগমন

দেশের মানুষের দূষিত স্বভাবের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে একসময় ইংল্যান্ড ছেড়ে ভারতে চলে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু ভারতের সরকারী কর্মীদের অসাধুতাও ইংল্যাণ্ডের মানুষগুলোর চাইতে কোনও অংশে কম ছিল না। প্রতিবাদ না করে থাকতে পারেন নি তিনি। ফলে যতদিন ভারতে ছিলেন, প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করেই থাকতে হয়েছিল তাঁকে।

কমিউনিস্ট আন্দোলনের আদর্শ গ্রহণ করেন জন হলডেন

  • (১) তাঁর সমসময়ে ইংল্যাণ্ডে সবে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে। এই আন্দোলনের আদর্শই জীবনে গ্রহণ করেছিলেন বিজ্ঞানী হলডেন। কমিউনিস্ট আন্দোলনের মূল কথাকে সামনে রেখে তিনি রচন। করেন বংশগতি সম্পর্কিত একটি বই হেরিডিটি অ্যান্ড পলিটিকস। রাজনীতিকেন্দ্রিক হলেও বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রেও বইটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
  • (২) এই বইয়ের এক জায়গায় তিনি বলেছেন- “For more than a thousand years the Mohammedans in western Asia have prac- tised polygamy, whils the Christians and Jews have not. Of course, only the richer Mahammedans could afford a harem. We should, therefore, expect that the Mohammedans would on the whole be superior to the Jews and Christians in intellectual qualities or at any rate in those analities which make for the acquisition of wealth That is notoriously not the case. And because it is not the case, it is to be presumed that there is some fallacy in the arguments…..”

উৎসেচক সম্পর্কে জন হলডেনের দিক নির্দেশ

  • (১) জিনের গঠন নিয়ে হলডেন নানা ভাবে পরীক্ষানিরীক্ষা করেছেন সারাজীবন ধরে। রহস্য উদঘাটনে গাণিতিক পদ্ধতিকে তিনি প্রয়োগ করতেন উৎসাহের সঙ্গে। এনজাইম বা উৎসেচকের গঠনশৈলী নিয়েও বংশগতির নানা দিকনির্দেশ করেছেন তিনি।
  • (২) ঈস্ট বা খামির ভেতর থেকে প্রোটিন অনুঘটক বার করা হয়েছিল। এজন্য একে নাম দেওয়া হয় এনজাইম। ল্যাটিন ভাষায় এন মানে ভেতরে আর জাইম হল ঈস্ট বা খামি। এই এনজাইম থেকে তৈরি হয় শরীরের নানা প্রয়োজনীয় পদার্থ। হলডেন পরীক্ষা করে দেখিয়েছেন, এনজাইম দেহকোষের মধ্যের নানা জৈব রাসায়নিক পদার্থের মধ্যে নানা বিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
  • (৩) কোষের নিউক্লিয়াসে থাকে ক্রোমোজোম বা জিন। তার দ্বারাই সেখানে উৎপাদিত হয় নানা প্রয়োজনীয় এনজাইম। এই জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলেই জৈব পদার্থগুলো কোষকে সজীব করে রাখে। জিন স্বভাবতঃই তৈরি করে তার চেহারার অনুরূপ একটি সঙ্গী। এরা আবার পৃথক পৃথকভাবে নিজেদের কাজ করে। এভাবেই চলে তার অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম।

জন হলডেনের কমিউনিস্ট পার্টি ত্যাগ

হলডেন একদিকে নিষ্ঠাবান সার্থক বিজ্ঞানী। অপরদিকে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সক্রিয় সমর্থক। রাজনৈতিক আদর্শের সংঘাতের ফলে ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে প্রথমা স্ত্রী চার্লটের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গেল তাঁর। সংসার ভাঙ্গল, তবুও তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সংস্রব ত্যাগ করলেন না। আদর্শনিষ্ঠ দৃঢ়চেতা মানুষটির জীবন আগাগোড়াই ছিল সংঘাতময়। রাজনৈতিক দলও একসময় অসহ্য ঠেকল তাঁর কাছে। দেখলেন, দলে ঢুকেছে বেনো জল। দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা নিরুচ্চারে প্রশ্রয় পাচ্ছে। প্রতিবাদ না করে থাকতে পারলেন না। শেষ পর্যন্ত ত্যাগ করলেন কমিউনিস্ট পার্টি। ত্যাগ করেন স্বদেশ। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি চলে এলেন ভারতে।

নিরহংকারী জন হলডেন

ব্যক্তিগত জীবনে হলডেন ছিলেন নিরহংকারী। এমন প্রতিভাধর গুণী মানুষটি অবাধে সকলের সঙ্গে মিশতেন। মজ্জায় ছিল সমাজসেবার প্রেরণা। তার টানেই ভিড়েছিলেন সর্বহারার পার্টিতে। কৈশোরে খনিশ্রমিক ও মৎস্যজীবীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশেছেন। এই দুঃখী অভাবী মানুষগুলোর প্রতি ছিল তাঁর অগাধ সহানুভূতি ও মমতা। এই সহজ সহানুভূতিশীল স্বভাবের গুণে মানুষের ভালবাসাও পেয়েছেন তিনি। পেয়েছেন তাদের শ্রদ্ধা।

বিপন্ন মানুষের সেবাকার্যে জন হলডেন

  • (১) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে ব্রিটেন যখন বিধ্বস্ত হয়েছে মুহুর্মুহু জাপানী বোমার আক্রমণে, মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে কাতারে কাতারে সেই সময় হলডেন নিমগ্ন ছিলেন জিন সংক্রান্ত গবেষণায়। কিন্তু মানবতার পূজারী সেদিন মানুষের দুঃখ দুর্দশা দেখে স্থির থাকতে পারেন নি। গবেষণার টেবিল ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন বিপন্ন মানুষের সেবাকার্যে। একই সময়ে সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটি নিয়ে প্রশাসনের চাঁচাছোলা সমালোচনা করতেও ছাড়েন নি।
  • (২) এই মানুষই আবার বিজ্ঞান সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে আগ্রহ গড়ে তোলার জন্য একের পর এক বই লিখেছেন। এমনকি শিশুদের জন্যও। তাঁকে বলা হয় ব্রিটেনের মানুষের বিজ্ঞানচেতনা সৃষ্টির পথিকৃৎ। তাঁর লেখার কলমটি ছিল যেমন সাবলীল তেমনি দুরূহ বিষয় প্রাঞ্জল করে তোলার ক্ষমতাও ছিল অসাধারণ। বক্তা হিসাবেও সুখ্যাতি ছিল তাঁর। ক্লাসে পাঠদানের বিষয় ছাত্রছাত্রীদের সামনে জলের মতো পরিষ্কার করে তুলে ধরার অসামান্য দক্ষতা ছিল তাঁর।

জন হলডেনের জাগ্রত কৌতুহল

বিজ্ঞান সম্পর্কে ছিল তাঁর জাগ্রত কৌতূহল। বিজ্ঞানের বহু বিষয় নিয়েই গবেষণা করেছেন। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীভূত হয়েছিলেন জিন সংক্রান্ত গবেষণায়। শারীরবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান, প্রাণিবিদ্যা, চিকিৎসাশাস্ত্র, পরিসংখ্যান, মহাজাগতিক বিদ্যা, অজীব যোনিবিদ্যা-ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণার ফলে সকল ক্ষেত্রেই রেখেছেন উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বাক্ষর। জীবরসায়নেও তাঁর অবদান কিছু কম নয়।

ভারতে জন হলডেনের কাজ

  • (১) ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দের গোড়ায় ভারতে আসার পর এখানকার আবহাওয়া ও মানুষের সঙ্গে পরিচয় ঘটবার পর ভারতকেই করে নেন তাঁর দ্বিতীয় মাতৃভূমি। এখানে এসেও বসেছেন জীববিদ্যা সংক্রান্ত গবেষণা নিয়ে। ভারতের নানা প্রান্তে জল-জঙ্গল অরণ্যে ঘুরেছেন দীর্ঘদিন, সংগ্রহ করেছেন বিভিন্ন প্রজাতির জীবজন্তুর জীবনের ইতিহাস।
  • (২) ভারতের চিরন্তন আদর্শের বাণী এই আবহাওয়ায় এসে মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন হলডেন। পড়েছেন ভারতের আধ্যাত্মিক সাধনার ইতিহাস। বেদ, উপনিষদ, গীতা পড়ে মুগ্ধ হয়েছেন। বুদ্ধ-এর আদর্শকে জীবনের ধ্রুব করে নিয়েছিলেন। বলেছেন, এই হিংসার পৃথিবীকে একমাত্র অহিংসাই পারে নতুন ভাবে গড়ে তুলতে।
  • (৩) কলকাতার বরানগরের ইন্ডিয়ান স্টাটিসটিক্যাল ইনসটিটিউটে দীর্ঘদিন অধ্যাপনার কাজ করেছেন বিজ্ঞানী হলডেন। সেখান থেকে ভুবনেশ্বরে গিয়ে গ্রহণ করেন জেনেটিক্স অ্যান্ড বায়োকেমেস্ট্রি ল্যাবরেটরির সর্বময় কর্তৃত্ব।

জন হলডেনের বহুমুখী প্রতিভা

বিজ্ঞানী হলডেন ছিলেন বহুমুখী-প্রতিভাধর এক ক্ষণজন্মা পুরুষ। বিজ্ঞানের প্রায় সকল শাখাতেই হলডেনের ছিল সাবলীল বিচরণ। পদার্থবিদ্যা, গণিতবিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, জীববিদ্যা, শরীরবিদ্যা, পরিসংখ্যানবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, পরিবেশবিদ্যা, মহাজাগতিক বিদ্যা-সমস্ত বিষয়েই তিনি গবেষণা করেছেন। নিউম্যান নামে এক বিজ্ঞানী তাঁর আশ্চর্য প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে মন্তব্য করেছিলেন, “He did everything, except putting his head on a rail road track”.

বিজ্ঞানী জন হলডেনের মৃত্যু

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১লা ডিসেম্বর দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ভারতেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বিজ্ঞান তাপস জে. বি. এস হলডেন।

উপসংহার :- জন বার্ডন স্যান্ডার্সন হলডেন (J.B.S. Haldane) ছিলেন আধুনিক জীববিজ্ঞান ও জেনেটিক্সের অন্যতম প্রধান স্থপতি, যিনি বংশগতির গাণিতিক ভিত্তি এবং পপুলেশন জেনেটিক্সে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তার কাজ বিবর্তন তত্ত্বের বিকাশে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছিল এবং তিনি বিজ্ঞানের অনেক জটিল ধারণা সাধারণ মানুষের কাছে সহজভাবে তুলে ধরতে পারদর্শী ছিলেন। হলডেন তার জীবনকে বিজ্ঞান ও মানবতার সেবায় উৎসর্গ করেন এবং পরবর্তীতে ভারতের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে সেখানে জীবনের শেষ সময়টা কাটান। তার চিন্তা, গবেষণা এবং অবদান আজও জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে, যা তাকে এক অমর বৈজ্ঞানিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

(FAQ) জন বার্ডন স্যান্ডার্সন হলডেন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. J.B.S. Haldane কে ছিলেন?

তিনি একজন ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত গণিতজীবী, জেনেটিসিস্ট এবং বায়োলজিস্ট ছিলেন, যিনি আধুনিক বংশগতি এবং বিবর্তন তত্ত্বের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন।

২. হলডেন কিসের জন্য বিখ্যাত?

তিনি বংশগতির গাণিতিক ভিত্তি নিয়ে কাজ করেন এবং পপুলেশন জেনেটিক্স এবং বিবর্তন তত্ত্বের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

৩. তিনি কবে ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন?

১৯৫৭ সালে হলডেন ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন এবং পরে ভারতে বাস করা শুরু করেন।

৪. হলডেন কোন ধরনের গবেষণা করেছেন?

হলডেন পপুলেশন জেনেটিক্স, বংশগতির গাণিতিক মডেল এবং বিবর্তন তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি বিজ্ঞানকে সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় করতে কাজ করেছেন।

৫. তিনি কী রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতেন?

হলডেন একজন বামপন্থী এবং মার্কসবাদী ছিলেন, এবং তার রাজনৈতিক দর্শন তার জীবনের গবেষণা এবং চিন্তাধারায় প্রভাব ফেলেছিল।

৬. তার উল্লেখযোগ্য বইগুলো কী কী?

তার উল্লেখযোগ্য বইগুলির মধ্যে রয়েছে “Daedalus, or Science and the Future” এবং “The Causes of Evolution”।

৭. তিনি কোন পুরস্কার বা সম্মাননা পেয়েছেন?

তিনি রয়েল সোসাইটির ফেলো (FRS) হিসেবে সম্মানিত হয়েছেন এবং তার গবেষণার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছেন।

Leave a Comment